Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Education

সম্পাদক সমীপেষু: ঐতিহাসিক নীতি নয়

স্কুলশিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা নীতির বহু ইতিবাচক দিক আছে। বহুত্ববাদ, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সম্মান করে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে এগিয়ে যাওয়াই সময়ের দাবি। দরকার শাসকের সদিচ্ছা ও মুক্তমন।

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২০ ০০:২৯
Share: Save:

নয়া শিক্ষানীতির খসড়া শিক্ষাবিদ, শিক্ষক সংগঠন, শিক্ষাবিভাগ, পত্র-পত্রিকা— নানা স্তরে আলোচিত হয়েছে। রাজ্য সরকারগুলিও তাদের বক্তব্য স্পষ্ট করেছে। তাই এর প্রকাশ অপ্রত্যাশিত ঘটনা নয়। অপ্রত্যাশিত হল প্রকাশ পদ্ধতির সাংবিধানিক দিকটি। জাতীয় শিক্ষানীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় সংসদে আলোচনা করে, রাজ্যগুলির সুপারিশের মান্যতা দিয়ে, মতানৈক্যের পরিসর কমিয়ে, চালু করলে ভাল হত। এটি ‘ঐতিহাসিক’ ঘটনাও নয়।

রাধাকৃষ্ণন কমিশন (১৯৪৮-৪৯), মুদালিয়র কমিশন (১৯৫২-৫৪), কোঠারি কমিশন (১৯৬৪-৬৬), জাতীয় শিক্ষানীতি (১৯৮৬), ‘প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন’ (১৯৯২)— সবই এসেছে শিক্ষা-ইতিহাসের সরণি বেয়ে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুশিক্ষা, পঞ্চম শ্রেণিকে প্রাথমিকে আনা, প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত চারটি স্তরে বিন্যাস— সবই সময়ের প্রয়োজনে চালু হয়েছে। এখন শুধু নব নব শব্দবন্ধে পুরনো বিষয়গুলিই পেশ করা হচ্ছে। প্রয়োজন, শিক্ষাখাতে খরচ বাড়িয়ে লক্ষ্যপূরণে সরকারের আন্তরিক প্রয়াস। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, পরিকাঠামো তৈরি, সিমেস্টার ব্যবস্থা ও মূল্যায়ন পদ্ধতিকে অর্থবহ করাই কাজের কথা।

স্কুলশিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা নীতির বহু ইতিবাচক দিক আছে। বহুত্ববাদ, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সম্মান করে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে এগিয়ে যাওয়াই সময়ের দাবি। দরকার শাসকের সদিচ্ছা ও মুক্তমন।

শ্রীদামচন্দ্র জানা

রাজ্য সাধারণ সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ প্রধানশিক্ষক সমিতি

পার্থক্য নেই

১৯৮৬ এবং ২০১৯-এর জাতীয় শিক্ষানীতির মধ্যে মৌলিক এবং নীতিগত প্রভেদ নেই। ‘প্রস্তাবনা’ অংশে দু’টি শিক্ষানীতিই পূর্বতন শিক্ষার গলদ, ব্যর্থতার কথা বলেছে। মন্ত্রকের নাম পরিবর্তনের ধুম ছিল, আছে। যন্ত্রনির্ভর শিক্ষায় জোর দিয়েছিল ’৮৬-র শিক্ষানীতি। রেডিয়ো, টিভি, ভিডিয়ো-র মাধ্যমে শিক্ষার সঙ্গে ইন্টারনেট, মোবাইল, শিক্ষা অ্যাপ ব্যবহারের মধ্যে ফারাক নেই। সুকৌশলে শিক্ষকের ভূমিকা খর্ব করার প্রয়াস উভয় শিক্ষানীতিতেই।

শিক্ষায় বিশেষ বিনিয়োগ ছিল ’৮৬-র ঘোষণায়। ফলে গড়ে ওঠে অসংখ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। নতুন শিক্ষানীতিতে একই ভাবনা অন্য ভাবে। ইতিমধ্যে তিন বছরের প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উদ্গ্রীব উদ্যোগপতিরা। তেমনই, মাতৃভাষায় শিক্ষার কথা উভয় নীতিতে আছে। ধাপে ধাপে ভাষান্তরের সুর বর্তমান।

ধর্মীয় মূল্যবোধের গুরুত্বের কথা বলেছিল রাজীব গাঁধী প্রবর্তিত শিক্ষানীতি। নরেন্দ্র মোদীর শিক্ষানীতি আরও বেশি তৎপর। ধর্মনিরপেক্ষ, বিজ্ঞানসম্মত, রেনেসাঁসের মূল্যবোধ-যুক্ত শিক্ষার কথা এক বারও কেউ বলেনি। আরও দেখা যাচ্ছে, ১৯৯০ সালের মধ্যে সকল শিশুকে শিক্ষার আঙিনায় আনার উল্লেখ আছে ’৮৬-র নীতিতে। লক্ষ্য ৩০ বছরেও পূরণ হয়নি। ২০১৯ সালের নীতিতে একই রকম প্রতিশ্রুতি— ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০% শিশুকে স্কুল শিক্ষার আওতায় আনা হবে।

দুটো নীতিই বিশ্বাস করে, সরকারের আর্থিক দায়ভার হালকা করা দরকার। তাই শিক্ষায় বরাদ্দ ২%-এর বেশি হয় না। অথচ, সব শিক্ষা কমিশন ৭-১০% শিক্ষায় বরাদ্দের কথা বলেছে। ’৮৬-র পর প্রাথমিক স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়— অসংখ্য অসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। নয়া নীতিতে তা কমবে না।

ইন্টার-ডিসিপ্লিনারি স্কিমে বিশ্বাসী পন্থ-কস্তুরিরঙ্গন-এর শিক্ষানীতি। যা কলেজ থেকে বিদ্যালয় স্তরে নেমে এসেছে। নম্বর পাওয়া, বা শুধু ভাল লাগার বিষয় দিয়ে শিক্ষা হয় না। শিক্ষা অর্জন করতে হয়। ১৯৮৬ এবং ২০১৯, দু’টি নীতিই বৃত্তিমুখী শিক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু বৃত্তি শিক্ষাপ্রাপ্ত অসংখ্য কারিগর, প্রযুক্তিবিদ আজ কর্মসংস্থানের অভাবে অবসাদে ভুগছে। শিক্ষিত বেকারের কর্মের হদিশ নেই শিক্ষানীতিতে। ১৯৮৬-র নীতি অনুযায়ী শিক্ষার জন্য তৈরি হয়েছিল মুষ্টিমেয় মডেল স্কুল। এই শিক্ষানীতিতে ৪০,০০০ কলেজ বাদ দিয়ে ১৫,০০০ ‘সেন্টার অব এক্সলেন্স’ তৈরির ঘোষণা তারই প্রতিচ্ছবি।

শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, নতুন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা, শিক্ষিত কর্মক্ষম সকল ব্যক্তির কর্মসংস্থান এবং ধর্মনিরপেক্ষ, বৈজ্ঞানিক শিক্ষার প্রসার প্রয়োজন।

শংকর কর্মকার

হালিশহর, উত্তর ২৪ পরগনা

মাতৃভাষায় শিক্ষা

জাতীয় শিক্ষানীতিতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় বা আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষাদান— খুব ভাল উদ্যোগ। এই একটি সিদ্ধান্তের জন্যই এই নীতি আমার মতো অনেকের মন জয় করে নেবে। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও অনেক মানুষ বাস করেন, যাঁদের মাতৃভাষা বাংলা নয়। শিশুরা মা-ঠাকুমার কাছেই পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করে। সেই জ্ঞানার্জনের মাধ্যম থাকে তাদের মাতৃভাষা। এই শিশুরা যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়, তখন পদে পদে হোঁচট খায়। একই জিনিসের আলাদা নাম শিখতে হয়। ভাব প্রকাশের জন্য যে ভাষায় কথা বলা তারা শিখে এসেছে এত দিন, তা হঠাৎ অচল হয়ে যায়। শুধু মনের মধ্যে একটা ধারণা জমাট বাঁধে যে, যা বাড়িতে শিখেছে, বিদ্যালয়ে তা ভুল। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়। না পারে শিক্ষকদের সঙ্গে মিশতে, না পারে সহপাঠীদের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে। যার পরিণতি স্কুলছুট।

বাংলা মাধ্যম স্কুলে তাই সাঁওতাল, লেপচা, রাজবংশী শিশুকে আড়ষ্টতা গ্রাস করে। প্রতিটি শব্দকে যত্ন করে আয়ত্ত করে, ঠিক বানান, ঠিক উচ্চারণ এবং সর্বোপরি কোনও বাক্যের মধ্যে সেই শব্দের ঠিক ব্যবহার জানতে হয়। সব সময় মনে একটা ভয় বা সঙ্কোচ কাজ করে।

নতুন শিক্ষানীতি এই জায়গাটা অনুভব করেছে। এর দু’টি ভাল দিক— এক, ভাষা বৈষম্যের কারণে শিশুমনে উদ্ভূত হওয়া সংশয় আর থাকবে না। মাতৃভাষায় প্রাপ্ত শিক্ষার ভিত্তিকে সম্বল করে ছাত্রছাত্রীদের এগিয়ে যেতে অসুবিধা হবে না। দুই, একাধিক ভাষার সহাবস্থানের ফলে শিশুরা নিজেদের মাতৃভাষার সঙ্গে অন্য ভাষার সম্বন্ধেও জানতে পারবে। সেই ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে।

সুভাষ বর্মন

জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ

নেই বিজ্ঞানী

রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর কবি, গায়ক, অভিনেতাদের জন্মদিন বা মৃত্যুদিবসে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি-সহ সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। কিন্তু কখনও কোনও বঙ্গীয় বিজ্ঞানীর জন্ম বা মৃত্যুদিনে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেনি, একমাত্র ১ জুলাই চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম-মৃত্যুর দিন ছাড়া। সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায় বিশ্বে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন। পরিতাপের বিষয়, এই বিজ্ঞানীদের প্রতি তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর থেকে কোনও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয় না। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ, এঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে অবহিত করুন।

বদ্রী নাথ দাস

কলকাতা-২৮

কেবল মাতৃভাষা?

নতুন শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষাদান বাধ্যতামূলক। তা হলে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলগুলোর কী হবে? ওখানে তো ইংরেজি মাধ্যমেই পড়ানো হয় সব পড়ুয়াদের। তা হলে কি ওই স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে? নতুন শিক্ষানীতিতে এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। আবার যার মাতৃভাষা বাংলা, সে যদি পরিবারের সঙ্গে গুজরাত বা মহারাষ্ট্রে গিয়ে স্কুলে ভর্তি হয়, তা হলে কি সে বাংলা মাধ্যমে পড়ার সুযোগ পাবে? না কি তাকে ওই রাজ্যের মাতৃভাষা গুজরাতি বা মরাঠিতে পড়তে হবে?

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল

কোন্নগর, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Education Government Covid-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy