Advertisement
২৭ জানুয়ারি ২০২৫

লন্ডন ডায়েরি

ভগিনী নিবেদিতার জন্মের সার্ধশতবর্ষ পূর্তিতে ‘ইংলিশ হেরিটেজ’ সংস্থা বাড়িটির সামনে একটি নীল ফলক বসাচ্ছে। আয়ারল্যান্ডের ডানগানন শহরে জন্ম হয়েছিল মার্গারেটের।

শ্রাবণী বসু
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:০০
Share: Save:

এই বাড়িতেই ছিলেন নিবেদিতা, জগদীশচন্দ্র

শ্রদ্ধার্ঘ্য: উইম্বলডন শহরের বাড়িতে ভগিনী নিবেদিতা স্মরণে নীল ফলক

উইম্বলডন স্টেশন থেকে মিনিট কয়েকের পথ। ব্যস্ত রাজপথে একটা কাফে-র উপরে বাড়িটা। আজ থেকেই পথচারীরা জানতে পারবেন, এই বাড়িতে থাকতেন মার্গারেট নোবল তথা নিবেদিতা, ভারতের স্বাধীনতা ও শিক্ষার কাজে যিনি আত্মনিবেদন করেছিলেন। ভগিনী নিবেদিতার জন্মের সার্ধশতবর্ষ পূর্তিতে ‘ইংলিশ হেরিটেজ’ সংস্থা বাড়িটির সামনে একটি নীল ফলক বসাচ্ছে। আয়ারল্যান্ডের ডানগানন শহরে জন্ম হয়েছিল মার্গারেটের। ১৮৯৫ সালে লন্ডনে স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ, কলকাতায় আসেন ১৮৯৮ সালে। মেয়েদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিবেকানন্দই তাঁকে ‘নিবেদিতা’ নাম দেন। বিবেকানন্দের সঙ্গে পাশ্চাত্যযাত্রায় ১৮৯৯ সালের ৩১ জুলাই নিবেদিতা উইম্বলডনের ২১ হাই স্ট্রিটের এই বাড়িতে পৌঁছন। স্বামীজি প্রথম দু’রাত এখানেই ছিলেন, পরে নিবেদিতা ও তাঁর পরিবারের অন্যান্যরা কাছেই আর একটি বাসস্থান খুঁজে দেন। ১৯০২-এর জানুয়ারি অবধি নিবেদিতা এই বাড়িতে ছিলেন। এই সময় তিনি লন্ডনে বেদান্ত প্রচারে সাহায্য করতেন।

লন্ডনে নিবেদিতার বাড়িতে ফলকটি বসানোর মূলে আছেন সারদা বসু নামে এই শহরেরই এক বিজ্ঞান-শিক্ষক। তিনিই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ফলকটি বসানোর আবেদন করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘১৯০১-এর ব্রিটিশ জনগণনায় আছে, এই বাড়িতেই ১৯০১ সালে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ও তাঁর স্ত্রী লেডি অবলা বসু ছিলেন। বিবেকানন্দ থাকতেন এখান থেকে ১৫ মিনিট দূরে, ৩৫ উডসাইড ঠিকানায়।’ ছোট্ট নীল ফলকটি বাংলার ইতিহাসকে জুড়ে দিল আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেনের সঙ্গে। এর আগে যে বাঙালিদের এ রকম নীল ফলকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে তাঁরা হলেন রাজা রামমোহন রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দ। স্বামী বিবেকানন্দের স্মারক নীল ফলকটি আছে ওয়েস্টমিনস্টারের সেন্ট জর্জেস ড্রাইভ-এ।

ঠাঁই পেলেন নুর

ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে নতুন করে খোলা হয়েছে ভারতীয় গ্যালারি, এ সপ্তাহে চলছে তার উদ্‌যাপন। ভারতের স্বাধীনতার ৭০ বছর পূর্তির আবহে দ্বার খুলছে ‘স্যর জোসেফ হোটাং গ্যালারি অব চায়না অ্যান্ড সাউথ এশিয়া’-র। সমসাময়িক ও প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতির বহুবিধ ক্ষেত্রের সংস্পর্শে আসবেন দর্শকরা। ভারতীয় সংগ্রহের ভারপ্রাপ্ত রিচার্ড ব্লার্টন বলেছেন, শুধু আধুনিক ভারতেরই নয়, ব্রিটেনের প্রতি সনাতন ভারতের অবদানকেও তুলে ধরা হচ্ছে। পণ্ডিত রবিশঙ্করের ব্যবহৃত সেতারটি প্রদর্শিত হচ্ছে, তাঁর স্ত্রী সুকন্যা ও কন্যা অনুষ্কা সেটি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষকে। আছে ব্রিটিশ মিউজিয়মের সংগ্রহ থেকে পাওয়া, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বহুচর্চিত চরিত্র নুর ইনায়েত খানের একটি আবক্ষ মূর্তি। ২০১২ সালে লন্ডনের গর্ডন স্কোয়ারে রাজকুমারী অ্যান নুরের একটি আবক্ষ মূর্তি উদ্বোধন করেছিলেন, এটি তারই প্রতিরূপ। নুর ব্রিটিশ মিউজিয়মে স্থান পেলেন, খুব আনন্দের কথা। বিশ্বযুদ্ধে সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে কাজের প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় এখানেই তিনি তাঁর ভারতীয় শেকড়ের সন্ধান করতে, পড়াশোনা করতে এসেছিলেন। শিখতে চেয়েছিলেন সংস্কৃত ভাষাও। ১৯৪৪ সালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে তাঁর মৃত্যু হয়।

বিশুদ্ধ স্বাস্থ্যকর রাস্তা

আনন্দপথ: অক্সফোর্ড স্ট্রিটে পথচারীরা

দিল্লির দূষণ যেখানে সমানে চলেছে, সেখানে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান তাঁর শহরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখতে বেশ কতকগুলো দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ন’বছরের বেশি পুরনো আর ডিজেলে চলা গাড়িকে লন্ডনের কেন্দ্রে ঢুকতে হলে দিতে হবে ‘টি-চার্জ’। আরও একটা বৈপ্লবিক পরিকল্পনা করেছেন সাদিক। লন্ডনের প্রধান কেনাকাটার রাস্তা অক্সফোর্ড স্ট্রিট-এর পশ্চিম দি়কের অংশটা ‘শুধুমাত্র পথচারীদের জন্য নির্দিষ্ট’ থাকবে, রাস্তার বিভিন্ন জায়গা সাজানো থাকবে পাবলিক আর্টে। অক্সফোর্ড সার্কাস থেকে সেলফ্রিজেস অবধি অংশটুকু হবে এই পথচারীদের এলাকা। ফুটপাত জুড়ে থাকবে রংবেরঙের ছবি, বসানো হবে নানান শিল্পসামগ্রী। দু’পাশে থাকবে গাছের সারি, বসবার বেঞ্চ। ২০১৮-র মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে সব। এখন বাস, লন্ডনের বিখ্যাত ব্ল্যাক ট্যাক্সি, বাইসাইকেল আর রিকশা চলে এ রাস্তায়। ইউরোপের অন্যতম ব্যস্ত এই ‘শপিং স্ট্রিট’-এ রোজ হাঁটেন আনুমানিক ৫ লক্ষ মানুষ।

মিথরাসের মন্দির

১৯৫৪ সালে লন্ডনের সানডে টাইমস সংবাদপত্র ক্যানন স্ট্রিটে এক নির্মীয়মাণ অফিসবাড়ির তলায় এক রোমান মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের খোঁজ দিয়েছিল। খোঁড়াখুঁড়ি়তে পাওয়া গিয়েছিল মিথরাস দেবতার মাথার দুটো ছবিও। সংবাদপত্র-পাঠকদের দাবিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল অফিসবাড়ি তৈরির কাজ বন্ধ রেখে আরও খননকার্যের নির্দেশ দেন। প্রত্নবস্তুগুলিও অন্যত্র সরিয়ে রাখা হয়েছিল। ৬৩ বছর পর সেই ধ্বংসস্তূপে— এখন যা ব্লুমবার্গ মিডিয়া সংস্থার অফিস— তৈরি হচ্ছে মিথরাসের নতুন মন্দির। ১৪ নভেম্বর খুলে দেওয়া হচ্ছে। থাকছে প্রায় ৬০০ প্রত্নসামগ্রী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy