লকডাউনের ফলে অনলাইনে পড়াশোনার গুরুত্ব বেড়েছে। ছবি: শাটারস্টক।
প্র: এর আগে কি কখনও অনলাইন ক্লাস নিয়েছেন?
উ: না। এটা একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা।
প্র: প্রতি দিনই কি ক্লাস নিতে হচ্ছে? কত ক্ষণ এক একটা ক্লাসের দৈর্ঘ্য?
উ: সপ্তাহে দু’দিন ক্লাস নিতে হয়। মঙ্গল আর বৃহস্পতিবার। প্রতি দিন দুটো করে। এক একটা ক্লাস দেড় ঘণ্টার।
প্র: কী পড়াচ্ছেন অনলাইনে?
উ: মুলত দুটো বিষয় পড়াচ্ছি। দুটোই আন্ডার গ্র্যাজুয়েট স্তরের। একটা আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস, রেনেসাঁ থেকে রুশ বিপ্লব পর্যন্ত। দ্বিতীয়টা অন্য রকম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গ্রেট বুকস’ বলে একটা বিষয় পড়ানো হয়। ন’টি বইয়ের বিষয়ে সবিস্তার পড়ানো হয় এই পেপারে। এটা কম্পালসারি— সবাইকেই পড়তে হয়। আমি আপাতত পড়াচ্ছি ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’।
আরও পড়ুন: সামনে কঠিন পথ, প্রশাসনের মানবিক মুখ জরুরি
প্র: চার দেওয়ালের মধ্যে ছাত্র-শিক্ষকের যে আদানপ্রদানের সম্পর্ক তৈরি হয়, সেটা কি অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে?
উ: না। একেবারেই না। সেটাকে খুবই মিস করছি। অনলাইনে প্রশ্নোত্তর সম্ভব। কিন্তু ডিসকাশন অসম্ভব। সেই ইন্টারঅ্যাকশনটাকেই খুব মিস করছি। ফিজিক্যাল টিচিংয়ে ছাত্রছাত্রীদের মুখ বা রিঅ্যাকশন দেখতে পাই। অনলাইনে সবাইকে দেখা সম্ভব নয়। ফিজিক্যাল পড়ানোয় অনেক সময় ছাত্রছাত্রীদের প্রতিক্রিয়া দেখে তারা কতটা বুঝতে পারছে, আমি বেশি দ্রুত বলছি কি না— এগুলো বুঝতে পারি। কিন্তু অনলাইনে সেই সব একেবারেই বুঝতে পারছি না। আমার কথাগুলো ছাত্রছাত্রীরা লিখে উঠতে পারছে কি না, বুঝতে পারছি না। আমি ওদের বলেছি, আমি যদি খুব দ্রুত বলতে থাকি, তা হলে ওরা যেন আমাকে থামায়। আর একটা বড় অসুবিধা, অনলাইনে বোর্ড ওয়ার্ক করা যায় না। আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস পড়াতে গেলে অবধারিত ভাবে কিছু ব্যক্তিনাম চলে আসে, যাদের বানান ও উচ্চারণে পার্থক্য রয়েছে। ফিজিক্যাল ক্লাসে আমি সেগুলো বোর্ডে লিখে দিই। কিন্তু এখানে অসুবিধা হচ্ছে। এই অসুবিধার কথা ভেবেই আমি লেকচারটা হয়ে যাওয়ার পরে ছাত্রছাত্রীদের একটা পয়েন্ট ওয়াইজ সামারি মেল করে দিই। তাতে ইম্পর্ট্যান্ট কনসেপ্ট আর প্রাসঙ্গিক ব্যক্তিনাম বানান সমেত ওরা পেয়ে যায়।
অনলাইনে পড়াশোনায় ছাত্র-শিক্ষকের আদানপ্রদানের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে না, মত রুদ্রাংশুবাবুর। ছবি: শাটারস্টক।
প্র: আপনার প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আমি জানি, আপনি কোনও তাত্ত্বিক বিষয় পড়াতে গেলে ছাত্রদের তর্ক করার অবকাশ দিতেন। অনলাইনে কি সেটা আদৌ সম্ভব হচ্ছে?
উ: শুধু তাত্ত্বিক নয়, তত্ত্ব ও তথ্য— দুটো ক্ষেত্রেই ক্লাসরুম টিচিংয়ের কোনও বিকল্প হতে পারে না। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বলে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে, এই মাত্র। ছাত্রদের বঞ্চিত না করে যতটা করা যায়…
আমাকে পুরনোপন্থী বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আমি অনলাইন ব্যাপারটাতেই তেমন স্বচ্ছন্দ নই। আমি অনলাইনে কিছু পড়তে পারি না। খবরের কাগজও নয়। বই তো নয়ই। অনলাইনে বই বা ই-বুক পড়া আমার দ্বারা হয়ে ওঠে না। কিন্ডল বা ওই জাতীয় কিছুতে বই পড়তে পারি না। হাতে ফিজিক্যাল কপি না পেলে ব্যাপারটা ঠিক জুতের হয় না। কখনও কখনও বিদেশি খবরের কাগজ অনলাইনে পড়লেও পড়তে পারি। কিন্তু বই একেবারেই নয়। এতে আমায় পুরনোপন্থী বলতে পারো। কিন্তু আমার কিছু করার নেই।
আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরেই চলে আসছে করোনাভাইরাসের টিকা! দাবি অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীর
প্র: ক্লাসরুমে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষকের যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে, অনলাইনে সেটা কি সম্ভব হচ্ছে?
উ: একেবারেই তা হচ্ছে না। যদিও ছাত্রছাত্রীদের আমি আমার ফোন নম্বর দিয়ে রেখেছি। শুধু পড়াশোনা নয়, অন্য যে কোনও দরকারেও যেন তারা আমাকে ফোন করে, বলে রেখেছি। যদি এই পরিস্থিতিতে অবসাদে ভোগে, তা হলেও যেন আমাকে ফোন করে। কথা বলে মন হালকা করতে পারে।
প্র: ভবিষ্যতের পড়াশোনা কি অনলাইন-নির্ভর হয়ে যাবে বলে মনে হয়?
উ: আমার তা একেবারেই মনে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের পড়া অনলাইনে সম্ভব নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও একটা বিরাট জগৎ রয়েছে, অসংখ্য জিজ্ঞাসু মানুষ রয়েছেন। তাঁদের কাছে অনলাইন মারফৎ বড় কাজ করা যেতে পারে। অশোকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা নতুন কার্যক্রম শুরু করেছে— ‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাসরুম’। এখানে অনলাইনে প্রতি বুধ ও শনিবার কোনও এক জন শিক্ষক তাঁর নিজের বিষয়ে একটা ছোট প্রেজেন্টেশন রাখেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে সেই প্রেজেন্টেশন। এটা শুরু হয়েছে লকডাউনের পর থেকে। কিন্তু আমরা ঠিক করেছি, এই পরিস্থিতির পরেও আমরা এটা চালিয়ে যাব। এটা শুরু করেই আমরা বুঝতে পারলাম যে, এর একটা বিপুল চাহিদা রয়েছে। প্রতিটি সেশন প্রায় ১২০০-১৫০০ মানুষ দেখছেন। এক জন মডারেটর প্রশ্ন করছেন, সেই শিক্ষক তার উত্তর দিচ্ছেন। এর বাইরেও, চ্যাট মারফত প্রশ্নোত্তরের ব্যবস্থা রয়েছে। এটা করতে গিয়ে আমরা বুঝতে পারছি যে, একটা সামাজিক দায়িত্ব পালন সম্ভব হচ্ছে এর মাধ্যমে। কিন্তু নিয়মিত পড়াশোনার ব্যাপারে আমি ফিজিক্যাল ক্লাসকেই প্রেফার করব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy