‘অমর্ত্যের সঙ্গে উপাচার্যের কথা হয়েছিল, দাবি বিবৃতিতে’ (১৭-১২) সংবাদ অনুযায়ী, “বিশ্বভারতী দাবি করেছে, ২০১৯ সালের ২ অথবা ১৪ জুন উপাচার্য দিল্লি থেকে কলকাতা ফিরছিলেন। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে ফেরার পথে জনৈক অরবিন্দ তাঁকে ফোন করে বলেন, অমর্ত্য সেন কথা বলতে চান।” আমি শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা এবং দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, ২০১৯ সালে অধ্যাপক সেন জুন মাসে ভারতে ছিলেন না, শান্তিনিকেতনে তো নয়ই। প্রতি বছর ওঁর আসার সময় জুলাই-অগস্ট এবং ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি, জুনে কিছুতেই নয়। ভোট দেওয়ার প্রয়োজনে ২০১৪ সালে মে মাসে এক দিনের জন্য এসেছিলেন। তা হলে কি তিনি বিদেশ থেকে ‘জনৈক অরবিন্দ’-র ফোন থেকে কথা বলেছিলেন? শান্তিনিকেতনের সবাই জানে, অরবিন্দ শান্তিনিকেতনে থাকেন, অধ্যাপক সেনের প্রতীচী বাড়ির দেখাশোনা করেন। অথচ, তারিখ নিয়ে নিশ্চিত বিশ্বভারতী!
অমর্ত্য সেন রাজনীতি, অর্থনীতি-সহ বহু বিষয়ে তাঁর মতামত জানান। সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আলোচনা চলতেই পারে। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত কথাবার্তা বা কার্যসূচি বিষয়ে অমর্ত্য সেন নিজে যখন তথ্য প্রকাশ করেছেন, (‘কথা হয়নি উপাচার্যের সঙ্গে, জানালেন অমর্ত্য’, ১৬-১২) তখন তাঁর কথার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বোধ হয় ঠিক নয়।
মনোতোষ হাজরা
রতনপল্লি, শান্তিনিকেতন
যে যেখানে
‘হোর্ডিংয়ে শাহের নীচে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক সংবাদ (১৯-১২) দেখে মনে হল, কালে কালে আর কত দেখব? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বোলপুরে সভা করবেন, ভাল কথা। রাজনীতি করতে গেলে সভা-সমিতি করতেই হয়। কিন্তু তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথকে টেনে আনা কেন? তা-ও আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছবির নীচে রবীন্দ্রনাথের ছবি রাখার মতো চরম অবমাননা কেন? রবীন্দ্রনাথ সবার মাথার উপরে থাকেন। তাঁকে কেন টেনে আনা হচ্ছে নীচে? টিআরপি-সর্বস্ব রাজনীতিতে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আসা ভয়ানক ক্ষতিকর।
বিবেকানন্দ চৌধুরী
কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
ব্রাত্য প্রাক্তনী
আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। বিগত কয়েক দশক ধরে পৌষ উৎসবের নানা অনুষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্বভারতীর সহযোগিতায় গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন আশ্রমিক সংঘ দু’টি অনুষ্ঠান করে আসছে— এক, ৭ পৌষ বিকেল তিনটেয় স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান, যেখানে আশ্রমের অন্তরঙ্গ কোনও প্রবীণ স্মৃতিচারণ করেন। দুই, ৯ পৌষ সকালে পরলোকগত আশ্রমবন্ধুদের স্মৃতিবাসর। পূর্বে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানটি উত্তরায়ণে হত, বর্তমানে দু’টি অনুষ্ঠানই আম্রকুঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়।
এ বার আশ্রমিক সংঘের সম্পাদককে মাননীয় উপাচার্য তাঁর ডাকা আলোচনা সভায় জানান, বিশ্বভারতীর বর্তমান আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। তা ছাড়া কোভিড পরিস্থিতি মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের উপরতলায় হলঘরে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। তার জন্য আশ্রমিক সংঘকে তিন হাজার টাকা এবং বাদ্যযন্ত্রাদি আনা-নেওয়ার খরচবাবদ আরও দু’হাজার টাকা; মোট পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। আশ্রমিক সংঘের কার্যনির্বাহী সমিতি মনে করে, ৭ পৌষ উৎসবের সঙ্গে আশ্রমিক সংঘের অনুষ্ঠান গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের কাল থেকে বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে যুক্ত। ফলে সংঘ মনে করে, এ তো বিশ্বভারতীরও অনুষ্ঠান। পৌষ উৎসবের নানা অনুষ্ঠান ঘিরে শ্রদ্ধা ভালবাসায় প্রাক্তনদের এক গভীর আবেগ জড়িয়ে আছে, কাজেই নীতিগত ভাবে টাকা দেওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না।
অন্য সময় বিশ্বভারতীতে সংঘ যদি নিজস্ব কোনও অনুষ্ঠান করে, সেখানে আশ্রমিক সংঘ বিশ্বভারতীর নিয়ম মেনে তা পালন করবে। সভায় সম্পাদক বলেন, গ্রন্থাগারে অনুষ্ঠান করতে যদি টাকা লাগে, তা হলে বিশ্বভারতীর অনুমতি পেলে পূর্বের ধারা মতো সংঘ আশ্রমে নিজ প্রচেষ্টায় অনাড়ম্বর ভাবে অনুষ্ঠানটি করতে পারে। এর উত্তরে উপাচার্য মহাশয় জানান, আশ্রমের যে কোনও জায়গায় অনুষ্ঠান করতে হলে টাকা দিতে হবে। ফলে, এ বছর স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানটি আশ্রম প্রাঙ্গণে কিছুতেই করা গেল না। দ্বিতীয় অনুষ্ঠানটি হল, পরলোকগত আশ্রমবন্ধুদের স্মৃতিবাসর। কর্মিপরিষদের সম্পাদক সভায় বলেন, এই অনুষ্ঠানটি বিশ্বভারতী করবে। এই অনুষ্ঠান আশ্রমিক সংঘের। এযাবৎ কাল আশ্রমিক সংঘের অনুরোধে কোনও বিশিষ্ট প্রবীণ প্রাক্তন সভায় বিগত বছরে পরলোকগত বর্তমান-প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী কর্মী-অধ্যাপক আশ্রমিক ও আশ্রমবন্ধুদের স্মরণ করেন। সংঘের আমন্ত্রণে উপাচার্য এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে স্মৃতিবাসরে যোগ দেওয়া প্রাক্তনদের দুপুরের হবিষ্যান্নে আমন্ত্রণ জানান।
সভায় কর্মিপরিষদের সম্পাদক বলেন, এ বার স্মরণ অনুষ্ঠানে উপাচার্য মহাশয় বলবেন। আর অর্থসঙ্কটের ফলে যাঁরা হবিষ্যান্ন খাবেন, তাঁদের ১৫০ টাকার টিকিট কেটে নিতে হবে। সোজা কথায়, আশ্রমিক সংঘ আর প্রাক্তনীদের পৌষ উৎসবে কোনও অস্তিত্ব বা সংযোগ রইল না। সভায় সদস্য হিসেবে উপস্থিত শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের প্রতিনিধি এবং কর্মসূত্রে যুক্ত বিশ্বভারতীর প্রাক্তন, এ বিষয়ে কেউ কোনও মতামত প্রকাশ করেননি। তাঁরা কি সবাই উপাচার্যের সঙ্গে সহমত, না ভয়ে নীরব?
উমা সেন
সহ-সভানেত্রী, শান্তিনিকেতন আশ্রমিক সংঘ
প্রতিবাদী
2 শঙ্খশুভ্র মল্লিক এবং স্বাগতম দাসের ‘প্রতিবাদের বিস্মৃত শিক্ষা’ (১৮-১২) সময়োপযোগী। রাষ্ট্র যে ভাবে গত কয়েক বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পড়ুয়াদের ‘দেশদ্রোহী’ তকমা দেওয়ার খেলায় মেতেছে, তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মেরুদণ্ডহীন, প্রতিবাদহীন, এক ‘বাধ্য সম্প্রদায়’ হিসেবে দেখার ইচ্ছে প্রকাশ পায়। ধর্মের বড়ি খাইয়ে সরকার এখন নিরাপত্তা খাতে বেশি বরাদ্দ করে বাহবা কুড়োয়। সবার স্বার্থে প্রতিবাদী কণ্ঠ জরুরি। প্রতিবেদনে এক জনের নাম দেখতে না পেয়ে অবাক হয়েছি। বরুণ বিশ্বাস। বছর কুড়ি আগে উত্তর ২৪ পরগনার সুটিয়া ও তার আশপাশের গ্রামগুলোতে ধর্ষণের ঘটনায় তাঁর প্রতিবাদ অবশ্যই মনে রাখতে হবে। তিনি দাঁড়িয়েছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্ভীকতার ঢাল হয়ে। আমাদের খুব কাছের ও নিজের মানুষটির কাছ থেকে প্রতিবাদের বিস্মৃত শিক্ষা নেওয়াটাও জরুরি।
সুমন চক্রবর্তী
কলকাতা-৬৫
বাদ গেল
সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ অতিমারির কারণে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্য বিষয়ের ভার কিছুটা কমিয়েছে। সেখানে দ্বাদশ শ্রেণির ‘শিক্ষা বিজ্ঞান’ পাঠ্যে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের শিক্ষাপদ্ধতি বিষয়ক অধ্যায় সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশে প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে উদাসীনতা বা নিস্পৃহতার প্রধান কারণ, প্রতিবন্ধকতাকে সম্যক ভাবে জানতে বা বুঝতে চেষ্টা না করা। ফলে প্রতিবন্ধী মানুষদের সক্ষমতা সম্পর্কে ইতিবাচক চেতনা তৈরি হয় না।
অন্য ছাত্রছাত্রীদের থেকে তথাকথিত প্রতিবন্ধকতাযুক্ত (বিশেষত দৃষ্টিহীন, বধির এবং বৌদ্ধিক) ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাগ্রহণ পদ্ধতি ভিন্নতর হওয়া দরকার। বিশেষ ভাবে সক্ষম সহ-শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধাগুলি সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবগত করতে ওই শিক্ষাপদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এর মধ্যে দিয়ে প্রতিবন্ধীদের উপযুক্ত শিক্ষাপদ্ধতির পাশাপাশি তাদের সহজাত কর্মক্ষমতা সম্পর্কিত চেতনার বৃদ্ধিও ঘটতে পারত। বিশেষ ভাবে সক্ষমদের শিক্ষার অধ্যায়টি তুলে দেওয়ার ফলে, তা কিছুটা হলেও ব্যাহত হল।
বুবাই বাগ
বাগনান, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy