ফাইল চিত্র।
বিড়াল সচরাচর গাছে উঠতে চায় না, কেবলমাত্র ঠেলায় পড়লেই ওঠে। এমন এক প্রবচন চালু রয়েছে বাংলার লোক-পরিসরে। সেই প্রবচনের সার্থকতা জাহির করতে পারে, তেমন এক দৃষ্টান্তের জন্ম দিতে চলেছে বিজেপি। এমনিতে ঝাড়ু বস্তুটি খুব স্বস্তিদায়ক নয় বিজেপির কাছে। দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টির ঝাড়ু-ঝড়ে যে ঐতিহাসিক পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছিল বিজেপিকে, তার পর থেকে ঝাড়ুর প্রতি বিজেপি নেতাদের বিতৃষ্ণা থাকা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। রূপকার্থে বা প্রতীকী অর্থে ঝাড়ু বিজেপির জন্য ‘শুভ’ নয় মোটেই। কিন্তু সেই ঝাড়ুই এ বার বিজেপির ‘সেবাধর্মের’ প্রতীক হয়ে উঠতে চলেছে। শুধু বিজেপির নয় ভারত সরকারেরও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিন ১৭ সেপ্টেম্বরকে ‘সেবা দিবস’ হিসেবে পালন করার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে গোটা ভারতে। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জনপদে সে দিন ঝাড়ু হাতে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা, বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রীরা, জনপ্রতিনিধিরা, বিজেপি নেতারা। ‘স্বচ্ছতা’ অর্থাৎ পরিচ্ছন্নতার কাজে হাত লাগিয়ে মন্ত্রী-জনপ্রতিনিধি-নেতারা জাতির সেবায় নিজেদের দায়বদ্ধতার প্রমাণ রাখবেন।
জাতির সেবায় ব্রতী হওয়ার অঙ্গীকার করার মধ্যে খারাপ কিছু নেই। কিন্তু মহা আড়ম্বরে এবং চিৎকৃত ভঙ্গিতে জানান দেওয়ার মতো নতুন কিছুও নেই এই অঙ্গীকারে। সরকার জাতির সেবার জন্যই গঠিত হয়, রাজনৈতিক দলও মানুষের সেবার কথা বলেই রাজনীতিতে আসে। ‘আমরা সেবায় বড় আগ্রহী, বড়ই উৎসাহী’- এ কথা এত ঘটা করে বললে মনে হয়, আত্মপ্রশস্তির তাড়না নিজের চারপাশ থেকে যাবতীয় পর্দা খসিয়ে ফেলছে। মনে হয়, পরিচ্ছন্নতা সুনিশ্চিত করার চেয়ে মুখ দেখানোর বা ছবি তোলানোর তাড়না অনেক বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: মোদীর জন্মদিনে ‘সেবা দিবস’ পালন করছে সরকার
স্বচ্ছতা অভিযান বা পরিচ্ছন্নতা অভিযানের নামে যা কিছু হচ্ছে, সে সবই অসারগর্ভ, এমনটা বলছি না। নরেন্দ্র মোদীর সরকার স্বচ্ছতার প্রশ্নে যে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে, গোটা দেশে সচেতনতা যে বাড়িয়ে তুলেছে, সে কথা অনস্বীকার্য। কিন্তু গন্তব্য থেকে এখনও অনেক দূরে আমরা। পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার প্রশ্নে হোক বা ঘরে ঘরে শৌচালয় গড়ে তোলার প্রশ্নে, কাজ যেটুকু হয়েছে, বাকি যে তার কয়েক গুণ রয়েছে, সে কথা মোদী সরকারও কোনও ভাবেই অস্বীকার করতে পারবে না। তাই আচমকা এমন উদ্যাপনের আয়োজন খুব অর্থপূর্ণ কিছু নয়।
প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনকে সেবা দিবস হিসেবে বেছে নেওয়ার মধ্যেও কিন্তু আত্মপ্রশস্তির একটা নির্লজ্জ অবয়ব রয়েছে। এই প্রথম এমন ঘটছে, তা নয়। জওহরলাল নেহরুর জন্মদিনে শিশু দিবস পালনের ঘোষণা পথ দেখিয়েছিল এই মর্মে। কিন্তু নেহরু বা তাঁর রাজনৈতিক উত্তরসূরিদের পথকে বিজেপি আপন করে নেবে, এমনটা বেশ আশাতীতই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy