Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

আনন্দ হোক শব্দের বিপদহীন

শব্দ অসুরের অত্যাচারে আর কী কী হতে পারে, কালীপুজোর আগে তার একটা ছোটখাটো তালিকা দেওয়া যাক।

অনির্বাণ জানা
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০৫
Share: Save:

১৯৯৯ সালের ‘নয়েজ় পলিউশন অ্যান্ড রেগুলেশন রুল’-এর কিছু পরিবর্তন আনা হয় ১১ অক্টোবর, ২০০২ সালে। রাত দশটা থেকে বারোটা পর্যন্ত কোনও ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো যেতে পারে, তার পরে নয়। এই অনুমতি কখনও পনেরো দিনের বেশি পাওয়া যাবে না।

শব্দ অসুরের অত্যাচারে আর কী কী হতে পারে, কালীপুজোর আগে তার একটা ছোটখাটো তালিকা দেওয়া যাক। মানুষ সাধারণত কুড়ি হার্জ ফ্রিকোয়েন্সির কম শব্দ শুনতে পায় না। আবার শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি যদি কুড়ি হাজার হার্জের ওপর হয়, তা হলে সেই শব্দ মানুষ বুঝতে পারবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’র হিসেব অনুযায়ী, ষাট ডেসিবেল শব্দ এক জন মানুষকে কিছু ক্ষণের জন্য বধির করে দিতে পারে, আর একশো ডেসিবেল শব্দ সম্পূর্ণ ভাবে বধির করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। বিশেষ করে তিন বছরের কম বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে কিছুটা দূর থেকে সৃষ্টি হওয়া একশো ডেসিবেল শব্দ শ্রবণশক্তি সারা জীবনের জন্য নষ্ট করে দিতে পারে। শব্দের বাঞ্ছনীয় মাত্রা হল শয়নকক্ষে ২৫ ডেসিবেল, বসার, খাওয়ার ঘর এবং কাজের জায়গায় ৪০ ডেসিবেল। হাসপাতালের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩৫ ডেসিবেল, রেস্তরাঁয় ৬০ আর রাত্রিকালীন শহর এলাকায় ৪৫। এর ওপরে আওয়াজের মাত্রা হলে তাকে শব্দদূষণ বলা যাবে। শব্দদূষণের কারণে সরাসরি কানের ব্যামো ছাড়া বাড়তে পারে ব্লাড প্রেশার, দুশ্চিন্তা, উগ্রতা বা অ্যাগ্রেসিভনেস। কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ বা টিনিটাস হতে পারে। শব্দদূষণের ফলে ঘুম কমে যাওয়া বা মানসিক অবসাদ হতে পারে। শিশুদের স্বাভাবিক বুদ্ধির বিকাশ বাধা পায়।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এক জন মানুষকে যদি প্রতি দিন আট ঘণ্টা করে ষাট থেকে আশি ডেসিবেল শব্দের মধ্যে রেখে দেওয়া হয়, তা হলে ছ’মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সে সম্পূর্ণ বধির হয়ে যাবে।

একটানা যান্ত্রিক আওয়াজও ক্ষতিকর। যে সব ডাক্তার আইসিইউ-এর দায়িত্বে থাকেন, তাঁদের একটা অদ্ভুত জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। কিছু কিছু রোগীর মধ্যে মানসিক অস্থিরতার লক্ষণ ফুটে ওঠে। অনেক শান্তশিষ্ট রোগীও অকারণ চেঁচামেচি জুড়ে দেন। কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের মতে, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে মনিটরগুলোর একটানা যান্ত্রিক শব্দ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এবং এটি ‘আইসিইউ সাইকোসিস’-এর প্রধান কারণ।

প্রসঙ্গত, এ বছর বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ শ্রীরামকৃষ্ণের ১৮৪তম জন্মমহোৎসব পালনের সময় এক সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রতি বছর এই দিন বাজি পোড়ানোর উৎসব হয়। এ বছর সেটা বন্ধ রাখা হল। একে তো পাড় ও ঘাটের সংস্কারের কাজ চলছে, তার ওপর অনেক ভক্ত নদীর ধারে বসে বাজি পোড়ানো দেখেন। স্বামী সুবীরানন্দের কথায়, “মূলত জল, বায়ু ও শব্দ দূষণ যাতে না ঘটে, সে কথা মাথায় রেখেই আমরা বাজি উৎসব থেকে বিরত থাকছি এ বার।”

সুচিন্তার আর একটি উদাহরণ দিই। ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণ দিকে রয়েছে বেশ কিছু আবাসন। ও দিকে রয়েছে এয়ার টার্মিনালগুলো। শব্দের অত্যাচারে আবাসিকদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। বিমানবন্দরের আধিকারিকরা দিল্লির আইআইটি-র সাহায্য নিয়ে তৈরি করেছেন ১.০৫ কিমি লম্বা ৩.৫ মিটার উচ্চতার একটি দেওয়াল। শব্দকে বাধা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

সবাই যদি এ রকম সচেতন হত!

পরীক্ষানিরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কলকাতার অধিকাংশ জায়গায় শব্দের প্রাবল্য ৭৭.৮৮ থেকে ৭৯.৭৮ ডেসিবেল। আর বেশ কিছু সমীক্ষায় কলকাতার ৩০ থেকে ৭৫% মানুষের আংশিক বা পূর্ণ বধিরতার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

আপনিও কি সেই দলে আছেন? সেটা দেখে নেওয়ার জন্য হরেক রকম অ্যাপ চালু আছে। কিন্তু রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ‘হু’-এর একটি অ্যাপের হয়ে সওয়াল করছে। নাম ‘হিয়ারহু’ (hearWHO)। অ্যাপটি ব্যবহার করা খুব সহজ এবং এটি বেশ নির্ভরযোগ্য। খুব তাড়াতাড়ি রোগ শনাক্তকরণের জন্য যে কেউ স্মার্টফোনে ‘হিয়ারহু’ ইনস্টল করে নিতে পারেন।

কলকাতার এক ইএনটি সার্জনের আক্ষেপ, “কানের ক্ষতির ব্যাপারগুলো কেউ কানেই তোলে না। যারা অনেক ক্ষণ আওয়াজের মধ্যে থাকে এবং কানে অতিরিক্ত একটা ঝিঁঝির ডাকের মতো আওয়াজ শোনে, তাদের সাবধান হওয়া উচিত। সেটা কানের পক্ষে শেষের শুরু হতে পারে। বাচ্চাদের শব্দবাজি থেকে দূরে রাখা উচিত। খুব সহজে ওদের টিম্পানিক মেমব্রেনের ক্ষতি হয়।”

এ বারের কালীপুজো আর দেওয়ালি শব্দকে জব্দ করে শুধু আলোর পুজো হোক না! শব্দদূষণের তমসা দূর হোক।

নদিয়া জেলা হাসপাতাল

অন্য বিষয়গুলি:

Diwali Pollution Noise Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy