‘কুভাষিণী’ (সম্পাদকীয়, ১০-১২) প্রসঙ্গে বলতে চাই, কেবল সাংসদ মহুয়া মৈত্র নন, এই দেশ তথা রাজ্যের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের নেতা কটুবাক্য, এমনকি অশালীন বাক্য প্রয়োগে অভ্যস্ত। কখনও তা হিংস্রও। যত নিম্ন মানের কথা, তত হাততালি। বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ তো বটেই, সাংবাদিকরাও সেই আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। সুগত বসুর মতো কয়েক জন প্রাক্তন সাংসদ নিতান্তই ব্যতিক্রম।
সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এর প্রধান চালিকা শক্তি সাংবাদিকরা। তাঁদের অনেক সময়েই শাসক দলের অপ্রিয় সংবাদ ও বিরুদ্ধ সমালোচনা জনসমক্ষে তুলে ধরতে হয়। সেটাই তাঁদের পেশা। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, সাংবাদিকদের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সমর্থকদের দ্বারা নিগৃহীত ও আক্রান্ত হতে হচ্ছে। এই দুঃসাহসের হেতু অবশ্যই মঞ্চ থেকে নেতৃবৃন্দের প্ররোচনামূলক মন্তব্য বা ভাষণ। বাম আমলে সূচনা হয়েছিল বিরোধী দল ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে অশালীন বাক্য ও কটূক্তি প্রয়োগের। সেই ধারা এখনও বহমান। সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। আশঙ্কা হয়, রাজনৈতিক বক্তৃতা ক্রমে কলতলার বচসায় পরিণত হবে। ভদ্র ও মার্জিত ভাষাতেও সমালোচনা করা যায়। তাতে হয়তো হাততালি কম জুটবে। কিন্তু আগামী প্রজন্মের জন্য তা সুস্থ ও যথাযথ উদাহরণ হবে।
কৌশিক চিনা
মুন্সিরহাট, হাওড়া
প্রচার ও অন্ধকার
গয়েশপুরে সভাপতির পদ নিয়ে তাঁর দলেই তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে ‘বহিরাগত’ আখ্যা পেতে হল। এই ঘটনাটির লাইভ সম্প্রচার হলে তিনি উপস্থিত সংবাদমাধ্যমকে ‘দু’পয়সার প্রেস’ বলে শ্লেষাত্মক মন্তব্য করলেন। পরে বক্তব্য থেকে একটুও সরে না এসে তিনি সমাজমাধ্যমে ক্ষমা চাইলেন। সংসদে মহুয়া মৈত্রের ব্যতিক্রমী ভাষণ ইদানীং জনমানসে একটি নতুন বার্তা দেয়, যা কিনা প্রত্যেক সাংসদের থেকেই জনগণ আশা করেন। সে ক্ষেত্রে শুধু ভাষায় নয়, যুক্তি এবং দৃঢ় বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের সংসদ কক্ষে থাকার যোগ্যতাটুকু অন্তত প্রমাণিত হয়। পেশাদারি পরিচালনার ক্ষেত্রে বহুজাতিক সংস্থায় বেশ কিছু দিন মহুয়াদেবী দক্ষতার সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব সামলেছেন, এটি তাঁর রাজনৈতিক পদটিতে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। কিন্তু সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভটিকে নস্যাৎ করে দেওয়া বোধ হয় এক রাজনীতিকের কাছে কাম্য নয়। এখন বেতার আর আকাশবাণীর যুগ নয়। সাধারণ মানুষ, বিশেষত এই প্রজন্মের উপর মিডিয়া এবং সমাজমাধ্যমের প্রভাব যথেষ্ট। ভোট যখন দোরগোড়ায়, তখন এ রকম মন্তব্যের আগে একটু সাবধানি হওয়া প্রয়োজন। সংবাদমাধ্যম রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের বক্তব্য বা তাঁদের মুখ টেলিভিশন পর্দায় না দেখালে, তাঁরা অন্ধকারেই থেকে যাবেন। সেটা নিশ্চয়ই সুখকর অভিজ্ঞতা হবে না।
পিনাকী রুদ্র
কলকাতা-১২৪
অপমান
কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র গত রবিবার গয়েশপুরে তাঁর দলীয় কর্মিসভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে দিলেন, ‘দু’পয়সার প্রেস’ এবং তাঁদের ওই কর্মিসভা থেকে বেরিয়েও যেতে বলেন। মহুয়ার মতো শিক্ষিত, আদব-কায়দা জানা এক জন সাংসদের কাছে সাংবাদিকদের উদ্দেশে এই ধরনের মন্তব্য মোটেও অভিপ্রেত নয়। এই ভাষা প্রয়োগ অত্যন্ত নিন্দনীয়। কারণ, ভারতীয় গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে পরিচিত সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যায় না। সমাজ ও জাতির বিকাশের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যম অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। অস্ত্র যেখানে ভোঁতা হয়ে যায়, কলম সেখানেও তার তীক্ষ্ণতা বজায় রেখে চলে। সাংসদ এই ক’টি শব্দ প্রয়োগ করে সমগ্র বিশ্বে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের অপমান করলেন।
সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও খবর সংগ্রহ করতে হয়, এবং বিভিন্ন অপরাধ ও দুর্নীতির চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে আসল সত্যটি বার করে আনতে হয়। সরকারপক্ষও সংযত থাকতে বাধ্য হয় সাংবাদিকদের সমালোচনার ভয়ে। আর আমরা, অগণিত সাধারণ মানুষরা সাম্প্রতিকতম তথ্য পেয়ে থাকি তাঁদের খবরের ভিত্তিতে। গণমাধ্যমের এই ভূমিকাকে অস্বীকার করে তাকে ছোট করা নেহাতই অহমিকাবোধের প্রতিফলন।
পরেশনাথ কর্মকার
রানাঘাট, নদিয়া
কুরুচিপূর্ণ
মহুয়া মৈত্র সাংসদ। তাই তিনি কোনও বক্তব্য পরিবেশন করার সময়ে নিজ আদর্শ এবং মূল্যবোধের উপর দাঁড়িয়ে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে বক্তব্য পরিবেশন করবেন, সেটাই কাম্য। কিন্তু লক্ষ করলাম, ক্ষমতার দম্ভেই হোক, বা ঔদ্ধত্যে, এক সাংবাদিককে তিনি মানুষ বলেই গণ্য করলেন না। তাঁকে হল থেকে তাড়িয়ে, সংবাদিকদের প্রতি অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করলেন। এই ভাষা সুস্থ রুচি, সুস্থ বুদ্ধির পরিচয় হতে পারে না। তাঁর এই মন্তব্য চূড়ান্ত অসৌজন্যতার পরিচয় বহন করে বলে মনে করি।
মলয় মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-১১০
দ্বন্দ্বময়
মণীশ নন্দীর ‘সাংবাদিকের দিন গিয়াছে?’ (৮-১২) প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী। সংবাদমাধ্যমের নির্ভীক ও তথ্যপূর্ণ খবরই দেশের নাগরিকদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির সহায়ক। সাংবাদিকতা এক সময়ে ছিল কলম-ক্যামেরার ব্যবহারে পেশাদারিত্ব। বর্তমানে স্মার্টফোন, কম্পিউটার-ক্যামেরার ব্যবহারে পেশাদারিত্ব। ব্যবসায়িক স্বার্থ, না জনগণের স্বার্থ, এই দ্বন্দ্ব এ পেশার জন্মলগ্ন থেকে আজও বিদ্যমান। আগে যাঁরা সাংবাদিকতার পেশায় আসতেন, তাঁদের মধ্যে ছিল সততা, নিষ্ঠা। তাঁদের বলিষ্ঠ কলম থেকে আগুন ঝরত। পাঠককুল ঋদ্ধ হতেন। শাসককুল ভয় পেতেন। বর্তমান যাঁরা আসছেন, তাঁদের প্যাশন অবশ্যই আছে। কিন্তু সংবাদপত্র মালিকের চাহিদামতো লেখা লিখতে হয়। অনেক সময় এ জন্য নিজের মনের সঙ্গে, বিবেকের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়।
অবশ্য ব্যতিক্রম এখানেও আছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই করে এঁদের প্রতিষ্ঠা পেতে হয়। রাজনীতির লাল চোখকে এঁরা ভয় পান না। তাই এঁরা পথপ্রদর্শক, জনগণের চোখে আদর্শ সাংবাদিক। আমাদের আমলে এই রকম সাংবাদিকের সংখ্যা খুব কম ছিল না। আনন্দবাজারে বরুণ সেনগুপ্তের কলম যে দিন থাকত, সে দিন কাগজের বিশাল গুরুত্ব। বিক্রি অন্য দিনের তুলনায় বেশি হত। অশোক দাশগুপ্ত, গৌরকিশোর ঘোষের লেখাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
দেশে রাষ্ট্রপতি শাসনের পর ইন্দিরা গাঁধীর পতনে সাংবাদিকদের অসামান্য ভূমিকা ছিল। পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনের পর তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার পিছনে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পশ্চিমবঙ্গে কিছু সংবাদপত্রের চাহিদা কমেনি। করোনাকালে তাদের বিক্রি একটু কমেছে। কিন্তু সময় এলে তা-ও ঠিক হয়ে যাবে।
আমি মনে করি না সাংবাদিকদের দিন গিয়েছে। তাঁদের কলম থেকে আর ফুল ফুটবে না, আগুন ঝরবে না, এ হতে পারে না। তা হলে সারা পৃথিবীতে গণতন্ত্র থাকবে না। সংবাদপত্রের বিভিন্ন শাখায় এখনও কিছু নির্ভীক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, যাঁরা এর ঐতিহ্যের ধারা বহন করে চলেছেন। মৃত্যু উপত্যকা সিরিয়ায় চিত্র সাংবাদিক আলকাদের হাবাকের শিশুদের জীবন বাঁচানোর ঘটনা আজও অনুপ্রাণিত করে।
গৌতম পতি
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy