সম্প্রতি নিজেদের দেশের মাঠে নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে তিনটি টেস্ট ম্যাচে ভারতের শোচনীয় হারের পরে এই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা অভিযোগ তুলেছেন, আইপিএল-এ খেলে কোটি কোটি টাকা রোজগারের জন্য ভারতীয় ক্রিকেটাররা তেমন গুরুত্ব দিয়ে টেস্ট ম্যাচগুলি খেলেন না। যে-হেতু বর্তমান সময়ে ভারতের টি-টোয়েন্টি ধামাকা ক্রিকেটের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সংক্ষেপে আইপিএল) টাকার এক মচ্ছবে পরিণত হয়েছে, সে-হেতু আইপিএল-এ খেলার জন্য ক্রিকেটাররা সারা বছর মুখিয়ে থাকেন। কেননা এই সীমিত ২০-২০ ওভারের ক্রিকেটে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে ক্রিকেটারদের জন্য।
এ বছর আইপিএল-এ দশটি ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি দলের ক্রিকেটার কেনার বাজেট হল প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। কলকাতা নাইট রাইডার্স এখনও পর্যন্ত খরচ করেছে ৫৭ কোটি টাকা। এই দলের নিলামের জন্য হাতে রয়েছে ৫১ কোটি টাকা। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ৭৫ কোটি টাকা খরচ করেছে, তাদের হাতে আছে ৪৫ কোটি টাকা। প্রত্যেকটি দলের ক্ষেত্রেই চিত্রটি কমবেশি এক রকম। বস্তুত ভারতের আর কোনও খেলাধুলায় এত কোটি কোটি টাকা খরচ হয় না। এই দেশে ফুটবল, হকি, টেনিস, কবাডি, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার এবং অ্যাথলেটিক্স-এর মতো ক্রীড়াক্ষেত্রে ক্রিকেটের সমান অর্থ কোনও দিনই ব্যয় করা হয়নি। ফলে এই সব ইভেন্ট এখনও উপেক্ষিতই রয়ে গেছে এই দেশে।
উল্টো দিকে, ভারতীয় ক্রিকেট মানেই টাকার খনি। বিগত ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ভারতীয় ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা বিসিসিআই (বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া) আয় করেছে ৪,৭৩৫ কোটি টাকা। পরবর্তী বছরের হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। অপর দিকে এ বছর ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেটে ক্রীড়াক্ষেত্রের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ৩,৪৪২ কোটি টাকা। প্রায় একশো পঁয়তাল্লিশ কোটি মানুষের এই দেশে মাথাপিছু ক্রীড়াক্ষেত্রে বরাদ্দ যৎসামান্য অর্থ। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড কি পারে না তাদের বিপুল পরিমাণ লাভের টাকা দিয়ে ফুটবল, হকি-সহ অন্য খেলার মানোন্নয়নের জন্য কিছু সদর্থক প্রচেষ্টা করতে?
দেশের তরুণ ফুটবল প্রতিভা অন্বেষণের জন্য, হকির জন্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতিভা তুলে আনার জন্য নিদেনপক্ষে একটি করে অ্যাকাডেমি তৈরি করা যায় অনায়াসে। একটি দেশে শুধু ক্রিকেটের ক্ষেত্রেই উন্নতি হবে, আর কোনও খেলায় হবে না— এই ধারণা নিতান্তই একপেশে বলে মনে হয়। যে-হেতু ভারতের ক্রিকেট বোর্ড বিশাল সম্পদের অধিকারী, সে-হেতু তারা অন্য খেলার ক্ষেত্রে যদি কিছুটা আর্থিক দায়িত্ব পালন করে, তা হলে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।
তুষার ভট্টাচাৰ্য, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
শান্তির আশা
প্রণয় শর্মার ‘পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধের মেঘ’ (৪-১১) প্রবন্ধটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। ক্ষমতাশালী, পরপীড়ক সম্রাজ্যবাদী শক্তি যখন সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠে, তখনই শুরু হয় মাৎস্যন্যায়। মনে পড়ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লিপিকা গ্রন্থের ‘বিদূষক’ আখ্যানটি।
“কাঞ্চীর রাজা কর্ণাট জয় করতে গেলেন। তিনি হলেন জয়ী। চন্দনে, হাতির দাঁতে, আর সোনা-মানিকে হাতি বোঝাই হল। দেশে ফেরবার পথে বলেশ্বরীর মন্দির বলির রক্তে ভাসিয়ে দিয়ে রাজা পুজো দিলেন। পুজো দিয়ে চলে আসছেন— গায়ে রক্তবস্ত্র, গলায় জবার মালা, কপালে রক্তচন্দনের তিলক; সঙ্গে কেবল মন্ত্রী আর বিদূষক।” পথের ধারে আমবাগানে রাজা লক্ষ করলেন ছেলেরা দুই সারি পুতুল সাজিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছে। “রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কার সঙ্গে কার যুদ্ধ?’ তারা বললে, ‘কর্ণাটের সঙ্গে কাঞ্চীর।’ রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কার জিত কার হার?’ ছেলেরা বুক ফুলিয়ে বললে, ‘কর্ণাটের জিত, কাঞ্চীর হার।’” ব্যস, আর যায় কোথায়! মন্ত্রী রাজার কাছে এসে জানিয়েছিল, গ্রামে শৃগাল কুকুর ছাড়া কারও মুখে শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে না। বিদূষক বলেছিল, “এবার আমাকে বিদায় দিন।” আজ মানব-হিতৈষী এমন বিদূষকের বড় অভাব। যুদ্ধ মানেই প্রতিহিংসা, আত্মম্ভরিতা, বিদ্বেষের আগুনে জ্বলতে থাকা।
ভাবতে হবে এই যুদ্ধের উৎস কোথায়? হামাস কেন ইজ়রায়েলকে আক্রমণ করেছিল, সেই আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। কিন্তু এটুকু না বললে নয় যে, পাশাপাশি দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি অন্যটির কণ্ঠরোধ করতে চাইলে পরিত্রাণের জন্য যেটুকু প্রয়োজন, হামাস সেটুকু করেছে মাত্র। তার পরিণতিতে আজ প্যালেস্টাইনের হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, সামাজিক প্রতিষ্ঠান-সহ গাজ়ার অধিকাংশ বাড়ি নিশ্চিহ্ন। সেখানে এখন শ্মশানের নীরবতা। কেবল নিহতের সংখ্যাই ৪৫ হাজার ছাড়িয়েছে। শান্তিকামী মানুষের প্রশ্ন, এমন নির্মম হত্যা কি কার্যত রক্তের হোলিখেলা নয়? পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও আমেরিকার সদ্যপ্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মতো যুদ্ধবাজ মেলা ভার! সচেতন মানুষ মাত্রেই জানেন, ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর এই নৃশংস ইতিহাস তৈরির মূল রূপকার হলেন জো বাইডেন। প্রকাশ্যে এক দিকে ইউক্রেন, অন্য দিকে ইজ়রায়েলকে যুদ্ধে বিরত হওয়ার কথা বললেও, তলে তলে বাইডেন বলেন অন্য কথা। যুদ্ধবাজদের প্রতি সব রকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রেখেছে আমেরিকা। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, গোপন তথ্য সরবরাহ, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সহায়তা, সর্বোপরি অর্থ সাহায্য করে চলেছে। প্রবন্ধকার ঠিকই বলেছেন, আমেরিকা মনে করলে এই যুদ্ধ থেমে যায় এক মাসের মধ্যে। কিন্তু মুনাফার লোভ তো আর দমন হওয়ার নয়! এই অসংখ্য মানুষের মৃত্যু সেখানে বড় নয়, বড় আমিত্ব, অহংবোধ। শাসকের মানবিক রূপ কোথায়?
আমরা ১৯৮০ সালের ইরান-ইরাকের উপসাগরীয় যুদ্ধ দেখেছি। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পক্ষ নিয়েছিল আমেরিকা ও সোভিয়েট রাশিয়া। অন্য দিকে, ইরানের পক্ষে ছিল লিবিয়া ও সিরিয়া। যুদ্ধ গড়িয়েছিল ১৯৮৮ সালের অগস্ট মাস পর্যন্ত! পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ক্ষয়ক্ষতিতে জেরবার হয়ে গিয়েছিল ইরান। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ থেমেছিল। কিন্তু এখন যত দিন যাচ্ছে, রাষ্ট্রপুঞ্জ বলদর্পী রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে সরব হতে পারছে না। শাসক যখন সর্বভুক, মূর্তিমান দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠে, তখন রাষ্ট্রপুঞ্জ নিষ্ক্রিয়। রবীন্দ্রনাথ সভ্যতার সংকট বইয়ে উল্লেখ করেছেন, প্রবল প্রতাপশালীরও ক্ষমতা মদমত্ততা নিরাপদ নয়। তারই উদাহরণ, স্বদেশের মানুষের হাতে দুর্বিনীত প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের হত্যা, ফাঁসিকাঠে তাঁর ঝুলন্ত দেহ। আজ গোটা বিশ্ব শান্তির জন্য আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে আছে তাঁর ‘মানবিক’ রূপ দেখার প্রত্যাশায়।
সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪
কবির প্রয়াণ
এই সংবাদপত্রে গত ২৯ অক্টোবর ‘দিনপঞ্জিকা’ কলামে ‘বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশের প্রয়াণ দিবস’ ছাপা হয়েছে। কবি জীবনানন্দ দাশ ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ অক্টোবর কলকাতার বালিগঞ্জে ট্রাম-দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তিনি ২২ অক্টোবর প্রয়াত হন।
সুদীপ্ত সরকার, কলকাতা-১০৩
এখনও চলছে
১ জুলাই, ২০২২ থেকে রাজ্যে নিষিদ্ধ হয়েছে ৭৫ মাইক্রনের কম পুরু পলিথিন ক্যারিব্যাগ। কিন্তু সর্বত্রই দিব্যি ব্যবহার চলছে এর। যাঁরা পরিস্থিতির বদল ঘটাতে পারতেন সেই সরকারি প্রশাসকরা উদাসীন। গ্রামের সুস্থ বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চলেছে পলিথিন ক্যারিব্যাগ, তৎসহ পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সামগ্রীসমূহ। এদের বহুক্ষেত্রে পোড়ানো হয়। এতেও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে ও জনস্বাস্থ্য বিঘ্নিত হচ্ছে।
প্রদীপ রঞ্জন রীত, আমতা, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy