Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Vaccines

টিকাবঞ্চিত

ভারতের টিকাকরণ কর্মসূচি বিশ্বের সর্বাধিক বিস্তৃত জনস্বাস্থ্য কর্মসূচির অন্যতম। প্রতি বছর প্রায় আড়াই কোটিরও বেশি নবজাতক এর আওতায় আসে। কিন্তু এত বিস্তৃত কর্মকাণ্ডের ফাঁকটিও যে নেহাত কম নয়, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান তার প্রমাণ।

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৪ ০৮:৪৪
Share: Save:

জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বিশ্বে শেষের দিক থেকে প্রথম সারিতে থাকা কোনও দেশের পক্ষে স্বস্তিদায়ক নয়। বিশেষ করে তা যদি হয় টিকাকরণের মতো অতি জরুরি বিষয়ে। সম্প্রতি ভারত ডিপিটি এবং হামের টিকাকরণের ক্ষেত্রে সেই আশঙ্কার ‘খেতাব’ অর্জন করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ-এর এক যৌথ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে টিকা না-পাওয়া শিশুদের সংখ্যার নিরিখে ভারতের স্থান প্রথম দশটি দেশের মধ্যে। এই সারির অন্য দেশগুলির মধ্যে আছে— নাইজেরিয়া, ইথিয়োপিয়া, পাকিস্তান, সুদান প্রভৃতি। তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ভারতে প্রায় ১৬ লক্ষ শিশু ডিটিপি এবং হামের টিকা পায়নি। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বৃদ্ধির হার ৪৫ শতাংশ। প্রসঙ্গত, টিকা না-পাওয়া শিশুদের সংখ্যা বৃদ্ধি ২০২১ সালেও দেখা গিয়েছিল। সে বার প্রায় ৩০ লক্ষ শিশু টিকা থেকে বঞ্চিত হয়। কিন্তু সেই বছরটি অতিমারির বছর। অতিমারির মোকাবিলায় অন্য টিকাকরণ কর্মসূচি যে যথেষ্ট অবহেলিত হয়েছিল, তা প্রমাণিত। সুতরাং, ফলাফল অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু ২০২৩-এ এমন কোনও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থার উদয় হয়নি। তৎসত্ত্বেও যে এতগুলি শিশু গুরুত্বপূর্ণ টিকা দু’টি থেকে বঞ্চিত হল, তা লজ্জাজনক।

অথচ, ভারতের টিকাকরণ কর্মসূচি বিশ্বের সর্বাধিক বিস্তৃত জনস্বাস্থ্য কর্মসূচির অন্যতম। প্রতি বছর প্রায় আড়াই কোটিরও বেশি নবজাতক এর আওতায় আসে। কিন্তু এত বিস্তৃত কর্মকাণ্ডের ফাঁকটিও যে নেহাত কম নয়, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান তার প্রমাণ। ইউনিসেফ-এর অন্য একটি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে সারা বিশ্বে প্রায় ১.৪৫ কোটির কাছাকাছি সদ্যোজাত ডিটিপি-র প্রথম টিকাটি পায়নি। আরও ৬২ লক্ষ শিশুর আংশিক টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছিল। কারণ হিসাবে উঠে এসেছিল, বহু পরিবারের টিকা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিষেবার নাগাল না পাওয়ার বিষয়টি। এই শিশুদের প্রায় ৬০ শতাংশই যে দেশগুলির বাসিন্দা, ভারত তার মধ্যে অন্যতম। অস্বীকারের উপায় নেই, সরকারি টিকাকরণ কর্মসূচির সর্বব্যাপী উদ্যোগ সত্ত্বেও এ দেশে এখনও প্রত্যেক শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত হয়নি। আশ্চর্য নয়, শিশুমৃত্যুর কারণ হিসাবে সংক্রামক নানা রোগ ভারতে এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অথচ, প্রত্যেক শিশুকে টিকাকরণের আওতায় আনা সম্ভব হলে হয়তো এই মৃত্যু অনেকাংশেই রোধ করা যেত।

সাম্প্রতিক যৌথ সমীক্ষাতেও টিকা না-পাওয়া শিশুরা মূলত নিম্নবিত্ত পরিবারভুক্ত বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা। এই শিশুদের অভিভাবকরা টিকা প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট কেন্দ্রে যাতায়াত করতে অপারগ। টিকা কর্মসূচির এতগুলি বছর পেরিয়ে এসেও এই বিষয়টির কেন সমাধান হল না, কেন অর্থ এবং সময় শিশুর সার্বিক স্বাস্থ্যসুরক্ষার পথে এখনও প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারকে তা স্পষ্ট করতে হবে। একই সঙ্গে উত্তর দিতে হবে, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়ার মতো দেশে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এইচপিভি ভ্যাকসিন প্রদানের ব্যবস্থা করা গেলেও ভারতে শুধুমাত্র বেসরকারি ক্ষেত্রে কেন তা সীমাবদ্ধ হয়ে রইল। বিশ্বব্যাপী সার্ভাইক্যাল ক্যানসার প্রতিরোধে এইচপিভি ভ্যাকসিনের গুরুত্ব সমধিক। সরকারি টিকাকরণের ক্ষেত্রে পুরনো ফাঁক মেরামত করে এই নতুন বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা আর কবে বুঝবে কেন্দ্র?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy