‘এখনও এত কুসংস্কারের দাপট’ (১৩-৯) শীর্ষক নিবন্ধে সঠিক ভাবে মন্তব্য করা হয়েছে, ‘‘তবে ঝাড়ফুঁক, তুকতাকের অসারতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করার জন্য যে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল, স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে কখনও তা গুরুত্ব পায়নি।’’ পাশ্চাত্যে ভারতবর্ষ বহু দিন যাবৎ ‘সাপ-বেজি-তাবিজ-জাদু’র দেশ বলে চিহ্নিত ছিল। একুশ শতকে লর্ডসের ব্যালকনিতে জার্সি খোলা ভারত অধিনায়কের মাদুলি-তাবিজ দেখে বিদেশি সাংবাদিকদের অনেকে সমালোচনা করে হারের যন্ত্রণা ভুলেছিলেন। স্বাধীনতা পেলেও গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক ইত্যাদি পোশাকি বিশেষণ থাকলেও রাষ্ট্রের কাঠামো ছিল আধা সামন্ততান্ত্রিক, বুর্জোয়া পুঁজিবাদী চরিত্রের। শোষণ ব্যবস্থা কায়েম রাখার জন্য জনগণের চেতনাকে তন্ত্র-মন্ত্র-বুজরুক ইত্যাদি বহুবিধ আধিভৌতিক ভাববাদী কুসংস্কার থেকে মুক্ত রাখতে চাওয়া নিজের পায়ে কুড়ুল মারার শামিল। নিয়তি, কর্মফল, অদৃষ্ট ইত্যাদি চেতনায় যত আচ্ছন্ন রাখা যায় ততই হুজুর মজুর সম্পর্ক পুষ্ট হয়। বিনা চিকিৎসায় স্বজন হারানোর জন্য নিয়তি, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি না পাওয়ার জন্য দুর্ভাগ্য, ব্রাহ্মণ্যবাদের হাতে নিপীড়নের জন্য কর্মফলকে দায়ী করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। শ্রেণিস্বার্থ বজায় রাখার জন্য রাষ্ট্র খামকা আমজনতাকে সচেতন করতে যাবে কেন? অবশিষ্ট ভারতের কথা থাক। চিনের মাও জে দং-এর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের চিন্তাধারায় দীক্ষিত কমিউনিস্টরা এ রাজ্যে সাড়ে তিন দশক শাসন ক্ষমতায় ছিল। এ দেশে কেরলে প্রথম কমিউনিস্ট সরকার গঠিত হয়েছিল এবং একটানা না হলেও পর্যায়ক্রমে পাঁচ বছর অন্তর বাম-জোট ওই রাজ্যে শাসন করে থাকে। এই দুই রাজ্যে কি কখনও অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সরকারকে সর্বাত্মক লড়াইয়ে নামতে দেখা গিয়েছে? আশির দশকে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের দিন ছুটি দিয়ে টিভিতে ‘পথের পাঁচালী’ দেখানোর বন্দোবস্ত হয়েছিল। গণেশের দুধপানে প্রায় আড়াই কোটি পার্টি সমর্থক, ঘনিষ্ঠ, দরদি সমন্বিত পশ্চিমবঙ্গ কয়েক ঘণ্টার জন্য যুক্তিবুদ্ধি বিসর্জন দিয়েছিল। গ্রহরত্নশোভিত আংটি হামেশাই শোভা পেত মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিকের আঙুলে। তারাপীঠে পুজো দিয়ে ক্যামেরায় পোজ় দিয়েছিলেন আগুনখেকো বিপ্লবী। পার্টির অনুমতিক্রমে দুর্গাপুজোর পূজারি হতেন লোকাল কমিটির সম্পাদক। ধুমধাম সহকারে নাতির উপনয়ন দিয়েছিলেন সাচ্চা কমিউনিস্ট। আর শবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে সম্প্রতি যে ধুন্ধুমার হয়েছিল, তাতে মনে হয় না কেরল খুব এগিয়ে ছিল।
প্রকৃতিগত ভাবে আমরা লাল সিগন্যাল উপেক্ষা করলেও বেড়াল কেটে গেলে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিই, চ্যানেলে চ্যানেলে বসা জ্যোতিষীদের পরামর্শ শুনতে ভালবাসি। তন্ত্র-মন্ত্র-বুজরুক ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে আপাত স্মার্ট হলেও আড়ালে তা মেনে নিই। আজ স্বঘোষিত হিন্দুধর্মের ধ্বজাধারীরা শাসন ক্ষমতায়। ভাববাদের এই সুপবনে কুসংস্কারের চর্চা রাষ্ট্রীয় অনুমোদন পেয়ে চলেছে। চন্দ্রযান অভিযানের পাশাপাশি কোমার পেশেন্টের কানে মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র শোনানো হচ্ছে খোদ সরকারি হাসপাতালে। গণেশের হস্তিমুখ প্লাস্টিক সার্জারির নিদর্শন, চোখের জলে ময়ূরীর গর্ভসঞ্চার, বৈদিক উড়ান তত্ত্ব, গরুর নিঃশ্বাসে অক্সিজেন, গোময়ে ক্যানসার নিরাময়ের কথা ঢালাও প্রচারিত হচ্ছে। ঘড়ির চাকা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার এই আবহে, ভয় হয় সতীদাহ প্রথা না ফিরে আসে!
সরিৎশেখর দাস
চন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর
ভারততীর্থ
মাঠ আলো করে হাজার কাশ ঢেলে দিচ্ছে মন ভাল করার প্রতিশ্রুতি, আকাশে মেঘের বিচিত্র অবয়ব, ভোরের দূর্বাঘাস শিশিরস্নাত— অনুভব করি আসছেন তিনি। মনে পড়ে ছোট্টবেলার কথা। আব্বা ভোরে তুলে দিতেন, সকলে হালকা চাদর গায়ে বসতাম, রেডিয়োতে উচ্চারিত হত যা দেবী সর্বভূতেষু... কেমন একটা ঘোর আসত, মনে শক্তি, শুনতাম আব্বাও রেডিয়োর সঙ্গে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, আমার আব্বা মাত্র নয় বছর বয়সে কোরান শরিফ শেষ করেছিলেন, কিন্তু রামরহিমের লড়াই তাঁকে কখনওই বিভ্রান্ত করেনি।
আজ ধর্মের ধুয়ো তুলে মানুষের মাঝে বিভেদ তুলতে চাইছে অধার্মিকের দল। বৈচিত্রের মাঝে যে ঐক্য, তার মূলে কুঠারাঘাত করতে চাইছে তারা। জাতের নামে বজ্জাতি চলছে। তবু আশার কথা, দূর থেকে আজও ভেসে আসে: তু হিন্দু বনেগা না মুসলমান বনেগা? ইনসান কি অওলাদ তু ইনসান বনেগা।
মতিউল ইসলাম
মুর্শিদাবাদ
শিল্পনীতির প্রশ্ন
সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ-সহ পে-কমিশন, পে-প্রোটেকশন-সহ স্কেল চালুর বাধ্যবাধকতা থাকলেও বর্তমান সরকারের বিগত দশ বছরে শিল্পায়নে চূড়ান্ত ব্যর্থতা ও কর্ম সংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে না পারায় সরকারকে সহজ পথ— ভাতা এবং ভর্তুকির উপর নির্ভর করেই হাঁটতে হয়েছে। কিন্তু বিকল্প আয়ের সংস্থান করতে না পারলে যে জল একসময় নাকের উপর দিয়ে বইতে থাকে তার প্রমাণ হল, বর্তমান পরিস্থিতি। সরকারি নিয়োগ প্রায় বন্ধ, সরকারি কর্মচারীরা বঞ্চিত এবং চুক্তিভিত্তিক চাকরি ঢালাও হওয়াতে শিক্ষিত, মেধাবী ছেলেদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্রমহ্রাসমাণ। কিন্তু বর্তমান সরকার কখনওই উৎকর্ষের দিকে মনোযোগ দেয়নি। কারণ সরকার জানত, শিল্পায়নের বিরোধিতা করে আসা সরকারের পক্ষে বিকল্প আয়ের সন্ধান করা কিংবা কর্মসংস্থানের উপায় খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই এক জনের আয় কী ভাবে দশ জনকে বিলিয়ে সকলকে টিকিয়ে রাখা যায়, তা-ই সরকারের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াল। স্থায়ী চাকরির পরিবর্তে চুক্তিভিত্তিক ঢালাও নিয়োগ শুরু হল। সেল্ফহেল্প গ্রুপ তৈরি করে তাদের ছোট ছোট কাজে নিয়োগ করে ও লোন দিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা হল। মুখ্যমন্ত্রী নিদান দিলেন— চপের দোকানও শিল্প! যাবতীয় শিল্প সম্ভাবনা সে দিনই বিশ বাঁও জলে চলে যায়। কিন্তু শিল্প না এলে রেভিনিউ আর্নিং কি সম্ভব? আমাদের রাজ্যের উৎপাদিত পণ্য অন্য রাজ্যে বা দেশে রফতানি হবে তবেই না বাড়তি আয়ের পথ সুগম হবে! তবেই না ভিন্ন ভিন্ন শিল্পের দরজা খুলবে! তবেই না কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে! তবেই না বাজারের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে! আর পশ্চিমবঙ্গে বিগত দশ বছর মাছের তেলে মাছ ভাজা হয়েছে। ফলে না বেড়েছে রেভিনিউ আর্নিং, না বেড়েছে কর্মসংস্থান, আর না বৃদ্ধি পেয়েছে বাজারের ক্রয়ক্ষমতা। পশ্চিমবঙ্গ হল উপভোক্তা রাজ্য। যে রাজ্য স্বাবলম্বী নয়। কেবল কেন্দ্রের দেওয়া টাকা আর রাজ্যের রাজস্বের উপর নির্ভরশীল। এ রাজ্যের ক্ষমতা নেই অন্য রাজ্যকে সাহায্য করার কিংবা বাড়তি আয় করে কেন্দ্রকে ও রাজ্যকে শক্তিশালী করার। তাই পশ্চিমবঙ্গ ঋণ মকুবের দাবি জানায়, আর্থিক প্যাকেজ চায়। হয়তো বলবেন, গোটা দেশ জুড়েই মন্দা চলছে। হ্যাঁ, মন্দা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। বাজারের ওঠা-নামা থাকেই। জিডিপি-ও ওঠানামা করে। কিন্তু প্রশ্ন সেটা নয়। প্রশ্ন হল: শিল্পনীতি নিয়ে, সরকারের অভিমুখ নিয়ে, শিল্পের পরিকাঠামো ও স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে। এগুলো অনুকূল থাকলে শিল্পসম্ভাবনাও বেঁচে থাকে। কিন্তু যে রাজ্যে জমির জন্য শিল্পপতিদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হয়, কারখানা চালু করার পদ্ধতি লাল ফিতের ফাঁসে আটকে থাকে, শিল্প শুরু হওয়ার আগেই সিন্ডিকেট গজিয়ে উঠে, তার শিল্পসম্ভাবনা কতখানি, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে বইকি!
কৌশিক সরকার
রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া
‘গুরুরেব’
‘বেত্রাহত বাঙালি’ (রবিবাসরীয়, ৮-৯) লেখাটির শীর্ষে উদ্ধৃত শ্লোকের দ্বিতীয় পঙ্ক্তিতে ‘গুররেব’ হবে না, হবে ‘গুরুরেব’।
তুষারকান্তি ঘোষ
কলকাতা-৬৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy