গঙ্গা পরিষ্কার করতে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে উড়ে এসেছেন লুকি বার্ক’ (২-৯) ছবি-সহ খবরটি পড়ে খুবই সঙ্কুচিত ও লজ্জিত হয়ে পড়েছি। কথায় আছে, নিজের ভাল পাগলেও বোঝে! কিন্তু আমরা এ কোন মূর্খের স্বর্গে বাস করছি? দেশের মাতৃসমা নদীকে আমরা অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে দিনের পর দিন কলুষিত করে তুলব, ‘সভ্যতার অভিশাপ’ প্লাস্টিক ফেলব সেই নদীতে। আর প্লাস্টিক-সহ আবর্জনা পরিষ্কার করবেন লুকি বার্ক? কলকাতার মল্লিকঘাটে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, ‘‘গঙ্গার মতো নদীকে বাঁচাতেই হবে। গঙ্গা পরিষ্কারে আমাদের এই অভিযান চলবে।’’ এর পরেও আমাদের কি কোনই শিক্ষা হবে না? আশার কথা, আমাদের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও তাঁর সঙ্গে কাজ করছে হাতে হাত মিলিয়ে। লুকি বার্ককে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা জানা নেই।
গৌতম মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-১১৭
অন্যায্য
আন্দোলনরত পার্শ্বশিক্ষকদের অবস্থানে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করলেও তাঁদের আন্দোলনের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকেই। কোনও রকম লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই যে ভাবে পার্শ্বশিক্ষকদের নিয়োগ হয়েছিল তা আমজনতার অজানা নয়। এক বছর আগে তাঁদের বেতন প্রাথমিকে পাঁচ হাজার (প্রায় দ্বিগুণ) উচ্চ প্রাথমিকে সাড়ে চার হাজার টাকা বৃদ্ধি করার পরেও যখন তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের ‘সম কাজে সম বেতন’-এর উপর ভিত্তি করে যে দাবি উত্থাপন করেন তা পূরণ হওয়া কি সোনার পাথরবাটি নয়? এই এক দাবি রাজ্য সরকারের অন্য অনেক অস্থায়ী কর্মী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা দীর্ঘ দিন ধরে করে এলেও তাঁদের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি, সেখানে পার্শ্বশিক্ষকদের দাবি সরকারের মান্যতা পাবে, তা কি আদৌ কাঙ্খিত?
এই আন্দোলনকারীদের একটি সর্বজনীন ক্ষোভ হল: তৎকালীন বিরোধী নেত্রী কেন ২০০৯ সালে পার্শ্বশিক্ষকদের সম্মানযোগ্য বেতন প্রদান ও পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন? কেন তিনি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট কিনেছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রশ্ন হল, সরকারে আসার আগে অনেকেই নানা প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু ক্ষমতার অলিন্দে আসার পর সেই প্রদেয় সমস্ত প্রতিশ্রুতি পালন বাধ্যতামূলক এমন বিধি ভূভারতে তথা বিশ্বের ইতিহাসেও অমিল। বরং তার উল্টোটাই চোখে পড়ে। এই সহজ সত্যটা পার্শ্বশিক্ষকদের বুঝতে কেন অসুবিধা হল বোঝা দায়। এখন যদি দেশের মানুষ সরকারের প্রতিশ্রুতি মতো ১৫ লক্ষ টাকা করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আসেনি কেন বা পাঁচ বছরে ১০ কোটি কর্মসংস্থান কেন হল না বলে পথে বসে পড়েন, ধর্না দেন, আন্দোলন করেন বা অনশন করেন তখন কী ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে রাষ্ট্রকে তা ভেবে দেখেছেন?
প্রণয় ঘোষ
কালনা, পূর্ব বর্ধমান
ক্ষমা চেয়ে নিন
‘দেশহীন ১৯ লক্ষ!’ (১-৯) শিরোনামের নীচে এক নামহীন মানবীর ছবি। ১৯,০৬,৬৫৭ জন মানব-মানবীর আর কোনও দেশ নেই। সিঁদুরে মেঘ জমছিল অনেক দিন। প্রথম খসড়ার ৪০,০৭,৭০৭ জনের সঙ্গে আরও ১,০২,৪৬২ যোগ হয়ে ৪১,১০,১৬৯ জন মানুষের নাম বাদ পড়ল পঞ্জি থেকে। সেই দিনই ভেবেছিলাম প্রায় তিন কোটি ত্রিশ লক্ষ জনসংখ্যার ১২.৪৫% নাগরিকত্ব হারাতে চলেছেন অসমে। ইতিমধ্যে এক লক্ষ মানুষকে বিদেশি ঘোষণা করা হয়েছে, প্রায় ত্রিশ হাজারকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাকিরা ডিটেনশন ক্যাম্প, না হয় দু’তিন পুরুষের ভিটেতে আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। প্রায় প্রতি দিন হত্যা, আত্মহত্যা, অনাহারে মৃত্যু, লুট, লাঞ্ছনার খবর আসছে। এই পত্রলেখক এপ্রিলে দেখে এসেছে কিছুটা। ছবি তুলতে দিতে ভয় পান তাঁরা। এই ঘটনা নতুন নয়। দেশ ভাগের পর ঠিক কত লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, ধন-মান-সাতপুরুষের ভিটে খুইয়ে শিয়ালদহ স্টেশন, কলকাতার শহরতলি, আন্দামান দণ্ডকারণ্যে কত জনকে পশুর জীবন যাপন করতে হয়েছিল তার সম্পূর্ণ ইতিহাস কেউ লেখেননি। পঞ্জাবের কথা বাদই দিলাম। ১৯৭১ এল। প্রায় এক কোটি শরণার্থী ঘনঘোর বর্ষায় খোলা আকাশের নীচে।
ঘরের পাশে এখন পূর্ব পাকিস্তান নয় বাংলাদেশ। গত দু’বছর ধরে সেখানে মায়ানমার থেকে, হ্যাঁ সেই মায়ানমার যেখানে প্রেসিডেন্ট এক নোবেল শান্তি জয়ী দীর্ঘ দিনের মানবাধিকার সৈনিক নারী, সেখান থেকে প্রায় দশ লক্ষ মানুষকে স্রেফ সমুদ্রে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এর ৬০% ছিল শিশু। আজ দু’বছর হল তাঁরা আজও পার্বত্য চট্টগ্রামে অমানবিক পরিবেশে শরণার্থী শিবিরে। অপুষ্টি-অনাহার, অশিক্ষা, মহামারি, দাঙ্গায় একটি প্রজন্ম হারিয়ে যেতে বসেছে। এ তথ্য ইউনিসেফের।
গুয়াতেমালার শরণার্থী মা ইয়াসমিন জুয়ারেজ মার্কিন কংগ্রেসের সামনে বর্ণনা দিয়েছেন কী ভাবে তাঁর দেড় বছরের শিশু সন্তান-সহ তাঁকে মার্কিন অভিবাসন দফতরের ডিটেনশন সেন্টারে বন্দি করে রাখা হয় ও ২০ দিন ধরে বিনা চিকিৎসায় তিলে তিলে মৃত্যু হয় অসুস্থ শিশুটির। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার দফতরও মর্মাহত ট্রাম্প সরকারের শরণার্থী বন্দিশিবিরগুলির অমানবিক চেহারা দেখে। এমন কোটি ইয়াসমিন জুয়ারেজ ও তাঁর মৃত শিশু সন্তান ছড়িয়ে আছেন সারা বিশ্বে। এ কোনও বিচ্ছিন্ন খবর নয়। মাত্র দু’মাস আগে আনন্দবাজারে পড়েছি আরও একটি মর্মন্তুদ চিত্রসংবাদ। এল সালভাদরের শরণার্থী আলবার্তো মার্তিনেজ ২৩ মাসের শিশু কন্যার সঙ্গে মেক্সিকো সীমান্তে রিয়ো গ্রান্দে নদীতে শুয়ে আছেন উপুড় হয়ে, একসঙ্গে বাঁধা। তিনি সীমান্ত পেরিয়ে মার্কিন দেশে থাকতে চেয়েছিলেন। সংবাদে স্মরণ করা হয়েছে চার বছর আগের তুরস্কের সৈকতে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার উদ্বাস্তু শিশু তিন বছরের আলান কুর্দির কথা। ইউনাইটেড নেশন হাইকমিশনার ফর রিফিউজ়িস বলছে এই মুহূর্তে বিশ্বের ছ’কোটি ছাপ্পান্ন লক্ষ মানুষকে ভিটেমাটি উচ্ছেদ করে গৃহহীন শরণার্থীতে পরিণত করা হয়েছে। আসল সংখ্যা আন্দাজ করি তার দ্বিগুণ। সিরিয়ার এক তৃতীয়াংশ মানুষ আজ শরণার্থী। সাব সাহারান আফ্রিকা থেকে মধ্য-দক্ষিণ
আমেরিকা— কোনও তৃতীয় বিশ্বের দেশ বাকি নেই। পরোক্ষ জেনোসাইড চলছে বিশ্ব জুড়ে। সেই আগুনে পুড়ছে নিজেদের পাপে প্রথম বিশ্ব। মানবতার এই চূড়ান্ত অপমান, এই রক্তস্রোত, অশ্রুধারা পৃথিবীর ধুলায় হারিয়ে যাবে? সেই মূল্যে কেনা হবে প্রথম বিশ্ব ও তার চাটুকার কতিপয় মানুষের সুখ, লালসা, সম্পদের স্বর্গ। ট্রাম্প সাহেব ও তাঁর অনুরক্ত আমাদের প্রিয় মোদীসাহেবরা, এখনও সময় আছে। দাঁড়ান ওই মানহারা মানবী ইয়াসমিন জুয়ারেজ, অসমের লক্ষ মানুষের দ্বারে! বলুন, ক্ষমা করো।
স্বরাজ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৯৬
আসল দাবি
অসমে চূড়ান্ত এনআরসি-তে ১৯,০৬,৬৫৭ জনের নাম নেই। তার মধ্যে কমবেশি দশ লক্ষ অমুসলিম। এতে আরএসএস ও সঙ্ঘপরিবার উভয় সঙ্কটে পড়েছে। এত দিন ধরে তারা যে অমুসলিমদের মিথ্যা কথা বলে এসেছে, তা ধরা পড়ে গেল। এ বার এ ফাঁদ থেকে মুক্ত হয়ে মুখ রক্ষার জন্য চেষ্টার কসুর করছে না। তার একটা হল ফরেনার্স ট্রাইবুনাল আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। বলা হচ্ছে এর সংখ্যা ১০০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ করা হবে। সবাই এতে আশ্বস্ত বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু কেউই প্রশ্ন তুলছে না ফরেনার্স ট্রাইবুনাল আইন নিয়ে। ফরেনার্স ট্রাইবুনাল আইন কী। আইনটি তৈরি করেছিল ব্রিটিশ সরকার। ১৯৪৬ সালে। আইন অনুযায়ী অভিযোগকারীকে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে হবে না। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকেই প্রমাণ করতে হবে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। এটা ন্যায়বিচারের সম্পূর্ণ বিপরীত। কোনও নাগরিকের বিরুদ্ধে বিদেশি হওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকলে রাষ্ট্র আদালতে তা পেশ করুক।
তায়েদুল ইসলাম
ইমেল মারফত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy