নানা পত্রপত্রিকায় ভারতে করোনাভাইরাস টিকা সম্পর্কে যা পড়ছি, তাতে কয়েকটা প্রশ্ন জেগেছে। যেমন, ১৬ জানুয়ারি টিকা দেওয়া শুরুর পর, প্রথম চার দিনে ৫৮০ জন টিকা নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কয়েক জন প্রাণও হারিয়েছেন। দু’টি ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ হৃদ্রোগ বলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, যাঁরা অসুস্থ হয়েছেন, তাঁদের অসুস্থতা যে টিকার জন্যই হয়েছে, তা নিশ্চিত নয়। টিকা যে নিরাপদ এবং প্রয়োজনীয়, বিশেষজ্ঞরা তার উপরে জোর দিচ্ছেন। কিন্তু টিকা নেওয়ার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কী হচ্ছে, কত জনের ক্ষেত্রে হচ্ছে, জানার অধিকার কি নাগরিকের নেই? টিকা বিপজ্জনক, এমন প্রচার অবশ্যই ভিত্তিহীন। কিন্তু টিকা সম্পূর্ণ ঝুঁকিহীন কি? কাদের, কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্য তুলে ধরা চাই। তাতে মানুষের আস্থা বাড়বে।
কাদের টিকা নেওয়া উচিত নয়, তার তালিকা প্রকাশ করেছে দু’টি টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা। যেমন, যাঁদের কিছু ওষুধে অ্যালার্জি আছে, যাঁরা রক্ত তরল করার ওষুধ (ব্লাড থিনার) খান, যাঁরা গর্ভবতী, ইত্যাদি। কিন্তু এই তথ্যগুলির যথেষ্ট প্রচার কি হচ্ছে? সরকারি বিজ্ঞাপন তো চোখে পড়েনি। আশাকর্মী, সাফাইকর্মীদের অনেকেই হয়তো নিজেদের ঝুঁকি আছে কি না, তা না জেনেই টিকা নিয়েছেন। টিকার প্রতিক্রিয়া যদি কিছু দিন পরে হয়, জানা যাবে কী করে? যত দূর জেনেছি, ভারতে এই দু’টি টিকা এখনও পরীক্ষাধীন। সরকারই এই দু’টিকে ছাড়পত্র দিয়েছে। তাই কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার দায় সরকারেরই নেওয়া উচিত।
অনন্ত সরকার, কলকাতা-৯৯অজানা
ভারত বায়োটেকের কোভিড টিকা, কোভ্যাক্সিনের জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র নিয়ে (‘টিকা-বিতর্কে বৈঠক’, ৭-১) জোরালো বিতর্ক শুরু হয়েছে। কোভ্যাক্সিনের প্রথম ও দ্বিতীয় দফার কার্যকারিতা আমাদের অজানা। সদ্য শুরু তৃতীয় পর্বের গবেষণার ফলাফল নিশ্চিত নয়। এমতাবস্থায় বিরোধীদের প্রশ্ন যথাযথ। অক্সফোর্ডের কোভিশিল্ডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৈরি কোভ্যাক্সিনকে একই সঙ্গে ছাড়পত্র কেন, তার পিছনে রাজনৈতিক দলের লাভ আছে কি না, বিশেষত, যেখানে কোভ্যাক্সিন নিয়ে তৃতীয় পর্বের গবেষণা সবে শুরু হয়েছে, তা জানা প্রয়োজন। অন্য দিকে, এমস-এর ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া ছাড়পত্র দেওয়ার পর বলেছিলেন, “মূলত কোভিশিল্ড-ই দেওয়া হবে। কোভ্যাক্সিন থাকবে ব্যাক আপ হিসেবে।” এখানেই ভারতে তৈরি কোভ্যাক্সিন নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কারণ, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোটি কোটি মানুষের ভাল-মন্দ। কোভিড আতঙ্ক আমাদের প্রায় এক বছর ধরে গ্রাস করে রেখেছে। সে ক্ষেত্রে কোভ্যাক্সিন আরও কিছু দিন সময় নিয়ে সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত করে নিশ্চিন্তে টিকাকরণ শুরু করা যেত। এই বিলম্বে কারও আপত্তি থাকত না।
তপন কুমার দাস, কলকাতা-১২২
ভুল সিদ্ধান্ত
‘পোলিয়ো টিকাকরণ স্থগিত রাখল কেন্দ্র’ (১৪-১) সংবাদটি পড়ে কয়েকটি কথা বলতে চাই। ‘অভাবিত পরিস্থিতি’-র দোহাই দিয়ে দেশ জুড়ে পালস পোলিয়ো টিকাকরণ কর্মসূচি অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত সরকারের আর একটি ভুল বলে মনে করছি। করোনার টিকাকরণ অবশ্যই জরুরি। ১৫০ কোটি মানুষকে নিরাপদ রাখতেই হবে। কিন্তু, কয়েক কোটি শিশুকে পোলিয়ো টিকা খাওয়ানো পিছিয়ে দেওয়ার অর্থ, সামনের বড় আগুনকে নেভাতে গিয়ে পিছনের আগুনকে বাড়তে দেওয়া। করোনা টিকাকরণের মধ্যেই চালাতে হবে পোলিয়ো প্রতিরোধের কাজ।
দীপক ঘোষ, মছলন্দপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
বৈষম্য
গত ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী প্রথম পর্যায়ের কোভিড টিকাকরণের কাজ শুরু হয়ে গেল। এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী আমরা হতে পারতাম। কিন্তু এই দিনেও কিছু অস্বস্তিকর ঘটনা দেখতে হল। কোভিড সংক্রমণ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তখন বহু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও বিমা সংস্থার কর্মচারীরা সংক্রমিত হন, তাঁদের অনেককে আমাদের হারাতেও হয়। আমপান পরবর্তী সময় পুরসভার কর্মচারী, বিদ্যুৎ বণ্টনকারী সংস্থার টেকনিশিয়ান, ইঞ্জিনিয়াররা দিনরাত এক করে দিয়েছিলেন আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে। এঁরা কেন উপেক্ষিত থেকে গেলেন? উপরন্তু দেখতে হল, রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি হিসেবে শাসক দলের জনপ্রতিনিধিদের প্রথম দিনেই টিকা প্রদান করা হচ্ছে। কোভিড পরিস্থিতিতে যখন বহু দুঃস্থ ও অসহায় রোগীকে বেড আর অক্সিজেনের অভাবে জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছিল, তখন আমরা দেখতে পাইনি এঁদের। যদি তর্কের খাতিরে মেনেও নেওয়া যায় যে, সেই চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে তাঁরা সক্রিয় ছিলেন, তা হলে সেই যুক্তিতেই তো বিভিন্ন ছাত্র-যুব সংগঠনের কর্মী, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরাও টিকা পেতে পারতেন। প্রথম দিনেই অদৃশ্য বৈষম্য অনুভূত হল।
সোহম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৫০
বিনামূল্যে
রাজ্যের সব মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই বিরোধীরা সমালোচনায় সরব। বিজেপির মতে, কেন্দ্রীয় সরকার বিনা পয়সায় টিকা দেওয়ার ঘোষণা আগেই করেছে, মমতা কৃতিত্ব নিচ্ছেন। বাম ও কংগ্রেসের বক্তব্য, তারা এই দাবি অনেক আগেই কেন্দ্রের কাছে জানিয়েছিল। বিরোধীরা যা-ই দাবি করুন, প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তিন কোটি করোনা-যোদ্ধার টিকাকরণের খরচ কেন্দ্র বহন করবেন (“ছ’কোটি টিকার দাম দেবে কেন্দ্র,” ১২-১)। বাকি ১২৭ কোটি দেশবাসীর টিকার খরচ কে বহন করবে, তার জবাব প্রধানমন্ত্রী এড়িয়ে গিয়েছেন। মমতা যদি রাজ্যবাসীকে বিনা পয়সায় করোনা টিকা দেওয়ার কথা বলেন, তাতে বিরোধীদের আপত্তি কেন?
রতন চক্রবর্তী, উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
দোষ কোথায়?
‘বিতর্ক উস্কে দিয়ে প্রতিষেধক বিধায়কদের’ (১৭-১) সংবাদে লেখা হয়েছে, নানা জেলার বিধায়ক, জেলাশাসক, বিডিও টিকাকরণের সূচনার দিনেই টিকা নিয়েছেন। পুলিশকর্মী, ব্লক থেকে জেলাস্তর পর্যন্ত সরকারি আধিকারিক, কর্মীদের কেউ কেউ শুরুতে টিকা নিলে দোষ কোথায়? এমন তো নয় যে, সরাসরি অতিমারির বিরুদ্ধে যাঁরা লড়ছেন, তাঁদের বঞ্চিত করে এঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। এঁরাই এত দিন জনজীবন সচল রেখেছেন। লকডাউন থেকে আনলক পর্ব সামলেছেন। এ সব এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাচ্ছি আমরা! নানা দলের জনপ্রতিনিধিরাও এই কাজে শামিল হয়েছেন। হতে পারে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। তা-ও, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা পথে ছিলেন।
সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা যে ভাবে মানুষের কাছে খবর পরিবেশন করেছেন, তা কি আমরা ভুলে যাব? তাঁরাও কেন টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন না?
প্রলয় চক্রবর্তী, কলকাতা-১২৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy