গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
ছাত্র ইউনিয়ন গঠনের দাবি পড়ুয়াদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত না করিয়া কি অধিকার কার্যকর করা উচিত? ন্যায্য প্রাপ্য দিবার উদ্দেশ্য সিদ্ধ করিতে গিয়া যদি প্রক্রিয়াটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তাহা স্থগিত রাখা বিধেয়। পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রভোটও তদ্রূপ। অবশেষে পরিস্থিতি কিছু স্বাভাবিক হইয়াছে, এবং ছাত্র ইউনিয়ন বা কাউন্সিল তৈয়ারির জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানে দরজা খুলিয়াছে সরকার। তৎক্ষণাৎ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণাও করিয়া দিয়াছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। পশ্চিমবঙ্গে শেষ বার ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রভোট অনুষ্ঠিত হইয়াছিল। কিন্তু বরাবরের ন্যায় ছাত্র রাজনীতিকে কেন্দ্র করিয়া কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অশান্তি জারি ছিল। সেই প্রেক্ষিতেই অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল গড়িবার কথা ভাবিয়াছিল সরকার। বিধানসভায় বিলও আসিয়াছিল, কিন্তু ডান-বাম সকল ছাত্র সংগঠন, এমনকি তৃণমূল ছাত্র পরিষদও অরাজনৈতিক কাউন্সিলের বিরোধিতা করায় সমগ্র রাজ্যে সেন্ট জ়েভিয়ার্স মডেল অধরাই রহিয়া গেল। প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষও জানাইয়াছেন, ভোট হইবে পুরাতন নিয়মেই। তবে লিংডো কমিশনের সুপারিশ মানিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ক্লাসে ৭৫ শতাংশ হাজিরার যে নিয়ম প্রেসিডেন্সিতে আছে, তাহা চালু থাকিবে। ঘটনাক্রমকে স্বাগত জানাইলেও আশঙ্কার মেঘটি— যে কারণে বারংবার নির্বাচন বন্ধ রাখিতে হয়— অস্বীকার করা চলিবে না।
দুই বৎসর পূর্বে যে সকল অশান্তির সূত্রে প্রক্রিয়াটি স্থগিত রাখিতে হইয়াছিল, তাহার দিকে চোখ ফিরানো আবশ্যক। বহু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্রভোটের কর্মকাণ্ড ছাত্রদের হাতে থাকে নাই, বরং বয়োজ্যেষ্ঠরাই স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া সেই দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছিলেন। অবশ্যম্ভাবী রূপে আসিয়া পড়িয়াছিল রাজনৈতিক হিংসা। পড়ুয়াদের একান্ত নিজস্ব এই পরিসরে বৃহত্তর রাজনীতির প্রবেশ নূতন নহে। একের পর এক জমানা বদলাইয়াছে, কিন্তু কু-অভ্যাসের বিষবাষ্পে ক্রমেই পূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে রাজ্যের শিক্ষাঙ্গন। ছাত্ররা রাজনীতি করিতেই পারেন, সমস্যা নাই। বস্তুত, আঠারো বৎসর বয়সের পূর্ণবয়স্ক নাগরিক আপন রাজনৈতিক বোধ অনুসারে চলিবেন এবং যূথবদ্ধ হইয়া সমাজে সেই বোধ চারাইয়া দিবার চেষ্টা করিবেন, তাহাই বিধেয়। কিন্তু রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে তাঁহাদের যে উপায়ে দাবার বোড়ের ন্যায় ব্যবহার করা হইয়া থাকে, যুবসমাজকে যে রূপে ক্ষমতা দখলের সোপান হিসাবে কাজে লাগানো হয়, তাহাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটির সুস্বাস্থ্যের উদ্দেশ্যেই বারংবার ছাত্রভোট স্থগিত রাখিতে হয়।
ছাত্র রাজনীতির যে কদর্য চেহারা নানা সময়ে রাজ্যের নানা শাসক দল তৈয়ারি করিয়াছে, তাহাকে বদলাইতে না পারিলে গণতন্ত্রের মুক্তি নাই। অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীদের পাশ-ফেলের রেকর্ড দেখা, ইউনিয়নের কাজে বাহিরের লোকের প্রবেশাধিকার না দেওয়া ইত্যাকার যে সকল প্রস্তাব লিংডো কমিশন করিয়াছিল, সেগুলিকে বলবৎ করা গেলে সেই পথে কিছু দূর আগাইবার চেষ্টা চলিতে পারে। রাজ্য রাজনীতির কান্ডারিদেরও এই স্থলটি ছাড়িয়া রাখিতে হইবে। সকলকে বুঝিতে হইবে, ছাত্র রাজনীতির কাজ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের প্রতিনিধিত্ব করা। সেই স্থলে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধের উপস্থিতি কেবল বিসদৃশ নহে, ঘোরতর অন্যায়। নির্দিষ্ট বিভাগ হইতে ব্যবস্থা করিয়া শ্রেণি-প্রতিনিধি নির্বাচন হওয়াই স্বাভাবিক, কোনও পার্টি অফিস হইতে নহে। এই বিকেন্দ্রীকরণে লাভ দুইটি। এক, বহিরাগত দলীয় রাজনীতির অনুপ্রবেশ কমিবে, এবং দুই, কলেজের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন সম্ভব হইবে। এই পর্বে এত দূর পৌঁছানো যায় নাই, তাই আশাও তত নাই। অধিকারের মঞ্চ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হইল বটে,
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy