Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: শেষের সে দিন

 ‘বাঙালি ভুলিয়াছে’ (৫-৬) শীর্ষক সম্পাদকীয় সম্পর্কে কিছু কথা। এটা অতীব বেদনার যে, আনন্দবাজার পত্রিকার তরফে প্রকারান্তরে হিন্দিকে সর্বভারতীয়ত্বের মানদণ্ড রূপে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

‘বাঙালি ভুলিয়াছে’ (৫-৬) শীর্ষক সম্পাদকীয় সম্পর্কে কিছু কথা। এটা অতীব বেদনার যে, আনন্দবাজার পত্রিকার তরফে প্রকারান্তরে হিন্দিকে সর্বভারতীয়ত্বের মানদণ্ড রূপে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। যদিও মৃদু আক্ষেপ করা হয়েছে, বাঙালির বাংলা ভাষাকে বর্জনের প্রবণতা নিয়ে। আনন্দবাজার বাংলা ভাষার এক স্তম্ভ। তার এই মূল্যায়ন প্রমাণ করে, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি কতটা বিপন্ন এবং জরাজীর্ণ।
স্কুলশিক্ষায় হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করা, দিল্লির হিন্দিবাহিনীর হিন্দি প্রসারের চলমান প্রক্রিয়ার এক চূড়ান্ত দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা। এ বারে খসড়া পেশের মাধ্যমে জল মাপা হল। তবে হিন্দীবাহিনী জল অনেক দিন ধরেই ঢালছে। দক্ষিণী কয়েকটি রাজ্য (বিশেষ করে তামিলনাড়ু) ছাড়া অনেক রাজ্যই জলে ডুবে আছে। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম।
একটু লক্ষ করলেই বুঝতে পারা যায়, কী করে এখানে হিন্দির বাড়বাড়ন্ত হল। টিভি চ্যানেলগুলি রাতদিন কদর্য ভাঁড়ামো মিশ্রিত অনুষ্ঠান দেখিয়ে এই ভাষাটির প্রতি মানুষকে অনায্য ভাবে আগ্রহী করে তুলছে। গ্রাম ও শহরের সিনেমা হল-এ এবং মাল্টিপ্লেক্সেও তা-ই। মস্তি সহযোগে বাঙালির মস্তিষ্ক বিকল করে দিয়ে, তাদের হিন্দির সমর্থক করে তোলা হচ্ছে।
রাজ্যে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরগুলিতে, জনগণের টাকায় (সরকারি খরচে) কর্মচারীদের নানা প্রলোভনের মাধ্যমে হিন্দির প্রতি আকৃষ্ট করে, ধাপে ধাপে সমস্ত কেন্দ্রীয় অফিস থেকে ইংরেজি এবং বাংলাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার কাজ অনেক দিন ধরেই চলছে। ফলে এই কর্মচারীদের সন্তানেরা হিন্দিকে সাদরে আপন করে নেবে, তাতে আশ্চর্যের কী আছে?
অধিকাংশ সর্বভারতীয় বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পাওয়ার শর্ত হিসাবে হিন্দি জানাটা আবশ্যিক। সব বিমান সংস্থাগুলিও এই নিয়মের আওতায় পড়ে। কেন্দ্রীয় মদতে এ সবই কিন্তু হিন্দিবাহিনী এবং রাষ্ট্রভাষা প্রচার সমিতি বহু কাল যাবৎ নানা কৌশলে এ রাজ্যে করে চলেছে। তাই হিন্দির শিকড় এখানে বাড়ছে। এ রকম চললে অদূর ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দি শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে। এবং ধীরে ধীরে বাংলা ভাষা মুছে যাবে। হয়তো সে দিন আনন্দবাজারে শিরোনাম হবে “আজ থেকে বাঙালি ভারতীয়ত্বকে বরণ করে নিল”।

অশেষ দাস
কলকাতা-১১০

হিন্দি ভাষা

যত দূর মনে পড়ে, ক্লাস ফাইভে ছিল সংস্কৃত, আর পরের তিন বছর হিন্দি। তখনও এই দুটো ভাষা নিজের ইচ্ছেতে নিইনি; এগুলোও ‘চাপিয়ে’ দেওয়া হয়েছিল। অন্য বিষয়গুলির সঙ্গে এগুলোও বেমালুম ভুলে মেরে দিয়েছিলাম।
হিন্দিতে, মানে কথ্য হিন্দিতে যেটুকু জ্ঞান, পুরোপুরিই হিন্দি ফিল্মের অবদান। তবু স্বীকার করতেই হয়, হিন্দির যৎসামান্য জ্ঞান আমার অনেক উপকার করেছে। অবাঙালি সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলতে, শহরে নবাগত ভিন্ন প্রদেশের মানুষকে সাহায্য করতে, কিংবা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বেড়াতে গিয়ে একমাত্র এই ভাষাই আমার ভরসা।
মনে হয়, আর একটু ভাল করে হিন্দি জানলে বোধহয় অনেক জায়গায় তোতলাতে হত না। শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসাবে হিন্দিকে নিশ্চয় চাইব না; তবু স্কুলে কয়েকটা শ্রেণিতে যদি হিন্দি শেখানো হয়, ক্ষতি কী? হিন্দি ফিল্মের ডায়ালগ মুখস্থ বললে, হিন্দি গানের সঙ্গে সারারাত্রিব্যাপী উদ্দাম নাচলে অসুবিধা নেই, আপত্তি স্কুলে একটু হিন্দি শিখলে? আর, এই রাজ্যের সরকার-পোষিত স্কুলগুলোর যা হাল, শুদ্ধ বাংলাই ছাত্ররা লিখতে পারে না, তারা তিন বছরে হিন্দি শিখে যাবে? আর কন না কত্তা, ঘোড়ায় হাসব। যা হারিয়ে যায়, তা নিয়ে এত আকচাআকচি না-ই বা হল!

দেবাশিস মিত্র
কলকাতা-৭০

কেন বাংলা?

‘নিজের ভাষায় নিজেরই কুড়ুল’ (৬-৬) শীর্ষক প্রবন্ধটি পড়লাম। লেখিকা বিস্তর আবেগ ফেনিয়েছেন, পড়তে পড়তে চোখে প্রায় জল এসে যায়। শুধু যে প্রেক্ষাপটটি আবেগমথিত লেখিকার নজর এড়িয়ে গেছে, সেটি হচ্ছে ছেলেপিলেরা কেন বাংলা শিখবে? শুধু ইংরিজি না জানার হীনম্মন্যতা কাটিয়ে ওঠার জন্য পঁচিশে বৈশাখ আর একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করতে? বাংলা শিখে কী হবে? চাকরি জুটবে? পেট ভরবে?
এ কথা ভুললে চলবে না যে, ভাষা শেখার সিদ্ধান্ত মূলত একটি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত। যে ভাষা শিখলে পেট চলবে, মানুষ সেই ভাষাই শিখবে। জীবিকার জন্যই বাঙালি এক দিন সংস্কৃত ছেড়ে আরবি ফারসি শিখেছিল, তার পর আরবি ফারসি ছেড়ে বিলিতি সওদাগরি হৌসে কর্মপ্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষায় ইংরেজি।
সেই যুগ থেকে বাংলা কারা পড়েছেন বা লিখেছেন? Captive Ladie বা Rajmohan’s Wife আমাদের এক গূঢ় ও অপ্রিয় সত্যের সন্ধান দেয়। সেটা হচ্ছে এই যে, যারা ইংরেজিতে কল্কে পায় না তারাই মাতৃভাষার আদিখ্যেতায়, মানে আরাধনায়, লিপ্ত হয়। সরোজিনী চট্টোপাধ্যায় বা তরু দত্তকে কিন্তু গোল্লা পাকিয়ে ‘অ’ লিখে বাংলায় লিখতে হয়নি।
আজ আবার যদি অনেকের মনে হয়, বাংলা শিখলে চাকরি পাওয়া যাবে, তারা নিজে থেকেই হইহই করে বাংলা শিখতে আসবে। তখন আর সংবাদপত্রে প্রবন্ধ লিখে তাদের ডেকে আনতে হবে না।

তপন পাল
বাটানগর

ক্ষতি কী


হিন্দি ভাষা আবশ্যিক হলে ক্ষতি কোথায়? হিন্দি আমরাও পড়েছি। শিশু-মনস্তত্ত্ব বলে, ১৪ বছর বয়স অবধি ল্যাঙ্গোয়েজ ডেভেলপমেন্টের আদর্শ সময়। ওই সময় ছেলেমেয়েরা খুব দ্রুত দু-তিনটে ভাষা শেখার দক্ষতা অর্জন করে।
ইংরেজি ভাষা আজ সারা বিশ্বে এত জনপ্রিয় কেন? কারণ এই ভাষাটা সারা বিশ্বে ছড়িয়েছিল ঔপনিবেশিকতার মাধ্যমে। বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশই তখন ইংরেজি ভাষাভাষীদের দখলে। এ ছাড়াও ইংরেজি সাহিত্য, সিনেমা, সঙ্গীত ও কলার মাধ্যমে গোটা বিশ্বে ইংরেজির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
পাশাপাশি ভারতকে দেখুন। বিশাল এক দেশ। উপমহাদেশ! দক্ষিণ ও উত্তর ভারতের মানুষের ভাষা, জীবনাচরণ দেখলে মনে হয়, যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি দেশ। কোনও মিল নেই। খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-আশাক, ভাষা, আচরণ, সংস্কৃতি— সবেতেই পর্বতপ্রমাণ অমিল। শুধু একটাতেই মিল, আমরা সবাই ভারতবাসী। কিন্তু এই সমগ্র ভারতবাসীকে জোড়ার মতো একটি নির্দিষ্ট ভাষা অবশ্যই দরকার। আর সত্যি বলতে কী, আমাদের দেশে হিন্দি ছাড়া দ্বিতীয় জনপ্রিয় ভাষা কী আছে?
আসমুদ্রহিমাচল হিন্দি বলতে না পারলেও, বুঝতে পারে। দক্ষিণ ভারতীয়রা অবশ্য হিন্দি কিছুতেই বলতে চান না। বরং তার বদলে ইংরেজি বলেন। কেন এই অহং-এর সমস্যা, বুঝি না। নিজের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ভাষা থাকতে, সম্পূর্ণ বিজাতীয় একটি ভাষাকে আপন করায় কী অহংকার রয়েছে, বোধগম্য হয় না।

কৌশিক সরকার
রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া

বাধ্যতামূলক


আমার মতে, ‘বাংলা অথবা ইংরেজি’ নয়, রাজ্য সরকারি চাকরিতে বাংলা ভাষার উপর পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হোক। নির্দেশ থাক, বাংলা ভাষার পরীক্ষায় ন্যূনতম নম্বর না পেলে, সরকারি চাকরি হবে না। টেন্ডার, ট্রেড লাইসেন্সের আবেদনও শুধু বাংলায় নেওয়া হোক। ক্যাব চালকেরা ন্যূনতম বাংলা বলতে না পারলে, লাইসেন্স পাবেন না। ‘বাংলা অথবা ইংরেজি/হিন্দি’র সুযোগ দিলেই, ‘বাংলাটা ঠিক আসে না’ সংস্কৃতি আর আটকানো যাবে না।

শুভ্র খাঁ
সালকিয়া, হাওড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Hindi Bengali Language
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy