অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ফুটপাত দখল দিনে রাতে’ (১-৮) শীর্ষক প্রবন্ধের বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত— এ রাজ্যে ফুটপাত দখলমুক্ত করার প্রচেষ্টা সর্বত্র সমান থাকে না। দেশের বহু অংশ-সহ এ রাজ্যেও বহু দিন ধরে প্রশস্ত ফুটপাত পাওয়ার লক্ষ্যে যে উদ্যোগ করা হয়েছে, তা সর্বত্র ফলপ্রসূ হয়নি। নৈহাটি স্টেশন থেকে গঙ্গার পাড়, শিয়ালদহ স্টেশন থেকে কলেজ স্ট্রিট কিংবা হাবরা স্টেশন থেকে জয়গাছি— স্টেশন চত্বর তো বটেই, বিভিন্ন শহরের বাকি অঞ্চলের চিত্রটিও একই রকম। কর্মসূত্রে বহরমপুর, লালগোলা, শিলিগুড়ির যেখানেই গিয়েছি, আলাদা কিছু চোখে পড়েনি। সরকারি আইনকানুন চালু করেও ফুটপাত দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। কেন? কেননা হকার বা দখলদারদের সঙ্গে প্রশাসনের এক স্তরের নেতানেত্রীর একটা অলিখিত চুক্তি নিশ্চয়ই হয়ে যায়। তা না হলে দিনের পর দিন কী করে তাঁরা জনগণের চলাফেরার জায়গা দখল করে থাকেন? তা ছাড়া, শাসক দলেরও এঁদের থেকে ভোট পাওয়ার ব্যাপার থাকে। সে কারণে শাসকও এঁদের বেশি চটাতে সাহস পান না।
সরকারের ভাবটা যদি হয়, দীর্ঘকাল ধরে যাঁরা আছেন, তাঁরা থাকুন, কিন্তু পায়ে চলা পথের মধ্যে যেন না আসেন— এটি কোনও উপযুক্ত সমাধান হল কি? মনে হয় না। কিন্তু এমনও উদাহরণ আছে যেখানে সরকার তার প্রয়োজনে জায়গা দখলমুক্ত করেছে। ফলে সরকার যদি সত্যিই জনসাধারণের পাশে দাঁড়াতে ইচ্ছুক হয়, তবে এই ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’-র নীতি থেকে বেরিয়ে এসে প্রকৃত সমাধান খুঁজুক। যেখানে পুনর্বাসন সম্ভব, সেখানে তা করুক। আর যেখানে পুনর্বাসন সম্ভব না, সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজুক।
বাসুদেব সেন, হাবরা, উত্তর ২৪ পরগনা
মনোভাবে বদল
‘ফুটপাত দখল দিনে রাতে’ অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত একটি লেখা। কলকাতার রাস্তায় হাঁটাচলার কোনও উপায় আর অবশিষ্ট নেই। হাঁটবেন কোথায়, ফুটপাত তো দখল হয়ে আছে। কলকাতা শহরের প্রথম ফুটপাত তৈরি হয় চৌরঙ্গিতে। পরিকল্পনা করেছিলেন পুরসভার অফিসার উইলিয়ম ক্লার্ক। শোনা যায়, পুরসভার ওল্ডারম্যানদের তিনি বুঝিয়েছিলেন, জমা জল থেকে মশা ইত্যাদির মাধ্যমে রোগ ছড়ায়। সেই রোগ ছড়ানো আটকাতে রাস্তার পাশের নর্দমাগুলোকে পাকা করা হলেও সেই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে, যদি না কংক্রিট দিয়ে সেগুলোকে ঢাকা দেওয়া হয়। আর পথচারীরা সেই ঢাকা দেওয়া নর্দমার উপর দিয়ে নিশ্চিন্তে হাঁটতেও পারবেন। এই ভাবে শুরু হল ফুটপাত।
কিন্তু এখন সেই ফুটপাতেই হাঁটার মতো কোনও অবস্থা নেই। অটোর পাশাপাশি কলকাতা পুরসভার অঞ্চলগুলির বাইরে টোটোর দৌরাত্ম্যে সাইকেল আরোহীদের পথে বেরোনো দায় হয়েছে। পথচারীদের অবস্থাও তথৈবচ। রাস্তা জুড়ে দোকানপাট ভর্তি। প্রশাসন জানে বিষয়টি বেআইনি, কিন্তু ভোট আর নোটের কারণে তাদের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। নোংরা ঘিঞ্জি ফুটপাতে ধাক্কা খেতে খেতে কারও কি হাঁটতে ভাল লাগে? কলকাতা শহরে এখন হাঁটার জন্য ফাঁকা কিছু জায়গা এবং ময়দান ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। প্রথম প্রথম অসুবিধা হলেও মানুষ সেটাকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নেন হয়তো। তাই আজ এই সমস্যা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এই মনোভাবের পরিবর্তন দরকার। নাগরিক পরিবর্তন চাইলে তবেই সরকারের টনক নড়বে।
সুমন চক্রবর্তী, কলকাতা-৬৫
মানুষের কাজে
আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদের জেরে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে সরকারি অনুদান বয়কট করার আবেদনের ঝড় উঠেছে সমাজমাধ্যমে। আক্রোশ, বিরক্তি, ঘৃণা, নিরাপত্তাহীনতা আর অসহায়তার সঙ্গে সরকারি অনুদান বয়কট করার এই চিন্তা স্বতঃস্ফূর্ত, প্রাসঙ্গিকও।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সরকারি অনুদান পুজোর এমনি কাজে খরচ করা যাবে না। প্রতিমা থেকে মণ্ডপ, আলোকসজ্জা, দশকর্মা, ফুল-ফল, ভোগ, ঢাকি— এ রকম পুজো সংক্রান্ত কোনও খরচেই তা ব্যবহার করা যাবে না। কেবলমাত্র সাধারণ মানুষের স্বার্থে ও কল্যাণার্থে কিছু কার্যক্রম নেওয়া যাবে মাত্র। এবং তা-ও ধর্ম ও জাতপাত নির্বিশেষে। এখন প্রশ্ন হল, আদতে ক’টি পুজোর ক্ষেত্রে এই অনুদানের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে উপরের শর্তগুলো মেনে? আর যদি হয়েও থাকে তবে তা যাচাই করার জন্য সরকার তথা প্রশাসনের আদৌ কোনও পদ্ধতি আছে কি? থাকলেও সত্যি সেটি কতটা কার্যকর?
এই প্রশ্নের দু’টি সম্ভাব্য উত্তর। এক, ধরে নেওয়া যাক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রাপ্য অনুদানের আংশিক অথবা পুরো পরিমাণটিই পুজো সংক্রান্ত বাহ্যিক আড়ম্বরে ব্যয় হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কেউ অনুদান প্রত্যাখ্যান করবে কি? মহামান্য উচ্চ আদালতের নিয়মাবলি হেলায় অমান্য করে, যারা বাগাড়ম্বর, ঐশ্বর্য জাহিরে মশগুল থাকে, অনুদান প্রত্যাখ্যান করার মতো সৎসাহস তাদের যে থাকবে না, সেটাই স্বাভাবিক। দ্বিতীয় সম্ভাব্য উত্তর, ক্লাবগুলো নির্দেশ অনুযায়ী জনস্বার্থে এই অনুদানের সদ্ব্যবহার করবে। এ ক্ষেত্রে, অন্যান্য কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখে বা একটু কাটছাঁট করে নাহয় মেয়েদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কাজে লাগে এমন কোনও পরিকাঠামো নির্মাণে খরচ করা যেতে পারে। যেমন, পাড়া বা কমপ্লেক্সের অলিগলিতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করার মতো এককালীন খরচ তার মধ্যে অন্যতম। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রয়োজন সদিচ্ছা আর ইতিবাচক মানসিকতা।
আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় থেকে শুরু করে, শিশু স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জনস্বাস্থ্যের মানোন্নয়ন— এমন বহু জরুরি বিষয় সরকার তথা প্রশাসনের নজরের বাইরে থেকে এসেছে এত কাল। কিন্তু সেই ধরন পাল্টে এই সব ক্ষেত্রে জনসাধারণের টাকা জনগণের স্বার্থেই ব্যবহৃত করার প্রচেষ্টা শুরু করা যায় না কি? অন্যথায়, এই টাকার বিপুল পরিমাণ অব্যবহৃত অংশ যে ঘুরে ফিরে কোনও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাবশালীর পকেটস্থ হবে না, এর কী গ্যারান্টি?
শঙ্খদীপ কর্মকার, কলকাতা-১১৫
কৃষির পথ
কাকলি দাস তাঁর ‘জনসংখ্যার প্রকৃত সমস্যা’ (৭-৮) শীর্ষক তথ্যসমৃদ্ধ মূল্যবান প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, এখনও ভারত বা পশ্চিমবঙ্গের বিপুল জনসংখ্যার সমস্যা কোথায়। সদ্য-স্বাধীন ভারতে এম এস স্বামীনাথন সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে ভারতকে কৃষিতে স্বনির্ভর করলেন, কৃষি-সহায়ক শিল্পপ্রযুক্তির প্রভূত সম্ভাবনা ও বিকাশের পথ উন্মুক্ত করলেন। পরবর্তী কালে জমির পরিবর্তিত চরিত্র, সার-কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে বিতর্কিত হলেও ভারতের জনসংখ্যার জীবন ও জীবিকায় সবুজ বিপ্লবের অবদান অবিস্মরণীয়। কৃষির সঙ্গে এখন শিল্প ও পরিষেবা যুক্ত হয়েছে, যা জনসংখ্যাকে সমৃদ্ধ করতে পারে নানা ভাবে। সবচেয়ে বড় কথা বেকারত্ব, ছদ্ম বেকারত্ব অনেকটাই কমবে। গ্রামের মানুষ ধার করে, জমি বিক্রি করে কার্যত বিপুল শ্রম-অর্থ-সময়ের অপচয় করে নার্সিং, হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট, হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়তে যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের বাইরে। অথচ কৃষির জ্ঞান বংশানুক্রমে তাঁরা অর্জন করে এসেছেন। প্রবন্ধকার যথার্থই বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে জীবিকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কৌশলগত বিনিয়োগ দরকার। এই সঙ্গে বলা যায়, এই বিনিয়োগ হওয়া দরকার গ্রামীণ অর্থনীতিতে। গান্ধীজির গ্রামস্বরাজ ভাবনা, রবীন্দ্রনাথের পল্লিসংগঠন উদ্যোগের ইতিহাস ফিরে দেখতে হবে।
তার আগে নিজেকে জাগানো দরকার। পশ্চিমবঙ্গে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অসুস্থ রাজনীতির শিকার। সে দিকে নজর দিতে হবে।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy