‘অনিয়ম’ চিঠিতে (৩০-৭) বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় আগাগোড়া মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, এবং মিথ্যা ইঙ্গিত করেছেন। সম্প্রতি বিশ্বভারতীতে অভাবনীয় সংখ্যায় শো-কজ়, সাসপেনশন ইত্যাদি হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ কিছু লোককে দিয়ে তদন্তের নামে প্রহসন হচ্ছে, অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। ইতিমধ্যেই মহামান্য কলকাতা উচ্চ আদালত বেশ কিছু ক্ষেত্রে কঠোর ভাবে নিন্দা করে উপাচার্যের দেওয়া শাস্তি বাতিল করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ‘শো-কজ় ইত্যাদি করা হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে হবে’ লিখিত ভাবে জানানো বেআইনি দমনমূলক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার নির্লজ্জ আস্ফালন মাত্র। তথ্যের অধিকার আইনের অধীনে করা আবেদনের সূত্রে কর্তৃপক্ষই জানিয়েছেন, অধ্যাপকদের ক্লাস নেওয়ায় গাফিলতির কোনও নির্দিষ্ট তথ্য নেই, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল বা অন্য কোথাও এ বিষয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। অথচ, মনগড়া নানা অভিযোগে সমস্ত অধ্যাপককে, তথা বিশ্বভারতীকে কালিমালিপ্ত করছে কর্তৃপক্ষ।
আরটিআই-এর উত্তরে কর্তৃপক্ষই জানিয়েছেন, ১ জানুয়ারি, ২০১৯ থেকে ২০ এপ্রিল, ২০২২ অবধি মোট ১৬০ জন অধ্যাপক-কর্মীকে শো-কজ় করা হয়েছে। আর্থিক তছরুপের এক ঘটনায় ৭ জনকে শাস্তি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় কয়েক জনের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের দেওয়া শাস্তি বাতিল করে দিয়েছে আদালত, অন্যদের ক্ষেত্রে এখনও তা বিচারাধীন। অর্থাৎ, ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতির কথা বললেও কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যেই তার কোনও প্রমাণ নেই। অথচ, সিএজি-র নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও উপাচার্যের বশংবদ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
এনআইআরএফ-এর মূল্যায়নে গবেষণায় গুরুত্ব ৩০%, পত্রে উল্লিখিত ৮০% নয়! অধ্যাপকদের গবেষণার দৌলতেই ২০১৮ সালের তালিকায় বিশ্বভারতীর স্থান ছিল ৩১, ২০২২-এ কী কারণে ৯৮-এ অবনমন হল? গবেষণার ফল তুলে ধরার জন্য কনফারেন্স, সেমিনার, দেশ-বিদেশের প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণ— কোনও কিছুরই এখন আর অনুমতি পান না অধ্যাপকরা। সার্নের আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্প থেকে বিশ্বভারতীকে বাদ দেওয়ার জন্য উপাচার্য যে ন্যক্কারজনক ভূমিকা নিয়েছেন তা সংবাদেও প্রকাশিত। কেন্দ্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরকে লেখা উপাচার্যের চিঠির প্রসঙ্গে কলকাতা হাই কোর্ট বলেছে, “উপাচার্যের চিঠিতে যে মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে তা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে মানায় না। এটি নীচ মনোভাবের পরিচায়ক...।”
মহুয়া দেবী তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, “কোনও বড় প্রজেক্টে যুক্ত থাকলে কি কেউ উপাচার্য, আধিকারিক এবং সহকর্মীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিতে পারেন?”— এই বক্তব্যও মিথ্যা ইঙ্গিত। বরং উপাচার্যই যে প্রকাশ্যে নানা বৈঠকে বা সভায় বার বার বিশ্বভারতীর অধ্যাপকদের উদ্দেশে নানা আপত্তিকর, অপমানজনক কথা বলেছেন, তা কি মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় অস্বীকার করতে পারবেন?
সুদীপ্ত ভট্টাচার্য
বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশন
সার্ন প্রকল্প
‘অনিয়ম’ শীর্ষক চিঠিতে পত্রলেখক বিশ্বভারতীতে সার্ন প্রকল্প সম্পর্কে বলেছেন, “এই প্রজেক্টটা ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এবং এখনও চালু হয়নি।” এই তথ্য ভুল। ভারতের ১১টি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে সার্নের একটি গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত, বিশ্বভারতী তাদের অন্যতম। এই গবেষণা প্রকল্পে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলি নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ১৯৯০-এর দশক থেকে অংশগ্রহণ করে আসছে এবং এই মুহূর্তেও তা চলছে।
মানস মাইতি
বিশ্বভারতী, বীরভূম
দুর্নীতি রুখতে
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ কলেজ সার্ভিস কমিশন-এর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সেই মর্মে তাঁরা একটি খোলা চিঠিও লিখেছেন। মোদ্দা বক্তব্যটি হল: ২০১৮-তে বিজ্ঞাপিত ও ২০২০-তে প্রকাশিত মেধাতালিকাভুক্ত চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি বঞ্চনা করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থীদের তালিকার পিছনে স্থান দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম-যোগ্যতাসম্পন্ন অনুগত স্কলার ও আত্মীয়-পরিজনদের স্বজনপোষণের মধ্যে দিয়ে তালিকার উপরের সারিতে নিয়ে আসা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই অভিযোগের গুরুত্ব অপরিসীম। এর কোনও সারবত্তা আছে কি না, তা নিয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে কিছু জানানো হয়নি। এমনকি তথাকথিত ‘বঞ্চিত’ প্রার্থীদের করা মামলার প্রেক্ষিতে আদালত যে রায় দিয়েছে— অবিলম্বে কমিশনকে প্যানেলভুক্ত সমস্ত ক্যান্ডিডেটকে ডিভিশন-অ্যাকাডেমিক এবং ইন্টারভিউয়ের বিশদ নম্বর প্রকাশ করতে হবে— কমিশন আদালতের এই রায়ও পালন করেনি। রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে আদালতে পুনরাবেদন করেছে। কমিশনের তরফ থেকে প্রার্থীদের নম্বর প্রকাশ না করতে চাওয়ার এই জেদের কারণেই সন্দেহ আরও বেশি দানা বাঁধে।
সাম্প্রতিক সময়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন-এর শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ঘটনা সামনে আসার পর বাংলার উচ্চশিক্ষা গোটা দেশের কাছে হাস্যাস্পদ হয়ে উঠেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, পশ্চিমবঙ্গের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন শিক্ষক হিসেবে কমিশনের আছে নিম্নলিখিত দাবিগুলি পেশ করছি—
১) ২০১৮ এবং ২০২১ সালে বিজ্ঞাপিত অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদের পরীক্ষায় কমিশন প্রার্থীদের অ্যাকাডেমিক কেরিয়ার, গবেষণা-প্রবন্ধ, চাকরির অভিজ্ঞতা এবং ইন্টারভিউ— ইত্যাদির ক্ষেত্রে যে মার্কস ডিভিশন/ প্যাটার্ন ফলো করেছে, সেটির বিশদ বিবরণ অবিলম্বে প্রকাশ করা হোক। এই মার্কস ডিভিশন ইউজিসি-র কোন নিয়ম মেনে করা হয়েছে, সেটিও প্রকাশ করা হোক।
ইন্টারভিউতে ডাক পাওয়ার আগে অ্যাকাডেমিক কেরিয়ার ও অন্যান্য যোগ্যতা অনুযায়ী প্রার্থীদের কে কত জনের আগে বা পরে আছেন— নিজেদের সেই অবস্থানটি যেন তাঁরা জানতে পারেন। তেমনই চূড়ান্ত মেধাতালিকায় কে কত নম্বর পেয়েছেন ও তালিকার কত নম্বরে তাঁর অবস্থান, সেটি প্রার্থীদের কাছে বিশদে প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন।
২) কতগুলি পদের জন্য কমিশন এই ইন্টারভিউয়ের আয়োজন করছে, বিজ্ঞাপনের সঙ্গে সেই সংখ্যা জানানো প্রয়োজন। ওই নির্দিষ্ট সংখ্যক পদের জন্য মোট কত জন প্রার্থীকে ডাকা হচ্ছে, এবং কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে তাঁরা ডাক পাচ্ছেন, সেটিও ইন্টারভিউ শুরু হওয়ার আগেই জানানো প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, আমরা জেনেছি কোনও কোনও বিষয়ে শূন্যপদের তুলনায় ইন্টারভিউতে ডাক পাওয়া প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে ইউজিসি-র নির্দেশ মেনে শর্ট লিস্ট করেই ইন্টারভিউতে ডাকা উচিত।
৩) স্বজনপোষণ ঠেকাতে কমিশন দু’টি ব্যবস্থা করতে পারে— প্রথমত, নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ক্যান্ডিডেটদের ইন্টারভিউ নিতে পারবেন না। অথবা, শুধুমাত্র অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দিয়ে ইন্টারভিউ করানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ৪-৫ জনের একটি বোর্ড গঠন করে ইন্টারভিউ নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৪) বিজ্ঞাপন থেকে চূড়ান্ত মেধাতালিকা প্রকাশের মধ্যের দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনা প্রয়োজন।
৬) ২০২০-তে প্রকাশিত মেধাতালিকা নিয়ে যে অভিযোগ ও মামলায় ইতিমধ্যে আদালত রায় দান করেছে, তার প্রেক্ষিতে কমিশনকে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনার দাবি জানাই।
মলয় রক্ষিত
বাংলা বিভাগ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy