Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
নাগরিক সমাজ প্রশ্ন ও প্রতিবাদের নিরন্তর উৎস, তাই হুঁশিয়ারি
BJP

নাম-মাহাত্ম্য

স্থানের নামে ইসলামি গন্ধ থাকিলে তাহা পাল্টাইয়া ফেলা অবশ্য বিজেপি-শাসনে রেওয়াজ হইয়া দাঁড়াইয়াছে।

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২১ ০৬:১২
Share: Save:

মধ্যপ্রদেশের হাবিবগঞ্জ রেল স্টেশনের নাম পাল্টাইয়া রানি কমলাপতির নামাঙ্কিত হইল। সরকারি বয়ান বলিতেছে, ৪৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেশনের ভোল বদলাইবার কালে তাহারা ভোপালের প্রথম গোন্ড রানিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাইয়াছে। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন লইয়া আপত্তি থাকিত না, কিন্তু যে রাজ্যে ২০২০ সালে জনজাতির মানুষের উপর প্রায় ২,৫০০ অত্যাচারের ঘটনা ঘটিয়াছে— এক বৎসরে এ-হেন অপরাধের সংখ্যা বাড়িয়াছে ২৫ শতাংশ— সেইখানে হঠাৎ বৃহত্তম জনজাতি গোন্ডদের প্রতি সরকার শ্রদ্ধাবনত হইয়া পড়িলে সংশয় হইতে বাধ্য। জনজাতির শিল্পকলা ও সংস্কৃতিক্ষেত্রে পাঁচ লক্ষ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা হইয়াছে; প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মহা ধুমধামে পালিত হইয়াছে ‘জনজাতীয় গৌরব দিবস’ অনুষ্ঠানটি। অনুমান করিতে সমস্যা হয় না যে, এই বাহুল্যের পিছনে গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের গুরুতর ভূমিকা রহিয়াছে। সেই নির্বাচনে জনজাতিভুক্ত মানুষ বিজেপি হইতে মুখ ফিরাইয়া লইয়াছিল। অত্যাচারের ক্ষতে মৌখিক শ্রদ্ধার মলম বুলাইয়া ভোটব্যাঙ্ক মেরামতির চেষ্টা বড়ই প্রকট।

কোনও স্থানের নামে ইসলামি গন্ধ থাকিলে তাহা পাল্টাইয়া ফেলা অবশ্য বিজেপি-শাসনে রেওয়াজ হইয়া দাঁড়াইয়াছে— হাবিবগঞ্জের ক্ষেত্রে গোন্ড জনজাতির প্রসঙ্গটি উপরিমাত্র। উত্তরপ্রদেশেই যেমন ফৈজ়াবাদ হইয়াছে অযোধ্যা, মোগলসরাই হইয়াছে পণ্ডিত দীন দয়াল উপাধ্যায়, ইলাহাবাদ হইয়াছে প্রয়াগরাজ। ভোপালের ভূতপূর্ব বেগমের পৌত্র হাবিবউল্লাহের নামানুসারে হাবিবগঞ্জ নামটির জন্ম, এবং তাঁহারই অর্থানুকূল্যে ও প্রদত্ত জমিতে স্টেশনের পত্তন। কিন্তু আরএসএস-বিজেপি যে গৈরিক সমাজ নির্মাণের ব্রত লইয়াছে, সেইখানে হিন্দুত্ববাদী প্রতীকসমূহের প্রতিষ্ঠা এবং ইতিহাসের বিস্মরণ, দুই-ই পূর্বশর্ত। অতএব, কয়েক দশকব্যাপী ইসলামি শাসনের যে অভিজ্ঞান ছড়াইয়া আছে, তাহা মুছিয়া দেওয়া দস্তুর। নাগপুর-অনুমোদিত ইতিহাস যাহাকে ধারণ করিতে পারে না, তাহা জনমানস দখল করিবার পথে বাধা। বিরোধী নেতার ঘাঁটি আজমগড়কে ‘আর্যমগড়’ বানাইবার হুঙ্কার শুনিলে তাহাকে স্রেফ কুবাক্য বলিয়া উড়াইয়া দেওয়া যায় না। ইতিহাস বিকৃত করিবার রাজনীতি এখন এই খাতে প্রবল বেগে বহিতেছে।

বর্তমান শাসকের কল্যাণে নাম বদলের প্রশ্নটি ক্ষুদ্রস্বার্থের রাজনীতিতে পর্যবসিত হইলেও আদিতে বিষয়টি এতাদৃশ নেতিবাচক নহে। স্বাধীনতার পর নবজাতক প্রজাতন্ত্রের নামকরণ তথা নাম বদল লইয়া গণপরিষদে দীর্ঘ বিতর্ক হইয়াছিল। ‘ভারত’ ও ‘ইন্ডিয়া’ নামগ্রহণের পশ্চাতে যে আদর্শগত বিষয়গুলি অগ্রাধিকার পাইয়াছিল, তাহাতেও ঔপনিবেশিক আমল হইতে সরণের প্রশ্নটি জড়িত ছিল। প্রধানমন্ত্রী নেহরু জাতিগঠনের সূত্রে পুরাতন জমানার নাম পাল্টাইয়া ফেলিবার উন্মাদনার বিপদ সম্পর্কে দেশকে সতর্ক করিয়াছিলেন। কোন নামটি পাল্টাইয়া ফেলা যায়, আর কোনটির সহিত ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য
সম্পর্ক, রাজনীতি যদি সেই বিবেচনাকে বর্জন করে, তাহা হইলে ঘোর বিপদ। যে স্থাননাম জনচিত্তে প্রতিষ্ঠিত, কেবলমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় তাহাকে পাল্টাইয়া ফেলিলে বদলা হইতে পারে, বদল হয় না।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy