Sourced by the ABP
রূপালি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর উত্তর সম্পাদকীয় প্রবন্ধে (বাঙালি অবহেলা করেছে বলে, ৮-৭) জরুরি প্রশ্নগুলো তুলেছেন— এই বঙ্গের মহাবিদ্যালয়গুলোতে রসায়ন বা পদার্থবিজ্ঞান পড়ার জন্য নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান ব্যতিরেকে ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা কেন অধিক প্রাধান্য পাবে? কলকাতায় পড়ুয়া হয়েও অনেক অবাঙালি ছাত্রের কাছে ক্লাসে বাংলা ভাষা বা শব্দ ব্যবহার কেন অসহনীয় হবে? সরকারি পরীক্ষায় ৩০০ নম্বর বাংলা ভাষার জন্য বরাদ্দ থাকার কারণে বাঙালিদের আপত্তিই সর্বাপেক্ষা বেশি। বাংলা ভাষার প্রতি ন্যূনতম সম্মান জ্ঞাপনও আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। বরং, বহির্বঙ্গে ইংরেজির কদর বেশি। সুতরাং বাংলায় পড়ে কী লাভ, এই প্রশ্ন আমরা বাঙালিরাই করেছি।
পড়তে পড়তে মনে হল, আমাদের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। বহু বছর আগে আমাদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান স্নাতকোত্তর ক্লাসে ‘পলিটিক্যাল থট’ পড়াতে পড়াতে এক দিন অধ্যাপক মহাশয় চার জন অবাঙালি ছাত্র-ছাত্রীর অনুমতি নিয়েই দুরূহ বিষয়টি বাংলায় বুঝিয়ে দেন। ওই চার জন ক্লাস বয়কট করেছিল।
হ্যাঁ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় ধর্মতলার কতিপয় দোকানে এখনও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় কিছু দোকানের নাম, পথ-নির্দেশ চোখে পড়ে। কিন্তু, সারা কলকাতা তথা রাজ্যে ইংরেজি ভাষা স্বমহিমায় বিরাজমান। বেশি দূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাঙালির প্রিয় পর্যটনস্থল দার্জিলিং বাঙালি ভ্রমণপিপাসুদের জন্যই সারা বছর ব্যবসা-বাণিজ্যে জমজমাট। ওই শৈলশহরে খুঁজে পাবেন বাংলা ভাষার অস্তিত্ব? একমাত্র স্টেশনের নামে বাংলায় দার্জিলিং লেখা আছে! গত বছর মিরিক বেড়াতে গিয়ে সবিস্ময়ে লক্ষ করেছিলাম, একটি বার কাম রেস্তরাঁর কর্মচারীরা ইংরেজিতে কথা বললে প্রীত হন। কিন্তু, বাংলায়? নৈব নৈব চ। আরও বিস্মিত হবেন শিলিগুড়ি বেড়াতে গেলে। বইমেলা হয়, নাট্যোৎসব হয়, কিন্তু পথ-নির্দেশিকা বা দোকানে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব নেই।
শিলিগুড়ির একটি ব্যাঙ্কে আমার কলকাতাস্থিত শাখা-অফিসের চেকে টাকা তুলতে গিয়েছিলাম। কাউন্টারে নেপালি ছেলেটি বাংলায় কথা বলবে না। আমিও নাছোড়বান্দা। যতটুকু বাক্যালাপ প্রয়োজন, ততটুকু মাতৃভাষাতেই সারলাম। শিলিগুড়ির বাঙালি ব্যবসায়ী শ্রেণি নেপালিতে চৌকস বলেই বোধ হয় পাহাড়ের বিপুল সংখ্যক ক্রেতার সঙ্গে নেপালিতে ভাব বিনিময় করেন। এক ফলবিক্রেতাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “আপনি নেপালিতে কথা বলছেন কেন? উনি তো বেশ বাংলা বোঝেন।” তিনি বলেছিলেন, “দাদা, পাহাড়ের মানুষ আছেন বলেই শিলিগুড়ির এমন রমরমা। ওঁরা আমাদের কাছে প্রায়োরিটি।” এই উত্তর ছিল যথেষ্ট।
ধ্রুবজ্যোতি বাগচি
কলকাতা-১২৫
দোষ হিন্দির?
রূপালি গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র। ইদানীং বাংলা ভাষা নিয়ে কোনও বিতর্ক হলেই দোষটা চলে আসে ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার উপর। সবাই যেন একযোগে বলছে, বাংলা ভাষা আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে ইংরেজি ও হিন্দি আগ্ৰাসনের মুখে। ভাষা-বিপন্নতার বিষয়ে ইউনেস্কো বিভিন্ন মাপকাঠি ঠিক করেছে, যেগুলো হল— ১) দুর্বল ২) নিশ্চিত ভাবে বিপন্ন, ৩) আশঙ্কাজনক ভাবে বিপন্ন, ৪) মুমূর্ষু এবং ৫) বিলুপ্ত। বাংলা ভাষাকে এর কোনও বিভাগে ফেলা যায় না, তার একমাত্র কারণ বাংলা ভাষা এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে এটা ঠিক যে, বাংলা ভাষা যাতে এই সব বিভাগের মধ্যে চলে না আসে, তার জন্য এখন থেকেই সাবধান হতে হবে।
হিন্দি আর ইংরেজি ভাষাকে বাংলা ভাষার শত্রু না ভেবে মিত্র মনে করাই ভাল। তবে এই দুই ভাষার সঙ্গে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা চলতে পারে, তাতে বাংলা ভাষার লাভই হবে। নেতিবাচক না হয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে সব কিছু দেখতে হবে। এখনকার ছেলেমেয়েরা বাংলা গানের চেয়ে হিন্দি গান বেশি শোনে। হিন্দি সিনেমা বেশি দেখে। ইংরেজি বই বেশি পড়ে। এর সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে বাংলা গান ও বাংলা সিনেমার মান ও বিনোদনের দিকটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আর ইংরেজি যে-হেতু সুযোগ ও সাফল্যের ভাষা, তাই এখনকার ছেলেমেয়েরা ইংরেজির দিকে বেশি ঝুঁকেছে। আবেগকে আবেগের জায়গায় রেখে, ভাষার ক্ষেত্রে আমাদের আরও বাস্তববাদী হতে হবে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলায় ‘সাইনবোর্ড’ লেখার যে আন্দোলন হয়েছিল, তাতে ওঁরা ইংরেজি ‘সাইনবোর্ড’কে বাংলায় ‘সাইনবোর্ড’-ই বলেছিলেন। অথচ, এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘নামপাটা’! ওঁরা নিশ্চয়ই দোকানে দোকানে গিয়ে ‘নামপাটা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি! করলে দোকানদাররা তার মানে বুঝতে পারতেন না।
অশোক বসু
বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
হীনতার বোধ
‘বাঙালি অবহেলা করেছে বলে’ প্রবন্ধ এবং সম্পাদকীয় ‘বৈষম্যের কারণ’ (৯-৭) এক কঠিন বাস্তব এবং নির্মম সত্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ইংরেজ আমলে ইংরেজি ছিল রাজদণ্ডের প্রতিভূ। সাধারণ মানুষের অসীম শ্রদ্ধা-ভক্তি ছিল এই ভাষার উপর। সওদাগরি অফিসে কর্মরত বাবু (করণিক) চিঠিতে বা ফাইলে শক্ত শক্ত ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে নোট দিত ইংরেজ উপরওয়ালাকে খুশি করার জন্য। স্বাধীনতার পরেও মেধা যা-ই হোক, সপ্রতিভ ভাবে ইংরেজি বলিয়ে মানুষকে একটু বেশি কদর করার ভাবনার কোনও পরিবর্তন হল না। আসলে ইংরেজি ভাষায় সাবলীল না হলে বাঙালির মনে তৈরি হয় এক হীনতার বোধ। কোনও বিষয়ের উপর তার যতই দখল থাকুক না কেন, ইংরেজি ভাষায় তুখোড় না হলে যেন জাতে ওঠা গেল না। এই অবস্থা এক দিনে তৈরি হয়নি। এই অবস্থা তৈরি করেছি আমরা, যারা একটু বড় হোটেল বা রেস্টুরেন্টে গেলে বাংলা বলতে ভয় পাই। দায়ী সেই সব বাঙালি, যারা মনে করে বাংলা শুধু গ্রামবাংলা বা পাড়ার মুদির দোকানে কিংবা শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি হাটেই বলা যায়।
সম্পাদকীয়তে সঠিক ভাবেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তব্য ও শিক্ষকের প্রকৃত ধর্ম নিয়ে। বাংলা মাধ্যমে পড়া ছাত্রছাত্রীদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে, তাদের ভয় কাটিয়ে দিয়ে, প্রকৃত শিক্ষাদানের পরিবেশ সৃষ্টির আশা এক অলীক কল্পনা হয়েই রয়ে গেছে।
সুরজিৎ কুন্ডু
উত্তরপাড়া, হুগলি
নিষেধ কেন?
কেদারনাথ মন্দির চত্বরে সম্প্রতি ছবি তোলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জানলাম, এক শ্রেণির লোক সেখানে ছবি তুলছিলেন ও রিল বানাচ্ছিলেন। শিয়ালদহ জংশন থেকে টেনে চাপলে অনেক সময়ই কামরার সিট নোংরা করে রাখেন কিছু মানুষ, তা বলে কি সব যাত্রীর সিটে বসা নিষিদ্ধ করা হবে? পুরী, তারাপীঠ, দক্ষিণেশ্বর-সহ বহু মন্দিরেই ছবি তোলা নিষেধ। বছরকয়েক আগে দূর থেকে তারাপীঠের বিগ্রহের ছবি তুলতে গিয়ে কিছু পান্ডার দ্বারা আক্রান্ত হই। পরে পুজো দিতে গিয়ে হাতে দু’শো টাকা দিতেই এক হাত সামনে থেকে বিগ্রহের ছবি তুলতে দেওয়া হয়। দক্ষিণেশ্বরের দেবী মূর্তির সামনে কালীপুজোতে বসিয়ে দেওয়া হয় নামী চ্যানেলের ক্যামেরা। অথচ, মন্দির প্রাঙ্গণে ঢোকার সময় সাধারণ মানুষের মোবাইলটাও জমা নিয়ে নেওয়া হয়। ফোটোগ্রাফির ছাত্র হিসাবে দেশের দেবস্থানগুলোতে এই জুলুম বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।
অয়ন চৌধুরী
কলকাতা-১০৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy