আমার বাড়ির পিছনের সরু গলিতে রয়েছে একটি প্রাথমিক স্কুল, যা অনেক দিন বন্ধ। জঙ্গলাকীর্ণ পোড়ো বাড়িটির মাথায় এখন মশার আড়ত, নীচে আঁস্তাকুড়। একাংশে একটি ক্লাবের ঘর। এক প্রোমোটার বাড়িটি কিনলেও ক্লাবকর্তাদের সঙ্গে তাঁর টানাপড়েন চলছে। বর্তমানে ক্লাবটির মাথায় রয়েছেন আরও ক্ষমতাধর এক প্রোমোটার। বাড়িটি থেকে ডেঙ্গি-মশার আখড়া ও আবর্জনার স্তূপ সরানোর আবেদন জানিয়েও পুরমাতার থেকে কোনও সাড়া পাইনি।বেলেঘাটা মেন রোড ও সিআইটি রোডের মধ্যে শর্টকাট রাস্তা হিসেবে গলিটিতে দিবারাত্র বাইকবাহিনীর তাণ্ডব চলে। গলিটি ইংরেজি ‘এল’ আকারে ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়ায় দু’দিকের বাইক আরোহীরা তীব্র হর্ন বাজিয়ে পরস্পরকে জানান দেয়। গলিতে বাইক যাতায়াত বন্ধ করার ব্যবস্থার কথা পুলিশ ও পুরকর্তাদের বললেও তাঁরা এগোননি। অনেক লেখালিখির পর সম্প্রতি পুলিশ ‘নো হংকিং’ এবং ‘নো পার্কিং’ বোর্ড লাগিয়েছে। তাতে এক ঘণ্টার জন্যও বাইকের চিৎকার বন্ধ হয়নি। ফুটপাতের উপরেও বাইক দৌড়চ্ছে। বেআইনি দোকান, মোটর সাইকেল গ্যারাজ, অবৈধ পার্কিং বেড়েই চলেছে। রাত পর্যন্ত সেখানে হল্লা। বাসিন্দাদের গণস্বাক্ষরিত আবেদন নাকচ করে কাউন্সিলর জানিয়ে দিয়েছেন, রাস্তার ধারের বাড়িতে থাকতে হলে বাইকের অত্যাচার সহ্য করতে হবে। থানা থেকে ডিসি অফিস এবং লালবাজারে পুলিশ কমিশনারের দফতর, কোথাও আবেদন বাদ দিইনি। প্রথম দিকে সহৃদয় ব্যবহার, ক্রমশ ‘জুনিয়রদের সঙ্গে মানিয়ে চলা’র পরামর্শ এবং শেষে তা শীতল নীরবতায় পরিণত হয়েছে। থানার এক অফিসারের পরামর্শ, বাইকবাহিনীর অত্যাচার বন্ধ করতে হলে আদালতে যেতে হবে। যদিও ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, নাগরিকের মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার অধিকারের মধ্যে শান্তিতে ঘুমোনোর অধিকারও পড়ে। কিন্তু শুনছে কে? রাজনীতির ছত্রছায়ায় প্রোমোটার ও সাপ্লাই সিন্ডিকেটের দাপট, শাসক দলের প্রতি পুলিশ-প্রশাসনের বশংবদ মনোভাব বাম আমলেও দেখেছি। এখন তা আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে ক্লাবগুলোকে ঘিরে। নাগরিকদের মুক্তির দিশা কোথায়?
বিশ্বজিৎ রায়, কলকাতা-১০
হেঁশেলে ধাক্কা
“গ্যাস কেনা বিলাসিতা ‘উজ্জ্বলা’দের” প্রতিবেদন (৮-৫) প্রসঙ্গে এই চিঠি। সত্যি সত্যিই এত দিনে দেশের আমজনতার হেঁশেলে এ বার ‘অচ্ছে দিন’ চলে এল। রান্নার গ্যাসের দাম এক ধাক্কায় প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় সিলিন্ডার প্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ১০২৯ টাকা। অনেক সময় বাড়িতে গ্যাস পৌঁছনোর খরচও আলাদা ভাবে সাধারণ গৃহস্থকে দিতে হয়। এই করোনাকালে অনেকেরই আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। ফলে ক’জনের পক্ষে হাজার টাকা খরচ করে একটি গ্যাস সিলিন্ডার কেনা সম্ভব হবে?২০১৪ সালে কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের আমলে একটি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ছিল ৪১৪ টাকা। বর্তমান সরকারের আমলে তা বেড়ে হয়েছে ১০২৯ টাকা। আগামী দিনে তা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, কেউ জানে না। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও রোজ লাফিয়ে বাড়ছে। সব মিলিয়ে দু’মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকাটাই সাধারণ মানুষের পক্ষে এখন কষ্টকর হয়ে উঠেছে। এর বিপ্রতীপে সাধারণ মানুষকে ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন দেখিয়ে রাজধানী দিল্লিতে প্রায় ২০০০০ কোটি টাকা (জনতার করের টাকা) খরচ করে সেন্ট্রাল ভিস্টা নামক নয়া সংসদ ভবন তৈরি করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহারের জন্য কেনা হয়েছে ১২ কোটি টাকার গাড়ি! দিল্লির কর্তাদের বিলাসিতার জন্য জলের মতো টাকা খরচ হচ্ছে। অতএব এমন ‘অচ্ছে দিন’-এর দেশে রামা কৈবর্ত, রহিম শেখরা না খেতে পেয়ে মরলে, কার কী আসে যায়!
তুষার ভট্টাচাৰ্য কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ
সঙ্কটে উজ্জ্বলারা
দাম বাড়ছে, গ্যাস ভর্তুকি কার্যত শূন্য। “গ্যাস কেনা বিলাসিতা ‘উজ্জ্বলা’দের” শিরোনামে সংবাদটিতে শহর-সহ গ্রামবাংলার মানুষদের হেঁশেলের সমস্যার কথাটি উঠে এসেছে। চলতি বছর এপ্রিল-মে মাসে গ্যাস কিনেছি ৯৯০ টাকা ৫০ পয়সায়, ভর্তুকি ঢুকেছে ৩০.৬৪ টাকা। অনেকেই আবার সেই ভর্তুকিও পাননি। এক সময় গ্রামের মেয়েরা ভাবতেই পারতেন না যে, তাঁরা গ্যাসে রান্নার সুযোগ পাবেন। ‘উজ্জ্বলা’ প্রকল্পের সুবাদে গ্রামের বাড়ি বাড়ি হেঁশেলে চলে এল গ্যাস সিলিন্ডার এবং আভেন। এখন জ্বালানি তেল ১০০ পার, গ্যাসের দাম ছাড়িয়েছে ১০০০ টাকা। দামের গুঁতোয় গরিব পরিবারগুলোর অনেকেই সিলিন্ডার, আভেন বিক্রি করে দিয়েছেন। কেউ কেউ গ্যাস সিলিন্ডার, আভেন গুটিয়ে তুলে রেখেছেন। অনেকেই বলছেন, গ্যাস সিলিন্ডার, আভেন বিক্রি করে দেবেন। মাটির উনুন তৈরি করে খড়, ঘুঁটে, কাঠের আগুনে রান্না শুরু করেছেন অনেকে। গ্রামের মেয়েরা আজও বোঝেননি গ্যাসের ভর্তুকি শব্দের মানে। তাঁরা শুধু বোঝেন, বেশি টাকা দিয়ে গ্যাস কিনতেন এবং তা থেকে তাঁদের টাকাই আবার কিছুটা ফেরত পেতেন। ওই সকল পরিবার কিন্তু কম দামে বা ফ্রি-তে গ্যাস পাবেন বলেই উজ্জ্বলা গ্যাস পরিষেবা নিয়েছিলেন। যে পরিবারে মাসিক আয় সাত-আট হাজার টাকা, সেই পরিবারের পক্ষে এক হাজার টাকা দিয়ে গ্যাস কেনা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাস এখন ভাবিয়ে তুলছে উজ্জ্বলাদের। উজ্জ্বলা গ্যাস নয়, ভারতের প্রতিটি পরিবারকে সচ্ছল করতে দরকার সামাজিক ও আর্থিক উন্নয়ন। সরকার তা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে, তত জনসাধারণের মঙ্গল।
মুন্সি দরুদ কাজিপাড়া, বীরভূম
অগ্নিমূল্য
গত কয়েক মাস যাবৎ পেট্রলের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। রান্নার গ্যাসের মূল্যও ক্রমশ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজারেও লেগেছে আগুন। রান্নার তেল থেকে আনাজ, মাছ-মাংস— নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে কিছু দিন আগেই। বয়স বাড়ার সঙ্গে ওষুধ-নির্ভরতা বাড়তে থাকে। দাম বাড়ায় বৃদ্ধবৃদ্ধারা বিপদগ্রস্ত। ট্রেন যাত্রায় নেই সিনিয়র সিটিজ়েন-এর ছাড়। এ দিকে ব্যাঙ্কে সুদের হার ক্রমশ কমছে। রাজ্য সরকারের পেনশনভোগীদের পেনশন এক জায়গায় স্থির হয়ে রয়েছে, যে হেতু ডিএ ঘোষণা হচ্ছে না। সরকারের কাছে অনুরোধ, সদর্থক পদক্ষেপ করে সরকারি কর্মচারী এবং আমাদের মতো পেনশনভোগীদের কষ্টের নিরসন করা হোক।
জয়দীপ চক্রবর্তী, কলকাতা-৫০
কাঠকয়লা
২০১৬ সালে ১ মে আর্থিক দিক থেকে অসচ্ছল দেশবাসীর জন্য দূষণহীন রান্নার ব্যবস্থা পৌঁছে দিতে কেন্দ্রীয় সরকার ‘প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা’ প্রকল্প চালু করেছিল। নানা মাধ্যমে ঢাকঢোল পিটিয়ে সমাজে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়া শুরু হয়েছিল! সম্প্রতি আমাদের দেশের তিনটি তেল উৎপাদনকারী সংস্থার এক রিপোর্ট মারফত জানা গিয়েছে, গত আর্থিক বছরে এই প্রকল্পের ৯০ লক্ষ গ্রাহক গ্যাস সিলিন্ডার রি-ফিল করাতে পারেননি! রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, রান্নার গ্যাসের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি এর মূলে। গ্যাস-কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির জন্য মানুষ আবার কাঠকয়লার জ্বালানিতে ফিরছে। ‘অচ্ছে দিন’-এর ঝোড়ো হাওয়ায় উজ্জ্বলা যোজনা প্রকল্প এখন একেবারে নির্জীব হয়ে গিয়েছে!
বিশ্বজিৎ কর, কলকাতা-১০৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy