Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Madhyamik 2020

সম্পাদক সমীপেষু: গবেষণা করুন

বোর্ডের পরীক্ষায়, বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলি অনেকটাই পিছিয়ে। কেন এই হাল?

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় কলকাতার কোনও স্কুলের নাম নেই। কেন কয়েক বছর ধরে কলকাতার নাম প্রথম দশে উঠে আসছে না— এক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের উত্তরে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ‘রিসার্চ’ করতে বলেন। প্রশ্নটি প্রতি বছরই তোলা হয়, এবং এর উত্তর তিনি প্রতি বছরই এড়িয়ে যান। কিন্তু প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়।

সর্বভারতীয় সিবিএসই এবং আইসিএসই বোর্ডের পরীক্ষার মেধা তালিকায় কলকাতার বিভিন্ন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নাম সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে আসে। কিন্তু বোর্ডের পরীক্ষায়, বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলি অনেকটাই পিছিয়ে। কেন এই হাল? সত্যি যে, ছেলেমেয়েদের এই শহরের ‘নামী-দামি’ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ানোর ঝোঁক অভিভাবকদের বেশি। খবরে পড়েছি, শহরের বাংলা মাধ্যমের বহু স্কুল ছাত্রসংখ্যার অভাবে (শিক্ষকের অভাবে নয়) ধুঁকছে বহু বছর ধরেই। এ বিষয়ে শিক্ষা দফতর থেকে উদ্যোগ করা হয়েছে কি? সরকারি কোনও প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছে? এক সময়ে সরকারি সাহায্য না পেয়েও শহরের বাংলা মাধ্যম স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। আজ শুধু ‘প্রতিযোগিতার বাজার’ ভেবে বিষয়টা উড়িয়ে দিলে চলবে না। এ ব্যাপারে সরকারের তরফেও সদর্থক গবেষণার প্রয়োজন।

অরুণ মালাকার, কলকাতা–১০৩

সেই স্কুল

অভিনন্দন জানাই বুদ্ধদেব মান্ডি ও জয়দেব মাঝিকে। প্রত্যন্ত গ্রামের গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা ছাত্রদের সাফল্যে আমরা গর্বিত। আমি নিজে চাঁদড়া কল্যাণ সংঘ হরিজন হাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। স্কুলটি স্থাপন করেছিলেন আমার বাবা স্বর্গীয় জিতেন্দ্রনাথ সরকার। ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি মাত্র পাঁচ জন ছাত্র নিয়ে আশ্রমের আমগাছের তলায় শুরু হয়েছিল পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। ছাত্ররা বসার জন্য বাড়ি থেকে আসন নিয়ে আসত। বাবার মাসিক বেতন ছিল ত্রিশ টাকা। আমি যখন পড়তে যাই, তখন ছিল দু’টি টিনে-ছাওয়া, দু’টি টালি-ছাওয়া ও একটি খড়ে-ছাওয়া ক্লাসরুম। একটিই পাকা বিল্ডিং, যার মধ্যে নবম শ্রেণি ও অন্য পাশে অফিস ঘর।

এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে স্কুলের। শুনেছি, সেটি উচ্চ মাধ্যমিক হয়েছে, মেয়েদের জন্য হস্টেল আছে। বহু ছাত্রছাত্রী দেশ-বিদেশে স্কুলের নাম উজ্জ্বল করেছে। স্কুলের নাম এই ভাবে ছড়িয়ে পড়ুক দেশ দেশান্তরে।

সুব্রত সরকার, টেগোর রোড, আসানসোল

শুধু কলকাতা

এই সংবাদপত্রে মাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় প্রথম দশ স্থানাধিকারীদের (‘প্রথম দশে’, পৃ ৫, ১৬-৭) ৮৪ জন কোন জেলার তা দেওয়া আছে। সেখানে কালিম্পং, ঝাড়গ্রাম, আলিপুরদুয়ার, নদিয়া জেলার কাউকে দেখতে পাইনি। তা হলে ওই জেলাগুলোর ফল ভাল নয়। কেন তা নিয়ে মিডিয়ার কোনও প্রশ্ন নেই? কলকাতা নেই কেন, শুধু সেটা নিয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি থেকে শুরু করে শিক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন করছেন সাংবাদিকরা। সংবাদপত্র সামাজিক শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের উৎকৃষ্ট মাধ্যম। কিন্তু সংবাদপত্র যখন ‘জেলা বনাম কলকাতা’ বিভেদ তৈরি করে, সেটা একটা প্রজন্মের মানসিক গঠনে বিভেদ তৈরি করে দেয়, যা ভবিষ্যৎ সমাজের জন্য ভাল নয়।

কুমারজিৎ মাইতি, কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুর

ঐতিহাসিক?

এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করতে গিয়ে সংসদ সভাপতি একে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছেন। সংবাদেও বলা হয়েছে, ‘নয়া নিয়মে রেকর্ডের ছড়াছড়ি’ (পৃ ১, ১৮-৭)। এই রেকর্ডের মাঝেও রয়েছে এক অন্ধকার কানাগলি। এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রায় ১৪টি পরীক্ষা না হওয়ায় ফলপ্রকাশের যে নীতি নেওয়া হয়েছিল, তাতেই এত রেকর্ডের ফুলঝুরি, সন্দেহ নেই।

প্রথমত, এ বছর ‘ও’ এবং ‘এ+’ গ্রেড পাওয়া পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। গত বারের তুলনায় এ বছর ৯০-১০০% নম্বর পেয়েছে ২২,৪০২ জন বেশি পরীক্ষার্থী, আর ৮০-৮৯% নম্বর পেয়েছে ৩৬,৯৮৭ জন বেশি। এক বছরে এত বিশাল সংখ্যক ‘ভাল শিক্ষার্থী’ বৃদ্ধি পেলেও, সারা রাজ্যের কলেজে অনার্স নিয়ে সবাই ভর্তি হতে পারবে কি না, এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই সংশয় প্রকাশ করেছেন কলেজ অধ্যক্ষদের একাংশ।

দ্বিতীয়ত, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হলে কোনও অভিভাবকই সন্তানদের বাইরের রাজ্যে বা বিদেশে পড়তে পাঠাবেন না। ফলে এ রাজ্যে ভর্তির চাপ বাড়বে। তৃতীয়ত, জয়েন্ট ও নিট পরীক্ষা নিয়ে যে হেতু সংশয় দেখা দিয়েছে, তাই অনেকেই চাইবে কলেজে নাম লিখিয়ে রাখতে। এর ফলে আসনের সংখ্যায় টান পড়বে। বেশি নম্বর পাওয়া সত্ত্বেও একটা বড় অংশের ছাত্রছাত্রীরা কলেজে পড়ার সুযোগ থেকে যে বঞ্চিত হবে, তা অনুমান করাই যায়।

চতুর্থত, আসনের চাহিদা বেশি থাকায় এ বছর কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে অনৈতিক সুযোগ অনেকেই নিতে চাইবে। যতই অনলাইনে ভর্তি হোক, প্রতি বছরই কলেজে সিট পাইয়ে দেওয়ার নামে দেদার টাকার খেলা চলে। এ বছর যে তার বহর বহু গুণ বাড়বে, এমন আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই এই ‘ঐতিহাসিক ফল’-এর প্রভাব খুব শীঘ্রই টের পাওয়া যাবে।

প্রণয় ঘোষ, কালনা, পূর্ব বর্ধমান

প্রশ্নে স্বচ্ছতা

শিক্ষার লক্ষ্য, শিক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি, পরীক্ষাব্যবস্থার ধরন এবং তার ফল যুগে যুগে পাল্টে যায় (‘পরীক্ষা কাহাকে বলে’, সম্পাদকীয়, ২১-৭)। আজ শিক্ষাদান প্রযুক্তি-নির্ভর হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। প্রশ্ন উঠতে পারে, আমাদের দেশের কত জনের ওই প্রযুক্তি ব্যবহারের আর্থিক সঙ্গতি আছে? পরীক্ষা বা মূল্যায়ন পদ্ধতির স্বচ্ছতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠবে না তো? পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোয় একটা কথা চালু ছিল (এখন তা সর্বত্র) ‘খাতা ভরকে ছোড়।’ পিএইচ ডি মানে ‘পয়সা হলেই ডিগ্রি।’ এক শিক্ষার্থীর মুখে শুনেছিলাম তার স্যরের উক্তি, ‘‘আগে পাশ করে নাও, পরে জ্ঞান বাড়াবে।’’ এখন টিক-মারা প্রশ্নের যুগে অনেক মার্কস পাওয়া সম্ভব। শুনেছি কিছু প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার্থীরা আগে থেকে প্রশ্ন জেনে ফেলে। শেখে কি কিছু? এক ছাত্রীকে তার শিক্ষক নাকি বলেছিলেন, ‘‘আমরা পড়াই, ভাবতে শেখাই না।’’

রঘুনাথ প্রামাণিক, কালীনগর, হাওড়া

রাখাই ভাল

উচ্চ মাধ্যমিকে যে হেতু ‘বেস্ট অব ফাইভ’ নীতিতে ফলপ্রকাশ করা হয়, তাই বাংলা-ইংরেজি ছাড়া অন্য তিনটি বিষয়ই অনেকে বেছে নিতে পছন্দ করে, ‘ফোর্থ সাবজেক্ট’ বাদ দেয়। বিষয় বাড়লে বেশি পড়তে হয় এবং পরীক্ষাও দিতে হয়।

কিন্তু ফোর্থ সাবজেক্টের গুরুত্ব বোঝা যায় রেজাল্ট বার হওয়ার পর। এ বছর তা আরও ভাল ভাবে উপলব্ধি করা গেল। পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে কোনও একটি বিষয়ে কম নম্বর পেলেও, ফোর্থ সাবজেক্টের বেশি নম্বর ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এ বছর দেখা গেল, পরীক্ষা না হওয়ার কারণে অনেকেই তাদের ফোর্থ সাবজেক্টে আগের কোনও পরীক্ষায় পাওয়া সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে গিয়েছে, এবং তা অন্য কোনও একটি কম নম্বর-পাওয়া বিষয়ের পরিবর্ত হিসেবে কাজ করেছে। ফলে এতে সুবিধে হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের।

এ ছাড়া ফোর্থ সাবজেক্ট থাকলে সেই বিষয়ে অনার্স পাওয়ার সুযোগ থাকে, বা কলেজে পাসকোর্সের বিষয় বাছতেও সুবিধা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে নম্বরের বাড়বাড়ন্তে ফোর্থ সাবজেক্টের গুরুত্ব বাড়বেই।

সোনিকা ঘোষ, কালনা, পূর্ব বর্ধমান

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik 2020 Bengali Medium School Education Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy