তাপস সিংহের ‘আজ যেন আরও জরুরি’ (১০-৫) শীর্ষক প্রবন্ধটির বিষয়ে আরও কিছু তথ্য যোগ করতে চাই। পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীতে অবস্থিত আইআইএসইআর-এর বিজ্ঞানী ডক্টর পার্থসারথি রায়কে মুম্বই শহরে ভারতের সন্ত্রাসদমন শাখার দফতরে তলব করে এলগার পরিষদ আয়োজিত জমায়েতের হিংসার ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অধ্যাপক রায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণারত ছিলেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যুক্ত ডিজিটাল গবেষকরা বহু পরীক্ষানিরীক্ষার পরে জানিয়েছেন যে, অধ্যাপক রায়ের ইমেল অ্যাকাউন্টে সম্ভবত একটি ‘ম্যালওয়্যার’ পাঠিয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছিল।
মরাঠি ভাষায় ‘এলগার’ কথাটির অর্থ ‘প্রকাশ্যে আহ্বান’। এই এলগার পরিষদ ভারতের সংবিধান মেনে গণতান্ত্রিক ভাবে ভীমা কোরেগাঁওতে পেশোয়া রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে মাহার সম্প্রদায়ের দলিত বহুজন মানুষের বিজয় দিবসের উদ্যাপন করেছিল। এই পরিষদের দু’জন আহ্বায়কের এক জন মুম্বই হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বি জি কোলসে পাটিল এবং অন্য জন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি পি বি সাওয়ন্ত। সাওয়ন্ত আরও দু’জন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির সঙ্গে ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করেছিলেন। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই তিন জন বিচারকের কমিটি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করেন। এলগার পরিষদের উপরে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রোধের কারণ সহজেই অনুমেয়।
ভীমা কোরেগাঁও ঘটনার পরে মোদী সরকারের মনে হয়েছে, মাওবাদী সন্ত্রাসবাদীরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকারকে সশস্ত্র সংগ্রামের দ্বারা উচ্ছেদ করতে চায়, এবং মাওবাদীরা এই অগণতান্ত্রিক কার্য সম্পন্ন করতে অরণ্যে বসবাসকারী দলিত, জনজাতি ও প্রান্তিক মানুষদের সংগঠিত করে তাঁদের সরকার-বিরোধী আন্দোলনে শামিল করছে। অন্য দিকে, এই আন্দোলনের সমর্থনে শহরের শিক্ষক, অধ্যাপক, উকিল, ডাক্তার, গবেষকদের সংগঠিত করছে। শহরের প্রতিবাদী এই সব পেশার মানুষকে সরকার ‘আরবান নকশাল’ তকমা দিয়ে তাদের ইউএপিএ-র বিভিন্ন ধারায় বিনা বিচারে জেলবন্দি করে রেখেছে।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিভিন্ন অনৈতিক ও অসাংবিধানিক কাজের বিরুদ্ধে প্রতিস্পর্ধী অবস্থান যাঁরা নিয়েছেন, সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে একের পর এক সাজানো মামলা তৈরি করে জামিন-অযোগ্য ধারায় বিনা বিচারে জেলে বন্দি করে রেখেছে। এই বিনা বিচারে আটকের তালিকা দীর্ঘ। দলিত, জনজাতি ও প্রান্তিক মানুষের পক্ষে কথা বলাকে এই সরকার দেশদ্রোহ হিসেবে চিহ্নিত করে। ভিন্ন মত, ভিন্ন চিন্তাধারা দমন করতে তারা বদ্ধপরিকর। গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতার এক ভয়ঙ্কর সঙ্কটের মুখোমুখি আমরা।
সুকোমল মাসচারক, কলকাতা-১৩৭
খাদ্যে ভেজাল
‘ছাড়পত্র কেন’ (২১-৫) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে এই চিঠি। ভারতে বিক্রীত খাদ্যে ভেজাল কোনও নতুন কথা নয়। বছর কয়েক আগেও নামী ব্র্যান্ডের প্যাকেট নুডলসে খোঁজ মিলেছিল উচ্চমাত্রার সিসার। ভারতে ‘ফাস্ট ফুড’-এর প্যাকেটে উল্লিখিত উপাদানের তালিকায় চোখ রাখলেই দেখা যাবে, আলুর চিপসে ব্যবহার করা হচ্ছে পাম তেল, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। শিশুদের জন্য দুধজাতীয় পানীয়তে পাওয়া গিয়েছে অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ওই একই ব্র্যান্ডের চিপস বা পানীয় যখন বিক্রি হচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে, তখন ব্যবহার হচ্ছে তুলনামূলক ভাবে স্বাস্থ্যকর উপাদান, এবং নিরাপদ মাত্রায়। ভারতের ক্ষেত্রে চিত্রটি উল্টো হওয়ার গাফিলতি কার? উৎপাদক সংস্থার, না কি এ দেশের ব্যবস্থাপনার শিথিলতায়? নানা সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা সংস্থায় খাদ্য, পানীয় এবং দাঁতের মাজনের মতো নানা ব্যবহার্য জিনিসে দেহের পক্ষে ক্ষতিকর নানা পদার্থ পাওয়া গিয়েছে। ভারতের বাজারে রমরমিয়ে বেড়ে ওঠা বিষাক্ত প্যাকেটজাত খাদ্যগুলির প্রতিবাদে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে উঠতে দেখা যাচ্ছে ‘লেবেল পড়েগা ইন্ডিয়া’ নামে একটি আন্দোলন। এর প্রচার কর্মসূচির মূল লক্ষ্যই হল ভারতের সাধারণ মানুষকে জাগ্রত করা। শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের কথায় বিশ্বাস না করে বরং নিজে প্যাকেটে উল্লিখিত উপাদান সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া।
দেশ জুড়ে ক্রমশ বেড়ে চলেছে ক্যানসার আক্রান্ত, হৃদ্রোগীর সংখ্যা। ভারতবর্ষ তকমা পেয়েছে বিশ্বের ডায়াবিটিস রাজধানীরও। সরকার, প্রশাসন না ভাবলে ভাবতে হবে আমাদেরই। খুঁজতে হবে পথ। বিশ্বের প্রত্যেকটি মানুষের যেমন নিঃশ্বাসে বিশুদ্ধ বায়ু ও নির্ভেজাল খাদ্য গ্রহণের অধিকার আছে, তেমনই অধিকার রয়েছে ভেজালহীন জীবনযাপনের।
অভিধা গোস্বামী, বুদবুদ, পূর্ব বর্ধমান
ঋণের ভান্ডার
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পটি কি আর্থিক সঙ্কটের কোনও সমাধান দিতে পারে? অভাবী মানুষের সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা ইত্যাদি চালু হয়েছিল সে জন্য, অনেক আগে থেকেই। তৃণমূল সরকার ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নামে মহিলাদের জন্য প্রথমে পাঁচশো টাকার মাসিক একটি অনুদান চালু করে। লোকসভা ভোটের আগে সেটাই দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়ে বলেছে যে, তৃণমূল না জিতলে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ উঠে যাবে। বিজেপি পাল্টা প্রচার করেছে, ভোটে জিতলে তারা পশ্চিমবঙ্গে এই অনুদানের টাকা আরও বাড়িয়ে দেবে। অথচ, আমজনতার জন্য প্রকৃত অর্থনৈতিক উন্নতি ও দেশ গঠনের জন্য সঠিক, বিজ্ঞানসম্মত নীতির সন্ধান কোনও দল করছে না।
হাতে কিছু টাকা পেলে কে না খুশি হয়? তবু এক জন প্রবীণ নাগরিক হিসেবে কয়েকটি প্রশ্ন সবার কাছেই তুলে ধরতে চাই। প্রথমত, এই জাতীয় ভাতা কি দেশ বা রাজ্যের সমস্ত অভাবী মানুষের হাতে তুলে দিতে পারবেন শাসকরা? নানা সমীক্ষা থেকে জানা যায়, যতই প্রচার করা হোক, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর মতো অনুদান প্রকল্পগুলি থেকে রাজ্যের অসংখ্য অভাবী মহিলা বঞ্চিত রয়ে গিয়েছেন, একাধিক বার তাঁরা আবেদন করা সত্ত্বেও। দ্বিতীয়ত, এই দুর্মূল্যের বাজারে অনুদানের টাকায় দরিদ্র সংসারগুলির প্রকৃত চাহিদা কতটা ভাল ভাবে মিটতে পারে? তৃতীয়ত, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর মতো সরকারি প্রকল্পের অর্থ কোথা থেকে আসছে? লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির ফলে পরোক্ষ কর তথা বিক্রয় করের টাকাই তার প্রধান উৎস, সন্দেহ নেই। অনুদানের অর্থ জোগাতে গিয়ে কোটি কোটি টাকা ঋণ করা হচ্ছে। সেটাও আবার জনগণের ঘাড়েই চেপে বসছে।
কৃষি, শিল্প ও অন্যান্য উৎপাদনের সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা ও বিকাশের ব্যবস্থা করা ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের অন্য কোনও পথ নেই। ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট থেকে সমাজকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজন সদর্থক অভিযান। কিন্তু আমরা দেখছি, উল্টো পথে, প্রশাসনিক স্তরে দুর্নীতিকে চাপা দেওয়ার জন্য চলছে নানা ধরনের কারসাজি।
তাই, বাজার অর্থনীতিকে অতিধনীদের কব্জা থেকে মুক্ত করে জনগণের স্বার্থে চাই শক্তিশালী কার্যক্রম। শ্রমিক কৃষক মধ্যবিত্ত নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য শুধুমাত্র কিছু দান-খয়রাতির অঙ্ক নির্দিষ্ট করা নয়, দিতে হবে তাঁদের কাজের ন্যায্য অধিকার। দেশে এবং বিভিন্ন রাজ্যে কাজের সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি করা যায় না, এমনটা মোটেই সত্য নয়। আসলে নেই শুধু আমাদের সরকারগুলির সঠিক কর্মনীতি, কর্মসূচি ও কর্মোদ্যোগ। পরিবর্তে আছে শুধু পারস্পরিক দোষারোপ আর বিভাজনের রাজনীতি।
তাই জনগণকেই সুস্থ রাজনীতি ও অর্থনীতির জন্য জোরালো দাবি তুলতে হবে।
প্রশান্ত বক্সী, সুভাষপল্লি, শিলিগুড়ি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy