‘দূষণ লড়াইয়ে ভিক্টোরিয়া, জাদুঘরও’ (১৯-১১) শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে বলি, জাদুঘরের সদর স্ট্রিট সংলগ্ন রাস্তায় ফুটপাতের উপর গজিয়ে উঠেছে অস্থায়ী খাবারের দোকান, যা থেকে সারা দিনই নির্গত হয় ধোঁয়া, তেল— যা দুষ্প্রাপ্য নথি ও তৈলচিত্র-সহ মূল্যবান সামগ্রীর ক্ষতি করছে। অন্য দিকে জাদুঘর সংলগ্ন আর্ট কলেজে ভাস্কর্য তৈরি করতে ফার্নেস জ্বালানো হয়, যার ধোঁয়া মারাত্মক দূষণ ছড়ায়। আর্ট কলেজের কর্মচারী আবাসনে আগুন জ্বালিয়ে রান্না হয়।
জাদুঘরের পশ্চিম দিকে ফাঁকা প্রান্তরে গাছ লাগালে, রাস্তায় চলাচলকারী বিপুল সংখ্যক গাড়ির ধোঁয়ার হাত থেকে জাদুঘর রক্ষা পেতে পারে। এ ছাড়া জাদুঘর চত্বরে গাড়ি পার্কিংও বন্ধ করতে হবে।
নীহাররঞ্জন কবিরাজ
কলকাতা-৪১
কার দায়?
‘ক্লাসঘরে একটু নীতিবিদ্যার পাঠ’ (৩১-১০) শীর্ষক নিবন্ধটিতে ডাক্তার ও রোগীর সম্পর্ক নিয়ে লেখা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে একটি ব্যক্তিগত ঘটনা বলি। গত ১৯ জুন ২০১৭ আমার স্ত্রীকে হারিয়েছি। স্ত্রীর জন্ডিস (হেপাটাইটিস ‘এ’ অথবা ‘বি’— কোনাওটাই নয়) ধরা পড়ার পর এক ডাক্তারবাবুর পরামর্শে এক নার্সিং হোমে ৯ জুন স্ত্রীকে ভর্তি করি স্বনামধন্য এক ডাক্তারের অধীনে। যখন ভর্তি করি সকাল ১০টায় কেবলমাত্র বিশ্রামের জন্য— যা কোনও ভাবেই বাড়িতে সম্ভব নয়— তখন তাঁর শরীরে গা-বমি, অরুচি বা চোখ হলুদের কোনও লক্ষণ ছিল না। রক্ত পরীক্ষায় বিলুরুবিনের মাত্রা বেশি থাকায় নার্সিং হোমের কর্তব্যরত ডাক্তার ফোন মারফত বিখ্যাত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্ত্রীকে ভর্তি করেন। ডাক্তারের কাছ থেকে শুনে প্রয়োজনীয় ওষুধ লিপিবদ্ধ করেন।
বিকেলে আমি ও আমার বন্ধুরা স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি, কথা বলি, জানতে পারি স্ত্রীর শরীরে কোনও রকম অসুবিধা নেই। আমরা রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত থাকি। ঘটনাক্রমে পাশের শয্যায় আমার এক আত্মীয়া হাঁটুর যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি ছিলেন, তাঁকে অনুরোধ করে আসি একটু খেয়াল রাখার জন্য। ওঁর মাধ্যমেই পরে জানতে পারি, স্ত্রী রাত্রি দেড়টা থেকে অসংলগ্ন আচরণ করছেন, যার জন্য (কর্তব্যরত নার্স/আয়া) স্ত্রীকে বেডে হাত পা বেঁধে শুইয়ে রাখেন।
পরের দিন সকালে স্ত্রীর টুথব্রাশ, সাবান, তোয়ালে ইত্যাদি সঙ্গে নিয়ে নার্সিং হোমের উদ্দেশে রওনা হই। পথিমধ্যে বিখ্যাত ডাক্তারবাবুর ফোন পাই। তিনি জানান, ভাল চিকিৎসার জন্য রোগীকে কলকাতায় রেফার করেছি। আমি সাক্ষাতে কথা বলতে চাই, বিশদ জানতে চেয়ে। তিনি অনুরোধ উপেক্ষা করে হাসপাতাল থেকে প্রস্থান করেন। নার্সিং হোমে পৌঁছে স্ত্রীর কাছে গিয়ে তাঁকে দেখে আমি বাক্রহিত হয়ে ক্রন্দনরত অবস্থায় নীচে নেমে আসি। তখন স্ত্রী কথা বলার শক্তি হারিয়ে ও মস্তিষ্ক বিকল হয়ে ছটফট করছেন।
বন্ধুরা মিলে বহু চেষ্টায় স্ত্রীকে স্ট্রেচারে শুইয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে করে কলকাতার একটি নার্সিং হোমে (বেসরকারি) নামী ডাক্তারের অধীনে ভর্তি করাই। দেড় ঘণ্টার যাত্রায় স্ত্রী যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন আর আমার সাহায্যের হাত তাঁকে শুইয়ে রাখতে বাধ্য করে। ভর্তির পর থেকে বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারবাবু এক দিন নয়, দু’দিন নয়, তিন দিন প্রশ্ন করেন, ব্যথার কী ওষুধ খাইয়েছেন? আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি।
অমল নন্দী
শ্রীরামপুর, হুগলি
নেপথ্যে কে
‘দায় কি শুধু ডাক্তারদেরই’ (৩০-১১) নিবন্ধের লেখকের প্রশ্নের উত্তরটা হল— সামান্যই। সরকারি আমলাগিরি করতে গিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয়েছে বেশ খানিকটা, কারণ আমি এক দফায় স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি এবং অন্য বার ওখানকার স্বাস্থ্যশিক্ষা দফতরের জয়েন্ট সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছি। তারও আগে উত্তরবঙ্গের একটি মহকুমা শাসনের দায়িত্বে থাকাকালীন প্রত্যন্ত এক গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক উজ্জ্বল তরুণ ডাক্তারের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলে তাঁর সমব্যথী হয়ে পড়েছিলাম। এই আদর্শবান ডাক্তার গ্রামের গরিব মানুষদের সেবা করতে আগ্রহী, কিন্তু লোকলস্কর, সাজসরঞ্জাম এবং ওষুধপত্রের অভাবে খুবই অসহায় বোধ করছিলেন। সেই দুঃখে (ওখানে ‘পড়ে থাকা’র দুঃখে নয় কিন্তু) সেই তরুণের চোখে জল দেখেছিলাম।
স্বাস্থ্য দফতরে কাজ করার সময় দেখলাম, বামফ্রন্টের জার্সি গায়ে সিপিএম পশ্চিমবঙ্গের রাষ্ট্র ও সমাজজীবনের নিরঙ্কুশ দখল নিতে গিয়ে কী ভাবে ডাক্তারদের কাছে আটকে গেল এবং কী কৌশলে সাফল্য পেল। যুক্তফ্রন্টের আমলেই সরকারি কর্মচারী এবং শিক্ষকরা দলে ভিড়েছিলেন, বামফ্রন্ট ধীরে ধীরে উচ্চবর্গের সরকারি অফিসার, আইনজীবী-ব্যারিস্টার, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধারদের শিবিরে আনতে সক্ষম হল। কিন্তু অন্যান্য পেশার সঙ্গে ডাক্তারির দু’একটা মৌলিক পার্থক্যের জন্যেই সহজে ডাক্তারদের কব্জায় আনতে পারছিল না। প্রথমত, অন্য সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে জনগণের যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, জীবন-মরণের কান্ডারি ডাক্তারের সঙ্গে রোগীর সম্পর্ক তার থেকে অনেক গভীর। এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফাঁকে অনুপ্রবেশ বেশ কঠিন। তা ছাড়া, কেরানি অফিসার তো বটেই, শিক্ষক বা ইঞ্জিনিয়াররাও সরকারি চাকরিতে ঢুকে পড়লে বেরিয়ে আসতে পারেন না। কারণ সরকারি চৌহদ্দির বাইরের জগৎটা ক্রমেই তাঁদের কাছে অচেনা হয়ে যায়। কিন্তু ডাক্তারবাবু তো স্টেথো কাঁধে বটতলায় বসলেও দিন গুজরান করতে পারেন। সেই সাহসেই সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলে এঁরা একটি সংগঠন গড়েছিলেন যার প্রধান লক্ষ্য ছিল স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি সাধনের চেষ্টা, সঙ্গে নিজেদের দাবিদাওয়ার কথাও বলা। তবে এঁরা রাজনীতির ছোঁয়ার বাইরে ছিলেন বলে শাস্তির খাঁড়ার আঘাত এঁদের কাবু করতে পারেনি। তখন বিরোধী বামপন্থীরা এঁদের সমর্থক ছিলেন এবং বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এসে এঁদের দুই বরখাস্ত নেতাকে পুনর্বহাল করে।
তবে এর পর শাসকের বদভ্যাস অনুযায়ী সরকারি ডাক্তারদের নিজেদের শিবিরে আনার চেষ্টা শুরু হল। ১৯৮৪ সালের ২৪ জুন মৌলালি যুবকেন্দ্রে এ রাজ্যের এবং ত্রিপুরার দুই মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিশিষ্ট অনুগতদের চাঁদের হাট বসিয়ে প্রতিষ্ঠিত হল ধামাধরা সংগঠন। শেষ পর্যন্ত ১৯৯০ সালে স্বাস্থ্য পরিষেবা আইনটাকেই তড়িঘড়ি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সংশোধন করে মোক্ষম কোপটা মারা হল। হাইকোর্ট–সুপ্রিম কোর্ট করেও বেয়াড়া ডাক্তাররা সুবিধে করতে পারলেন না।
সিপিএমের সেই বিষবৃক্ষের ফল তো বাঙালি আজও ‘উপভোগ’ করে চলেছে। মাঝে ‘পরিবর্তন’-এর মরীচিকা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এখন পরিবেশ আরও খারাপ। এই জমানায় ও-সব ‘কৌশল-টৌশল’ও চুলোয় গিয়েছে। ছাত্রজীবনে মেডিক্যাল পড়ুয়া বন্ধুদের কাছে শুনেছিলাম— ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অনেক সময় কাজের চাপে তাঁর অফিস-কক্ষেই ক্লাস নিতেন। এক ক্লাসে অধস্তন কর্মী এসে জানালেন, ‘‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী কথা বলতে চান, ফোনটা ধরুন স্যর।’’ অধ্যক্ষ বললেন, ‘‘বলে দাও আমি এখন ক্লাস নিচ্ছি, পরে আমিই ফোন করে নেব।’’ এখন তো সংবাদপত্রে ছবিই দেখলাম, সেই অধ্যক্ষের চেয়ারের পাশেই তোয়ালে মোড়া দ্বিতীয় একটি চেয়ার রয়েছে নির্মল মাজির জন্য।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশিষ্ট নিউরো সার্জন ডা. শ্যামাপদ গড়াইকে শাসকের উদ্ধত ঢঙে সাসপেন্ড করে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। কিছু দিন আগে টেলিপ্রচারিত সভায় ডাক্তারদের বকাঝকা করে তাঁর কঠোর মনোভাব দেখানোর পরে ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ডাক্তাররাও দলে দলে চাকরি ছাড়ছেন। এই পরিবেশে অসম্ভব জেনেও বলতে ইচ্ছে করছে ‘অনুপ্রেরণা’-বঞ্চিত কয়েক জন বিশেষজ্ঞকে নিয়ে একটি স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করা হোক এবং একটি স্বাস্থ্য পরিষেবা নীতি প্রণীত হোক। তার ভূমিকায় থাকবে ‘রাজনীতি’কে ছক্কা হাঁকিয়ে কালীঘাট-কলুটোলা-আলিমুদ্দিন-মৌলালি পার করে ফেলে দেওয়া।
বলাইচন্দ্র চক্রবর্তী
কলকাতা-৬৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy