করোনায় স্কুলপড়ুয়াদের পড়াশোনার যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণের লক্ষ্যে ২০০টিরও বেশি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছনোর উদ্যোগ গ্রহণের কথা এ বারের বাজেট-ভাষণে ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ‘ওয়ান ক্লাস-ওয়ান চ্যানেল’ প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা ওই চ্যানেল ব্যবহার করে পড়াশোনা করতে পারবে। ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, ডিজিটাল শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষা, ৭৫০টি ভার্চুয়াল পরীক্ষাগার— সবই চলবে টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে। এই ঘোষণার পূর্বে শিক্ষাব্যবস্থায় এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কথা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি।
তবে, কী ভাবে শহর ও প্রত্যন্ত গ্রামের অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াদের এই ধরনের ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব হবে, সে ব্যাপারে যদিও নিশ্চিত কোনও পরিকল্পনার কথা ভাষণে উল্লেখ করা হয়নি। এই পরিকল্পনায় সব শিশুর শিক্ষা পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে তো? না কি এর পিছনে আছে সরকারের কোনও সুদূরপ্রসারী অভিপ্রায়, যা জনসাধারণের পক্ষে সহজে বোধগম্য হওয়া কঠিন?
অদূর ভবিষ্যতে এই পরিকল্পনার পরিণতি কিছু আশঙ্কারও জন্ম দেয়। শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনার গুরুত্ব সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের কাছেই অপরিসীম। শৃঙ্খলা-নিয়মানুবর্তিতা-সহবত-ভ্রাতৃত্ববোধ-দায়িত্ববোধ ইত্যাদি বহুমাত্রিক শিক্ষা শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসেই পেয়ে থাকে। এর সঙ্গে উপরি পাওনা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্নেহ-মমতা-ভালবাসা, যা কিনা ছাত্রছাত্রীদের সারা জীবনের অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকে। তাদের জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথকে মসৃণ করে। আজ যদি এ ভাবে টিভি চ্যানেলের মাধ্যমেই প্রথম শ্রেণি থেকে ছোটদের পড়াশোনার অভ্যাস তৈরি করা হয়, তা হলে পরে ওদের বিদ্যালয়ে এনে শ্রেণিকক্ষে বসিয়ে পাঠদানের বিষয়টি ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারাবে না তো?
না কি এ ভাবেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে? ভয় হয়, তখন মেধা ও অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াদের জন্য আর কোনও বিকল্প ব্যবস্থা থাকবে কি? আর এমনটা চলতে থাকলে স্কুল-কলেজে আজ যত সংখ্যক শিক্ষক নিযুক্ত হন, তার আর প্রয়োজন হবে কি?
রতন রায়চৌধুরী, কলকাতা-১১৪
প্রকৃতিপাঠ
‘পাড়ায় শিক্ষালয়’ চালু হওয়ার প্রথম দিনের নির্মল ছবি দেখে মন ভরে গেল। মনে হল, শিশুরা তাদের সত্যিকারের শৈশব ফিরে পেয়েছে। শৈশব থেকেই শিশুদের যদি প্রকৃতির সঙ্গে এমন খোলামেলা পরিচয় ঘটানো যায়, তা হলে বড় হয়ে নিশ্চিত ভাবে তাদের মধ্যে পরিবেশবান্ধব মানসিকতা গড়ে উঠবে। পুকুর, ডোবা বুজে গেলেও গ্রাম-বাংলায় এখনও মাঠ-ময়দান, চণ্ডীমণ্ডপ কিংবা নমাজের উন্মুক্ত উঠোন পড়ে আছে। এমন খোলা জায়গায়, খোলা মনে পাঠের ব্যবস্থা শুধু করোনা নয়, সমস্ত বাজে চিন্তা থেকে শিশুদের মুক্ত রাখতে পারবে বলেই আশা করা যায়। সব কিছু স্বাভাবিক হলেও অন্তত সপ্তাহে এক দিন এমন প্রকৃতিপাঠ বজায় থাকুক।
স্বপন কুমার ঘোষ, মধ্য ঝোড়হাট, হাওড়া
জনমুখী প্রকল্প
প্রশাসনে পড়ুয়াদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়। কিন্তু শিক্ষানবিশ হিসাবে নিয়োগ আদৌ কোনও চাকরির নিশ্চয়তা নয়, বরং চাকরিক্ষেত্রের সম্যক ধারণা তৈরি করার প্রশিক্ষণমাত্র। এই ধরনের প্রশিক্ষণ বর্তমানে বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে প্রচলিত ব্যাপার। কিছু দিন আগে শ্রম দফতরের উদ্যোগে বিভিন্ন পাটকলে এই ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ চালু হয়েছে। সরকারি দফতরগুলোয় এমন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ অভিনব।
যদিও সরকারি উদ্যোগে আপাত ভাবে একশো দিনের কাজের ছায়াই পরিলক্ষিত হয়। এতে ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যা সমাধানের কোনও লক্ষণ নেই, পরিবর্তে বেকারদের যন্ত্রণা ভুলিয়ে রাখার এক বিকল্প ব্যবস্থা বলেই মনে হয়। এর আগে সরকার-পোষিত ‘যুবশ্রী’ প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। যার সাফল্য নিয়ে সরকারই সন্দিহান, কারণ এই প্রকল্প নিয়ে সরকারি তরফে কোনও প্রচার নেই। যদি থাকত, তা হলে ১২ জানুয়ারি, আন্তর্জাতিক যুব দিবসে, এই প্রকল্প নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি থাকত।
বিভিন্ন সময়ে ঘটা করে জনমোহিনী প্রকল্প ঘোষণা না করে কোনও সুদূরপ্রসারী জনমুখী পরিকল্পনা নিলে এবং প্রত্যেক বছর বাজেটে তার যোজনা রাখলে, তা হবে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ। আগামী সরকারি বাজেটে যদি এই ধরনের প্রস্তাব রাখা হয়, তা হলে তা শুধু রাজ্যবাসীর মনে আশার সঞ্চার করবে না, সরকারি তহবিলের সুব্যবহার হবে, সরকারের ইতিবাচক মানসিকতাও প্রতিফলিত হবে।
দেবাশিস চক্রবর্তী, মাহেশ, হুগলি
কিছু সমস্যা
প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিকে অফলাইন পঠনপাঠন শুরু হওয়ার আগে বেশ কিছু দিন প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’ কর্মসূচি চলেছে। তবে, এই ধরনের কর্মসূচির ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাস্তব সমস্যার কথা তুলে ধরা দরকার।
এক, খোলা জায়গায় মাথার উপরে ত্রিপল বা চটের ছাউনি থাকলেও, গরমের দিনে শিশুদের আধ ঘণ্টা বসে থাকাটাও অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তা ছাড়া মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসে থাকাটাও কষ্টকর। মাথার যন্ত্রণা, বমি ভাব, হাঁটুর ব্যথা প্রভৃতিতে অনেকের অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা।
দুই, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় হঠাৎ বৃষ্টি হলে ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে দেখলাম, সরকারি নির্দেশ মানতে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় শিশুদের ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’ চলেছে। এ ভাবে শিশুদের কষ্ট দেওয়ার কোনও মানে নেই। তা ছাড়া, এখন বৃষ্টিতে অনেক সময় বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে তা ঝুঁকির হয়ে যায়।
তিন, খোলা মাঠে বসে থাকার সময় বিষাক্ত সাপ, পোকামাকড়ের উপদ্রবের সম্ভাবনাও যথেষ্ট।
চার, পাড়ায়, পাড়ায় মিড-ডে মিল বয়ে নিয়ে গিয়ে খোলা জায়গায় মাটিতে বসিয়ে খাওয়ানো শুধু দুষ্কর নয়, অস্বাস্থ্যকরও বটে। জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা যথেষ্ট।
পাঁচ, নিরুপায় হয়ে ছোট জায়গায় অনেক ছেলেমেয়ে চটের উপর যখন ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে, তখন দূরত্ববিধি মানা সম্ভব হয় না। সে তুলনায় ক্লাসরুমে বেঞ্চে বসিয়ে দূরত্ববিধি মানা অনেক সহজ।
ছয়, সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ছেলেমেয়েদের শৌচাগার, পানীয় জল ও নিয়মিত স্যানিটাইজ়েশন নিয়ে। স্থানীয় প্রশাসন যদি সাহায্য না করতে পারে, তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ সমস্যায় পড়তে পারেন।
সাত, বহু স্কুলের ক্ষেত্রে কাছাকাছি বড় ফাঁকা জায়গার অভাবে ও স্থানীয় প্রশাসনের অপারগতায় ‘পাড়ায় শিক্ষালয়’ করতে হয়েছে স্কুলের মাঠ, ফাঁকা বারান্দা, মিড-ডে মিলের শেড বা ছাদে। ছেলেমেয়েরাই তখন প্রশ্ন তুলেছে, ‘সংলগ্ন বারান্দায় বা মাঠে হলে, ক্লাসরুমে বসতে অসুবিধা কোথায়?’
আশার কথা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকে অফলাইন পঠনপাঠন শুরুর কথা ঘোষণা করেছেন। গতকাল থেকে তা শুরুও হয়েছে। সব স্কুলেই যাতে দ্রুত তা শুরু হয়, সেই চেষ্টা করা উচিত। অতিমারিতে প্রায় ২ বছরের ক্ষত সারানোর লক্ষ্যে পড়াশোনার মূল উদ্দেশ্যটুকু অন্তত রক্ষিত হোক।
প্রণব মাটিয়া, বিশ্বনাথপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy