স্বনির্ভর গোষ্ঠী।
‘ভাতে স্বনির্ভরতার সুগন্ধ’ (৫-৯) শিরোনামে স্বাতী ভট্টাচার্যের প্রবন্ধটি প্রসঙ্গে জানাই, কর্মসূত্রে পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠনের প্রকল্পগুলির তত্ত্বাবধানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত ছিলাম। নব্বইয়ের দশকে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী (বিপিএল) পরিবারদের চিহ্নিত করতে একটি সমীক্ষা হয়, এবং ওই সব পরিবারের মহিলাদের নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠনের কাজ শুরু হয়। সরকারি অনুদান ও ব্যাঙ্ক ঋণ সহযোগে গোষ্ঠীগুলিকে প্রকল্পের টাকা দেওয়া হত। লেখক যেমন বলেছেন, তেমন পদ্ধতিতে মহিলারা সাফল্যের সঙ্গে প্রকল্পগুলি রূপায়ণ করতেন, কারিগরি সহায়তার জন্যে তাঁদের প্রশিক্ষণ এবং কাজের যন্ত্রপাতিও (টুলকিট) দেওয়া হত। অবশ্যই পঞ্চায়েত ব্যবস্থাও কার্যকর ভূমিকা নিয়েছিল। আমার অভিজ্ঞতা হল, প্রকল্পটি দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারগুলির আর্থিক উন্নয়নে সফল হয়েছিল।
এই প্রবন্ধে নয়াগ্রামের চাঁদবিলা পঞ্চায়েতের পুকুরিয়া গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে, তা এক কথায় অভিনব। আমি বছর দুয়েক অবিভক্ত মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল এলাকায় ছিলাম। সে সময়ে তৎকালীন জেলাশাসকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে, প্রশাসন ও পঞ্চায়েতের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, অনেক সক্রিয় স্বরোজগারী গোষ্ঠী গঠিত হয়। রাজ্য স্তরে একটি আলাদা দফতরও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখন মহিলাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য অনেক কল্যাণমূলক প্রকল্প শুরু হয়েছে। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজের সহায়তায় তেমন সরকারি উদ্যোগ দেখা যায় না। সরাসরি অনুদান দিয়ে গরিব পরিবারের স্থিতিশীল আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়, এই সরল সত্যটি সরকারকে বুঝতে হবে।
সুবীর ভদ্র, ডানকুনি, হুগলি
মেয়েদের জমি
‘ভাতে স্বনির্ভরতার সুগন্ধ’ প্রবন্ধে আমরা পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রামের মহিলা চাষিদের সংগঠন ‘আমন ফার্মার্স প্রোডিউসার্স কোম্পানি’-র অসামান্য উদ্যোগের কথা জানলাম। জৈব উপায়ে উৎপন্ন এঁদের সুগন্ধি কালো রঙের ধানের বাজারদর বেশ ভাল এবং অনলাইন অর্ডারে তাঁরা যে বিক্রি করেন, তার টার্গেটও মহিলা চাষিরা পূরণ করে বর্তমানে কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন। মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির এমন প্রচেষ্টার খবর মূলস্রোতের সংবাদে দেখা যায় না। ‘নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে রোজগার করব’— এই অদম্য জেদে তাঁরা বাধার পাহাড় ঠেলে এগোচ্ছেন। আমরা জানি, গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলি নাবার্ডের সঙ্গে মিলে কৃষিঋণে যে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিত, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিতে তা-ও বন্ধ। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের যে নিজেদের নামে জমি দরকার, সে দিকে পরিবার, পঞ্চায়েত, এমনকি রাজ্য সরকারও নজর দেয় না। পঞ্জাব, হরিয়ানায় মেয়েরা হরদম ট্র্যাক্টর চালান, কিন্তু এখানে কৃষির যন্ত্র মেয়েদের নাগালের বাইরে। মহিলারা বিমানবাহিনীতে যুদ্ধ বিমান চালাচ্ছেন, চাষ করার যন্ত্র চালাতে পারবেন না কেন?
অথচ, মহিলা চাষিরা সুযোগ সুবিধে পেলে যে কামাল করতে পারেন, তা দেখিয়ে দিয়েছে মহিলাদের দুগ্ধজাত দ্রব্যের স্বনির্ভর সমবায় সংগঠন, ‘আমুল’ কোম্পানি। আমাদের রাজ্যে যখন প্রান্তিক মহিলারা আপন শ্রমশক্তির জোরে বাজার ধরে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইছেন, সেখানে সরকারের পক্ষ থেকেই জোটে তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা এবং ঘুষের দাবিও। সাধ্যাতিরিক্ত বিদ্যুতের দাম দিলেও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ মেলে না, চালকলের জন্য জমি মেলে না। আশঙ্কা হয়, সরকার হয়তো চায় না যে, দরিদ্র মেয়েরা নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে লাভবান হোক। বরং কিছু অনুদান দিয়ে শাসক দলের মুখাপেক্ষী করে রাখলে ভোটের বাজারে লাভ। লেখকের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত যে, এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্প, অনুদান, পা ভেঙে দিয়ে ক্রাচ উপহার দেওয়ার শামিল। আশা এটাই, প্রান্তিক, লড়াকু মানুষের জেদই শেষ কথা বলবে।
শিখা সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১
কর্পোরেট কর
অভিরূপ সরকার বলেছেন, “আমাদের দেশে কর্পোরেট কর বাড়ার বদলে কমে যায়” (‘পুনর্বণ্টনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য’, ২৯-৮)। কেন্দ্রীয় শাসক দল আসলে কর্পোরেটের ছত্রছায়ায় থাকতে চায়। সংসদের ‘এস্টিমেট কমিটি’-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালে কর্পোরেট কর ছাড় দেওয়ার ফলে ১.৮৪ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। এসবিআই রিসার্চ পেপার অনুসারে, কর্পোরেট কর ছাড় দেওয়ার ফলে সংগৃহীত করের পরিমাণ বাড়েনি, তবে কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ অর্থবর্ষে কোম্পানিগুলির নেট প্রফিট ১৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই কর্পোরেট করে ছাড়, নির্বাচনী বন্ড, নির্বাচন এবং বিজেপি, এদের মধ্যে একটা চক্রাকার সম্পর্ক রয়েছে। কর্পোরেটগুলির কাছাকাছি থাকলে টাকার অভাব হয় না। নির্বাচনী বন্ডের বিপুল অর্থের ৭৫ শতাংশই যায় বিজেপির ঝুলিতে। সেই অর্থ দিয়েই সমাজমাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ, অন্য দলের সদস্যদের প্রভাবিত করে ‘ঘোড়া কেনাবেচা’ ও আরও নানা রকম ভাবে শাসক দলের আধিপত্য বজায় রাখা হয়। এই নির্বাচনী বন্ড স্কিম, ২০১৮ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে।
ধনীদের কোটি কোটি টাকা ছাড় দিলেও সমস্যা নেই, কিন্তু গরিবদের ১০০ দিনের কাজ, কিছু চাল-গম, কিছু ভাতা, ভর্তুকি দিলেই খয়রাতির প্রশ্ন ওঠে। অসরকারি সংস্থা ‘অক্সফ্যাম’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে ১০ শতাংশ সর্বাধিক ধনী ব্যক্তি মোট জাতীয় সম্পদের ৭৭ শতাংশ দখল করে। এই সম্পদ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, মানবসম্পদকে ব্যবহার করেই অর্জন করা, একান্ত ব্যক্তিগত ভাবে অর্জিত নয়। সংবিধানের চতুর্থ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপরিচালনার নির্দেশমূলক নীতির ৩৮(২) নং ধারা অনুসারে, প্রতিটি সরকার চেষ্টা করবে সব রকম অসাম্য দূর করতে, এবং ৩৯ নং ধারা অনুসারে মুষ্টিমেয় লোকের হাতে প্রভূত বিত্ত সমাগমকে রোধ করতে। কিন্তু তার কতটুকু বাস্তবে দেখা গেছে, অক্সফ্যাম-এর রিপোর্টই প্রমাণ। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের অবস্থান ১১৬টি দেশের মধ্যে ১০১তম। এই অবস্থায় সঠিক পদ্ধতিতে পুনর্বণ্টনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
অনিমেষ দেবনাথ , নাদনঘাট, পূর্ব বর্ধমান
জলের জন্য
আমি নয়াগ্রামের বড়খাঁকড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিড়িবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। এ গ্রামে তিনটে কুয়ো, তার দুটোতেই বর্ষায় ঘোলা জল ওঠে। বাধ্য হয়ে সেই জলই খেতে হয়, কারণ ভাল জলের টিউবওয়েল আমাদের গ্রাম থেকে অনেক দূর। ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পের জন্য আমার পরিবার থেকে জমি দেওয়া হয়েছিল, সরকার থেকে তার রেজিস্ট্রিও হয়েছে। যাতে গ্রামবাসী ঘরে ঘরে জল পায়, তাই আমরা জমি দিয়েছি। কিন্তু সরকারি লোক খুঁটি বসাল, আবার তুলে নিল। এখনও অবধি প্রকল্পের কোনও কাজই হয়নি। আমরা জমি দিয়েও খাবার উপযুক্ত জল পেলাম না।
রেখা সিংহ, বড়খাঁকড়ি, ঝাড়গ্রাম
হারানো বন
গত ১০ বছরে দেশের চার মহানগরের মধ্যে দিল্লি, মুম্বই এবং চেন্নাইয়ে সবুজের পরিমাণ বাড়লেও, কলকাতায় তা কমেছে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১১ সালে কলকাতার বনভূমি ২.৫ বর্গ কিলোমিটার থেকে কমে হয়েছে ১.৭৭ বর্গ কিলোমিটার! দিল্লিতে গত ১০ বছরে বনভূমির পরিমাণ বেড়েছে ২০ বর্গ কিলোমিটার, মুম্বইয়ে ৯ বর্গ কিলোমিটার এবং চেন্নাইয়ে ৪ বর্গ কিলোমিটার। এ ব্যাপারে আগামী দিনে রাজ্য সরকার ও পুরসভাকে তৎপর হতে হবে।
বিশ্বজিৎ কর, গড়িয়া, কলকাতা
‘ভাতে স্বনির্ভরতার সুগন্ধ’ (৫-৯) শিরোনামে স্বাতী ভট্টাচার্যের প্রবন্ধটি প্রসঙ্গে জানাই, কর্মসূত্রে পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠনের প্রকল্পগুলির তত্ত্বাবধানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত ছিলাম। নব্বইয়ের দশকে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী (বিপিএল) পরিবারদের চিহ্নিত করতে একটি সমীক্ষা হয়, এবং ওই সব পরিবারের মহিলাদের নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠনের কাজ শুরু হয়। সরকারি অনুদান ও ব্যাঙ্ক ঋণ সহযোগে গোষ্ঠীগুলিকে প্রকল্পের টাকা দেওয়া হত। লেখক যেমন বলেছেন, তেমন পদ্ধতিতে মহিলারা সাফল্যের সঙ্গে প্রকল্পগুলি রূপায়ণ করতেন, কারিগরি সহায়তার জন্যে তাঁদের প্রশিক্ষণ এবং কাজের যন্ত্রপাতিও (টুলকিট) দেওয়া হত। অবশ্যই পঞ্চায়েত ব্যবস্থাও কার্যকর ভূমিকা নিয়েছিল। আমার অভিজ্ঞতা হল, প্রকল্পটি দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারগুলির আর্থিক উন্নয়নে সফল হয়েছিল।
এই প্রবন্ধে নয়াগ্রামের চাঁদবিলা পঞ্চায়েতের পুকুরিয়া গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে, তা এক কথায় অভিনব। আমি বছর দুয়েক অবিভক্ত মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল এলাকায় ছিলাম। সে সময়ে তৎকালীন জেলাশাসকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে, প্রশাসন ও পঞ্চায়েতের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, অনেক সক্রিয় স্বরোজগারী গোষ্ঠী গঠিত হয়। রাজ্য স্তরে একটি আলাদা দফতরও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখন মহিলাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য অনেক কল্যাণমূলক প্রকল্প শুরু হয়েছে। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজের সহায়তায় তেমন সরকারি উদ্যোগ দেখা যায় না। সরাসরি অনুদান দিয়ে গরিব পরিবারের স্থিতিশীল আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়, এই সরল সত্যটি সরকারকে বুঝতে হবে।
সুবীর ভদ্র, ডানকুনি, হুগলি
মেয়েদের জমি
‘ভাতে স্বনির্ভরতার সুগন্ধ’ প্রবন্ধে আমরা পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রামের মহিলা চাষিদের সংগঠন ‘আমন ফার্মার্স প্রোডিউসার্স কোম্পানি’-র অসামান্য উদ্যোগের কথা জানলাম। জৈব উপায়ে উৎপন্ন এঁদের সুগন্ধি কালো রঙের ধানের বাজারদর বেশ ভাল এবং অনলাইন অর্ডারে তাঁরা যে বিক্রি করেন, তার টার্গেটও মহিলা চাষিরা পূরণ করে বর্তমানে কিছুটা লাভের মুখ দেখছেন। মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির এমন প্রচেষ্টার খবর মূলস্রোতের সংবাদে দেখা যায় না। ‘নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে রোজগার করব’— এই অদম্য জেদে তাঁরা বাধার পাহাড় ঠেলে এগোচ্ছেন। আমরা জানি, গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলি নাবার্ডের সঙ্গে মিলে কৃষিঋণে যে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিত, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিতে তা-ও বন্ধ। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের যে নিজেদের নামে জমি দরকার, সে দিকে পরিবার, পঞ্চায়েত, এমনকি রাজ্য সরকারও নজর দেয় না। পঞ্জাব, হরিয়ানায় মেয়েরা হরদম ট্র্যাক্টর চালান, কিন্তু এখানে কৃষির যন্ত্র মেয়েদের নাগালের বাইরে। মহিলারা বিমানবাহিনীতে যুদ্ধ বিমান চালাচ্ছেন, চাষ করার যন্ত্র চালাতে পারবেন না কেন?
অথচ, মহিলা চাষিরা সুযোগ সুবিধে পেলে যে কামাল করতে পারেন, তা দেখিয়ে দিয়েছে মহিলাদের দুগ্ধজাত দ্রব্যের স্বনির্ভর সমবায় সংগঠন, ‘আমুল’ কোম্পানি। আমাদের রাজ্যে যখন প্রান্তিক মহিলারা আপন শ্রমশক্তির জোরে বাজার ধরে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইছেন, সেখানে সরকারের পক্ষ থেকেই জোটে তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা এবং ঘুষের দাবিও। সাধ্যাতিরিক্ত বিদ্যুতের দাম দিলেও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ মেলে না, চালকলের জন্য জমি মেলে না। আশঙ্কা হয়, সরকার হয়তো চায় না যে, দরিদ্র মেয়েরা নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে লাভবান হোক। বরং কিছু অনুদান দিয়ে শাসক দলের মুখাপেক্ষী করে রাখলে ভোটের বাজারে লাভ। লেখকের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত যে, এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্প, অনুদান, পা ভেঙে দিয়ে ক্রাচ উপহার দেওয়ার শামিল। আশা এটাই, প্রান্তিক, লড়াকু মানুষের জেদই শেষ কথা বলবে।
শিখা সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১
কর্পোরেট কর
অভিরূপ সরকার বলেছেন, “আমাদের দেশে কর্পোরেট কর বাড়ার বদলে কমে যায়” (‘পুনর্বণ্টনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য’, ২৯-৮)। কেন্দ্রীয় শাসক দল আসলে কর্পোরেটের ছত্রছায়ায় থাকতে চায়। সংসদের ‘এস্টিমেট কমিটি’-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালে কর্পোরেট কর ছাড় দেওয়ার ফলে ১.৮৪ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। এসবিআই রিসার্চ পেপার অনুসারে, কর্পোরেট কর ছাড় দেওয়ার ফলে সংগৃহীত করের পরিমাণ বাড়েনি, তবে কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ অর্থবর্ষে কোম্পানিগুলির নেট প্রফিট ১৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই কর্পোরেট করে ছাড়, নির্বাচনী বন্ড, নির্বাচন এবং বিজেপি, এদের মধ্যে একটা চক্রাকার সম্পর্ক রয়েছে। কর্পোরেটগুলির কাছাকাছি থাকলে টাকার অভাব হয় না। নির্বাচনী বন্ডের বিপুল অর্থের ৭৫ শতাংশই যায় বিজেপির ঝুলিতে। সেই অর্থ দিয়েই সমাজমাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ, অন্য দলের সদস্যদের প্রভাবিত করে ‘ঘোড়া কেনাবেচা’ ও আরও নানা রকম ভাবে শাসক দলের আধিপত্য বজায় রাখা হয়। এই নির্বাচনী বন্ড স্কিম, ২০১৮ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে।
ধনীদের কোটি কোটি টাকা ছাড় দিলেও সমস্যা নেই, কিন্তু গরিবদের ১০০ দিনের কাজ, কিছু চাল-গম, কিছু ভাতা, ভর্তুকি দিলেই খয়রাতির প্রশ্ন ওঠে। অসরকারি সংস্থা ‘অক্সফ্যাম’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে ১০ শতাংশ সর্বাধিক ধনী ব্যক্তি মোট জাতীয় সম্পদের ৭৭ শতাংশ দখল করে। এই সম্পদ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, মানবসম্পদকে ব্যবহার করেই অর্জন করা, একান্ত ব্যক্তিগত ভাবে অর্জিত নয়। সংবিধানের চতুর্থ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপরিচালনার নির্দেশমূলক নীতির ৩৮(২) নং ধারা অনুসারে, প্রতিটি সরকার চেষ্টা করবে সব রকম অসাম্য দূর করতে, এবং ৩৯ নং ধারা অনুসারে মুষ্টিমেয় লোকের হাতে প্রভূত বিত্ত সমাগমকে রোধ করতে। কিন্তু তার কতটুকু বাস্তবে দেখা গেছে, অক্সফ্যাম-এর রিপোর্টই প্রমাণ। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের অবস্থান ১১৬টি দেশের মধ্যে ১০১তম। এই অবস্থায় সঠিক পদ্ধতিতে পুনর্বণ্টনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
অনিমেষ দেবনাথ , নাদনঘাট, পূর্ব বর্ধমান
জলের জন্য
আমি নয়াগ্রামের বড়খাঁকড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিড়িবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। এ গ্রামে তিনটে কুয়ো, তার দুটোতেই বর্ষায় ঘোলা জল ওঠে। বাধ্য হয়ে সেই জলই খেতে হয়, কারণ ভাল জলের টিউবওয়েল আমাদের গ্রাম থেকে অনেক দূর। ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পের জন্য আমার পরিবার থেকে জমি দেওয়া হয়েছিল, সরকার থেকে তার রেজিস্ট্রিও হয়েছে। যাতে গ্রামবাসী ঘরে ঘরে জল পায়, তাই আমরা জমি দিয়েছি। কিন্তু সরকারি লোক খুঁটি বসাল, আবার তুলে নিল। এখনও অবধি প্রকল্পের কোনও কাজই হয়নি। আমরা জমি দিয়েও খাবার উপযুক্ত জল পেলাম না।
রেখা সিংহ, বড়খাঁকড়ি, ঝাড়গ্রাম
হারানো বন
গত ১০ বছরে দেশের চার মহানগরের মধ্যে দিল্লি, মুম্বই এবং চেন্নাইয়ে সবুজের পরিমাণ বাড়লেও, কলকাতায় তা কমেছে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১১ সালে কলকাতার বনভূমি ২.৫ বর্গ কিলোমিটার থেকে কমে হয়েছে ১.৭৭ বর্গ কিলোমিটার! দিল্লিতে গত ১০ বছরে বনভূমির পরিমাণ বেড়েছে ২০ বর্গ কিলোমিটার, মুম্বইয়ে ৯ বর্গ কিলোমিটার এবং চেন্নাইয়ে ৪ বর্গ কিলোমিটার। এ ব্যাপারে আগামী দিনে রাজ্য সরকার ও পুরসভাকে তৎপর হতে হবে।
বিশ্বজিৎ কর, গড়িয়া, কলকাতা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy