মৃন্ময় প্রামাণিকের লেখা ‘গীতবিতান ও মনসার গানে...’ (রবিবাসরীয়, ৩-৫), শীর্ষক নিবন্ধ প্রসঙ্গে এই চিঠি।
শরৎচন্দ্রের যৌবনের একটা বড় অংশ অতিবাহিত হয়েছিল বর্মায়, আজকের মায়ানমারে। প্রায় ১৩-১৪ বছর শরৎচন্দ্র বর্মায় ছিলেন। সম্ভবত ১৯০৫ সালে কবি নবীনচন্দ্র সেন তাঁর পুত্র ব্যারিস্টার নির্মলচন্দ্রকে নিয়ে রেঙ্গুন যান। সে সময় শরৎচন্দ্র সেখানে। রেঙ্গুনের বাঙালিরা নবীনচন্দ্রকে অভ্যর্থনা দেবেন বলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। শরৎচন্দ্রকে অনুরোধ করা হয় অভ্যর্থনা-সঙ্গীত গাওয়ার জন্য। কিন্তু উনি বেঁকে বসেন। তিনি এত লোকের সামনে গান করবেন না। শেষে ঠিক হয় তিনি গাইবেন, কিন্তু পর্দার অন্তরাল থেকে। শরৎচন্দ্র গাইলেন, ‘ব্রহ্ম-ভূমি সুশোভিত বঙ্গ রতনে আজি হে/ এসো কবিবর এসো হে/ধন্য কর ব্রহ্মদেশ হে।’
নবীনচন্দ্র সুমধুর কণ্ঠের গায়ককে দেখতে চাইলেন। কিন্তু তখন শরৎচন্দ্র কোথায়! লাজুক শরৎচন্দ্র ক্লাবের ত্রিসীমানায় নেই। নবীনচন্দ্র আয়োজকদের অনুরোধ করলেন শরৎচন্দ্রকে এক বার তাঁর বাড়িতে নিয়ে যেতে।
নবীনচন্দ্র পুত্রের জন্মদিনে শরৎচন্দ্রকে নিমন্ত্রণ করলেন। তিনি গেলেন না। এক দিন বন্ধুবর গিরীন্দ্রনাথ জোর করে তাঁকে কবির বাড়িতে নিয়ে গেলেন। ড্রইংরুমে তখন আলাপচারিতায় ব্যস্ত কবি ও রেঙ্গুন হাইকোর্টের জজ যতীশচন্দ্র দাশ। তাঁদের দেখে শরৎচন্দ্র এক পাটি জুতো ফেলে দৌড় দিলেন।
এই সময় গিরীন্দ্রনাথের উদ্যোগে রেঙ্গুন এসেছিলেন রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের শশী মহারাজ। শশী মহারাজ নবীনচন্দ্রের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ করলে, গিরীন্দ্রনাথ শরৎচন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে কবির বাড়িতে যান। এর আগেই শশী মহারাজের সঙ্গে শরৎচন্দ্রের সাক্ষাৎ হয়। তিনি শশী মহারাজকে গানও শোনান। তাই এ বারে আর শরৎচন্দ্র আপত্তি করলেন না। কবি শরৎচন্দ্রকে গান শোনাতে বললে, তিনি বলেন কবিপুত্র নির্মলচন্দ্র ভাল গান করেন। তিনিই করুন। শশী মহারাজ হেসে বলেন, ‘‘আজ এখানে একত্রে নির্মলচন্দ্র ও শরৎচন্দ্রের উদয় হয়েছে বটে, কিন্তু আমি শরৎ- সুধাই পান করতে চাই।’’ এর পর কবির কথায় নির্মলচন্দ্র গান করার পর, শরৎচন্দ্র গাইলেন, ‘‘আমার রিক্ত শূন্য জীবনে সখা বাকি কিছু নাই/ ও দাও বাঁচিবার মতো তার বেশি নাহি চাই।’’ গানের শেষ স্তবক ছিল, ‘‘শেষে অজানা সময় নিকটে আসিলে/ যেন তোমার চরণ পাই।’’
স্বামীজি ভাবে বিভোর, কবি নবীনচন্দ্র বিহ্বল। নবীনচন্দ্র বললেন, ‘‘আপনার গানের ভাব উদ্দীপনায় সেই চিরসুন্দরকে মনে করাইয়া দেয়, রেঙ্গুন শহরে এমন রত্ন লুকানো ছিল জানতাম না, আমি আজ আপনাকে ‘রেঙ্গুনরত্ন’ উপাধি দিলাম।’’
প্রলয় চক্রবর্তী
কলকাতা-১২৪
করোনা স্টাইল
এক দিন ভিড়ে ভরা মাছের বাজারে (যেখানে প্রায় কেউই মাস্ক পরেনি) উপস্থিত পুলিশকে পদক্ষেপ নিতে বললাম। তিনি বললেন, ‘‘বাজারে আবার করোনা নিয়ম চলে না কি?’’ তবে প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া মাস্ক বা কোনও কাপড়, অনেকের মুখে না থাকলেও, গলায় ঝুলতে হামেশাই দেখা যায়। এই ‘করোনা স্টাইল’ হয়তো আগামী দিনে প্রেমের ডেটিং থেকে শুরু করে সভা-সমিতি, বিবাহের অনুষ্ঠান বা পার্টিতে অনিবার্য ফ্যাশন হতে চলেছে। যেখানে থাকবে মাস্কের আভিজাত্যের দম্ভ বা ডিজ়াইনের রমরমা!
রাস্তায় এমন লোককে দেখে কেউ তাকে মাস্ক পরতে বললে, সে ভদ্রতা দেখিয়ে একটু হেসে সাময়িক ভাবে মাস্কটি গলা থেকে মুখে তোলে। যে মাস্ক পরে নেই, সে বলে, মাস্ক আছে, বাড়িতে রেখে এসেছি। যেন কৃতার্থ করেছে! অনেকে আবার চোখ গোল করে রাগ দেখায়— পুলিশ কিছু বলে না, এ আবার কে রে! তা হলে মাসের পর মাস ধরে লকডাউন করা কেন?
লকডাউন খুলে গেলে এই বেপরোয়া হাবভাব কতটা বাড়বে, ভাবলে আঁতকে উঠতে হয়। এ রকম চলতে থাকলে, আমাদের রাজ্যে শত শত নয়, হয়তো হাজারে হাজারে মানুষ করোনা-আক্রান্ত হবে।
কাজি মাসুম আখতার
কলকাতা-৩৯
বিশ্বভারতী
প্রথম প্রশ্ন হল, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ লকডাউনের মধ্যে ‘প্রতীকী’ রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের সিদ্ধান্ত ওয়েবসাইট বা নোটিসের মাধ্যমে ছাত্র শিক্ষক কর্মীদের জানাননি কেন? কিসের এই গোপনীয়তা? ‘বিধি মেনেই ২৫শে পালন’ (১০-৫) সংবাদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম, উপাচার্যের সঙ্গে রবীন্দ্রভবন ও ছাতিমতলায় যথাক্রমে ১৭ জন ও ২২ জন অধ্যাপক ও কর্মীর একটা দল গিয়েছিল। কোনও নোটিস ছাড়া উপাচার্য ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতার ভিত্তিতে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষকে ডেকে লকডাউনের মধ্যে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করতে পারেন?
দ্বিতীয় প্রশ্ন, লকডাউনের মধ্যে এই রকম অনুষ্ঠান করতে গেলে রাজ্য/পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। ‘পঁচিশে বিধি ভাঙার নালিশ বিশ্বভারতীতে’ (৯-৫) প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, তারা কোনও অনুমতি দেয়নি। তা হলে?
তৃতীয়ত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশিকা (তারিখ ১৫-৪-২০, অ্যানেক্সচার-১ পৃষ্ঠা-৯), যা বিশ্বভারতীর ওয়েবসাইটেও রয়েছে, তা অনুযায়ী, "No organization/ manager of public place shall allow gathering of 5 or more person" অর্থাৎ উপাচার্য সহ মোট চার জনের দল রবীন্দ্রভবন বা ছাতিমতলার অনুষ্ঠানে যেতে পারতেন। সেখানে ১৭ বা ২২ জন গিয়েছিলেন কেন?
চতুর্থত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উল্লিখিত নির্দেশ মেনে (পৃষ্ঠা ৯-১০) উপাসনাগৃহ, রবীন্দ্রভবন, ছাতিমতলা ইত্যাদি স্থানগুলো রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের পূর্বে ও পরে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে? স্যানিটাইজ়ার ব্যবহৃত হয়েছে? অনুষ্ঠানের সময় থার্মাল স্ক্যানিং, টেম্পারেচার স্ক্রিনিং হয়েছে?
সন্তোষ পাল
প্রাক্তন ছাত্র, বিশ্বভারতী
দুটি দাওয়াই
আমপানের মতো ঝড়ে কলকাতা শহরের ক্ষতি কম হবে, যদি এর পর থেকে (১) কলকাতার আকাশে কোনও বিদ্যুতের তার না থাকে। মাটির ভিতর দিয়ে সব বিদ্যুতের তার যায়। (২) শহরের মধ্যে কোনও বড় গাছ না থাকে। নিয়ম করা হোক, রাস্তার পাশে লাগানো যাবে শুধু ফুলের গাছ, যাদের উচ্চতা ছ’ফুটের বেশি হবে না।
সঞ্জয় চৌধুরী
খড়্গপুর
কেব্ল পরিষেবা
আমপানের জেরে কলকাতার বহু জায়গায় কেব্ল পরিষেবা বিপর্যস্ত, মানুষ টিভি দেখতে পারছেন না। এখন তো কেব্ল নেটওয়ার্কে প্রতি ত্রিশ দিনের জন্য প্রিপেড প্যাকেজ রিচার্জ করতে হয়। এক দিন দেরি হলে কেব্ল-কর্তারা অবলীলায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তা হলে কয়েক দিনের জন্য পরিষেবা দিতে না পারলে, সেই দিনগুলোর সময়সীমা যোগ করে ‘ভ্যালিডিটি’ বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। তাঁদের বাণিজ্যিক ক্ষতির দায় মানুষ কেন বহন করবেন?
উজ্জ্বল গুপ্ত
কলকাতা-১৫৭
ডবল লকডাউন
কোভিড১৯’এর ভয়াবহ সংক্রমণ রুখতে লকডাউন। আমপানের জেরে বহু জায়গায় স্তব্ধ হল টেলিযোগাযোগ, ভেঙে পড়ল ইন্টারনেট পরিষেবা। লকডাউনের ভেতর লকডাউন।
অঞ্জন কুমার শেঠ
কলকাতা-১৩৬
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy