যোগী আদিত্যনাথ। — ফাইল চিত্র
গরুর রক্ষণাবেক্ষণের হিসাব কষা অর্থশাস্ত্রীদের প্রাত্যহিকতার অঙ্গ নহে। তবুও, যোগী আদিত্যনাথ যখন ঘোষণা করিলেন যে, রাজ্যের ‘গোমাতা’-দের ভরণপোষণের খরচ জোগানো তাঁহার সরকারের নিকট অগ্রাধিকার পাইবে, একাধিক অর্থশাস্ত্রী খাতা-কলম খুলিয়া বসিয়াছিলেন। হিসাব কষিয়া দেখাইয়াছিলেন, বাতিল গরুদের জন্য গোশালা গড়িয়া তাহাদের রক্ষণাবেক্ষণে মোট যে খরচ হইবে, তাহা সামাল দেওয়ার সাধ্য রাজ্যের কোষাগারের নাই। কিন্তু, ধর্মসিক্ত রাজনীতি কবে আর অর্থশাস্ত্রের কথা শুনিয়াছে? গত এপ্রিল হইতে গোশালায় সরকারি টাকা আসা বন্ধ হইয়া গিয়াছে, জানাইয়াছে পঞ্চায়েত প্রধানদের সংগঠন। এত দিন নাকি প্রধানরা ব্যক্তিগত টাকা ব্যয় করিয়া গরুর খাবার জোগাইতেছিলেন, কিন্তু ২৫ ডিসেম্বর তাঁহাদের মেয়াদ ফুরাইবে। সরকার অবিলম্বে টাকা না পাঠাইলে তাঁহারা গোশালা হইতে গরু ছাড়িয়া দিবেন বলিয়া জানাইয়াছেন, যাহাতে প্রাণীগুলি খাদ্যাভাবে না মরে।
প্রতিশ্রুতি দেওয়ার তুলনায় টাকা দেওয়া কঠিনতর, অস্বীকার করিবার উপায় নাই। কিন্তু, এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট টাকার ব্যবস্থা করা যে সম্পূর্ণ অসম্ভব ছিল, কথাটি জানা সত্ত্বেও আদিত্যনাথরা মানিতে রাজি হন নাই। জবাইয়ের উদ্দেশ্যে গরু বিক্রয় করা চলিবে না, সরকার এই ফরমান জারি করিবার পর অনেকেই বাতিল গরুকে পথে ছাড়িয়া দিয়াছিলেন। সেই অবোলা প্রাণীগুলি কৃষির যথেষ্ট ক্ষতি করিয়াছে। উদাহরণটি শিক্ষণীয় হইতে পারিত। হয় নাই। কর্নাটকের বিজেপি সরকার আইন করিয়া সমস্ত গবাদি প্রাণিহত্যা নিষিদ্ধ করিয়াছে। আশঙ্কা হয়, উত্তরপ্রদেশ যে সঙ্কটের সম্মুখীন হইয়াছে, কর্নাটকও তাহাকে এড়াইতে পারিবে না।
সঙ্কটের মূল কারণ, রাজনীতি-চালিত এই সিদ্ধান্ত জীবতন্ত্র ও অর্থশাস্ত্রের প্রাথমিক যুক্তিকে অস্বীকার করে। গরুকে একটি প্রাণী— একটি অর্থনৈতিক সম্পদ— হিসাবে না দেখাই মূল ভ্রান্তি। গোমাতা সংক্রান্ত আবেগ সংবরণ করিতে পারিলে বোঝা যায়, দুধেল গাই হিসাবে একটি গরুর কার্যক্ষমতা শেষ হইলে তাহাকে পুষিয়া রাখিবার আর কোনও কারণই থাকিতে পারে না। তাহার যে ব্যয়, তাহা সরকারেরই সাধ্যাতীত, ফলে ব্যক্তির পক্ষে তাহা বহন করা অসম্ভব। বরং, গোমাংস প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকে উৎসাহ দিলে তাহা বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে বড় ভূমিকা লইতে পারে। ভারতে এই ব্যবসাটি ক্রমে শক্তপোক্ত হইয়া উঠিতেছিল, বিদেশের বাজারে জায়গা করিয়া লইতেছিল। তাহাকে উৎসাহ দেওয়াই বিধেয়। সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপের বাজার ধরা ভারতের পক্ষে সম্ভব। চর্মশিল্পেও গরুর চামড়ার অভাবে সমস্যা হইতেছে। কেহ, বিশেষত ভক্তরা, আপত্তি করিতে পারেন— ইহা নিষ্ঠুরতা। বাস্তব অবশ্য বলিতেছে, ইহাই সদয়তম পন্থা। দুধ ফুরাইলে গরুকে লইয়া কী করিব, কৃষককে যদি এই উদ্বেগ হইতে মুক্তি দেওয়া যায়, তবে তাঁহাদের পক্ষে অপেক্ষাকৃত অধিক সংখ্যক গরুকে অপেক্ষাকৃত অধিক যত্নে পালন করা সম্ভব হইবে। এবং, গোমাংস যে হেতু এই পণ্যশৃঙ্খলের শেষতম পণ্য, বিশ্ববাজারে তাহার জোগান বাড়াইতে হইলে তাহার পূর্ববর্তী ধাপের পণ্য, অর্থাৎ দুগ্ধেরও উৎপাদন বাড়িবে। দেশ জুড়িয়া আর একটি শ্বেত বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। কিন্তু, তাহার জন্য গোমাতার রাজনৈতিক আবেগটিকে বর্জন করিতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy