রবীশ কুমারের প্রাইমটাইম শো-তে কখনও চিৎকার-চেঁচামেচি করে টিআরপি বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়নি। যখন দেশের বেশির ভাগ চ্যানেলই হিন্দু-মুসলিম, ভারত-পাক নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক চালাতে ব্যস্ত, তখন রবীশ কুমার সচরাচর সাধারণ মানুষের জীবনে ঘটমান "under-reported" সমস্যা, গরিবদের, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। কখনও দরিদ্র রিকশা-চালকের রিকশায় চড়ে, কখনও গরিব কৃষকের কোদালটি হাতে তুলে নিয়ে এঁদের দুর্দশার কথা টিভির পর্দায় আনেন। এও প্রমাণ করেন, ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব ছাড়াও সফল টক-শো সঞ্চালনা সম্ভব। আজ যখন প্রভাবশালী নিউজ় চ্যানেলগুলো সরকারের কোলে বসে গিয়েছে (যাদের সমাজমাধ্যমে ‘গোদী মিডিয়া’ নামে ব্যঙ্গ করা হয়), এমনকি জাতপাত ধর্ম নিয়ে নেতিবাচক অনুষ্ঠান চালাতেও দ্বিধা করছে না, শাসক দলের বিরোধী মতাবলম্বীদের ডেকে এনে অপমান করছে, তখন রবীশ কুমার এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তাঁকে বহু বার নোংরা ভাষায় ট্রোল্ড হতে হয়েছে, ফোনে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে, ‘জাতীয়তাবাদী’রা তাঁকে ‘দেশদ্রোহী’ বলেছে, কিন্তু ম্যাগসাইসাই পুরস্কার যোগ্য লোকের হাতেই অর্পিত হল।
মোঃ জিয়াউর রহমান
মকদমনগর, বীরভূম
দোষ কোথায়?
সম্প্রতি হুগলির পোলবার একটি স্কুলে দশম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষায় ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘কাটমানি’ নিয়ে যে দু’টি প্রতিবেদন রচনার কথা বলা হয়েছে, তা নিয়ে এত হইচই কেন বুঝলাম না। সাম্প্রতিক কালের দুটো উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে সংবাদপত্রে প্রতিনিয়ত নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। যে সব ছাত্রছাত্রী নিয়মিত সংবাদপত্র পড়ে, তারা দু’টি বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। ফলে তাদের কাছে এর উত্তর লেখা সাধারণ বলেই গণ্য হবে। আর মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই যে রাজনৈতিক বিষয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। তা হলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় যখন কন্যাশ্রী প্রকল্প নিয়ে, সেভ লাইফ সেফ ড্রাইভ নিয়ে প্রশ্ন হয়, তখন তারও সমালোচনা করতে হয়। কিন্তু তা করা হয় কি? স্কুল কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে ওই প্রশ্ন দু’টি বাতিল ঘোষণা করে গড় নম্বর দেওয়ার ঘোষণা করেছেন, কিন্তু কয়েক বছর আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জল ধরো জল ভরো’ নিয়ে প্রশ্ন এলে তা নিয়ে বিতর্ক হলেও প্রশ্নটি কর্তৃপক্ষ বাতিল করেননি।
বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য, প্রশ্নকর্তা অত্যন্ত সচেতন ভাবেই প্রশ্ন দু’টির মধ্যে এমন কোনও শব্দের ব্যবহার করেননি, যাতে মনে হতে পারে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি খারাপ বা ভাল বার্তা বয়ে আনছে। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি সমাজ-জীবনে যে ভাবে গণপিটুনির স্লোগানে পরিণত হয়েছে তা সত্যিই সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সরকারি পরিষেবায় কাটমানি বন্ধ ও ফেরত দিতে বলে যথেষ্ট ইতিবাচক পদক্ষেপ করেছেন। যা একটা দৃষ্টান্ত হতেই পারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই শিক্ষার্থীরা কতটা সেই বিষয়ে জানে ও তারা কী মনে করে, তা লিখতে বললেই দোষ?
প্রণয় ঘোষ
কালনা, পূর্ব বর্ধমান
ঠিক ভূমিসংস্কার
‘‘অতি খণ্ডিত জমি, অতি দুর্বল বিপণন পরিকাঠামো চাষিকে বিপন্ন করিতেছে। ইহার প্রতিকারে নীতির বড় মাপের সংস্কার প্রয়োজন। জমি ফিরিয়া পাইয়াও কেন চাষি মুখ ফিরাইলেন, সেই জটিল প্রশ্নের মুখোমুখি না দাঁড়াইয়া নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গত্যন্তর নাই।’’ ‘কৃষিবিমুখ’ (২২-৭) সম্পাদকীয়তে এই মন্তব্য শুধু যথার্থ নয়, অব্যর্থ। প্রশ্নটা অবশ্য আজকের নয়, অন্তত দুই দশক আগের। ২০০২ সালে এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ‘পশ্চিমবঙ্গের কৃষি’ শীর্ষক এক নিবন্ধে সিপিআইএম শীর্ষ নেতা নিরুপম সেন লিখেছিলেন, ‘‘ধান এবং অন্যান্য খাদ্য শস্যের উৎপাদন এবং ফলনের হারের ক্ষেত্রে বার্ষিক বিকাশের গতি আশির দশকের তুলনায় নব্বইয়ের দশকে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে এসেছে। এর একটি কারণ মনে হয়, জমি ও মানুষের অনুপাত ক্রমশ প্রতিকূল হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জোত জমির আকার ক্রমাগত টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া। ...কোনও জোতই একটি কেন্দ্রীভূত জমির টুকরো নয়। ইতস্তত ছড়িয়ে থাকা অনেক খণ্ড জমির সমন্বয়। এই পরিস্থিতি
কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির প্রতিকূল। ...কৃষিকাজ লাভজনক না হলে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল কৃষকের হাতে জমি হস্তান্তরের আশঙ্কা থেকে যায়। বড় জোতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের সুযোগ বেশি।’’
তা হলে উপায়? শ্রীসেন লিখেছিলেন, ‘‘এক্ষেত্রে দু’ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ভাবা যেতে পারে। প্রথমত পাশাপাশি থাকা বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জোতগুলিতে মালিকানা অটুট রেখে একত্রীকরণের মাধ্যমে যৌথ চাষের উদ্যোগ করা যেতে পারে। ...এ প্রসঙ্গে সমবায় চাষের প্রসারের বিষয়টিও ভাবা যেতে পারে।’’
বামফ্রন্ট সরকারের ভুল ভূমি সংস্কার কর্মসূচির জন্যই জোতগুলি ক্রমাগত টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। অথচ সেই ভুল ভূমিসংস্কারই তখন প্রচারের ঢক্কানিনাদে ‘বিশ্বে নজিরবিহীন সাফল্য’-এর প্রতীক। তখন জোতগুলির একত্রীকরণের উদ্যোগ করলে, ভূমি সংস্কারের বেলুনটা ফুটো হয়ে যায়। তাই মাথাব্যথার অসুখের ওষুধ প্রয়োগ করা যাবে না বলে মাথাটাকেই উড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কৃষিক্ষেত্রের কবরের ওপর জোর করে শিল্প গড়তে গিয়ে সরকারেরই ভরাডুবি হয়।
সিঙ্গুরে কৃষিজমি রক্ষার অত বড় আন্দোলন করেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের কৃষির আসল রোগটা ধরতে পারেননি। তাই ২০১১-র নির্বাচনী ইস্তাহারে ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘অসম্পূর্ণ ভূমি সংস্কারের কাজকে সম্পূর্ণ করা হবে।’’ অর্থাৎ জমি খণ্ডীকরণের সেই ভুল রাস্তা। সরকারে এসে করেওছিলেন তাই। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। কৃষি তথা কৃষকের সঙ্কট আরও গভীর হয়েছে। সিঙ্গুরের ইচ্ছুক কৃষকরাও আর চাষ করতে চাইছেন না।
কৃষি যথেষ্ট লাভজনক হচ্ছে না বলে কৃষিজমিতে শিল্প গড়া, বা জমিকে ‘অর্থসম্পদ’-এ পরিণত করা আজও এক ভুল রাস্তা। এমন সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা জমি ভূ-ভারতে বিরল। এই জমিই আমাদের প্রকৃতিদত্ত মহার্ঘ সম্পদ, আমাদের অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকার জায়গা। শুধু সেই জমির উৎপাদিকা শক্তির বিকাশের রুদ্ধ দরজাটা খুলে দিতে হবে। নিরুপমবাবুর দেখানো পথে জমির একত্রীকরণের মাধ্যমে বৃহৎ যৌথখামার গড়ে তুলতে পারলে শুধু আল ভাঙার দরুনই রাতারাতি অন্তত দশ শতাংশ জমি কৃষিযোগ্য হয়ে উঠবে, এবং বিপুল লগ্নির দরজা খুলে যাওয়ায় আমাদের মান্ধাতা আমলের কৃষি উন্নত দেশের কৃষির মতো আধুনিক হয়ে উঠবে।
এমনটা যে হওয়া সম্ভব, সেটা প্রমাণ করার জন্য সিঙ্গুরকেই বেছে নেওয়া যেতে পারে। সিঙ্গুরের ফিরিয়ে দেওয়া জমির উর্বর অংশে কৃষকদের সহমতের ভিত্তিতে একটি যৌথ কৃষিখামার এবং অনুর্বর অংশে একটি কৃষিভিত্তিক শিল্পকেন্দ্র গড়ায় সহায়তা করা যেতে পারে। কৃষির আধুনিকীকরণের জন্য প্রথমে অবশ্য কিছুটা কর্মসঙ্কোচন হবে। সংলগ্ন শিল্পকেন্দ্রের কর্মপ্রসারণে সেই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।
পশ্চিমবঙ্গে কাটমানির উপদ্রবের অন্যতম প্রধান কারণ, গ্রামে ভদ্রসভ্য কোনও পেশা নেই। তাই হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে সরকারি বরাদ্দে ভাগ বসিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। ক্ষুদ্র উৎপাদন-ব্যবস্থায় এমন বিকার অনিবার্য। শুধু হুঁশিয়ারি দিয়ে এই উপদ্রব বন্ধ করা যাবে না। তাদের সভ্যভদ্র পেশার সন্ধান দিতে হবে। যৌথ কৃষিখামার এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পকেন্দ্রই সেই পেশার দিগন্ত উন্মোচিত করে দিতে পারে। সিপিআইএম একটা ভুল ভূমিসংস্কার আন্দোলনে লক্ষ লক্ষ কৃষককে নামিয়ে দিতে পেরেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা ঠিক ভূমিসংস্কারে তাঁদের মাতিয়ে দিতে পারবেন না?
দীনবন্ধু সামন্ত
কলকাতা-৬৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy