Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
George Floyd

সম্পাদক সমীপেষু: এত বিদ্বেষ কেন

মনে প্রশ্ন আসে, কেন শাহরুখ, আমির, সলমনে মেতে থাকা হিন্দুদের এই নতুন জমানায় এত বিদ্বেষ গড়ে উঠল!

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২০ ০০:৪৬
Share: Save:

সেমন্তী ঘোষের লেখা ‘আমেরিকা জাগছে,ভারত?’ (৯-৬) প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে এই পত্র। পাঠ্যসূচিতে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, লালন, নানক পড়েও ভারতবাসী এ রকম অসূয়াপ্রেমী হয়ে উঠল কেন, ভাবার কথা। টিভি সিরিয়ালে মুসলিম সম্প্রদায়ের পরিবার, সংস্কৃতি, উৎসব প্রায় দেখাই যায় না। চাকরি বা রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রাপ্তিতেও মুসলিমরা বহু যোজন পিছিয়ে। তবু তাঁদের প্রতি ঘৃণার রাজনৈতিক ভাষ্য অনেক হিন্দু মানুষের মনের এত কাছাকাছি! একটা ধুলাগড় টিকিয়াপাড়া পেলে তাঁরা তাঁদের যুক্তি তক্কো গপ্পে বছরভর ইন্ধন দিয়ে যান। তাঁরা দিল্লির দাঙ্গা ভুলে যান, বিভিন্ন সময়ে নিরীহ সহনাগরিককে রাস্তায় ফেলে কোপানো ভুলে যান, গৌরী লঙ্কেশ, কালবুর্গি, পানেসর ভুলে যান, কিন্তু ধুলাগড় মনে রাখেন, রেখেই দেন। তাঁরা নীরব মোদী, সুদীপ্ত সেন রাম রহিম, আসারামকে কিন্তু কখনও ‘হিন্দু অপরাধী’ বলে দেখেন না।

মনে প্রশ্ন আসে, কেন শাহরুখ, আমির, সলমনে মেতে থাকা হিন্দুদের এই নতুন জমানায় এত বিদ্বেষ গড়ে উঠল! কী তার কারণ? মুসলিমদের গোমাংস ভক্ষণ? তাঁদের আজানে ঘুম ভেঙে যাওয়া? বংশ পরম্পরায় হিন্দুদের পরিবারে প্রবাহিত ‘ওরা অস্পৃশ্য’ ধারণার উত্তরাধিকার? উপর্যুপরি হিন্দি সিনেমায় মুসলিম ভিলেনের আধিক্য? সেই সিনেমায় বারংবার মুসলিম ধর্মস্থানকে সন্ত্রাসের আখড়া হিসেবে তুলে ধরা? না কি কমবেশি সব ক’টার অবদান আছে এই ঘৃণার নির্মাণে!

সিরিয়া, ইরাক,আফগানিস্তান, এমনকি বাংলাদেশ পাকিস্তানে, সন্ত্রাসবাদের মূল শিকার কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। এটিও আমাদের কি ইচ্ছাকৃত ভাবেই চোখ এড়িয়ে যায়! না কি ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার সমর্থক যেমন চায়, অপরপক্ষ যেখানেই হোক, যার কাছেই হোক, হারুক, তেমনই যে কোনও ধর্মগোষ্ঠীর মানুষও চায়, অন্য গোষ্ঠী হারুক, পর্যুদস্ত হোক সর্বত্র, সব রকম ভাবে। পৃথিবীর সর্বত্রই কি এই নিয়ম? এবং এর ফলেই সংখ্যালঘু, ক্ষমতাহীনের বিপন্নতা? তা হলে নাস্তিকতাই কি এই গোষ্ঠী-সংঘাত থেকে মুক্তির পথ? মানবতার পথ?

শোভন সেন, সাঁতরাগাছি, হাওড়া

পথে রাজা

“ইউ ক্যান গেট কিল্ড জাস্ট ফর লিভিং ইন ইয়োর আমেরিকান স্কিন”— ব্রুস স্প্রিংসটিনের এই লাইনগুলো বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে যখন, ঠিক তখন একটা এমন রবিবার নেমে এল আমেরিকার নিউ জার্সিতে, ছোটবেলার ভাল রোববারগুলোর মতো। হাইস্কুলের কিশোরী মেয়ে নালা এঞ্জেলা স্কট নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল রাজাকে, থুড়ি নিউ জার্সির গভর্নর ফিলিপ মারফিকে। সে চেয়েছিল, প্রতিবাদের ধুলোবালি মেখে রাজাও এসে পথে নামুন তাদের মিছিলে। কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরীর দাবি ফিরিয়ে দেননি শ্বেত সম্রাট। বরং তিনি এসেছিলেন সস্ত্রীক। মিছিলে হেঁটেছেন মাস্ক পরেই। যে রাজ্যে করোনায় মৃত্যু কবেই লাখের হিসেব পেরিয়ে গিয়েছে, যেখানে এখনও গভর্নরের অর্ডার বলছে ২৫ জনের বেশি জমায়েত করা যাবে না, রাখতে হবে ছ’ফুটের দূরত্ব, সেখানে আজ গভর্নর নয়, শ্বেতাঙ্গ নয়, রাজপ্রাসাদ ছেড়ে রাস্তায় নেমেছিলেন এক জন প্রকৃত মানুষ।

১৬৭৬-এর বেকন রেবেলিয়ন, ১৯৬৩-র ওয়াশিংটনের বিখ্যাত সাদা-কালো মিছিল মনে পড়ছে। আমেরিকায় কেবল দুটো রং নয়, একটা তৃতীয় রংও আছে, মানবতার রং। যে রং মেখে দলে দলে তরুণ আমেরিকান (সাদা কালো নির্বিশেষে) প্রতিবাদে ফেটে পড়ছেন জর্জ ফ্লয়েডের জন্য, অসাম্যের বিরুদ্ধে।

পরিশেষে বলি, এই প্রতিবাদের সঙ্গে আমাদের ভারতীয়দের কালো-ফর্সা মেয়ের ব্যাপারটাকে এই মুহূর্তে না গুলিয়ে ফেলাই ভাল। কারণ আজ অবধি আমেরিকায় কালো ছেলেরা ‘ছেলে’ বলে এই বৈষম্য থেকে পার পেয়ে যায়নি।

ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য, নিউ জার্সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

হাতির কাণ্ড

যুধাজিৎ দাশগুপ্তের ‘অতীত ভোলে না ওরা’ (রবিবাসরীয়, ৭-৬) প্রতিবেদনটি পড়ে এই চিঠি।

পুরুলিয়ার ঝাড়খন্ড সীমান্তে পাহাড়ে ও নদী ঘেরা বনাঞ্চল এলাকার মধ্যেই আমাদের বাড়ি, যেখানে বারো মাসই হাতির উপদ্রব লেগে থাকে। শীত ও গ্রীষ্মকালে খাবারের সন্ধানে হাতিরা দলে দলে বন থেকে বেরিয়ে এসে পার্শ্ববর্তী গ্রামের সব্জির মাঠে ও খামারে দাপিয়ে উৎপাত করে বেড়ায়।

ওরা বোকা, কিন্তু খুব স্মৃতিধর ও প্রতিহিংসাপরায়ণ। তবে মাঝে মাঝে ওদের ‘মানবিক’ মুখ দেখা যায়।

ওরা বনের মধ্যে বা ফাঁকা রাস্তায় কোনও ব্যক্তিকে দেখতে পেলে, শত্রু ভেবে মারতে পিছনে পিছনে ছোটে। লোকটি যদি সোজা রাস্তায় কিংবা উঁচু রাস্তায় ছোটে, তা হলে তাকে সহজেই ধরে ফেলে। কিন্তু ঢালু রাস্তায় কিংবা গর্তে নেমে গেলে, হাতি নিজে পড়ে যাওয়ার ভয়ে তার পিছনে আর তাড়া করে না। আবার, হাতির সামনাসামনি হওয়ার পর, লোকটি যদি বুদ্ধি করে তার সাইকেল বা মোটরসাইকেলটি রাস্তায় ফেলে দেয়, কিংবা নিজের জামা, গেঞ্জি, গামছা রাস্তায় ছুড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়, তা হলে হাতি তার পিছনে তাড়া না করে, সাইকেল বা মোটরসাইকেলটিকে মুচড়ে ভেঙে দুরমুশ করে দেয়, বা লোকটির জামা বা গামছাটিকে পায়ে মাড়িয়ে শুঁড়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে।

যদি বন থেকে হাতির পাল ফসলের জমিতে নামে, অনেক সময় জমির উপরে তাঁবু পেতে থাকা পাহারাদার কৃষকরা বোম ফাটিয়ে, কাঁসা বাজিয়ে, মশাল জ্বালিয়ে কিংবা হাতিকে তির মেরে, তাড়া করে পাশের বনে ঢুকিয়ে দেয়। তার বেশ কিছু দিন পর দেখা যায়, ওই হাতির দল কিংবা তিরে বিদ্ধ রক্তাক্ত হাতিটি চুপিসারে নিঝুম রাত্রে ওই জমির পাশে তাঁবুটির কাছে এসে, মানুষটিকে খুঁজতে থাকে। ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়ে গেলে মেরে ফেলে। না পেলে, গর্জন করতে করতে তাঁবুটিকে ভেঙে গুঁড়িয়ে, রেগে পায়খানা, প্রস্রাব করে, পাশের গ্রামে লোকটিকে খুঁজতে ঢুকে পড়ে। সারা রাত ধরে সকাল পর্যন্ত গ্রামে দাপাদাপি করে মাটির ঘর, পাঁচিল, খোলার চাল ভেঙে তাণ্ডব চালিয়ে, সকালে বনে চলে যায়।

কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা বলে, সেই হাতিরা কখনওই ঘরের আঙিনায় খাটিয়া পেতে শুয়ে থাকা বা রাস্তায় দাঁড়ানো কোনও বাচ্চা ছেলেমেয়েকে, একেবারে কাছাকাছি দেখতে পেয়েও, কিছু করে না।

তপনকুমার বিদ, বেগুনকোদর, পুরুলিয়া

কেরলের দোষ?

‘নৃশংস নিদর্শন’ (৮-৬) শীর্ষক চিঠি প্রসঙ্গে বলি, হাতিটির প্রতি নিষ্ঠুরতার কাণ্ডটিকে ঘিরে, কেরল সরকারকে দোষারোপ করা হচ্ছে কেন? ভারতের প্রতিটি রাজ্যে প্রায় প্রতি দিনই নানা বর্বর ঘটনা ঘটছে। কিছু খারাপ লোকের জঘন্য কাজের জন্য একটা রাজ্যের সাক্ষরতার হার, শিক্ষার মূল্য ইত্যাদি নিয়ে উপহাস করা সমীচীন নয়। সাড়ে তিন কোটির উপর যে রাজ্যের জনসংখ্যা, সেখানে কিছু নিষ্ঠুর, দুর্জন লোক তো থাকবেই। আমাদের রাজ্যে গত বছর জানুয়ারি মাসে এনআরএস নার্সিং হোস্টেলে নৃশংস ভাবে ১৬টি কুকুরের বাচ্চাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল। তাতে কি প্রমাণ হয়, পশ্চিমবঙ্গ অত্যন্ত অশিক্ষিত রাজ্য? এ সব নারকীয় ঘটনাকে কোনও রাজ্যের মুখ বা আসল পরিচয় ভাবা অত্যন্ত অনুচিত। কেরলের উচ্চ সাক্ষরতার হারে ঈর্ষান্বিত না হয়ে, অনুপ্রাণিত ও গর্বিত হওয়া দরকার। ভালকে ভাল বলতে পারলে সম্মান, মহত্ত্ব ও গ্ৰহণযোগ্যতা বাড়ে।

গৌতম পতি, সালগেছিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর

কালো টাকা

এ বার বোধহয় সময় এসেছে ভাবার, অন্যায্য টাকাকে ‘কালো’ টাকা বলা হবে কেন? ব্ল্যাক মানি মানে খারাপ টাকা, ‘ব্ল্যাক’ মানে খারাপ, এই সাহেবি সংস্কার প্রোথিত হয়েছে অজান্তে। জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনা কি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিচ্ছে না?

প্রবীর মল্লিক, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

George Floyd Hatred Racial Discrimination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy