Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Letters to the Editor

সম্পাদক সমীপেষু: অতুলনীয় মুক্তিযোদ্ধা

ইতিহাস বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে দশ মাসের যুদ্ধ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। আমার মতে, মুক্তিযুদ্ধ চলেছিল মাস নয়েক।

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৪৩
Share: Save:

বিশ্বজিৎ রায়ের “রেখেছ ‘বাঙালি’ করে” (১৮-১১) প্রবন্ধের সঙ্গে আমি একমত যে, পিপ্পা ছবিতে নজরুলের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটিতে বীরত্বের উদ্দীপনা এতটুকুও নেই। যদিও এ আমার চিঠির মূল আলোচ্য নয়। আমার বক্তব্য, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা নিয়ে। লেখক যথার্থই আক্ষেপ করেছেন, এই ছবিতে ভারতীয় ‘নায়ক’-দের পাশে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা যেন অনুচর মাত্র! শুধু এই সিনেমাতেই নয়, বিভিন্ন সময়ও এই প্রবণতা লক্ষ করা যায়।

ইতিহাস বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে দশ মাসের যুদ্ধ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। আমার মতে, মুক্তিযুদ্ধ চলেছিল মাস নয়েক। ৭ মার্চ, ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণেই এর সূচনা, এমন হয়তো বলা চলে না। কারণ, তার পরেও অনেক আলোচনা হয়েছে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান খানিক নমনীয়তা দেখালে মুক্তিযুদ্ধ না-ও হতে পারত। স্বৈরশাসনের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ীই তিনি তা করেননি, বরং দমনের মাত্রা বাড়িয়ে গ্রেফতার করেন স্বয়ং মুজিবকে। আমার মতে, জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া নেতার সরকার গড়ার দাবিকে নস্যাৎ করে তাঁকে বন্দি করাতেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তবুও ২৫ মার্চ নয়, মুক্তির ‘যুদ্ধ’ শুরু হতে হতে চলে আসে এপ্রিল। পূর্ব পাকিস্তানের নানা জায়গায় শুরু হয় সশস্ত্র সংগ্রাম।

এই সংগ্রামের প্রাথমিক পর্বে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস এবং পুলিশের। মুক্তিযুদ্ধের শুরুটা কিন্তু খুব সহজ ছিল না। না ছিল সহায় (ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু করাচিতে জেলবন্দি), না ছিল সম্বল— হাতের কাছে যা আছে, তাই নিয়ে কি আর আধুনিক অস্ত্রধারী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়! তবু মুক্তিযুদ্ধ হল।

ভারতের সক্রিয় সহযোগিতা প্রথম থেকেই ছিল। ৪ ডিসেম্বর মাঝরাতে যুদ্ধঘোষণা থেকে ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল অরোরার কাছে নিয়াজ়ির আত্মসমর্পণ ধরলে ভারত আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ করেছে মাত্র ১২ দিন। বাকি সময় যুদ্ধ তবে করল কারা? অনেক ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষণহীন অসংগঠিত তরুণের দল, পরের দিকে কিছু তরুণীও। মেজর জ়িয়াউর রহমান বা কর্নেল তাহেরের মতো প্রশিক্ষিত পাক বাহিনীর বিদ্রোহী অফিসারদের কথা মাথায় রেখেও বলব, ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য অনেক মেধাবী ছাত্র লড়েছিলেন। উদাহরণ হিসাবে শহিদ জননী জাহানারার ছেলে রুমির কথা বলা যায়। উপযুক্ত অস্ত্র-রসদ ছাড়াই এঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। যদিও পরে ভারত থেকে তাঁদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ জোগানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জেও এ রকম একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে।

বহু প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধারা অসাধারণ লড়েছিলেন, শুধুমাত্র অনুচরবৃত্তি করেননি। গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠা পাকপন্থী আলবদর-রাজাকার এবং শান্তি কমিটির হিংস্র আক্রমণের বিরুদ্ধেও লড়তে হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের। তা সত্ত্বেও এই যোদ্ধারা পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তাঞ্চল গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকি বা উপকূলীয় অঞ্চলে মোঃ হেমায়েতউদ্দিনের বাহিনীর কথা বলা যায়। জেনারেল মানেকশ প্রমুখের পরিকল্পনা এবং জেনারেল অরোরা প্রমুখের দক্ষ পরিচালনা নিশ্চয়ই সমর-প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ে পাঠ্য হওয়ার যোগ্য। তবু আমার মনে হয়, তাঁদের এই সাফল্যের পিছনেও বড় ভূমিকা আছে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের। অসম যুদ্ধে তাঁরা যে ভাবে লড়েছেন, তার তুলনা ইতিহাসে বিরল। তাঁদের নাছোড়বান্দা লড়াইয়ে পাক বাহিনী ক্রমাগত গুটিয়ে যাওয়াতে, অথবা বলা যায় ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়াতেই ভারতীয় সেনাবাহিনী এতটা দ্রুত দখল নিতে পেরেছিল ঢাকার, এবং আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিল পাক সেনাপতি নিয়াজ়িকে।

প্রিয়রঞ্জন পাল, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর

সৌম্যেন্দ্রনাথ

সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পঞ্চাশতম প্রয়াণ দিবস (২২ সেপ্টেম্বর) উপলক্ষে পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকারের ‘রাতভোর বোমা বেঁধে সকালে নাটকের মহড়া’ (রবিবাসরীয়, ১৭-৯) প্রবন্ধটি সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতির প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধার্ঘ্য। তবে তথ্যে কয়েকটি ভ্রান্তি চোখে পড়ল, তাই এই চিঠির অবতারণা। প্রথমত, লেখা হয়েছে সৌম্যেন্দ্রনাথ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেয়েছেন ফ্লোবেল ইনস্টিটিউশন আর মিত্র ইনস্টিটিউশনে। সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর তিন বছর পড়েছিলেন ‘ফ্রোবেল ইনস্টিটিউশন’-এ। দ্বিতীয়ত, লেখা হয়েছে সৌম্যেন্দ্রনাথের ডাকনাম সৌম্যেন। কিন্তু আমরা সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা চারুবালা ঠাকুরের আমার কথা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে লেখা সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের একাধিক চিঠি থেকে জানতে পারি, ওঁর ডাকনাম ছিল সৌম্য। অন্তত চিঠিতে তিনি সৌম্য লিখতেন, সৌম্যেন নয়।

তৃতীয়ত, প্রবন্ধকার লিখেছেন, হিটলার বিরোধিতা এবং নিষিদ্ধ লেখালিখির অপরাধে গ্রেফতার করে সৌম্যেন্দ্রনাথকে মিউনিখ জেলে বন্দি করা হয়েছিল। “দীর্ঘ কারাবাসের পর জার্মান সরকার সৌম্যেন্দ্রকে দেশ থেকে বিতাড়িত করলে তিনি আবার দেশে ফিরে আসেন।” সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন ইটালির মোরানো থেকে জার্মানিতে ফিরে আসছিলেন, তখন অস্ট্রিয়ার সীমান্তে কিফারফেলমেন নামক স্থানে হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। হিটলারকে হত্যা করার এক ষড়যন্ত্রে তিনি লিপ্ত ছিলেন, এই অভিযোগে গেস্টাপো বাহিনী সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে গ্রেফতার করে, তাঁর লেখালিখির জন্য নয়। আর তিনি দীর্ঘ কারাবাস ভোগ করেননি; ২৩-২৭ এপ্রিল মিউনিখ জেলে ছিলেন।

চতুর্থত, প্রবন্ধকার লিখেছেন, “তাঁর পত্নী আমদাবাদের শিল্পপতি হাতিসিং-এর কন্যা প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী কৃষ্ণা, যিনি পরে শ্রীমতী ঠাকুর বলে পরিচিত হয়েছেন।” এখানে কৃষ্ণা সিং-এর পরিচয়ে ভুল রয়েছে। গুজরাতের ব্যবসায়ী পুরুষোত্তম হাতিসিং ও লীলা হাতিসিং-এর কন্যা সোনিবেন পরবর্তী কালে পরিচিত হয়েছেন ‘শ্রীমতী’ নামে। রবীন্দ্রনাথই স্বয়ং সোনিবেনের নতুন নামকরণ করেছিলেন। ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯০৩ সালে জন্ম হয়েছিল সোনিবেনের। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সোনিবেন ছিলেন তৃতীয়। শৈশবেই পিতার মৃত্যুর পর মামা বিশিষ্ট শিল্পপতি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কস্তুরভাই লালভাই হয়ে উঠেছিলেন হাতিসিং পরিবারের অভিভাবক। রাজনীতির সূত্রে মতিলাল নেহরুর পরিবারের সঙ্গে কস্তুরভাই লালভাই-এর পরিচয় হয়। কস্তুরভাই এক সময়ে কংগ্রেস সংসদীয় দলের কোষাধ্যক্ষও হয়েছিলেন। নেহরু পরিবারের সঙ্গে কস্তুরভাই ও হাতিসিং পরিবারের ঘনিষ্ঠতা ক্রমে আত্মীয়তার পর্যায়ে পৌঁছেছিল। শ্রীমতীর কনিষ্ঠ ভ্রাতা রাজা মতিলাল নেহরুর কনিষ্ঠা কন্যা কৃষ্ণার সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তা হলে কৃষ্ণা সিং হলেন শ্রীমতীর ভাইয়ের স্ত্রী।

শুভজিৎ সরকার আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান

ব্যাকবেঞ্চার

অর্ণব মণ্ডলের ‘শেষের বেঞ্চ’ (সম্পাদক সমীপেষু, ২৯-১১) পড়ে ফিরে গেলাম নিজের ছাত্রজীবনে। ৫০ বছর আগে পাশ করেছি। আমাদের প্রাক্তনীদের সংগঠন এ বার আমাদের সংবর্ধনা দেবে। তার প্রস্তুতি হিসাবে এক ডজন সহপাঠী এক দিন আড্ডায় জড়ো হয়েছিলাম। আজকের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, গবেষকরা ফার্স্ট-সেকেন্ড বেঞ্চে বসত। কিন্তু আড্ডায় মধ্যমণি সেই ‘ব্যাকবেঞ্চার’রা, যারা ছিল সে দিনের পার্শ্বচরিত্র। তারা কত সহপাঠী, শিক্ষকদের অদ্ভুত নামকরণ করেছিল, কত ক্যারিকেচার করেছিল। পরে অনেকে তাদের জীবনে সৃজনশীল কাজে পরিচয় দিয়েছে। সে দিনের ভাল ছেলেমেয়েরা আজ দৈনন্দিন জীবনযাপনের চাপে ব্যস্ত। আর সে দিনের ব্যাকবেঞ্চাররা আজকের মৃতসঞ্জীবনী। এ স্বাদের ভাগ শুধু সহপাঠীদের প্রাপ্য। শেষ বেঞ্চে বসে ক্লাসকে ভাল করে দেখা যায়, নজরে আসে অনেক কিছু। শেষের বেঞ্চ মানে ফিসফাস, গল্প, খোলা জানলার মাঝে মুক্ত আকাশ দেখার ছাড়।

শুভ্রাংশু কুমার রায় চন্দননগর, হুগলি

অন্য বিষয়গুলি:

Freedom Fighters Sheikh Mujibur Rahman Pippa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy