Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: নিবেদিতার প্রভাব

নিবেদিতার মৃত্যুর পর কনখল রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমে যদুনাথ একটি ভাষণে নিবেদিতার স্মৃতিচারণ করেছিলেন, যা ১৯৪৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয় ‘প্রবুদ্ধ ভারত’ পত্রিকায়।

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

‘পদ্মের মাঝে বজ্র’ (১-৬) প্রসঙ্গে বলা যায় নিবেদিতা ভারতের জাতীয় পতাকায় বজ্র চিহ্নের পরিকল্পনা করেন ১৯০৫ সালে। তাঁর এই পরিকল্পনা জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে পেশ করা হয় ১৯০৬ সালে। এই বজ্রচিহ্নের পরিকল্পনা নিবেদিতার ভাবনায় কী ভাবে উদয় হয়েছিল সেই বিষয়ে আভাস পাওয়া যায় যদুনাথ সরকারের স্মৃতিচারণে।

নিবেদিতার মৃত্যুর পর কনখল রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমে যদুনাথ একটি ভাষণে নিবেদিতার স্মৃতিচারণ করেছিলেন, যা ১৯৪৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয় ‘প্রবুদ্ধ ভারত’ পত্রিকায়। সেই স্মৃতিচারণায় তিনি বলেন, ‘‘...এই বোধিবৃক্ষের কিছুটা দূরেই ছিল এক বড় বৃত্তাকার পাথরের টুকরো। তার উপর বজ্রের চিহ্ন আঁকা। কথিত আছে ইন্দ্র এটি বুদ্ধকে উপহার দিয়েছিলেন। অনেকেই সিস্টার নিবেদিতার বিভিন্ন গ্রন্থে এই চিহ্নের ব্যবহার নিশ্চয় খেয়াল করেছেন। বুদ্ধগয়ায় এই চিহ্নটি দেখে নিবেদিতা বলেছিলেন, বজ্রের এই চিহ্নটি ভারতবর্ষের জাতীয় প্রতীক হিসাবে গ্রহণ করা উচিত। তাঁর মতে এক জন মানুষ মানবসভ্যতার উন্নয়নে যখন তার সর্বস্ব উৎসর্গ করে, তখন ঈশ্বরের কাজে বজ্রের সম-বলশালী হিসেবে পরিগণিত হয়। বজ্র চিহ্নের মধ্যে নির্ভীকতা আর সাহসিকতার যে প্রতীকী তাৎপর্য তার ওপরেই নিবেদিতা সবিশেষ গুরুত্ব দিতেন।’’

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, ৮ অক্টোবর ১৯০৪ সালে মহালয়ার দিন বিকেলে নিবেদিতা ও রবীন্দ্রনাথ সদলবলে বুদ্ধগয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে অনুমান করা যায়, সেই দলে ছিলেন প্রায় ২০ জন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ও তাঁর স্ত্রী অবলা বসু, রবীন্দ্রনাথের ছেলে রথীন্দ্রনাথ, স্বামী সদানন্দ প্রমুখ। যদুনাথ সরকার এই দলের সঙ্গে যোগ দেন পটনায়। রথীন্দ্রনাথের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, বুদ্ধগয়ায় তাঁদের সকলের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল মোহান্তের অতিথিশালায়।

‘প্রবুদ্ধ ভারত’ পত্রিকায় প্রকাশিত যদুনাথের স্মৃতিচারণ থেকে নিবেদিতার সম্পর্কে আরও জানা যায়, ‘‘ইন্ডিয়ান স্ক্রিপচারস, আর্ট অ্যান্ড ফোক-লোর সম্বন্ধে নিবেদিতার অন্তঃপ্রবিষ্ট সুগভীর ব্যাখ্যায় আমরা সকলেই চমৎকৃত হতাম। রবীন্দ্রনাথ এই সব বিশ্লেষণ সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন। কবির নিজের প্রকাশভঙ্গিও অবশ্যই অপূর্ব। কিন্তু তিনি বলতেন, বস্তুর একেবারে মর্মে প্রবেশ করে ব্যাখ্যা করার এক অসাধারণ ক্ষমতা আছে নিবেদিতার।’’

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিপ্লবী ও বিপ্লবাত্মক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিবেদিতার ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। অনুশীলন সমিতি তাঁর সক্রিয় সাহায্য ও উৎসাহ পেত। ১৯০০ সালে নিবেদিতার প্রথম বই ‘কালী দ্য মাদার’ প্রকাশিত হয়, যেখানে নিবেদিতার নির্ভীক মৃত্যুদর্শন ও অন্তরের উদ্দীপনার প্রবল আবেগের প্রকাশ ঘটেছে। এই বইটি মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে প্রবল সাহসিকতার সঙ্গে দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে লড়াই করার মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছিল সে-যুগের বিপ্লবীদের মধ্যে।

১৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ সালে নিবেদিতা স্বামীজির আগ্রহে অ্যালবার্ট হলে কালী ও কালীপুজো বিষয়ে একটি বক্তৃতা দেন, যা সেই সময় শিক্ষিত সমাজে প্রচণ্ড আলোড়ন ফেলে। সে দিনের সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার, ডা. নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ব্রজেন্দ্রমোহন গুপ্ত ও ব্রাহ্মসমাজের কয়েক জন গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব। ১১ মার্চ ১৮৯৯ সালে ‘বোম্বে গার্ডিয়ান’, ২১ মে ১৮৯৯ সালে ‘সোশ্যাল রিফর্মার’, ব্রাহ্ম মুখপত্র ‘ইউনিটি অ্যান্ড মিনিস্টার’ পত্রিকাগুলিতে নিবেদিতার এই বক্তৃতাকে কটাক্ষ করে তীব্র সমালোচনা করা হয়। যদিও ‘ইন্ডিয়ান মিরর’ পত্রিকায় এই বক্তৃতার কিছু প্রশংসা করা হয়েছিল। কালী বিষয়ে নিবেদিতার এই বক্তৃতা বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছিল। ১৯০৫ সালে অরবিন্দ শক্তিদেবী রূপে ভবানীপুজোর মাহাত্ম্য বর্ণনা করে লিখেছিলেন ‘ভবানী মন্দির’।

রাহুল বড়ুয়া

কলকাতা-৭৪

প্রকৃত ঘটনা

‘এও ঐতিহ্য’ (৭-৬) শীর্ষক চিঠিতে অতুলকৃষ্ণ বিশ্বাস লিখেছেন, ‘‘১৯২৫ সালে ডা. বিধানচন্দ্র... ব্যারাকপুর কেন্দ্রে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যোমকেশ চক্রবর্তীর ন্যাশনালিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসাবে... অবতীর্ণ হন।’’ প্রকৃত ঘটনা হল, বিধানচন্দ্র রায় ১৯২৩ সালে অনুষ্ঠিত বাংলার আইনসভার (কাউন্সিল) নির্বাচনে সুরেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসেবে অবতীর্ণ হয়ে বিজয়ী হন। পত্রলেখক এও বলেছেন, বিধান রায় সুরেন্দ্রনাথের চরিত্রহনন করে এই নির্বাচনে জিতেছিলেন। ঘটনা হল, ১৯২০-র প্রথম সাধারণ নির্বাচনে সুরেন্দ্রনাথ বিজয়ী হয়ে সরকারে অংশগ্রহণ করেন। ইংরেজ সরকারের মন্ত্রিত্বগ্রহণ এবং মন্ত্রীদের বেতন বৃদ্ধির জন্য সুরেন্দ্রনাথের সক্রিয় ভূমিকার বিরুদ্ধে ১৯২৩-এর সাধারণ নির্বাচনে চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে স্বরাজ পার্টি যে সর্বাত্মক প্রচার করেছিল তা সুরেন্দ্রনাথের লেখা ‘আ নেশন ইন মেকিং’ বই থেকেই বিশদে জানা যায়। অত্যাচারী ইংরেজ সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারের মন্ত্রী হওয়ায়, বাংলার জনগণ এই সময় সুরেন্দ্রনাথের উপর খুবই বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। এই কারণেই নবাগত নির্দলপ্রার্থী বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে সুরেন্দ্রনাথকে সে দিন হারতে হয়েছিল। স্বরাজ পার্টি ও ন্যাশনালিস্ট পার্টির সঙ্গে নির্বাচনী লড়াইয়ে পর্যুদস্ত হয়ে সুরেন্দ্রনাথের লিবারেল পার্টি প্রায় বিলীন হয়ে যায়।

পত্রলেখক ‘অসৌজন্য’ প্রসঙ্গে ১৯৪৬-এর সংবিধান সভার নির্বাচনে অম্বেডকরের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের ভূমিকার কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি যেটা বলেননি, তা হল: বোম্বাই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সংবিধানসভার সদস্য এম আর জয়াকার পদত্যাগ করলে সেই আসনে জি ভি মবলঙ্কারকে প্রার্থী হিসেবে জয়ী করিয়ে সংবিধান সভার সভাপতি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস। এ দিকে দেশ ভাগের ফলে অম্বেডকরের নির্বাচন কেন্দ্র যশোর-খুলনা পাকিস্তানে চলে যাওয়ায় অম্বেডকরের সংবিধান সভার পদটি বাতিল হয়ে যায়। এই সময়ে কংগ্রেস বোম্বাই কেন্দ্রের সম্ভাব্য কংগ্রেস প্রার্থী মবলঙ্কারকে দাঁড় না করিয়ে অম্বেডকরকে প্রার্থী হিসেবে আহ্বান করে। কংগ্রেসের সমর্থনের জোরেই অম্বেডকর সংবিধান সভায় পুনর্নির্বাচিত হন। এই ভাবে কংগ্রেসের সৌজন্যেই অম্বেডকর ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতা হিসেবে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে সমাদৃত হয়েছিলেন।

পীযূষ রায়

কলকাতা-৩৪

কিসের টানে

দেশ ও জনসেবার জন্য বা আদর্শের টানে এখন কেউ রাজনীতিতে সক্রিয় অংশ নেয় না, কম সময়ে অধিক অর্থ উপার্জনের মোহে, বেকারত্বের জ্বালা মেটানোর জন্য রাজনীতিকে পেশা হিসাবে বেছে নেয়। এই পেশার জন্য কোনও রকম শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন হয় না। যোগ দেওয়া ও অবসরের কোনও বয়সও নির্ধারিত নেই। সাংসদ ও বিধায়করা নিজেরাই নিজেদের বেতন কাঠামো ও সুযোগসুবিধা সংক্রান্ত আইন পাশ করিয়ে নিতে পারেন।

সংবিধান চালু হওয়ার ২৫ বছর পর সংবিধানের কাঠামোগত কিছু পরিবর্তন, স্বর্ণ সিংহ কমিটির মতের ভিত্তিতে করা হয়েছিল। এখন আরও কিছু মৌলিক পরিবর্তন খুবই প্রয়োজন। পার্লামেন্ট থেকে পঞ্চায়েত পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে আবশ্যিক করা, ব্যক্তিগত আয়, সম্পদের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করা, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জনপ্রশাসন ও স্বায়ত্তশাসন পদ্ধতি সম্পর্কে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, কাজের জন্য দায়বদ্ধতার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা ও শাস্তির সুস্পষ্ট নির্দেশ উল্লেখ করা খুবই প্রয়োজন।

১৯৫০ সালের তুলনায় বর্তমানে শিক্ষার পরিসর অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রাধান্য না দেওয়ার যুক্তি খাটে না।

অলোককুমার মুখোপাধ্যায়

শেওড়াফুলি, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Sister Nivedita Freedom Fighter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy