আরিস্ততলের গোল্ডেন মিনস অথবা বুদ্ধের মঝ্ঝিম পন্থা— ভারসাম্য রক্ষা করিয়া মধ্যপথে চলিবার উপদেশটি অমান্য করিবার কুফল বারংবার প্রমাণিত। গত শতাব্দীতেই একাধিক বার বিশ্বে, বিশেষত ইউরোপে চরমপন্থার প্রবল আধিপত্য দেখা গিয়াছে। কিন্তু মানুষ বার বার ইতিহাসের পাঠ ভুলিয়া যায় এবং তাহার মাসুল গনিয়া থাকে। এই মুহূর্তে দুনিয়া জুড়িয়া চরমপন্থী রাজনীতির অভিযান চলিতেছে। এবং, আবারও, ইউরোপের নানা দেশ সেই ব্যাধির কবলে। রাশিয়া-সহ পূর্ব ইউরোপ হইতে ব্রিটেন, স্ক্যান্ডিনেভিয়া হইতে ইটালি— অধিকাংশ দেশেই চরমপন্থীদের প্রকট উপস্থিতি। এবং তাহারা প্রায় সর্বক্ষেত্রেই দক্ষিণপন্থার প্রবক্তা। বিশেষত বিদেশি বা অভিবাসীদের প্রতি তীব্র বিরাগ এবং সঙ্কীর্ণ অতিজাতীয়তাবাদ তাহাদের সাধারণ অভিজ্ঞান।
আশঙ্কা ছিলই, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট নির্বাচনে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা বড় রকমের সাফল্য অর্জন করিবে। সেই আশঙ্কা অংশত সত্য প্রমাণিত। ইউরোপে যাহাকে মধ্য-বাম এবং মধ্য-দক্ষিণ বলা হয়, সেই দুই শিবিরের সমন্বয়ে তৈয়ারি মঝ্ঝিম বর্গটি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের চার দশকের জীবনে এই প্রথম সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাইয়াছে। অন্য দিকে, দক্ষিণপন্থীরা তাহাদের আসন বাড়াইয়াছে ২০ হইতে ২৫ শতাংশে। বিশেষত ফ্রান্স ও ইটালিতে অভিবাসী-বিরোধী অতিজাতীয়তাবাদীদের জনসমর্থন লক্ষণীয় ভাবে বাড়িয়াছে। ব্রিটেনের পরিস্থিতি স্বতন্ত্র, ব্রিটিশ ভোটদাতারা প্রধানত ব্রেক্সিট প্রশ্নে প্রার্থী বা দল বাছিয়াছেন, কিন্তু সেই প্রেক্ষাপটে ব্রেক্সিট পার্টির চমকপ্রদ সাফল্য চরমপন্থী অভিযানের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ। অতিজাতীয়তাবাদী দক্ষিণপন্থী দলগুলি মৌলিক চরিত্রেই সম্মিলিত ইউরোপ-এর ধারণার পরিপন্থী। তাহাদের অনুগামীদের ক্ষেত্রে এই ভোট ইউরোপ নামক এককের ভোট নহে, অনেকগুলি দেশের স্বতন্ত্র ভোটের সমাহারমাত্র। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই আংশিক দক্ষিণায়ন ইইউ-এর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎকে আরও কিছুটা অনিশ্চিত করিল।
কিন্তু চরমপন্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে জনসমর্থন বাড়িয়াছে বামপন্থীদের, বিশেষত ‘গ্রিন’ দলগুলির। জার্মানিতে, ফ্রান্সে, ইংল্যান্ডেও। এই দলগুলির মুখ্য আদর্শ পরিবেশমনস্কতা, কিন্তু এখন তাহার সহিত যুক্ত হইয়াছে সামাজিক ন্যায়ের প্রতি প্রবল সমর্থন এবং অভিবাসী-বিদ্বেষের বিরোধী অবস্থান। অর্থাৎ পরিবেশবাদের পাশাপাশি বামপন্থী অর্থনীতি এবং সামাজিক সহিষ্ণুতাও তাহাদের চরিত্রলক্ষণ। মধ্য-বামদের ভোট কাটিয়াই এই বাড়তি সাফল্য, কিন্তু এই দলগুলিকে অতিবামপন্থী বলিলে ভুল হইবে, ইহারা কার্যত পরিবেশসচেতন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট। বস্তুত, মধ্য-বামদের আত্মপ্রত্যয়ের অভাব এবং দোলাচলই বহু মানুষকে এই দিকে ঠেলিয়া দিয়াছে। ব্রেক্সিট প্রশ্নে যেমন ব্রিটিশ লেবার পার্টির দোলাচল বহু সমর্থককে লিবারাল ডেমোক্র্যাটদের শিবিরে ঠেলিয়া দিয়াছে। এই পরিবর্তন দুইটি কারণে আশাব্যঞ্জক। এক, ইহা সঙ্কীর্ণ আধিপত্যকামী অতি-দক্ষিণপন্থার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিস্পর্ধী হইয়া উঠিতে পারে। দুই, ইহার ফলে রাজনীতির মঞ্চে ও কার্যক্রমে পরিবেশ এবং সামাজিক ন্যায়ের গুরুত্ব বাড়িতে পারে। আপাতত ইহা আশামাত্র। তবে ইউরোপ অন্তত আশায় বুক বাঁধিতে পারে, ভারতে সেই ভরসাও নাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy