ঋতজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুনর্বাসন যখন নির্বাসন’ (২০-৯) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। ফুটপাত আমজনতার যাতায়াতের জন্য নির্দিষ্ট। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও দাদাদের প্রচ্ছন্ন মদতে সেই ফুটপাতের বেশির ভাগটাই যদি হকারদের দখলে চলে যায়, তা হলে পথচলতি মানুষদের কী হবে? শুধু ফুটপাত নয়, মহানগরীর রাস্তায় মার্কিং করে চার চাকা গাড়ির পার্কিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মানুষ যাবেন কোথায়? না আছে তাঁদের জন্য ফুটপাত, না রাস্তা।
কলকাতার গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, লেক মার্কেট, কালীঘাট, পার্ক স্ট্রিট, হাতিবাগান, শ্যামবাজার প্রভৃতি জায়গার ফুটপাতে হকারদের গাদাগাদি দেখলেই চিত্রটা পরিষ্কার। এ সব জায়গায় মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফুটপাত এড়িয়ে রাস্তায় হাঁটতে হয়। ফুটপাত দখল মফস্সলের শহরগুলিতেও চলছে। রাজনৈতিক দাদাদের তত্ত্বাবধানে কোথাও কোথাও ফুটপাতের অংশ বেচাকেনাও চলে। আর বেআইনি ভাবে ফুটপাত দখলের জন্য নেই কোনও আইন ও জরিমানা। ফলে এখানে হকার উচ্ছেদের পরিবর্তে মাঝে মাঝে হকারদের সরিয়ে ফুটপাত সংস্কার করা হয়। শেষ হলে হকারদের পুনরায় ফুটপাতে বসানো হয়। মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এ সব কাদের মদতে হচ্ছে।
আজ জনস্ফীতি, জনঘনত্ব, বেকারত্ব, গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ফুটপাত সম্পূর্ণ দখলমুক্ত করা প্রায় অসাধ্য কাজ বলেই মনে হয়। সে কারণেই বোধ হয় এখানে প্রশাসন কোনটা নৈতিক আর কোনটা অনৈতিক, সে ব্যাপারে না গিয়ে হকার ও পথচারী, উভয়কেই সন্তুষ্ট রাখতে চায়। তাই বলা হয়েছে ফুটপাতের দুই-তৃতীয়াংশ খালি রেখে হকারদের দেওয়া যেতে পারে। এতে এমন গুরুতর সমস্যার হয়তো আংশিক সমাধান হবে। তবে আজ ফুটপাত দখলমুক্ত করতে গেলে তা অবিচারের কাজ বলে পরিগণিত হবে, যদি না হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। লাখো মানুষের রুজি-রোজগারের জায়গা ফুটপাত। আমি প্রবন্ধকারের সঙ্গে সহমত, হকারদের বর্তমান জায়গার কাছাকাছি যদি পুনর্বাসন দেওয়া না যায় তা হলে তা অমানবিক হবে।
স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০
পথচারীর দশা
‘পুনর্বাসন যখন নির্বাসন’ প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র। হকার উচ্ছেদ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক নতুন নয়। ইতিপূর্বে বাম আমলে ‘অপারেশন সানশাইন’-এর কথা যাঁদের মনে আছে, তাঁরা জানেন হকারদের পুরোপুরি উচ্ছেদ অসম্ভব। কিছু দিন তাঁদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু মানবিকতার খাতিরে, বিশেষত এই প্রাক্-পুজো পর্বে তাঁদের হটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ অন্য দিকে মোড় নিতে পারে। সুতরাং, পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হকার উচ্ছেদ আপাতত বন্ধ। হ্যাঁ, কিছু বিধি-নিষেধ আরোপিত হয়েছে। পথ-পসরা সাজিয়ে বসার পরিবর্তে রঙিন ছাতার নীচে অনেকেই বসছেন। কোথাও দোকানগুলো ক্ষীণকায় হয়েছে। মোদ্দা কথা, হকাররা নিজের জায়গাতেই রয়েছেন।
আসল ভুক্তভোগী তো পথচারী নাগরিক। পথ আটকে, পসরা সাজিয়ে হকাররাজের দৌরাত্ম্য নতুন নয়। চৈত্র সেল বা প্রাক্-পুজোর মরসুমে সেটি বিভীষিকার রূপ নেয়। এক গল্পে শুনেছিলাম— অভিজাত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, গৃহবধূদের অলস দ্বিপ্রহরে, বান্ধবীদের জুটিয়ে মন্দাক্রান্তা ছন্দে গড়িয়াহাট, হাতিবাগানে পথ বিপণিগুলো চষে বেড়ানো এক আদি-অকৃত্রিম নাগরিক বিলাস। সেলের বাজারে নাকি অনেকেই সম্বৎসরের দেওয়া-থোয়ার রসদ এই ফুটপাত থেকেই সংগ্রহ করেন। আসি-আসি শীতের দুপুরে সে ভারী আমোদ-যাপন তাঁদের! হকার ভাইরা সাগ্রহে তাঁদের পসরা নেড়েচেড়ে দেখতে দেন। দশটি পথ-দোকান ঘুরে একটি থেকে হয়তো কয়েকটি ব্লাউজ়, দু’-তিন ডজন জামাকাপড় টাঙানোর ক্লিপ, কর্ম-সহায়িকা দিদির নাতনির জন্য বেশ কিছু রংচঙে জামাকাপড় কিনে ফেলেন। তাঁদের অন্তরে দিব্যি ফুরফুরে এক মেজাজ কাজ করে। কারণ, ব্র্যান্ডেড বিপণিতে ওই জিনিসগুলিই দ্বিগুণ, তিনগুণ দাম। হকারের সঙ্গে দীর্ঘ দরদাম চলে। অর্ধেক দাম বলে শুরু করেন ক্রেতা, বিক্রেতা বলেন “আর বিশটা টাকা দিন...।” ক্রেতা লক্ষ্মী। বহু দিনের ক্রেতা-হকারদের সম্পর্কও কিন্তু আত্মীয়তার পর্যায়ে চলে যায়! তবে অনলাইন শপিংয়ের বাড়বাড়ন্তে হকারদের সেই দিন গিয়েছে!
‘জনস্বার্থে হকার উচ্ছেদ অনিবার্য, এমন ধারণাকে মান্যতা দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই দেখতে হবে, হকাররা কেন্দ্রীয় আইন মানছেন, না ভাঙছেন? ‘হকার’ সংজ্ঞা মোতাবেক, কলকাতা কর্পোরেশন এবং হকার সংগ্রাম কমিটি প্রবর্তিত প্রথা থাকা সত্ত্বেও ‘ফুটপাত ভাড়া নিয়ে হকারি’ চলে কেন? হকার পুনর্বাসন নিয়ে পূর্বেও বহু জলঘোলা হয়েছে। এমনও দেখা গেছে, নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়েও তাঁরা ফিরে এসেছেন আগের জায়গায়। কারণ, ওখানে ব্যবসা নেই। মানতেই হবে পথচলতি ক্রেতারা চোখে পড়ার মতো বা প্রয়োজনীয় সাংসারিক জিনিস ফুটপাত থেকে কিনতেই পছন্দ করেন।
হকারদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের ‘শপিং মল’ বানিয়ে দেওয়ার ভাবনাও অবান্তর বলে মনে হয়। দেখা যাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মলে কোনও এক জন হকার যাঁর মোটামুটি উপার্জন হত পূর্বে, নতুন জায়গায় তিনি মল-এর চতুর্থ বা পঞ্চম তলে ঘর পেলেন। তিনি তখন চুপিচুপি তার প্রাপ্ত ঘরটি বিক্রি করে পুনরায় পূর্বের জায়গায় ফিরে যাবেন। হকার উচ্ছেদ কাঙ্ক্ষিত বটেই, তবে প্রশ্ন আসে, এই বিপুল সংখ্যক হকারদের পরিবারের দায়িত্ব কে নেবেন? এই নেই-কাজ রাজ্যে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে যাঁরা পরিবারের মুখে দু’মুঠো অন্নের সংস্থান করেন, তাঁদের জন্য অচিরেই সুপরিকল্পিত বিকল্প পথ-অন্বেষণ প্রয়োজন। সরকার এবং হকার, দু’পক্ষের সুস্থ আলোচনার মাধ্যমেই এই সমাধান সম্ভব বলে মনে হয়।
ধ্রুবজ্যোতি বাগচি, কলকাতা-১২৫
ট্রামের আরাম
‘ট্রাম রক্ষায় পথে নেমে আন্দোলনের ডাক’ (২৮-৯) প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ক’টি কথা। কলকাতার বায়ুদূষণের মাত্রা অতিরিক্ত হওয়ার দরুন শহরবাসীরা নানা রোগের শিকার হচ্ছেন। শহরের মোটরযান, বিশেষত বাসগুলি প্রধানত দায়ী বায়ুদূষণের জন্য। ট্রাম দূষণমুক্ত। অতএব, জনগণের স্বাস্থ্যরক্ষার খাতিরে পরিবহণ মাধ্যম হিসাবে ট্রাম অপরিহার্য ছিল। কলকাতার পথে এমন অনেক যান যাতায়াত করে যেগুলো রাস্তায় বেরোনোর মেয়াদ উত্তীর্ণ।
অন্য সব যানবাহনের তুলনায় ট্রামে যাতায়াত আরামদায়ক, সিট বড়, ঝাঁকুনি লাগে না। ট্রামের জেরে যানজট হয়, এ কথা অযৌক্তিক। যে রাস্তায় ট্রাম চলে না, সেখানে যানজট কম নয়। যানজট সৃষ্টি হয় গাড়ির যথেচ্ছ আচরণের জন্য; টু-হুইলার, অটো, টোটোর জন্য। ট্রাম চলে নির্দিষ্ট লাইন ধরে। কর্তৃপক্ষকে আবেদন, শহরের মূল কেন্দ্র থেকে ট্রাম উঠিয়ে দেওয়া হলেও, শহর প্রসারিত হলে নতুন অংশে রাস্তা যেন চওড়া হয় এবং তাতে ট্রামলাইন থাকে।
সঞ্জিত ঘটক, কলকাতা-১০৩
চালকের সঙ্কট
শহরের নানা রাস্তায় ‘স্পিড ব্রেকার’ তৈরি হয়েছে। নানা উচ্চতার বাম্প গাড়ির গতি রোধ করছে, অনেক ক্ষেত্রে একাধিক। সমস্যা হল, প্রায় কখনও এই স্পিড ব্রেকারগুলির উপরে সাদা দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা থাকে না। তার ফলে প্রায়ই গাড়ি চালকদের নজরে পড়ে না, এবং বাম্পে লেগে গাড়ি লাফিয়ে ওঠে। অনুরোধ, স্পিড ব্রেকার তৈরি হলে যেন সাদা দাগ দেওয়া হয়।
অনন্ত মিত্র, কলকাতা-৬৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy