পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায় ‘ওদের স্কুল ওদের অধিকার’ (১৬-৫) শীর্ষক প্রবন্ধে স্পষ্ট ভাষায় জরুরি কথাগুলো তুলে ধরেছেন। এই সুদীর্ঘ গ্রীষ্মাবকাশ ঘোষণার সময় সরকারের তরফে প্রবল গরমে পড়ুয়াদের শারীরিক অসুবিধা হওয়ার যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল, তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ নেই। কিন্তু, কয়েক দিন আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি দেখে অথবা সকালে স্কুল চালিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার যে ভাবনাচিন্তা অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ করছিলেন, সম্ভবত সেটিই যুক্তিযুক্ত হত। বছরের প্রথম সাড়ে পাঁচ মাসের মধ্যে জানুয়ারি ও মে-র পুরোটা, জুনের অর্ধেক তো স্কুল বন্ধে চলে যাবেই। আবার যে সব স্কুলে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হল, তাদের ক্ষেত্রে আরও বেশ কিছু দিন পড়াশোনার পাট রইল না। তার মানে মাত্র দু’টি মাস ছেলেমেয়েরা একটু পড়াশোনার সুযোগ পেল, মিড-ডে মিলটুকু খেল, বন্ধুদের মাঝে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারল। তার পর আবার বন্ধ হয়ে গেল স্কুল। অতিমারির সময়কালে যেমন অ্যাক্টিভিটি টাস্ক অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হত, এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও ঘোষণা নেই। ফলত, কারও পরীক্ষা অর্ধেক হয়ে আটকে রইল, কারও জীবনে আবার মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকার একাকিত্ব ফিরে এল, কেউ বা সাময়িক কোনও কাজে ঢুকে পড়ল। অথচ, আপাতত গ্রীষ্মের দহন মোটেই স্কুল না খোলার মতো তীব্র নয়, করোনার প্রকোপও কিছু আশঙ্কিত হওয়ার মতো বাড়েনি। তা হলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে সমস্যা কোথায় ছিল? যে মা-বাবা বাড়িতে এই স্কুল যেতে না-পারা শিশুটিকে রোজ দেখছেন, তাঁরা বুঝতে পারছেন কী মানসিক যন্ত্রণা তাদের গ্রাস করছে। গত দু’বছরের দুঃস্বপ্ন পেরিয়ে যদি বা ওরা স্কুলের চৌহদ্দিতে ঢুকেছিল, আবার সেখান থেকে ওদের বার করে আনার অর্থ এক ভাবে ওদের শাস্তি দেওয়া। ওদের স্কুল যাওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া।
প্রমিত সেন, কলকাতা-২১.
বেসরকারিকরণ
আমি গ্রামের স্কুলের এক জন শিক্ষক। আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে, লকডাউন ওই প্রান্তিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের জীবনে কী গভীর ক্ষত রেখে গিয়েছে। আমরা মাস্টারমশাইরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়েছি, কেন তারা বিদ্যালয়ে আসছে না। হতদরিদ্র ঘরের বেশির ভাগ সন্তানই কোনও না কোনও কাজে ঢুকেছে। অনেক সম্ভাবনাময় ছেলেমেয়ে পড়াশোনায় ইতি টেনে দেওয়ায় আমরা গভীর ভাবে ব্যথিত। স্কুল খুললে আবার আশার বাঁধ বেঁধেছিলাম। যা গিয়েছে, সেটা না ফেরাতে পারলেও যেটা আছে সেটাকে আর হারাতে দেব না। কিন্তু সব আশায় জল ঢেলে দিল সরকারি আদেশ। যে আবহাওয়ার অজুহাতে স্কুল বন্ধ হল, সেই আবহাওয়ার উন্নতিতেও যখন স্কুল খুলল না, তখন মানেটা আর ঝাপসা থাকে না। পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায় সব দিক ছুঁয়ে গেলেও বেসরকারিকরণের দিকটা তেমন উল্লেখ করেননি। এই ভাবে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা নষ্ট করার মূল উদ্দেশ্য হল— বেসরকারিকরণ। সরকার সচেতন ভাবে এই বিপুল ব্যয়ভার থেকে হাত গুটিয়ে নিতে চাইছে।
জ্যোতি মল্লিক, মন্তেশ্বর, পূর্ব বর্ধমান
ছুটির কাজ
অতিমারির পরবর্তী সময় শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সরকার কী করবে, তা নিয়ে অনেক অনুসন্ধানের পর স্কুল খুলতে শুরু করেছিল। এ দেশে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার এমন পরিকাঠামো ছিল না যে, বেসরকারি স্কুলের মতো প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর জন্য অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখা যায়। অর্থনৈতিক দিক থেকে সবল পরিবারগুলি তাদের শিশুদের বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করে। তাদের কাছে মোবাইল, ল্যাপটপ হয়তো কোনও ব্যাপার নয়। কিন্তু সরকারি বা সরকারপোষিত প্রাথমিক স্কুলের একটি শিশুর কাছে মোবাইল, ল্যাপটপ অনেক বড় ব্যাপার। কারণ তারা যে জায়গা থেকে উঠে আসে, তা অর্থনৈতিক এবং শিক্ষার দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া পরিবার। সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আবার নতুন করে স্কুল খুলল। শিক্ষকরা দেখলাম আবার নতুন চিন্তাভাবনায় শিক্ষা দিচ্ছেন। শিশুদের মধ্যে জানার আগ্রহ তৈরি করে তাদের মধ্যে পড়াশোনার ছন্দটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। এটা বেশ কঠিন কাজ, বিশেষত যেখানে বেশির ভাগ শিশু প্রায় দু’বছর পড়াশোনার বাইরে। এই ছন্দ ফিরিয়ে এনে আবার যদি একটু বেশি দিন ছুটি দিয়ে, ছুটির পরে তাদের পড়াশোনার অনুশীলন কেমন হয়েছে তা পরীক্ষা করা যায়, তা হলে ক্ষতি কী? গরমের দেড় মাস ছুটি নিয়ে ত্রাহি রব না তুলে বরং দেখে নেওয়া যাক, তারা এই ছুটিটা কী ভাবে নিজেদের প্রয়োজনমতো ব্যবহার করেছে।
প্রদীপ মারিক, বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
শূন্যপদ
‘শিক্ষার দুষ্টচক্র’ (১৩-৫) সম্পাদকীয়তে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা ভারতে শিক্ষাব্যবস্থায় ফাঁকফোকরগুলি তুলে ধরা হয়েছে সুন্দর ভাবে। কিন্তু এর সঙ্গে কিছু যোগ করতে চাই। দেশ জুড়ে সরকারি স্কুল বন্ধের হিড়িক পড়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ৫১ হাজার স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে বেশির ভাগ পড়ুয়াই সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করে। সমস্ত শিক্ষার্থীকে শিক্ষার আঙিনায় আনতে গেলে সরকারি প্রচেষ্টাই বেশি জরুরি। সেই কারণে শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত স্কুলগুলির পরিকাঠামোর উন্নতি এবং শিক্ষক নিয়োগের দিকে।এক সময় পড়ুয়াদের জন্যই যে সব স্কুলের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সেই স্কুলগুলির অস্তিত্ব আজ বিলুপ্তির পথে। এর জন্য ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিকে অনেকেই দায়ী করেন। কিন্তু, পরিবর্তিত সময়ের চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তাকেও অস্বীকার করা যায় না। এ কথা সত্য যে, পড়ুয়াহীন কিংবা খুব কম পড়ুয়া-যুক্ত স্কুলগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারও কোনও পদক্ষেপ করেনি। এই শহরের একটি নামী স্কুলের প্রধানশিক্ষকের গলায় আশঙ্কার সুর। নিজের স্কুল সম্পর্কে বলছেন, “স্কুলটাকে বাঁচাতে বাংলা মিডিয়াম তুলে দিয়ে ইংলিশ মিডিয়াম করতেই হবে। আর কোনও উপায় নেই।” এখানেই স্পষ্ট, যেখানে শিক্ষার্থীদের যেমন প্রয়োজন, তেমন করেই ভাবতে হবে। অথচ, আমাদের রাজ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় দু’টি বিপরীত ছবি দেখতে পাওয়া যায়। এক দিকে, শহরের বহু স্কুলে ছাত্রছাত্রী নেই কিংবা খুব কম, কিন্তু স্টাফরুম শিক্ষকে ভরা। উল্টো দিকে, গ্ৰামের দিকে এমন অনেক স্কুল আছে, যেখানে মাত্রাতিরিক্ত ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে বসার জায়গা দিতে গিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের নাজেহাল অবস্থা। অথচ, সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা অনেক কম। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গ্ৰামাঞ্চলে এ রকম স্কুলে গড়ে প্রায় ৯০ জন পড়ুয়া পিছু এক জন করে শিক্ষক বর্তমান। অর্থাৎ, এই সমস্ত স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যার অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। প্রতি বছর স্কুলগুলিতে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর পদ খালি হলেও তা পূরণ হয়নি। কারণ, নিয়োগ জটিলতায় শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে আছে বেশ কয়েক বছর। এই সঙ্কট এবং বৈপরীত্য সত্ত্বেও, কিন্তু দলে দলে ছাত্রছাত্রী সরকারি স্কুলেই ভর্তি হয়, মেধাতালিকায় স্থান লাভও করে। সম্প্রতি সরকার স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নোটিস জারি করবে বলেছে। শিক্ষক নিয়োগের এই প্রক্রিয়ায় সমবণ্টন নীতি চালু করলে গ্ৰামের স্কুলগুলি শিক্ষক পাবে, মনে করি। এ ক্ষেত্রে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে আগের মতো বিভিন্ন জ়োনে ভাগ করতে হবে। জ়োনভিত্তিক পরীক্ষায় চাকরিপ্রার্থীরা একটিমাত্র জ়োনেরই পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবেন। ফলে যে কোনও জ়োনের শূন্যপদ পূরণের ক্ষেত্রে বাধা থাকবে না।
অরুণ মালাকার, কলকাতা-১০৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy