Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Shah Rukh Khan

Shah Rukh Khan: আঠাশ বছর আগে নামটা লিখিনি, দ্য নেম ওয়াজ খান, শাহরুখ খান

তিনি কয়েকশো মিটারের মধ্যে সমুদ্রের তীরে শ্যুট করছেন! অথচ এই উইয়ে খাওয়া-পুঁইয়ে পাওয়া লেসার মর্টালরা ঘাড় গুঁজে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে!

তিনি যেমন দুর্দান্ত হাজির-জবাব, তেমনই দুরন্ত এবং অধৈর্য। হাতে-পায়ে কথা বলেন।

তিনি যেমন দুর্দান্ত হাজির-জবাব, তেমনই দুরন্ত এবং অধৈর্য। হাতে-পায়ে কথা বলেন। ফাইল চিত্র।

অনিন্দ্য জানা
অনিন্দ্য জানা
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২১ ১০:১৯
Share: Save:

মিডিয়ার স্রোত কেটে এগোচ্ছিল গাড়িটা। রাজহাঁসের মতো। আপাত-মসৃণ।

নম্বর প্লেটে লেখা ‘এমএইচ-০২ ইপি ০৫০০’। দেখে মনে হল মডেলটা ‘রেঞ্জ রোভার স্পোর্ট’। গুগ্‌ল করে দাম দেখলাম। কোটি টাকার কিছু কম। ঝকঝকে সাদা। জানালায় কালো কাচ। অন্তরালে আরোহীরা। মধ্য মুম্বইয়ের আর্থার রোড জেলের সামনের রাস্তা ধরে আগুয়ান সেই এসইউভি-র পিছু পিছু দ্রুতধাবমান সাংবাদিককুল। চ্যানেলে চ্যানেলে ‘ফোনো’ দিতে দিতে পড়িমড়ি দৌড়।

ঝপ করে আঠাশ বছর আগের দৃশ্যটা মনে পড়ে গেল!

সে-ও এক জেলের বাইরের দৃশ্য। সে-ও এক বলিউড নক্ষত্রের ঘোর দুর্দিন। সেদিন জেলের বাইরের রাস্তায় কিছু মন্দগতির ভিড় (ভাগ্যিস, আঠাশ বছর আগে মোবাইল এবং সোশ্যাল মিডিয়া কী, লোকে জানত না! অডিও ভিস্যুয়াল মিডিয়ার এই উচ্চকিত উপস্থিতিও ছিল না! নইলে কুরুক্ষেত্র হত)। ইতিউতি মাত্রই কিছু কৌতূহলী মুখ— এখানে হচ্ছেটা কী?

ভেবে দেখতে গেলে, সে প্রশ্ন তেমন কূট নয়। সকাল-সকাল ঠাণে জেলের মূল ফটকের বাইরে একটা জটলা। এবং সেই জটলা কিছু বলিউড তারকার। কিন্তু চতুর্পার্শ্বের চরাচরে তেমন কোনও তরঙ্গ নেই। কে জানে, নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় হয়ত লোকের হাতে এখনকার তুলনায় বেশি কাজ ছিল!

জেলের ভিতরে বন্দি সঞ্জয় দত্ত। বেআইনি অস্ত্র রাখার দায়ে কিছুদিন আগে গ্রেফতার হয়েছেন। মুম্বই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চে তাঁকে জেরা (সেই ‘জেরা’র সময় নিজেকে বারবার নির্দোষ বলে জাহির করতে থাকা সুপারস্টারের গালে তিনি যে একটি বিরাশি সিক্কার চড় কষিয়েছিলেন এবং সেই থাপ্পড়ের অভিঘাতে চেয়ার থেকে পতনোদ্যত ‘খলনায়ক’-কে যে লম্বা চুলের মুঠি ধরে সিধে করেছিলেন, পরে তা আত্মজীবনীতে লিখেছেন মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার রাকেশ মারিয়া) করার পর পাঠানো হয়েছে ঠাণে জেলে।

চড় খেয়ে সঞ্জয় গ্যালগ্যাল করে পুলিশকে সব বলে দিয়েছেন। কিন্তু বলিউডে সঞ্জয়ের পিতৃসম মহেশ ভট্ট তখনও মনে করছেন, তাঁর বিভিন্ন হিট ছবির হিরো নির্দোষ। সরল ছেলেটিকে রাজনীতির কুম্ভীপাকে ফেলে ভিলেন বানানো হচ্ছে। অতএব রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে হবে। সঞ্জয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ‘বলিউড সলিডারিটি’ দেখাতে হবে।

হেডিং করলাম, ‘সঞ্জয়ের পাশে দাঁড়াতে জেলগেটে গ্রুপ ফোটো, কষ্টে হাসি চাপলেন নায়ক’।

হেডিং করলাম, ‘সঞ্জয়ের পাশে দাঁড়াতে জেলগেটে গ্রুপ ফোটো, কষ্টে হাসি চাপলেন নায়ক’। ফাইল চিত্র।

সঞ্জয়ের জন্মদাতা পিতা অবশ্য সেসব রাস্তায় যাননি। পুত্রের কীর্তিতে এতটাই স্তম্ভিত এবং স্তব্ধবাক হয়ে গিয়েছিলেন সুনীল দত্ত যে, সঞ্জয় যখন ক্রাইম ব্রাঞ্চের দফতরে তাঁর সামনে গড়গড় করে বেআইনি রাইফেল রাখা এবং নষ্ট করার কাহিনি বলেছিলেন ঘণ্টাখানেক ধরে, তাঁর রাজনীতিক পিতা মাথা নিচু করে ভোম্বল হয়ে বসেছিলেন। আত্মজীবনীতে তা-ও লিখেছেন অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস মারিয়া।

মহেশের প্রযোজনা সংস্থা তখন যথেষ্ট ক্ষমতাশালী। সেই সূত্রে তিনি কিছু তারকাকে জুটিয়েছেন। আর বেলা গড়ানোর আগেই তাঁদের এনে ফেলেছেন ঠাণে জেলের প্রধান ফটকের সামনে। সঙ্গে একটা ব্যানারও আছে। খানিক অপেশাদার এবং কাঁচা হাতের কাজ। কিন্তু তখন তা-ই বা করে কে! মুম্বই থেকে ঠাণের দূরত্ব খুব বেশি না হলে খুব কমও নয়। কিন্তু মহেশ (এবং তাঁর ভাই মুকেশ) ডাকলে আসবে না, এমন বান্দা তখন বলিউডে ছিল না।

বলিউড তারকাদের সেই জমায়েতের খবর আগে থেকে পেয়ে টুকটুক করে কলকাতা থেকে যাওয়া নাদান সাংবাদিক হাজির হয়েছে অকুস্থলে। খবরটা দিয়েছিলেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। তিনিও হাজির আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্টারের সঙ্গে।

সেখানেই প্রথম দেখি তাঁকে। সেটাই প্রথম এবং শেষ চর্মচক্ষে দেখা। তার পর প্রায় তিন দশক কেটে গিয়েছে। কখনও তাঁর কোনও সাক্ষাৎকার নিইনি। ছবি মুক্তির সময় সমস্ত তারকাই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট তথা জনসংযোগ এজেন্সি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কিছু দাক্ষিণ্যের সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকেন। পোশাকি ভাষায় যাকে বলে ‘প্রমোশন’। কখনও মুম্বইয়ে। কখনও অন্য কোনও মেট্রো শহরে। সারা দেশের সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন পদমর্যাদার প্রতিনিধি নিষ্ঠাভরে অপেক্ষা করেন লাইনে (আসলে পাইপলাইনে)। ওয়ান-টু-ওয়ান ইন্টারভিউয়ের (দুষ্টু লোকেরা বলে, ওটা আসলে সাক্ষাৎকার’ নয়। ‘ওয়ান-টু-ওয়ান প্রেস কনফারেন্স’) জন্য কখন ডাক পড়বে। সেটা সকাল ১০টা হতে পারে। রাত দেড়টাও হতে পারে। আবার ভোর চারটেও হতে পারে।

যাঁরা সে ভাবে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন (আসলে, সাক্ষাৎকার পেয়েছেন), তাঁদের কয়েকজনের কাছে শুনেছি, তিনি যেমন দুর্দান্ত হাজির-জবাব, তেমনই দুরন্ত এবং অধৈর্য। হাতে-পায়ে কথা বলেন। প্রশ্নকারীর হাত থেকে রেকর্ডার বা মোবাইল প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে নিজের মুখের কাছে ধরে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু করেছেন— এমন নজিরও রয়েছে। এতটাই অতি-সক্রিয় তিনি। মানে, সব সময়েই তিনি ‘ক-ক-ক-ক-কিরণ’!

গণধোলাই খাওয়ার সম্ভাবনা আছে জেনেও এই লেখায় স্বীকার করে ফেলা যাক, কোথাও কোথাও ঝলকানির মতো একটা ‘চক দে ইন্ডিয়া’ বা একটা ‘স্বদেশ’ অথবা একটা ‘কভি অলবিদা না কহনা’ কিম্বা একটা ‘চলতে চলতে’ ছাড়া তাঁকে অভিনেতা হিসেবে খুব একটা নম্বর দিতে ইচ্ছে করেনি। তাঁর গালের টোল, ধনুকের মতো ভ্রূ, ঝিকমিকে চোখ এবং দেহের সমান্তরালে দু’হাত ছড়িয়ে দাঁড়ানোর ‘কিং অব রোমান্স’ ভঙ্গিও সময়ে সময়ে পুনরাবৃত্তিকরণে আক্রান্ত মনে হয়েছে। ফলে তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার তাড়না বোধ করিনি। তবে অন্যদের দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর স্মার্ট এবং চোখা-চালাক জবাব শুনতে বরাবর উন্মুখ থেকেছি।

এই সবে তিনি ছাপ্পান্ন হলেন। চার বছর কম ষাট। তিন দশকেরও বেশি অভিনয় জীবনে কড়া মেক-আপ, চড়া আর্কল্যাম্পের আলো এবং বয়স তাঁর মুখটাকে খানিক দড়কচা মারা করে দিয়েছে। তবে চেহারাটা আগের মতোই ছিপছিপে আছে। আর অটুট, অনড় এবং অটল আছে ভক্তদের কাছে তাঁর আবেদন। সেই আবেদন কি গত একমাসে খানিকটা টোল খেল?

স্মৃতির ধুলো-টুলো ঝেড়ে দেখছি, আঠাশ বছর আগে তিনি অনেক বেশি ছটফটে ছিলেন। ১৯৯৩ সালের সেই দর্শনের সঙ্গে দূরদর্শনে দেখা সিরিয়াল অভিনেতার অনেক মিল। তৎকালীন বেঢপ জিন্‌সের ট্রাউজার্স আর টি-শার্টের উপর জ্যাকেট। অনবরত মাথার চুলে হাত চালাচ্ছেন। চোখে সানগ্লাস। কোথাও স্থির হয়ে দু’দণ্ড দাঁড়াতে পারেন না।

কয়েক হাত দূর থেকে দেখে তখনই মনে হয়েছিল, এই যুবকের মধ্যে একটা নার্ভাস এনার্জি রয়েছে। সেটা সবসময় তাঁর ভিতর থেকে বিচ্ছুরিত হতে থাকে। তাঁকে তিষ্ঠোতে দেয় না। থিতু হতে দেয় না কোথাও।

সেই সকালেও দিচ্ছিল না। রাখাল বালক যেমন পাঁচনবাড়ি-হাতে গরুর পাল তাড়িয়ে নিয়ে যায়, অনেকটা সেরকম ‘হ্যাট-হ্যাট’ ভঙ্গিতে মহেশ সম্মিলিত তারকাকুলকে জেলের গেটের বাইরে ব্যানার হাতে দাঁড় করাচ্ছিলেন। ফ্রেমের একেবারে কোনায় দাঁড়িয়ে তিনি। যথারীতি অস্থির। অনবরত এক পায়ের ওজন অন্য পায়ে চালান করছেন। গ্রুপ ফোটোর জন্য দাঁড়াতে বলায় ফ্যাক করে হেসেই ফেলেছিলেন। সম্ভবত ঘটনার ঘনঘটা বুঝতে পারেননি। সম্ভবত গোটা বিষয়টার অন্তঃসারশূন্যতা তাঁর ভিতর থেকে ছিপি-খোলা সোডার বোতলের মতো ভসভসিয়ে হাসিটা চাগিয়ে তুলেছিল। কে জানে! কিন্তু কারণ যা-ই থাক, মহেশ কড়াচোখে তাকানোয় হাসিটা কপ করে গিলে ফেললেন।

সন্ধ্যায় কলকাতার অফিসে ডেসপ্যাচ পাঠাতে গিয়ে প্রস্তাবিত হেডিং করলাম, ‘সঞ্জয়ের পাশে দাঁড়াতে জেলগেটে গ্রুপ ফোটো, কষ্টে হাসি চাপলেন নায়ক’। কেন কে জানে, ‘নায়ক’-এর নামটা কপিতে লিখিনি। আঠাশ বছর পর মনে পড়ে না তার কোনও বিশেষ কারণ ছিল কি না। সম্ভবত ভয়-টয়ই পেয়ে থাকব। দাঁড়াতে এসেছেন পাশে। দেখাতে এসেছেন সহানুভূতি। অথচ খ্যাক-খ্যাক করে হাসছেন, তার কোনও প্রামাণ্য ছবিও তো ছিল না ছাই!

এসব ক্ষেত্রে মহাজ্ঞানী-মহাজনেরা বলেই গিয়েছেন, নামটা বাদ দিয়ে যাও। তাতে কপির কোনও অঙ্গহানি হয় না। পেশাগত গুরুজনদের সেই বরণীয় পথ ধরে হাসি-চাপা নায়কের নাম-ছাড়াই কপি পাঠালাম কলকাতায়। প্রথম পাতায় ছাপা হয়ে বেরিয়েও গেল।

ওই পর্যন্তই। অতঃপর তাঁর কিছু ছবি দেখলেও তাঁকে নিয়ে আলাদা কোনও উৎসাহ দেখানো বা আলোচনা করার অবকাশ হয়নি।

একবার ছাড়া।

জেলের গেটে করোনা-রোধী মাস্ক ভেদ করেও পড়া যাচ্ছিল বিপন্ন পিতার চিন্তিত মুখের রেখা।

জেলের গেটে করোনা-রোধী মাস্ক ভেদ করেও পড়া যাচ্ছিল বিপন্ন পিতার চিন্তিত মুখের রেখা। ফাইল চিত্র।

বান্দ্রা-ওরলি সি লিঙ্ক উদ্বোধনের আগের দিন। মুম্বইয়ের ভবিষ্যৎ অভিজ্ঞান তৈরির বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে একটা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। সাড়ে ৫ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ, আট লেনের সেতুটি উদ্বোধন করার আগে সেটি ঘুরে দেখবেন সনিয়া গাঁধী (সি-লিঙ্কের পোশাকি নাম ‘রাজীব গাঁধী সি লিঙ্ক’)। সারারাত ধরে গাঁতিয়ে কাজ হচ্ছে। অন্তত দু’শো লোক হইহই করে খাটছে।

গভীর রাতে আচমকাই সেখানে দেহরক্ষী পরিবৃত হয়ে ঢুকে পড়লেন তিনি! ‘‘কেয়া হো রহা হ্যায় ইঁয়াহা? কেয়া হো রহা হ্যায়?’’ লোকজন খানিক ভ্যাবাচাকা। কী বলব-কী বলব ভাব। অতঃপর এক পদস্থ এসে তাঁকে বোঝালেন, কী হচ্ছে। খানিকক্ষণ শুনে-টুনে তিনি যে আবার হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলেন, সেটা বড় কথা নয়। আসল কথা হল, যে মিনিটদশেক রইলেন, আগাগোড়া ছটফট করলেন। কখনও টি-শার্টের কলার খামচাচ্ছেন, কখনও দু’টো হাত কনুই থেকে ভাঁজ করে কাঁধের কাছে পুটদু’টো ধরে টানছেন। হাইপার অ্যাক্টিভের হদ্দমুদ্দ। এবং সবসময় তাঁর দু’চোখে একটা অবাক বিস্ময় লেগে রয়েছে যে, তিনি কয়েকশো মিটারের মধ্যে সমুদ্রতটে লোকলস্কর নিয়ে শ্যুট করছেন! বিরাট তামঝাম। অথচ এই উইয়ে খাওয়া-পুঁইয়ে পাওয়া লেসার মর্টালরা ঘাড় গুঁজে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে! তাঁকে নিয়ে কোনও আগ্রহই নেই? এটা কী করে সম্ভব!

শুনে মনে হয়েছিল, খ্যাতনামী হওয়ার কী জ্বালা! উচ্চকিত উপস্থিতি ছাড়া বাঁচা যায় না। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়! লোকে আমায় চিনতে পারছে না! কী সাঙ্ঘাতিক!

সেই তাঁকে জেলবন্দি ছেলের সঙ্গে দেখা করতে আসতে হল আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে। ছোট গাড়িতে জনতার নজর এড়িয়ে। বাড়তি দেহরক্ষী মোতায়েন করে বানাতে হল কঠোরতর নিরাপত্তা বলয়। যাতে গায়ের কাছে কোনও উটকো লোক না-চলে আসে। না-উড়ে আসে কোনও অবাঞ্ছিত প্রশ্ন। যেন কানে না-পৌঁছয় পথচলতি লোকের খিকখিক হাসি। যাদের দিকে মহেশ ভট্টের মতো কড়া চোখে তাকানোর কেউ নেই। ফলে তারা সে হাসি গিলে ফেলার চেষ্টাও করছে না।

হাতি কাদায় পড়েছে। ব্যাঙে এসে ইচ্ছেমতো লাথি মেরে যাচ্ছে। তিনি মৌনীবাবা। এমনকি, বাৎসরিক রীতি ভেঙে নিজের জন্মদিনে বাংলোর ঘেরাটোপ থেকে ভক্তদের সঙ্গে দেখাটুকুও করতে পারলেন না! মুম্বই ছেড়ে চলে গেলেন আলিবাগে।

জীবন কী ভাবে সমস্ত হিসেবনিকেশ চুকিয়ে দেয়!

বিধ্বস্ত তাঁকে দেখে আঠাশ বছর আগে ঠাণের জেলগেটে তাঁর ওই ফিচেল হাসি এবং সেটা গিলে ফেলাটা মনে পড়ছিল। হেফাজতে মাদক রাখার দায়ে পুত্র হাজতে। ২৬ দিন জেলে থাকার পর জামিন পাওয়ার পরেও বলা হচ্ছে, নেহাত বড় বাপের ব্যাটা বলে এত কম দিনে জামিন হল। নইলে নিজের হেফাজতে মাদক রাখা তো জামিন-অযোগ্য অপরাধ। এখনও কত লোক দু’বছর, তিন বছর ধরে জেল খাটছে। তেইশ বছরের যুবকের মুণ্ডপাত হচ্ছে দিকে দিকে। ছেলেকে বখাটে বানানোর দায়ে তাঁকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে অহরহ। তাঁর অনতি-অতীতের চোখা-চালাক অবতার উধাও। উধাও প্রতিটি পদক্ষেপে আত্মবিশ্বাস। জেলের গেটে করোনা-রোধী মাস্ক ভেদ করেও পড়া যাচ্ছিল বিপন্ন পিতার চিন্তিত মুখের রেখা।

মনে হচ্ছিল, ভিতরের সমস্ত নার্ভাস এনার্জি শুকিয়ে গিয়েছে। নিজের ছটফটে, স্মার্ট এবং স্বভাবজ অস্থির সত্তাটাকে গলা টিপে মেরে নীরবতার অধ্যয়ন করতে হচ্ছে। দৌড়ে পালাতে হচ্ছে নিজের অতীতের ছায়া থেকে। মনে হচ্ছিল, জীবন কী ভাবে সমস্ত হিসেবনিকেশ চুকিয়ে দেয়!

আঠাশ বছর আগে নামটা লিখিনি। আঠাশ বছর পর লিখছি। দ্য নেম ওয়াজ খান। শাহরুখ খান!

অন্য বিষয়গুলি:

Shah Rukh Khan Sanjay Dutt Aryan Khan Bollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE