Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Calcutta High Court

বিপদের ঢেউ

মেলার অনুমতি দিয়া আদালত যে শর্তগুলি আরোপ করিয়াছে, সেগুলি আদৌ পালন করা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন উঠিতেছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:২১
Share: Save:

আদালত অনুমতি দিয়াছে, বিধিনিষেধ মানিয়া গঙ্গাসাগরে মেলা করা চলিবে। হাই কোর্টের রায়ের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রাখিয়াও প্রশ্ন করা বিধেয়, অতিমারির তৃতীয় প্রবাহ যখন এমন গুরুতর হইয়া উঠিয়াছে, তখন কি আদৌ এই মেলার প্রয়োজন ছিল? গঙ্গাসাগরে মকর সংক্রান্তির মেলার ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু, জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নটি কি আরও গুরুত্বপূর্ণ নহে? গত দুই বৎসরের অভিজ্ঞতা শিখাইয়াছে যে, ‘সুপারস্প্রেডার ইভেন্ট’ অতিমারিকে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে লইয়া যায়। কুম্ভ মেলা হইতে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই এক ঘটনা ঘটিয়াছে। বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসকদের এক সংগঠন সতর্ক করিয়া বলিয়াছে যে, মেলার কারণে সংক্রমণ দাবানলের ন্যায় ছড়াইয়া পড়িবে, এমন আশঙ্কা প্রবল। এমনিতেই রাজ্যে কোভিডের পজ়িটিভিটি রেট বিপদসীমার ঊর্ধ্বে। যত জন কোভিড পরীক্ষা করাইতেছেন, তাঁহাদের এক-চতুর্থাংশের শরীরেই ভাইরাস ধরা পড়িতেছে। চার দিনে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা দ্বিগুণ হইয়াছে। অনুমান, সংক্রমিত হইয়াও এখনও পরীক্ষা করান নাই, এমন নাগরিকের সংখ্যাও নেহাত কম নহে। এহেন পরিস্থিতিকে হালকা ভাবে দেখিবার কোনও প্রশ্ন উঠিতে পারে কি? ইহা ঘটনা যে, প্রথম বা দ্বিতীয় প্রবাহের তুলনায় এখনও অবধি তৃতীয় প্রবাহে ভাইরাসটিকে ক্ষীণবল বোধ হইতেছে। মৃত্যুর হার এখনও অবধি কম। কিন্তু, যে ভাইরাসের সংক্রামক ক্ষমতা এমন তীব্র, তাহার মারণক্ষমতা যদি কমও হয়, শুধুমাত্র সংখ্যার কারণেই তাহা শেষ অবধি অধিকতর বিপজ্জনক হইয়া উঠিতে পারে। ফলে, এই বৎসর গঙ্গাসাগরে মকর সংক্রান্তির মেলা হইবে, ইহা গভীর উদ্বেগের কারণ হইয়া থাকিল।

মেলার অনুমতি দিয়া আদালত যে শর্তগুলি আরোপ করিয়াছে, সেগুলি আদৌ পালন করা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন উঠিতেছে। যেমন, রাজ্যের ঘোষিত কোভিড সুরক্ষা বিধি অক্ষরে অক্ষরে মানিতে হইবে। রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ যেখানে ‘স্বাভাবিক’ প্রাত্যহিকতাতেই এই সুরক্ষা বিধির বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করেন না— এমন প্রবল সংক্রমণের মধ্যেও মানুষ মাস্ক ব্যতিরেকেই হাসিমুখে দোকান-বাজারে ঘুরিতেছেন, আড্ডা দিতেছেন— সেখানে মেলার পরিবেশে সেই বিধি কয় জন মান্য করিবেন, প্রশ্ন থাকিয়াই যায়। মানুষকে নিয়ম মানিতে বাধ্য করিবার মতো সামর্থ্য এবং সদিচ্ছা প্রশাসনের আছে কি না, তাহাও প্রশ্ন। মেলায় আসিলে কী বিপদ হইতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাইয়া বিজ্ঞাপন দিতে হইবে সরকারকে, নির্দেশ দিয়াছে আদালত। বিপদের কথা জানেন না বলিয়াই মানুষ অসাবধান, এমন অনুমানেরও যথেষ্ট ভিত্তি আছে কি? আদালতের নির্দেশগুলি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তাহা যথাযথ পালন করা আদৌ সম্ভব হইবে কি না— প্রশাসন আদৌ কাজটি করিবে কি না— এই প্রশ্নটি থাকিয়াই যাইবে।

হাই কোর্টের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রাখিয়াও স্মরণ করাইয়া দেওয়া প্রয়োজন, রাজনীতির চলন এমনই যে, দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষার গুরুদায়িত্বটি বর্তমানে কার্যত শুধু আদালতেরই হাতে। অভিজ্ঞতা বলে যে, মানুষের দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণের পরিবর্তে রাজনীতির মূল লক্ষ্য বর্তমানে হাতেগরম জনপ্রিয়তা অর্জন করা। ফলে, সরকার যাহা বলিতেছে, তাহাতে মানুষের প্রকৃত স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হইবে কি না, আদালতের নিকট সেই বিচার কাম্য। কেহ প্রশ্ন করিতে পারেন, গঙ্গাসাগরের মেলায় অনুমতি দেওয়ার ফলে মানুষের প্রকৃত স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হইল না তো? বিশেষত সেই নাগরিকদের, যাঁহারা সত্যই সতর্ক হইয়া বাঁচিতে চাহিতেছেন, অথচ অন্যের অবিবেচনা যাঁহাদের ক্রমাগত বিপন্ন করিতেছে? বড়দিন বা বর্ষবরণের উৎসবে বিপদের জল যতখানি গড়াইয়াছিল, এই বার তাহাতে সাগরের ঢেউ উঠিবে না তো?

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court Gangasagar Mela 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy