গ্রেটা থুনবার্গ। —ফাইল চিত্র
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে হানা অগ্নিদৃষ্টি এখন সমাজমাধ্যমে ‘ভাইরাল’, উল্লেখ করেছেন সম্পাদক (‘সাহসিনী’, ২৭-৯)। গ্রেটা থুনবার্গ (ছবিতে)-এর এই অসমসাহসী চেতনাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু ‘ভাইরাল’ বিশেষণটি সাধুবাদকে জোলো করে দেয়। অপরাধীর মুখের সামনে মানুষী প্রতিবাদ সবচেয়ে সার্থক। ফলপ্রসূ না হলেও সৎ প্রয়াস ঐতিহাসিক ও শিক্ষণীয় চিহ্ন হয়ে যায়। গ্রেটা তো ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারে প্রতিবাদ করতে পারতেন। হয়তো ‘ভাইরাল’ হত। তিনি কিন্তু সে সুযোগ নেননি।
১৬ বছরের কিশোরীর ১২ বছর বয়সে অ্যাসপারগার সিন্ড্রোম (সামাজিক ভাবে যোগাযোগ স্থাপনে অসুবিধা) ধরা পড়েছিল। এই অসুবিধার জন্য গ্রেটা কারও হাত দিয়ে চিঠি, টেলিগ্রাম পাঠাতে পারতেন, ইমেল বা ফোন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি নিয়েছিলেন অন্য পথ। ২০১৮ সালে প্রথমে স্কুলে এবং পরে সুইডিশ পার্লামেন্টের বাইরে বসে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বার্তা দেওয়া শুরু করেন। সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমে সারা বিশ্বের পড়ুয়াকে পাশে পেয়ে যান।
এমন অনেক সুযোগ জ্ঞানত এড়িয়ে গিয়েছেন গ্রেটা, তাঁর মূল দাবি বা প্রতিবাদের সততা রাখার জন্য। সাধারণত সমাজমাধ্যমে ‘ভাইরাল’ প্রতিবাদে এই সততা থাকে না। ‘ভাইরাল’ ঘোরে মোবাইল থেকে ট্যাবে, ল্যাপটপ থেকে নেটওয়ার্কে। কেউ এক জন লোড করে। বাকি অধিকাংশ ফরওয়ার্ড করতে গিয়ে ওইটুকু জেনে দায়িত্ব শেষ করেন। এখন আবার ম্যানুফ্যাকচার্ড ‘ভাইরাল’ সুফলের চেয়ে কুফল ছড়াচ্ছে বেশি। আর এখানেই সংগ্রাম, প্রতিবাদের দফারফা হচ্ছে ।
শুভ্রাংশু কুমার রায়
ফটকগোড়া, হুগলি
গোমূত্র
‘গোমূত্রের ক্ষমতার প্রমাণ কই’ (১৮-৯) শীর্ষক নিবন্ধের প্রেক্ষিতে কিছু কথা।
১) নিবন্ধটি পড়লে পাঠকের ভ্রান্ত ধারণা হতে পারে, গোবর-গোমূত্র বিষয়ক গবেষণায় ৬০% সরকারি অনুদানের কথা বলা হচ্ছে। বিষয়টি কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। প্রাথমিক ভাবে ৬০% পর্যন্ত সরকারি সাহায্য ডেয়ারি এবং গরুর অন্যান্য বাই-প্রোডাক্টের (গোবর, গোমূত্র-সহ) বাণিজ্যিকীকরণে দেওয়ার প্রস্তাব হয়েছে। গবেষণার ক্ষেত্রে কোনও সুবিধার কথা বলা হয়নি, অর্থাৎ বিজ্ঞানীর গবেষণার বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এটি নয়।
২) নিবন্ধে গোবরকে ছাগলের নাদি ও মানুষের ‘ইয়েটিয়ে’র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আমরা গ্রামের মাটির বাড়িতে বহু কাল গোবরজল ছড়া বা গোবর দিয়ে নিকানো উঠোনের কথা শুনেছি, ছাগলের নাদি বা মানুষের বিষ্ঠা দিয়ে ও-সব হয় বলে জানা নেই।
৩) এক প্রাণীর বর্জ্য সেই প্রাণীর ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে, কিন্তু অন্য প্রাণীর পক্ষে উপকারী হতে পারে। যেমন, মানুষের বিষ্ঠা শূকরের খাদ্য।
৪) ‘ক্ষতি কোরো না’ কথাটা এসেছে। অর্থাৎ ক্ষতি সম্বন্ধে বিজ্ঞানী শতকরা ১০০ ভাগ (বা ৯০ ভাগ) নিশ্চিত। প্রমাণ অসংখ্য আছে নিশ্চয়ই, বৈজ্ঞানিক তথ্য। কিন্তু সেটা করতে গেলেও তো সেই গবেষণাই করতে হবে, তাই না?
রচনাটিতে কিছু বক্রোক্তি আছে (গরুর ল্যাজের পিছনে লাইন দেওয়া ইত্যাদি), যা বৈজ্ঞানিক রচনায় কাম্য নয়।
দ্বিজেশ কুমার সাহা
কলকাতা-৫২
‘মুৎসুদ্দি’?
‘মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া’ (২৭-৮) শীর্ষক চিঠিতে পত্রলেখক শিবাজী ভাদুড়ী, সোনালী দত্তের ‘একাই ছিলেন অনেক’ (১৮-৮) নিবন্ধের ‘‘সাম্রাজ্যবাদী শাসকের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতেন দ্বারকানাথ’’ বক্তব্যটির সঙ্গে একমত হতে পারেননি। পত্রলেখক দ্বারকানাথ প্রতিষ্ঠিত ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক’কে ব্রিটিশ পুঁজি নিয়ন্ত্রিত ব্যাঙ্ক বলেছেন। কিন্তু ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক প্রসঙ্গে ‘দ্বারকানাথ ঠাকুর, বিস্মৃত পথিকৃৎ’ বইয়ে কৃষ্ণ কৃপালনী বলছেন, ‘‘১৮২৮ অব্দে তিনি (দ্বারকানাথ) ও কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কের অন্য অংশীদাররা পৃথক ভাবে একটি এমন ব্যাঙ্ক স্থাপন করতে চাইলেন, যা বিশেষ কোনও কুঠি বা কারবার কিংবা কোম্পানি সরকারের তাঁবেদারিতে নিযুক্ত না থেকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে— যার মূলধন সংগৃহীত হবে যৌথ ভাবে। ...যৌথ মূলধনের একটা মোটা অংশ এসেছিল তাঁর নিজের, আত্মীয়স্বজন ও আশ্রিতবর্গের এবং বন্ধুবান্ধবের নামে কেনা শেয়ারের টাকা থেকে। ব্যাঙ্ক পরিচালনায় তাঁর পরোক্ষ প্রভাবের প্রমাণ দেখা যায় কোষাধ্যক্ষ রূপে তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই রমানাথ ঠাকুরের এবং সেক্রেটারি রূপে তাঁর বন্ধু উইলিয়াম কার-এর নির্বাচন থেকে। ...পদাধিকার বলে না হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে তিনিই ছিলেন ক্ষমতাশালী য়ুনিয়ন ব্যাঙ্কের শীর্ষস্থানে।’’
ব্লেয়ার ক্লিং তাঁর ‘পার্টনার ইন এম্পায়ার’ বইয়ে লিখেছেন, ‘‘আলেকজান্ডার অ্যান্ড কোম্পানি ফেল পড়ল ১৮৩২-র ডিসেম্বর মাসে এবং ম্যাকিন্টস কোম্পানি ১৮৩৩-এর জানুয়ারি মাসে। ১৮৩৪ অব্দের জানুয়ারির শুরুতে দেখা গেল বড় বড় এজেন্সি হাউসের একটিও আর খাড়া দাঁড়িয়ে নেই— সব ধরাশায়ী। এই সঙ্কট অবস্থার মধ্যে একমাত্র দ্বারকানাথই দাঁড়িয়েছিলেন পর্বতের মতো দৃঢ় হয়ে।’’ তবু শেষরক্ষা হল না, ১৮৪৮-এ ফেল পড়ল দ্বারকানাথ প্রতিষ্ঠিত ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক, পত্রলেখক যার কারণ বলেছেন, ‘দুর্নীতি এবং ফাটকাবাজি’। অথচ যা তিনি বললেন না: প্রথমত, ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের পতন হয়েছিল দ্বারকানাথের মৃত্যুর (১৮৪৬) দু’বছর পর। দ্বিতীয়ত, তখন ফেল-পড়া কোনও কোম্পানির ঋণ ও দায় মেটাবার জন্য কোম্পানির ভারতীয় অংশীদারদের বিষয়সম্পত্তি ক্রোক বা বাজেয়াপ্ত করা হত। দ্বারকানাথের আকস্মিক মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দেবেন্দ্রনাথকে বাবার ব্যবসার ঋণ ও দায়ের সমস্তটাই মেটাতে হয়েছিল।
১৮৩৪ সালে দ্বারকানাথ বন্ধু উইলিয়াম কারকে অংশীদার করে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কার, টেগোর অ্যান্ড কোম্পানি’। কৃষ্ণ কৃপালনী লিখেছেন, ‘‘এর আগে পর্যন্ত বাঙালি বণিকেরা য়ুরোপীয় কুঠির বেমিয়ান অথবা মুৎসুদ্দি রূপে কাজ করেই সন্তুষ্ট ছিলেন। আধুনিক য়ুরোপীয় কায়দায়, য়ুরোপীয় অংশীদারকে সমপর্যায়ে রেখে, প্রথম যে বাঙালি বণিক একটি স্বাধীন ব্যবসায়িক উদ্যোগের সূত্রপাত করেছিলেন, তিনি দ্বারকানাথ।’’ এই সময় বড়লাট বেন্টিক দ্বারকানাথকে অভিনন্দন জানিয়ে লেখেন, ‘‘দেশীয় ভদ্রলোকের মধ্যে আপনিই প্রথম কলকাতায় য়ুরোপীয় আদর্শে একটি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান পত্তন করলেন।’’ ইয়ং বেঙ্গলের মুখপত্র ‘জ্ঞানান্বেষণ’ ১৮৩৪-এর ৯ অগস্ট লিখল, ‘‘পর পদানত হিন্দুস্তান এখন অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যরত দেশগুলির সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দিতে পারবে। ঠাকুরবাবু যে পথ দেখিয়েছেন আরও অনেকে সেই পথের পথিক হয়ে... আত্মনিয়োগ করছেন।’’
দেশের শিল্প-বাণিজ্য প্রসারে দ্বারকানাথের অন্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলি হল— ছ’টি যৌথ মালিকানাধীন কারবার: ১) ক্যালকাটা স্টিম টাগ অ্যাসোসিয়েশন (১৮৩৬), ২) বেঙ্গল সল্ট কোম্পানি (১৮৩৮), ৩) ক্যালকাটা স্টিম ফেরি ব্রিজ কোম্পানি (১৮৩৯), ৪) বেঙ্গল টি অ্যাসোসিয়েশন (১৮৩৯), ৫) ইন্ডিয়া জেনারেল স্টিম নেভিগেশন কোম্পানি (১৮৪৪) এবং ৬) বেঙ্গল কোল কোম্পানি (১৮৪৪)। শেষের কোম্পানিটি রানিগঞ্জে কয়লাখনি কিনে কয়লা উত্তোলনের কাজ করত। এ ছাড়া দ্বারকানাথ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিউ ওরিয়েন্টাল লাইফ অ্যাস্যুরেন্স কোম্পানি (১৮৩৪), ক্লোটিং ব্রিজ প্রজেক্ট, বেঙ্গল বন্ডেড ওয়র হাউস অ্যাসোসিয়েশন, ক্যালকাটা ডকিং কোম্পানি ইত্যাদি শিল্প প্রতিষ্ঠান। উনিশ শতকে বাংলা তথা ভারতের বহুমুখী ও স্বাধীন শিল্পোদ্যোগের পথিকৃৎ দ্বারকানাথকে আজ শুধুমাত্র নবজাগরণের যুগের হাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার জন্য সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ পুঁজির বেমিয়ান এজেন্ট বা ‘মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া’ হিসেবে পরিচিত হতে হবে!
পীযূষ রায়
কলকাতা-৩৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy