Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Sukumari Bhattacharya

সম্পাদক সমীপেষু: নৈর্ব্যক্তিক নন তিনি?

সমগ্র প্রাচীন সাহিত্য জুড়ে নারী ও শূদ্রের স্থান হয়েছে কুকুরের পাশে। লঙ্কা থেকে উদ্ধার করে আনা সীতা হয়ে যান ‘কুকুরে-চাটা ঘি’, নারীজন্ম হয়েছে পূর্বজন্মের পাপের ফল।

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২০ ০০:২০
Share: Save:

সুকুমারী ভট্টাচার্যের বিদ্যানুশীলনের ব্যাপ্তির দিকটি সুন্দর তুলে ধরেছেন মৌ দাশগুপ্ত (‘শতবর্ষে সুকুমারী’, রবিবাসরীয়, ১৯-৭)। তবে, ‘‘নিরপেক্ষতা এবং নৈর্ব্যক্তিকতা সব সময় রক্ষিত হয়নি বলে মত পোষণ করেন বহু সুধীজন’’ বলে যে অভিযোগ তুলেছেন, তা বোধ হয় একটু খণ্ডিত ভাবে দেখা। সুকুমারী ভট্টাচার্যের আলোচনায় উঠে এসেছে এক বৃহত্তর নৈর্ব্যক্তিকতা। সেখানে সূক্ষ্মতার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি সমাজটাকে তার প্রকৃত রূপে জানা, পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে।

সমগ্র প্রাচীন সাহিত্য জুড়ে নারী ও শূদ্রের স্থান হয়েছে কুকুরের পাশে। লঙ্কা থেকে উদ্ধার করে আনা সীতা হয়ে যান ‘কুকুরে-চাটা ঘি’, নারীজন্ম হয়েছে পূর্বজন্মের পাপের ফল। এখানেই সুকুমারী ভট্টাচার্যের জ্ঞানচর্চায় প্রশস্ত নৈর্ব্যক্তিকতার প্রাসঙ্গিকতা। প্রতিটি ব্যক্তির সম্পূর্ণ বিকাশের মধ্য দিয়ে সমাজের সম্পূর্ণ বিকাশ— এই দার্শনিক ভিত্তি থেকেই তিনি আলো ফেলেছেন প্রাচীন ভারতের অন্ধকারময় দিকটিতে। তাঁর কাছে নারীর অবদমন উৎপাদন সম্পর্কের অনিবার্য পরিণাম। পরিবর্তন ঘটাতে হলে গোটা উৎপাদন সম্পর্কটাকেই বদলে ফেলতে হবে। তবেই আমরা পাব সমানাধিকারে উজ্জ্বল মানবসমাজ।

এই চিন্তাবিদের বাংলায় রচিত প্রবন্ধগুলি পাঁচ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে (গাঙচিল)। তাঁর রচনার জন্য তিনি অনন্তজীবী।

বিনোদ ঘড়াই

ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর

পূর্বমাতৃকা

কেরলের মালাপ্পুরম জেলার এক নবম শ্রেণির ছাত্রী জুন মাসে আত্মহত্যা করে। কারণ, মোবাইল বা টিভি না থাকায় সে স্কুলের অনলাইন ক্লাস করতে পারেনি। ভারতে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৩০ শতাংশ নারী। একটি মেয়ের বাবা বা দাদার একটা ফোন থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু মেয়েটির নিজস্ব ফোন থাকবে না। না হলে বড্ড বেশি সে স্বাধীনতা পেয়ে যাবে যে!

একেই বলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। আজকের বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট নাম সোর হুয়ানা ইনেস দে লা ক্রুস। কিন্তু সপ্তদশ শতকে মেক্সিকোর ঔপনিবেশিক সমাজ তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অধিকার দেয়নি। তিনি ছেলেদের ছদ্মবেশে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। তা-ও সম্ভব হয়নি। একমাত্র কনভেন্টের সন্ন্যাসিনী হলেই পড়া চালিয়ে যাওয়া যায়। তা-ই করেছিলেন তিনি। জ্ঞান অর্জনের অবধারিত ফল হিসেবে তিনি পুরুষতন্ত্রের বিরোধিতা করলেন ও মেয়েদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে সরব হলেন। এবং তাঁর উপর নেমে এল সেই পুরুষতন্ত্রেরই (এবং ধর্মের) খড়্গ। ধর্মযাজকরা তাঁকে সাহিত্যরচনা বন্ধ করতে বাধ্য করেছিল। ‘পাপের প্রায়শ্চিত্ত’ হিসেবে তাঁকে ব্যক্তিগত সংগ্রহের ৪০০০ বই এবং সঙ্গীত ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার সমস্ত সরঞ্জাম পরিত্যাগ করতে হয়েছিল। লিখে দিতে হয়েছিল যে, তিনি আর পড়াশোনা করবেন না। সেই লেখায় নিজের নাম স্বাক্ষর করে তার নীচে তিনি লিখেছিলেন, “আমি, সব চাইতে খারাপ মেয়েটি।” পরের বছরেই তাঁর মৃত্যু হয়।

দুই শতাব্দী পিছনে তাকালেও দেখা যাবে একই ইতিহাস। চৈতন্য চরিতামৃত বইয়ের একটা পাতা নিয়ে রাসসুন্দরী দাসীর (১৮০৯-১৮৯৯) “রান্নাঘরের হেঁসেলের মধ্যে খোড়ির নিচে” লুকিয়ে রেখে সবার অগোচরে পড়তে শেখা। আমার জীবন-এ তিনি লিখছেন, “এই পুস্তকের পাত যদি আমার হাতে কেহ দেখে, তাহা হইলে নিন্দার একশেষ হইবেক।” তিনিই পরে লিখবেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম আত্মজীবনী। মেয়েরা পড়াশোনা করলে যদি স্বাধীন হতে চায়, তা হলেই তো বিপদ, “এখন মাগের নামডাক, মিনসে জড়ভরত, আমাদের কালে এত আপদ ছিল না।... এখন যেমত হইয়াছে, ইহাতে আর ভদ্রলোকের জাতি থাকিবে না। এখন বুঝি সকল মাগীরা একত্র হইয়া লেখাপড়া শিখিবে” (আমার জীবন)।

ইউনেস্কো-র শিক্ষাবিভাগের সহ-সভাপতি স্তেফানিয়া জিয়ান্নিনি সম্প্রতি সাবধান করে বলেন যে, লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় মেয়েরা স্কুলছুট বেশি হবে। বৃদ্ধি পাবে যৌন হয়রানি, নাবালিকা বিবাহ ও নাবালিকা মায়ের সংখ্যা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, স্বাধীনতা, দেশভাগ ইত্যাদি উত্তাল সময়ের পরে দেখা গিয়েছে মেয়েরা বাইরে বেরোবার ও পুরুষ-অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রবেশ করার একটা ফাঁক পেয়েছিল। কিন্তু করোনার অতিমারি স্কুলের যে দরজা এক বার বন্ধ করেছে, লক্ষ লক্ষ মেয়ের জীবনে তা আবার খুলবে কি না সন্দেহ। সমাজের নিগড় ভাঙতে আরও কত সোর হুয়ানা বা রাসসুন্দরীর আবার প্রয়োজন পড়বে, কে জানে।

অরুন্ধতী ভট্টাচার্য

উত্তরপাড়া, হুগলি

হেমন্তের ত্রিরত্ন

সাত বছর বয়স থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গলাভের সৌভাগ্য হয়েছে। এক দিন ওঁর মুখে এক ব্যতিক্রমী জীবন-দার্শনিকের মন্তব্য শুনেছিলাম। বলেছিলেন, ‘‘বিশাল মানুষদের সম্পর্কে ‘প্রবাদপ্রতিম’, ‘কিংবদন্তি’, ‘যুগপুরুষ’ এ সব বিশেষণ শুনে মনে হয় আমি, উত্তম, কিশোর, মান্না, শ্যামল, সৌমিত্র, রাহুল, সলিল, সন্ধ্যা, লতা, আশা— প্রযুক্তির কৃপায় থেকে যাব। চায়ের কাপে কত তুফান ওঠে আমাদের নিয়ে। কিন্তু জীবনের নানা শাখায় কত বিরাট মাপের বাঙালি উঠে এসেছেন। আমার ভাবনায় এই বাঙালি ত্রিরত্নের সমতুল আর কেউ নয়: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর— এমন অফুরান সৃজনশীলতা, আমাদের প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী তিনি। বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, মেধা ও রস মিশে অবিকল্প গোপাল ভাঁড়, ইতিহাসে তাঁর ধারেকাছে আর কেউ এসেছেন বলে মনে হয় না। আর দাদাঠাকুর, শরচ্চন্দ্র পণ্ডিত— তাঁর ছিল রসিকতার সঙ্গে সূক্ষ্ম জীবনবোধের আভিজাত্য। আমরা বিজ্ঞানের দয়ায় ভাগ্যবান, কিন্তু এই তিন জন চিরস্মরণীয়।’’ সে দিন তিনি এ পার বাংলা-ও পার বাংলার অসামান্য মানুষদের মধ্যে শেখ মুজিবর রহমানের নামটিও উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘‘মুজিবর এক বিরাট মনের, বিরাট মাপের বাঙালি।’’

দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা-১৯

নক্ষত্রপতন

যাত্রাজগতের নক্ষত্র ত্রিদিব ঘোষ চলে গেলেন ২৯ জুন। আজকের মীরজাফর যাত্রাপালা শুনে তাঁকে আমার প্রথম চেনা। এক সময় গ্রামের প্রতিটি বিয়েবাড়িতে বাজত এই যাত্রাপালাটির অডিয়ো রেকর্ড। সুনিপুণ অভিনয় দক্ষতা, বাচনভঙ্গিমা ও নির্দেশনা দিয়ে তিনি মানুষের মন কেড়ে নিয়েছিলেন।

১৯৭৫ সালে চিত্তরঞ্জন অপেরায় যাত্রাজগতে ত্রিদিব ঘোষের আত্মপ্রকাশ। তার পর একে একে নট্ট কোম্পানি, ভারতী অপেরা, অগ্রগামী অপেরা, লোকনাট্য অপেরা, জ্ঞানবাণী অপেরা, নটরাজ

অপেরা-সহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁর অভিনয়ের জাদু। এক সময় গ্রামের দিকের মানুষ রাত্রিবেলা ৩০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে যেতেন ত্রিদিব ঘোষের যাত্রা দেখার জন্য। তাঁর অভিনীত কিছু যাত্রাপালার নাম আজকের মীরজাফর, মা বিক্রির মামলা, নরকের হেডমাস্টার, হাটে-বাজারে, কালকেউটের ছোবল ইত্যাদি। অধিকাংশ পালার নির্দেশনাও ছিল তাঁরই। সুপারহিট শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-সহ বেশ কিছু বাংলা ছবিতেও তিনি অভিনয় করেন। এ ছাড়া বাক্সবদল ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন। গ্রামবাংলার মানুষ তাঁকে চিরদিন মনে রাখবে।

সঞ্জয় কুমার মল্লিক

কেশপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

দইয়ের গুণ

‘টক দই কেন খাবেন’ (পত্রিকা, ১৮-৭) প্রসঙ্গে জানাই, আগে অধিকাংশ বাড়িতে দুধ জ্বাল দিয়ে, তাতে দম্বল মিশিয়ে তৈরি হত টক দই। বাড়িতে পাতা টক দই হজমে সাহায্য করে। দুপুরের খাওয়ার সঙ্গে আমড়া, কাঁচা আম বা কাঁচা পেঁপের চাটনি থাকতই। যা শরীরে ভিটামিন সি-র মাত্রা বজায় রাখতে পারে।

উৎপল মুখোপাধ্যায়

চন্দননগর, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Sukumari Bhattacharya Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy