Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
They displayed the pictures and identity of every craftsman and artist related to the construction and decoration of the mandap in their mandap
Durga Puja 2022

যাঁরা আড়ালে

কোনও নাম-করা শিল্পী মণ্ডপ পরিকল্পনা করলে তা সগর্বে প্রচার করা হয়। অথচ যে কোনও সৃষ্টিশীল ধারণার যাঁরা রূপকার, সেই কারিগররা রয়ে যান আড়ালে।

কারিগরদের হাতের কাজ লক্ষ লক্ষ দর্শক দেখেন, প্রশংসিতও হয়।

কারিগরদের হাতের কাজ লক্ষ লক্ষ দর্শক দেখেন, প্রশংসিতও হয়।

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:০৪
Share: Save:

দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তারা প্রায়ই কোনও না কোনও অভিনবত্বের ছাপ রাখতে চান তাঁদের আয়োজনে। সাধারণত তার প্রকাশ হয় নান্দনিকতায়— মণ্ডপ বা আলোকসজ্জায় কোনও বিশেষ চমক থাকে, প্রতিমায় থাকে কোনও নতুন চিন্তার স্পর্শ। ক্বচিৎ নতুন কিছু করে দেখানোর আগ্রহ প্রবাহিত হয় সামাজিক ন্যায়ের দিকে। উত্তর কলকাতার এক পুজোর উদ্যোক্তারা তেমনই ইচ্ছার পরিচয় দিলেন— তাঁরা মণ্ডপ নির্মাণ ও সাজসজ্জার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রত্যেক কারিগর ও শিল্পীর ছবি ও পরিচয় প্রদর্শিত করলেন তাঁদের মণ্ডপে। একত্রিশ হাজার বর্গফুট মণ্ডপ নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জুন মাস থেকে, ফলে দু’শো পনেরো জন কারিগর এর সঙ্গে জড়িত থাকবেন, তা আশ্চর্য কিছুই নয়। এঁরা কেউ দড়ি দিয়ে বাঁশ বেঁধে মণ্ডপের কাঠামো পোক্ত করেছেন। কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ষাট-পঁয়ষট্টি ফুট উপরে উঠে গিয়ে মণ্ডপের চূড়ার কাজ সম্পূর্ণ করেছেন। কেউ নকশা অনুসারে ধাতু টুকরো করেছেন। প্রতি পুজোয় এমন কারিগরদের হাতের কাজ লক্ষ লক্ষ দর্শক দেখেন, প্রশংসিতও হয়, কিন্তু তাঁরা তখন আর সেখানে থাকেন না। তাঁদের সঙ্গে দর্শকের পরিচয়ের কোনও সুযোগ তৈরির কথাও কেউ ভাবেননি কখনও। এই অদেখা শিল্পী-কারিগরদের সকলের সামনে আনার চেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়।

আশা করা যায়, এমন দৃষ্টান্ত অন্য উদ্যোক্তারাও খোলা মনে গ্রহণ করবেন। বর্তমানে দু’এক জন বিখ্যাত প্রতিমা নির্মাতার নামই শুধু মণ্ডপে প্রদর্শিত হতে দেখা যায়। অথবা কোনও নাম-করা শিল্পী মণ্ডপ পরিকল্পনা করলে তা সগর্বে প্রচার করা হয়। অথচ যে কোনও সৃষ্টিশীল ধারণার যাঁরা রূপকার, সেই কারিগররা রয়ে যান আড়ালে। এই উপেক্ষার ইতিহাস দীর্ঘ— শ্রমজীবী মানুষের প্রতি ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির নিচু নজরের এ হল বিষময় ফল। এর জন্যই ভারতে মাথার কাজ ও হাতের কাজের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এই বিভেদ বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যায় ভারতকে কতখানি পিছিয়ে দিয়েছিল, ভারতে রসায়ন চর্চার ইতিহাস লিখতে গিয়ে তা নিয়ে বহু আক্ষেপ করেছেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।

এই কারণেই আমরা মেধাস্বত্বের অতি সঙ্কীর্ণ এক ধারণা তৈরি করেছি। অতি গড়পড়তা একটি কবিতা কখনও কবির নাম ছাড়া ছাপা হয় না, অতি ক্ষুদ্র পত্রিকাও সগর্বে সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে, গ্যালারিতে বালখিল্য ছবির পাশেও শিল্পীর নাম লেখা থাকে। কিন্তু যে মানুষটি অপরিসীম কৌশল, ধৈর্য ও পরিশ্রমে কিছু বাঁশ ও দড়ি দিয়ে রাজস্থানের প্রাসাদ কিংবা দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আকৃতি তৈরি করেন, তাঁর নাম ঘোষণা করার কথা কারও মনে আসে না। যথাযথ স্বীকৃতি ও সম্মানের অভাবে বহু দক্ষ কারিগর তাঁদের কাজ থেকে সরে গিয়েছেন, সেই সব শিল্পের ধারা হারিয়ে গিয়েছে। অথচ সত্য এই যে, আমজনতার প্রতি দিনের প্রয়োজনীয় বহু সামগ্রী— পরিবহণ থেকে আসবাব পর্যন্ত— এই স্বশিক্ষিত কারিগররাই জোগান দেন। তাঁদের নামহীন, স্বীকৃতিহীন করে রাখা, তাঁদের প্রতিভার অবমূল্যায়ন এক লজ্জার ঐতিহ্য, তা যত শীঘ্র সম্ভব মুছে ফেলাই দরকার। কারিগর, হস্তশিল্পী, কারুশিল্পীদের মর্যাদা দানের অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। শারদোৎসব হতে পারে তার এক যথাযোগ্য সূচনা।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2022 Artists Durga Puja Pandals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy