শমীক সেন তাঁর প্রবন্ধে (‘প্রশ্নটা শুধু হিজাবের নয়’, ২৮-৩) আইনের ধারা, উপধারা নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন। কিন্তু যে কোনও ধর্মের ক্ষেত্রেই, ধর্মের নামে কিছু বাহ্যিক প্রথা বা আচরণকে সমর্থন করা বোধ হয় বোঝায় না। তা হলে তো সতীদাহ প্রথা কিংবা বাল্যবিবাহ মেনে চলা উচিত, বিধবা বিবাহ সমর্থন করা উচিত নয়, ধর্মের দোহাই দিয়ে! প্রতিটি ধর্মই কিন্তু মানবতার কথাই বলেছে, মানুষে মানুষে বিভেদের কথা বলেনি। ধর্ম এত সঙ্কীর্ণ নয় যে, নির্দিষ্ট পোশাক বা বিবাহচিহ্ন ধারণ না করলে কোনও ব্যক্তিকে বর্জন করবে, বলা যাবে সে ধর্মপরায়ণ নয় বা ধর্মকে ভালবাসে না। যখন অপারেশন রুমে চিকিৎসক, নার্স দিদিরা অপারেশন করতে ঢোকেন, তখনও তাঁদের বিশেষ পোশাক পরতে হয়, সে তাঁরা যে বর্ণ, ধর্ম, ভাষারই হন না কেন। কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে একই রকম পরিধান পরলে কোথাও কোনও ধর্মকে আঘাত করা হয় না।
আমাদের দেশে বিভিন্ন ধর্মের, বর্ণের মানুষ আছেন, তাঁরা মিলেমিশে একে অপরের সঙ্গে সদ্ভাব রেখেই ধর্মাচরণ করে থাকেন। কিন্তু কিছু সঙ্কীর্ণমনা মানুষ আছেন, যাঁরা একটু এ ধার থেকে ও ধার হলেই ‘গেল গেল’ রব তুলতে থাকেন। আজও মহিলা পুরোহিতের কথা শুনলে এঁরা কপালে চোখ তোলেন, ভিন্ন জাতি-ধর্মে বিবাহ নিয়ে সমালোচনা করেন, মেয়েদের ‘অনার কিলিং’ করেন। এঁদের কাছে ধর্ম একটা অস্ত্র, নিজেদের মাতব্বরি দেখানোর। কিন্তু সাধারণ মানুষ আমরা ধর্ম বলতে মানবিকতাই বুঝি, বহিরঙ্গ নয়।
সর্বানী গুপ্ত
বড়জোড়া, বাঁকুড়া
ফ্রান্স ও ভারত
শমীক সেনের সঙ্গে সহমত পোষণ করে কিছু বলতে চাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইউনিফর্ম কতটা অভিন্ন হওয়া উচিত, সেই প্রশ্নের বিচার করতে হলে সেই দেশ ও সমাজের সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষতার আদল ঐতিহাসিক কারণে ভারতের থেকে আলাদা। সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধু নয়, যে কোনও রাষ্ট্রীয় পরিসরে সব রকম ধর্মীয় অনুষঙ্গ পরিত্যাজ্য। অন্য দিকে ভারতে কিন্তু কখনওই ধর্মীয় চিহ্নধারণ ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী হিসেবে বিবেচিত হয়নি। এ দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ, প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ধর্মাচরণের সমান অধিকার। ভারতের সংস্কৃতিতে কোনও দিন ধর্মীয় চিহ্ন ধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধর্মনিরপেক্ষতা ও অভিন্নতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
আর একটি বিষয় লক্ষণীয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পোশাক-কেন্দ্রিক নিষেধাজ্ঞা জারি হয় অপেক্ষাকৃত দুর্বল, প্রান্তিক, সংখ্যালঘু শ্রেণির মানুষের উপর। বর্তমানে আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠীর কাজই হল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর বিদ্বেষ জারি রেখে হিংসার বীজ বপন। যারা এই বিদ্বেষ পোষণ করছে তারা ভুলে যাচ্ছে যে, প্রগতিশীল সমাজে পোশাকের সমতার থেকে শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে সুযোগের সাম্য বেশি দরকার। পোশাক যদি শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তা হলে মেধার অবমাননা হয়।
অভিজিৎ ঘোষ
কমলপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
চাই সহিষ্ণুতা
কর্নাটক হাই কোর্টের হিজাব পরিধানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির নির্দেশটি অনেক প্রশ্ন খাড়া করে। শমীক সেনের প্রবন্ধটি সেই প্রশ্নগুলি তুলে ধরতে সাহায্য করে। একটা শিক্ষাবর্ষের মাঝখানে হঠাৎ করে হিজাবকে কেন্দ্র করে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হল, সেটাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ধর্মীয় মেরুকরণের ছাপ স্পষ্ট। যদি বিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মতো ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরতে বাধা দেওয়া হয়, তা হলে তা বিতর্ক সৃষ্টি করবেই। এ ছাড়াও হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞার একটা বড় কারণ হল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইউনিফর্ম পরার বাধ্যবাধকতা। সে ক্ষেত্রে তা সেনাবাহিনীর উপরেও প্রযোজ্য হওয়ার কথা, কারণ সেখানেও ইউনিফর্ম পরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে পাগড়ির উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। এখানে প্রশ্নটা হিজাব বা পাগড়ি পরিধানের নয়, প্রশ্নটা হল ধর্মীয় সহনশীলতার।
স্নেহা মাজি
গুসকরা, পূর্ব বর্ধমান
অধিকার
এখনও পুরুষশাসিত সমাজ ঠিক করে দেয়, নারী কী পোশাক পরবে। ধর্মের দোহাই দিয়ে পোশাক ও সাজসজ্জার বেড়াজালে নারীকে বেঁধে ফেলার নিরন্তর চেষ্টা চলছে। সাম্প্রতিক অতীতে আফগানিস্তানের তালিবান উত্থানের সময়ে নারীর পোশাকের ফতোয়া শোনা গেল। তার পর ভারতের একটি রাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব-পরিহিতা এক ছাত্রীকে নিয়ে বিতর্ক হল। এবং তার পর আমরা দেখলাম বাংলাদেশের এক অধ্যাপিকার টিপ পরার প্রতিবাদে পুলিশগিরি। যদিও এই ঘটনার প্রতিবাদে সমাজমাধ্যম থেকে ঢাকার রাজপথ, সর্বত্র আন্দোলন চলছে, তবুও প্রশ্ন একটাই— নারীর পোশাক নির্ধারণের দায়িত্ব পুরুষকে কে দিয়েছে? এই বিধিনিষেধে ধর্ম বা প্রশাসনকেই কেন যুক্ত করা হয়? এর সবই কি নিছক রাজনীতির স্বার্থে, না কি নারীকে আজও ভোগ্যপণ্য করে রাখার জন্য এই চেষ্টা? একুশ শতকেও উদারবাদী চিন্তাধারা, নারী স্বাধীনতার আদর্শ, ধর্ম ও সমাজের কাছে পরাজিত। প্রতি দিনের এই অনুশাসনগুলোর কাছে দু’-এক দিনের প্রতিবাদ হাস্যকর হয়ে ওঠে।
ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়
শিলিগুড়ি
আপন হোক
হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কর্নাটকের একটি কলেজে যা হল, তা নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্ক চলছে। আমাদের রাজ্যেও একটি কলেজে ছেঁড়া জিনস নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়, আবার সম্প্রতি গুয়াহাটি বিমানবন্দরে যে ভাবে এক বিশেষ ভাবে সক্ষম মহিলাকে তল্লাশি করা হয়, সেটিও কম হৃদয়বিদারক ঘটনা নয়। এই দৃষ্টান্তগুলি কি আমাদের এখনও ভাবিয়ে তোলে না? শিক্ষিত হয়ে কী-ই বা হবে, যদি না এ সব কথা আমাদের ভাবতে বাধ্য করে? গত দু’বছর আমরা সকলে সত্যিই খুবই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। এই সময়ে আমরা সকলকে আপন করে নিতে পারলে ভাল হত না কি?
অনন্যা দত্ত
কলকাতা-৬১
বিধি কই?
আনন্দবাজার পত্রিকা-য় ‘আদর’ (পৃ ৬, ২৯-৩) শীর্ষক ছবিতে দেখা গেল, দার্জিলিঙের রাস্তায় হাঁটার সময়ে একটি দুধের শিশুকে কোলে নিয়ে, তার কপালে মুখ ঠেকিয়ে চুম্বন করে আদর করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন, এটা কি স্বাস্থ্যসম্মত? তার উপর যখন কোভিডবিধি মেনে চলা হচ্ছে। শিশুদের প্রতি ভালবাসা অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছিল। সবাই জানি, প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু শিশুদের খুব পছন্দ করতেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও শিশুদের খুব ভালবাসেন। মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন কার্যক্রম চলাকালীন শিশুদের গাল টিপে আদর করা, বা কোলে তুলে নেওয়ার ছবি আমরা সংবাদপত্রে দেখেছি। কিন্তু এ ভাবে শিশুর একেবারে মুখের সামনে মুখ নিয়ে কপালে চুম্বন করা কতটা নিরাপদ, সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায়।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল
কোন্নগর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy