Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Human Resource Development Ministry

সংস্কার কোন পথে

জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন ও স্কুলশিক্ষা সংস্কার নিঃসন্দেহে অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে প্রস্তাব জমা দিয়াছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি)। শুরু হইয়াছে স্কুলশিক্ষা সংস্কারের বৃহৎ সরকারি প্রকল্প। দেশ জুড়িয়া স্কুলশিক্ষার্থীরা কী পড়িবে, কী ভাবে পড়িবে, শিক্ষকদের পাঠদানের উপাত্ত ও পদ্ধতি কী রূপ হইবে তাহার রূপরেখা নির্মাণ। ঠিক হইয়াছে, আগামী এক বৎসরের মধ্যে নূতন পাঠ্যক্রম তৈরি হইবে, নূতন পাঠ্যবই লেখার কাজও শুরু হইবে। কাজ শেষ করিতে হইবে ২০২৩-এর এপ্রিলের মধ্যে। সমগ্র প্রকল্পটি পর্যালোচনা করিবে ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক, আর এই সমস্ত কিছুই হইবে ২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষা নীতি অনুসারে। জাতীয় শিক্ষা নীতির খসড়া লইয়াও কাজ চলিতেছে, এই মাসের মধ্যেই তাহা চূড়ান্ত হইবার কথা।

জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন ও স্কুলশিক্ষা সংস্কার নিঃসন্দেহে অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে, কেননা ভবিষ্যতের স্কুলশিক্ষার্থীরা কী পড়িবে, কী শিখিবে, এই নীতি ও পদ্ধতিই তাহা স্থির করিতে চলিয়াছে। প্রাথমিকের পাঠ শেষ করিয়া স্কুলশিক্ষার পরবর্তী ধাপে আসিয়াই শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বিষয়ের প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ ও ধ্যানধারণা তৈরি হয়। কাজেই, বইয়ে কী আছে, শিক্ষকেরা তাহা কেমন করিয়া পড়াইতেছেন, এই প্রশ্নগুলি জরুরি হইয়া দাঁড়ায়। সরকার চালায় দল, দলীয় মতাদর্শে সরকারের ঘোষিত শিক্ষা নীতি তথা বিদ্যায়তনের পঠনপাঠন প্রভাবিত হইতেই পারে। বিজেপির শাসনামলে তাহা দেখা গিয়াছে, এখনও যাইতেছে। খসড়া শিক্ষা নীতি লইয়াও কথা কম উঠে নাই। জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদী মাতব্বরি চালাইতে চাওয়া এই দল শিক্ষাকেও গৈরিক করিতে চায়, অভিযোগ উঠিয়াছে। অঙ্ক বইয়ে হাত দেওয়া শক্ত, তবে নিজেরা বিন্দুমাত্র না বুঝিলেও বৈদিক গণিত লইয়া লম্ফঝম্প করাই যায়। তাহাই হইয়াছে। বিজ্ঞান তথ্য ও তত্ত্বসাপেক্ষ, যুক্তি ও প্রমাণনির্ভর, তাহাতে কী! প্রাচীন শাস্ত্র বা পুরাণের আশ্চর্য বস্তু ও ঘটনা সামনে আনিয়া প্রাণপণ প্রমাণের চেষ্টা চলিয়াছে, তাহা বৈজ্ঞানিক, প্রাচীন হিন্দু ভারতে পূর্ব হইতেই ছিল। ভূগোলে অখণ্ড ভারতকে দেখাইয়া আজিকার উগ্র জাতীয়তাবাদী আবহে তাহা পুনরধিকারের স্বপ্নও বিরল নহে। ইতিহাসেরও করুণ দশা। মুঘল তথা ইসলামি শাসন মানেই অন্ধকার যুগ, হলদিঘাটের যুদ্ধে আসলে হিন্দু রাজপুত রানাপ্রতাপই জিতিয়াছিলেন— শেখানো হইতেছে।

মনে পড়িতে পারে, ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেই সঙ্ঘ পরিবার ‘ভারতীয় শিক্ষা নীতি আয়োগ’ নামে একটি কমিটি গঠন করিয়াছিল। উদ্দেশ্য ছিল প্রচলিত ‘সেকুলার’ শিক্ষাব্যবস্থার ‘ভারতীয়করণ’। বার্তা পরিষ্কার, শিক্ষা ধর্মনিরপেক্ষ নহে, হিন্দুত্ববাদী হউক, তাহাই ভারতীয় হওয়া। ভারতের ইতিহাসের পুনর্লিখনই এখন দেশবাসী ও ইতিহাসবিদদের দায়িত্ব, নেতামন্ত্রীরা তাহা প্রকাশ্যে বলিতে দ্বিধাবোধ করেন না। দেশবাসীর লিখিবার ক্ষমতা নাই, ইতিহাসবিদরা প্রতিবাদ করিলেও উপেক্ষণীয়। শিক্ষা নীতি হইতে পাঠ্যক্রম নির্ধারণ সরকারেরই হাতে। মোদী সরকারের প্রথম চার বৎসরে ১৮২টি পাঠ্যবইয়ে ১৩৩৪টি ‘পরিবর্তন’ হইয়াছিল। আসন্ন স্কুলশিক্ষা সংস্কারে এ বার কী হইবে, আশঙ্কা রহিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Human Resource Development Ministry Education NCERT
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy