Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

ভ্যাকসিনে বিশ্বাস ফেরাতে হলে

সমাজের বিভিন্ন স্তরে ভ্যাকসিনের প্রতি মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার কারণ একাধিক।

তপতী দত্ত
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৫৭
Share: Save:

ভারতে করা এক অনলাইন সমীক্ষা বলছে, ২৬২টি জেলা থেকে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ২৫ হাজার জনের ৬০ শতাংশের মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়ায় অনীহা রয়েছে। অন্য দিকে ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত এক সমীক্ষা অনুযায়ী ৬৭ শতাংশ আমেরিকানই কোভিড ভ্যাকসিন নিতে চান। কিন্তু সেখানেও ভৌগোলিক ভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভ্যাকসিন সম্পর্কে অবিশ্বাস রয়েছে। এই অবিশ্বাস বেশি দেখা যায় প্রান্তিক মানুষ, জনজাতি ও গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীদের মধ্যে। তাই ভ্যাকসিন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত যাঁদের হাতে, তাঁদের কাজটা সহজ নয়। সেই সমস্ত মানুষের কাছেও ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে হবে, যাঁদের মধ্যে ভ্যাকসিনেশন নিয়ে রয়েছে সন্দেহ, কুসংস্কার।

সমাজের বিভিন্ন স্তরে ভ্যাকসিনের প্রতি মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার কারণ একাধিক। কোনও জনগোষ্ঠী বা সমাজের একটা স্তরের মানুষজন আগে প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবৈষম্য, জাতিবৈষম্য বা অন্য কোনও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন কি না, হলে তা গোষ্ঠীর সঙ্ঘবদ্ধ স্মৃতিকে কতটা প্রভাবিত করেছে, কোনও ভাবে হিংসার শিকার তাঁরা হয়েছেন কি না, এই সব কিছুই অবিশ্বাসের জন্ম দেয়।

এই অবিশ্বাসের আবহাওয়া বদলাতে প্রয়োজন সংক্রমণ থেকে বাঁচার শিক্ষার প্রচার এবং ভ্যাকসিন সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক তথ্যের প্রচার। যদিও এ কাজে প্রধান চ্যালেঞ্জ, একটি সামাজিক স্তরের জনমানস সর্বত্র সমান হয় না। তাই সচেতনতা গড়ে তোলার কাজটা করতে হবে ছোট ছোট ভিন্ন মত পোষণকারী গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে আলাদা করে গুরুত্ব দিয়ে। অর্থাৎ কাজ করতে হবে ‘সাব-পপুলেশন’ পর্যায়ে। এ ব্যাপারে অব্যর্থ কর্মপদ্ধতি এখনও নির্দিষ্ট নয়।

যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ, অর্থনৈতিক জোগান ও বহু কর্মীর সমন্বয়ের কারণে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। কর্মীদের মধ্যে বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক কর্মী, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সংবাদমাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে। যেমন, ‘কোভ্যাক্স’ প্রকল্পে যুক্ত থেকেছে মোট ১৯০টি দেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অতিমারির শুরুর দিন থেকে এখনও পর্যন্ত প্রতিটি ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করেছে, পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতির ব্যাপারে বার্তা দিয়ে গিয়েছে। জনজীবনে অতিমারির প্রভাব মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন সংবাদকর্মীরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফেসবুক লাইভ যাতে ভাষাগত সমস্যার জন্য কারও কাছে অধরা না থেকে যায়, সে ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে হবে। তাঁদের প্রকাশিত তথ্যে স্বচ্ছতা আনতে হবে।

পোলিয়ো ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে ভারতে স্থানীয় স্তরে উদ্যোগের উদাহরণ রয়েছে আগে থেকেই। আজ ভারত পোলিয়ো-মুক্ত। অন্য তৃতীয় বিশ্বের দেশেও ছোট জনগোষ্ঠী ও সামাজিক-অর্থনৈতিক পর্যায়ের গভীরে গিয়ে পোলিয়ো মোকাবিলার কাজ হয়েছে স্থানীয় উদ্যোগে। তবে স্থানীয় উদ্যোগে ভ্যাকসিনেশনে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার স্ট্র্যাটেজি তখনই সফল হবে যখন একটা বড় জনগোষ্ঠীর মধ্যে কাদের ভ্যাকসিন দরকার, কারা ভ্যাকসিন কিনতে পারবেন বা পারবেন না এবং ভ্যাকসিন ভাবনায় স্থানীয় সংস্কারের প্রভাব— এ সমস্ত কিছুর নিখুঁত মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব হবে। এই মানচিত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রক বা ভ্যাকসিনপ্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে ধাপে ধাপে একটা গোটা পপুলেশনের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার পদ্ধতি নির্ণয় করতে সাহায্য করবে। ভ্যাকসিনেশনের নামে যেন কোনও অসাম্য বা বৈষম্যকে উস্কে দেওয়া না হয় তা দেখতে হবে।

কয়েকটি ক্ষেত্রে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, বিশেষত ভারতের মতো দেশে। স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো, ডিজিটাল দুনিয়ার সুবিধেগুলো আরও ক্ষুরধার করা বা সোজা কথায় ভাল অ্যাপ তৈরি করা এবং ভ্যাকসিন পরিবহণ ও বণ্টনকে সুষ্ঠু ভাবে চালনা করা। একটা বড় ভৌগোলিক ক্ষেত্রের প্রতিটি কোণে ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে একটা নিরবচ্ছিন্ন ‘কোল্ড চেন’ গড়ে তোলাও ভীষণ জরুরি।

প্রান্তিক মানুষ, জনজাতি ও গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীদের মধ্যে ভ্যাকসিন সম্পর্কিত অবিশ্বাস কাটাতে ও ঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে স্থানীয় প্রশাসন, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মী ও সমাজকর্মীদেরও। নেটিভ আমেরিকান ও প্রাচীন রোমের প্লিবিয়ানদের মধ্যে ছবিতে গল্প বলার চর্চা ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ভ্যাকসিন নেওয়া ও বাধ্যতামূলক ভ্যাকসিনেশনের পার্থক্য কী, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও ভ্যাকসিনেশনের পরে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া কোথায় আলাদা, এই বিষয়গুলোয় সচেতনতা গড়ে তুলতে এমন অভিনব উপায়ের কথা ভাবা যেতেই পারে— বিশেষত যখন সোশ্যাল মিডিয়ার দৌরাত্ম্যে ভুয়ো খবর ছড়াতে, অবিশ্বাসকে আরও জোরদার করতে সময় লাগে না।

ফোর্ট লুইস কলেজ, কলোরাডো, আমেরিকা

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus vaccination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy