‘রামনাম করিয়ে পিটিয়ে খুন’ (২৪-৬) সংবাদ পড়লাম। এই সব ‘রামভক্ত’ ঈশ্বরের আরাধনা করে না। তার নামে করে ক্ষমতার প্রদর্শন। এ রাজ্যে রামনবমী পালনের নামে যে রাজনৈতিক প্রচার চলেছিল, সংখ্যালঘু মানুষের মনে আতঙ্ক ঢোকাতে যে ভাবে অস্ত্রের প্রকাশ্য প্রদর্শনী হয়েছিল, মনে আছে নিশ্চয়ই?
ইদানীং কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ এই রাজ্যের শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের উত্ত্যক্ত করতে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ব্যবহার করেছে। উত্ত্যক্ত হয়ে সেই সব নেতা যে আচরণ করেছেন, তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে বোঝাবার চেষ্টা করেছে, হিন্দুরা বিপন্ন এই রাজ্যে। রামকে এ রকম হীন ভাবে ব্যবহার করা অতীতে হয়েছে কি? আসলে এদের কাছে ‘রাম’ আরাধ্য দেবতা নন, রাজনৈতিক ফায়দা তোলার একটি হাতিয়ার।
হয়তো এক দিন, সংসদ ভবনেও, কৃষকের আত্মহত্যা, শাসকের ব্যর্থতা আর হাসপাতালে ১৫০টি শিশুর মৃত্যু নিয়ে কোনও শোক প্রকাশের কথা শুনতে না পেলেও, ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ঠিক শুনতে পাবেন!
পিন্টু পোহান
কলকাতা-৮
মৌলবাদ
উত্তরপ্রদেশের মহম্মদ আখলাক থেকে ঝাড়খণ্ডের তবরেজ আনসারি। ধর্মনিরপেক্ষ দেশবাসী হিসেবে আমাদের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত। ‘ওরা’ খুন হচ্ছে কেন? কারণ, ‘ওরা’ ‘আমরা’ নয়। ওরা রামে বিশ্বাস করে না। আমরা ৮৩ কোটি, ওরা ১৪ কোটি। অতএব আমাদের ইচ্ছাধীন ওদের এ-দেশে থাকা অথবা না-থাকা। ওদের ওঠা-বসা, খাওয়া-পরা, আদব-কায়দা, সব কিছু আমাদের অনুমোদনসাপেক্ষ। এই উগ্রতায় বিশ্বাসী, সংখ্যাগুরু হিন্দু ভারতবাসীর একাংশ। সংখ্যাগুরু মানুষের ধর্মীয় মৌলবাদের চর্চা, স্বাভাবিক ভাবেই সংখ্যালঘু মানুষের ধর্মীয় মৌলবাদের চর্চাকে আরও উদগ্র করে তুলবেই। ফলে আগামী দিনে দেশের সামাজিক স্থিতাবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য।
সূর্যেন্দু বিকাশ পাত্র
প্রতাপদিঘি, পূর্ব মেদিনীপুর
সংবিৎ ফিরবে?
কৃতী ছাত্রী কৃত্তিকা পালের আত্মহনন আমাদের সংবিৎ ফেরাতে পারবে কি? মা-বাবার অত্যধিক প্রত্যাশা সন্তানদের উপর এমন মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে, এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতায় প্রাণ যাচ্ছে নিষ্পাপ কিশোর-কিশোরীদের। ঘটনার পর চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। কিন্তু কোনও লাভ হচ্ছে না। আমরা সবাই নিজেদের অপূর্ণ ইচ্ছা সন্তানের মাধ্যমে পূরণ করতে চাই, আর আমার সন্তান সবেতেই প্রথম— এই অহমিকা ভোগ করতে চাই। নামীদামি স্কুলে ভর্তি করার জন্য খেলার সময় কেড়ে নেওয়া, সবার সঙ্গে মিশতে না পেরে শিশু ও কিশোরদের আত্মকেন্দ্রিকতা, শৈশব দ্রুত হারিয়ে যাওয়া— এ সবের মধ্যেই নিহিত আছে আত্মহননের বীজ। ওদের নিজেদের মতো করে বাঁচতে দিন।
গৌতম সিংহ রায়
জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ
স্কুলের দায়
কৃত্তিকার মৃত্যুর ক্ষেত্রে স্কুলের দায়ও অস্বীকার করা যায় না। অতটা সময় ধরে (২ পিরিয়ড) সে ‘সিক রুম’-এ রইল, অথচ কোনও খোঁজ করা হল না! সে তো সিক রুমে গিয়ে মারাত্মক অসুস্থও হয়ে যেতে পারত? সেটার খোঁজ বা মনিটরিং স্কুল কর্তৃপক্ষের করা উচিত ছিল। তা হলে হয়তো ওর বাঁচার আশা থাকত! ভাল মনিটরিং-এর পাশাপাশি প্রশিক্ষিত স্টাফের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। এখন যে স্টাফেরা আছেন, তাঁদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।
অরূপ দত্ত গুপ্ত
উত্তরপাড়া রোড, উ. ২৪ পরগনা
তাহাদের কথা
ক্লাস এইটের জয়ন্ত। ফাইনাল পরীক্ষা দিতে দিতেই হেডস্যরের ঘরে উড়ে যাওয়া ফিউজ় সারিয়ে দেয়। ব্যাগে বই তো ছিলই, সব রকম স্ক্রু-ড্রাইভার নিয়ে স্কুলে আসত জয়ন্ত।
সে বার লর্ডসে সৌরভের সেঞ্চুরি হল। কোথাও খেলা ব্রডকাস্ট হচ্ছে না। শুধু বিবিসি রেডিয়ো-তে লাইভ কমেন্ট্রি। অনিমেষ স্পিকার আইসি-সহ আরও কিছু তার দিয়ে মুহূর্তে ক্লাসে বানিয়ে দিল এক বেতারযন্ত্র। সবাই মুগ্ধ।
অনিমেষ অথবা জয়ন্ত কোনও দিন অঙ্কে কুড়ির বেশি পায়নি। সার্কিট, আইসি, অ্যাম্পিয়ার, ভোল্ট নিয়ে কাজ করা এই ছেলেরা ফিজ়িক্সে কেন দুর্বল, কেউ কেয়ারই করে না।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটাই এমন ভুলে ভরা। একটা লাস্ট বেঞ্চের ছাত্র বারো মাস উপপাদ্য না বুঝেই সটান পরীক্ষায় নকল করার পাতা নিয়ে ঢুকছে। বছর বছর আমরা সিসি, আরএ হওয়া ছাত্রদের নাম শুনি। কেউ কেউ হারিয়ে যায় চিরতরে। কিন্তু এদেরও সংশোধন দরকার। পরামর্শের দরকার। স্পেশাল কেয়ার, কাউন্সেলিংয়ের দরকার। হয়নি। ন্যূনতম সহানুভূতির আয়োজন করেনি স্কুল। দশটা বছর কাটিয়ে দেওয়া এক ছাত্র বা ছাত্রীর অবনমনে কি স্কুলের কোনও দায়িত্ব নেই?
জেলা টিমের স্টপার দীপঙ্কর মাধ্যমিকে ব্যাক পেয়েছিল। রেজ়াল্টের দিন ওর পায়ের কারুকার্য কেউ মনে রাখেনি। স্কুলকে রাজ্যসেরা করা সত্ত্বেও ওর জন্য স্পেশাল কেয়ার নেয়নি স্কুল। এখন মুদির দোকান চালায়। এমন অনেক দীপঙ্কর প্রতি দিন হারিয়ে যাচ্ছে। জয়ন্ত, অনিমেষের মতো সৃষ্টিশীল ছাত্রদের স্কুল মনে রাখেনি। কারণ এ সব কাজের তো কোনও মেরিট লিস্ট হয় না। অঙ্কে একশো পেলে হয়। মাধ্যমিকে প্রথম দশে থাকলে হয়। অথচ আমরা চেয়েছিলাম, দীপঙ্করদেরও একটা মেরিট লিস্ট থাকুক। হয়নি।
চেয়েছিলাম দারুণ অভিনয় জানা দীপতরুদের একটা মেধাতালিকা টাঙানো থাকুক। হয়নি। যে দীপতরু সায়েন্স নিয়েছিল। দু’বার পাশ করতে না পেরে পাগল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ‘সদ্গতি’তে ব্রাহ্মণের রোলে, ‘ডাকঘর’-এ অমলের চরিত্রে অবাক করেছিল স্কুলকে। এনএসডি-তে যাবে বলত। এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। জিজ্ঞেস করলে বলে, কান ফেস্টিভ্যালে ওর অভিনীত সিনেমা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। বলে, অমিতাভের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করে মুম্বই ঘুরে এল। চোখ বড় হয়ে আসে দীপতরুর। ওথেলোর সংলাপ বলতে বলতে অন্ধকারে হারিয়ে যায়। কেউ এক বার জানতে চাইনি, দীপতরু কেন বিগড়ে গেল।
ওর ব্যর্থতার জন্য শুধু কি ও দায়ী? ওর বেড়ে ওঠা স্কুল, সমাজ, বন্ধুরা— কেউ একটু স্পেস রাখেনি ওর জন্য। মেনে নিতে হবে, অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চাইলে, এই সমাজে তার আর জায়গা নেই।
সন্দীপন নন্দী
ইমেল মারফত
মনের খবর
বাচ্চার হাতে ব্যথা হলে যত দ্রুত আমরা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই, বাচ্চা প্রায়ই বিষণ্ণ থাকছে দেখেও তাকে কাউন্সেলরের কাছে অত সহজে নিয়ে যাই না। এমনকি, ডাক্তারও যদি বলেন, কাউন্সেলরের পরামর্শ নিন, তখন বাড়িতে এসে আলোচনা করি, সত্যিই ‘অতটা’ কি দরকার? আমরা আসলে ভাবি, মন বিগড়ে গেলে নিজে নিজেই ঠিক করে নেওয়া যায়। তা ছাড়া, ওকে কী দেওয়া হচ্ছে না? বাড়ি, গাড়ি, সপ্তাহে দু’দিন বাস্কেটবল, বছরে দু’বার বেড়ানো! হ্যাঁ, মা-বাবার বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত আটটা, তার পর পড়া পারেনি বলে বকুনি, তা সেটুকু তো হবেই। এ বার যখন সন্তান নিজের কব্জি কেটে ফেলে, বা তার একটা অদ্ভুত খিঁচুনি হয় আর ডাক্তার বলেন ‘মানসিক’, আমাদের হুঁশ ফেরে।
রাকা সেন
বজবজ
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
শ্রদ্ধার্ঘ্য ছবির (কলকাতা, পৃ ১৪, ২৪-৬) ব্যবহৃত ক্যাপশনে ভুলবশত শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন লেখা হয়েছে। আসলে রবিবার ছিল তাঁর মৃত্যুদিবস। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy