ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল-এর ২০০ বছর চলছে। উনি শুধু নার্স নয়, এক জন প্রথম শ্রেণির জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ভারতের জনস্বাস্থ্য এবং বিশেষ করে, এখানকার সৈন্যদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে, ওঁর চিন্তাভাবনা এবং গবেষণাও উল্লেখযোগ্য।
ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল কোনও দিন ভারতে আসেননি। কিন্তু তাঁর জীবনের এক বড় অংশ জুড়ে ছিল ভারতের নানা জায়গার জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে গবেষণা এবং তথ্যসংগ্রহের কাজ। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর ২ অগস্ট, ১৮৫৮-য় ইন্ডিয়া অ্যাক্ট পাশ হয়ে ভারত সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চলে আসে। তখন থেকেই লন্ডনে ইন্ডিয়া অফিস থেকে ভারতের শাসনকাজ পরিচালিত হত। এই সময়েই মিস নাইটিঙ্গেল ভারতের সৈন্যদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে মনোযোগ দিতে শুরু করেন। ব্রিটিশ সরকারের হাতে শাসনভার যাওয়ার পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সব কাগজ বা তথ্য সরকারের হাতে তুলে দেয়নি। ফলে প্রথম প্রথম মিস নাইটিঙ্গেলের যথেষ্ট অসুবিধা হয়েছিল। তাই এর পর উনি নিজেই তথ্য সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেন।
উনি একটি ‘সার্কুলার অব এনকোয়ারি’ বানিয়ে ভারতের প্রত্যেক মিলিটারি স্টেশনে পাঠিয়ে দেন। এই সার্কুলারে সেই ব্যারাকের সৈনিকদের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সম্পর্কে অনেকগুলো প্রশ্ন ছিল। সেই সব প্রশ্নের উত্তর ডাকযোগে ওঁর কাছে লন্ডনে ফিরে এলে, উনি সেই বিপুল তথ্যভাণ্ডার নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৮৬২ সালে ওঁর বিশ্লেষণ শেষ হয় এবং রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
এই রিপোর্ট থেকেই প্রথম জানা যায়, ভারতে ব্রিটিশ সেনাদলের মধ্যে মৃত্যুহার প্রতি ১০০০-এ ৬৯। উনি এও বলেন যে এই বিপুল মৃত্যুর কারণ ব্যারাকে নিকাশির অভাব, পানীয় জলের বিশুদ্ধতার অভাব এবং ব্যারাকের নির্মাণশৈলী, যার ফলে সৈন্যদের এক জায়গায় ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকতে হত। ভারতীয় সৈন্যদের থাকার জায়গা ছিল আরও খারাপ। মিস নাইটিঙ্গেলের রিপোর্ট ছিল ২০২৮ পাতার, কিন্তু এই নেতিবাচক রিপোর্ট সরকারের পছন্দ হয়নি। ফলে সরকারি রিপোর্টে এই তথ্যের অনেকাংশই বাদ পড়ে।
মিস নাইটিঙ্গেল এর পরে বার বার সরকারের কাছে দরবার করে ভারতের জনস্বাস্থ্যের এই ভয়াবহ অবস্থা সম্পর্কে নানা উচ্চপদস্থ অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হন। এর ফলেই কিছু দিনের মধ্যে ভারতের বিভিন্ন স্থানে স্যানিটারি কমিশন তৈরির পরিকল্পনা হয়।
১৮৬৪ সালের জানুয়ারি মাসে অন্যদের সঙ্গে মিস নাইটিঙ্গেল ভারতের জনস্বাস্থ্য উন্নতির রূপরেখা রচনা করেন। এই গাইডলাইনে ভারতের বিভিন্ন স্থানে হাসপাতাল, জল সরবরাহ, নিকাশি ব্যবস্থা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে মতামত ছিল। যদিও এই রিপোর্ট ছিল মূলত মিলিটারি ব্যারাকের জন্য, কিন্তু এই রিপোর্টের ওপর নির্ভর করেই পরবর্তী কালে শহরের স্বাস্থ্যবিধি এবং সরকারি পরিকল্পনা গড়ে ওঠে। মিস নাইটিঙ্গেলের পীড়াপীড়িতেই ভারতের জনস্বাস্থ্য তথ্য নিয়ে প্রতি বছর ‘ব্লু বুক’ প্রকাশ করা শুরু হয়।
২ এপ্রিল, ১৮৬৪ তারিখে ডা. চার্লস হ্যাথাওয়ে-কে লেখা একটি চিঠিতে উনি বলছেন, কলকাতার পরিবেশ শোধন করা অবিলম্বে প্রয়োজন। নইলে কলকাতা আর বাসযোগ্য থাকবে না। এ ছাড়া তিনি কলকাতা বন্দরে নাবিকদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যও পরামর্শ দিয়েছিলেন।
ইন্ডিয়া অফিসের কর্তা ছিলেন ‘সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ইন্ডিয়া’। ভারতে শাসনকার্যে কোনও পরিবর্তন ঘটাতে হলে এঁর অনুমতি লাগত। কিন্তু সমস্যা ছিল, এই পদে কেউ বেশি দিন টিকতেন না। বেশির ভাগ লোক এক বা দু’বছর পরেই, হয় ছেড়ে দিতেন নয় বরখাস্ত হতেন। ফলে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের বেশ অসুবিধা হয়েছিল। ১৮৬৭ সালে সেক্রেটারি হন নর্থকোট। উনি ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের কথা শুনে বেশ কিছু পরিবর্তন আনেন। এই সময়েই ইন্ডিয়া অফিসে স্যানিটারি বিভাগ তৈরি হয়। মিস নাইটিঙ্গেলের স্যানিটারি পরিকল্পনার ফলেই ১০ বছরের মধ্যে ভারতে সেনা ব্যারাকে মৃত্যুহার নেমে এসেছিল ১৮৬৩ সালে (প্রতি হাজারে) ৬৯ থেকে ১৮৭৩ সালে ১৮-য়।
১৮৬৪ সালে ইঞ্জিনিয়ার ডগলাস গ্যালটনের সঙ্গে ভারতে সৈন্যদের আদর্শ ব্যারাকের পরিকল্পনা করেন মিস নাইটিঙ্গেল। এর পর ভারতের বিভিন্ন মিলিটারি হাসপাতালে মহিলা নার্স নিয়োগের ব্যাপারেও ওঁর পরিকল্পনা সফল হয়েছিল। ১৮৯১ সালে বম্বে স্যানিটেশন আইনে ভারতবাসীর কাছ থেকে কর আদায় করে নিকাশি ব্যবস্থা নির্মাণের কথা বলা হয়। তখন মিস নাইটিঙ্গেল আবার সরকারকে তদবির করেন গরিব মানুষের ওপর এই কর না চাপানোর জন্য। অবশ্য ১৮৯৪ সালে লর্ড ল্যান্সডাউন এই প্রস্তাব খারিজ করে দেন। কিন্তু লর্ড ল্যান্সডাউনের সঙ্গে নাইটিঙ্গেলের বহু বার ভারতের জনস্বাস্থ্য নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে। তাঁর পরামর্শেই লর্ড ল্যান্সডাউন প্রত্যেক রাজ্যে স্যানিটারি বোর্ড
তৈরি করেন।
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় মিস নাইটিঙ্গেল স্বাস্থ্য-গবেষণার চারটি শর্তই মেনে চলেছিলেন: তথ্য সংগ্রহ, তথ্য বিশ্লেষণ, গাইডলাইন তৈরি এবং তা প্রয়োগের উপায় নির্ধারণ।
ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল সেই যুগেও ভারতের মানুষের জনস্বাস্থ্যের উন্নতি এবং মহামারি প্রতিরোধ নিয়ে ভেবেছেন, রিপোর্ট লিখেছেন, সরকারের উচ্চস্তরেও বার বার কড়া নেড়েছেন।
রুদ্রজিৎ পাল, কলকাতা-৩৯
ত্যাগ ও বঞ্চনা
করোনা বিপদের পরিপ্রেক্ষিতে কোন কোম্পানির কর্ণধার নিজের বেতন নিচ্ছেন না বা কম নিচ্ছেন, সেই মহান ত্যাগের বিবরণ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পাচ্ছি।
কিন্তু কখনও আমরা জানতে পারি না, করোনাকে সামনে রেখে ঠিক কত লক্ষ শ্রমিক চাকরি খোয়ালেন। ঠিক কত জন সামান্য আয়ের মানুষের মাসিক বেতনের উপর তলোয়ার চালালেন মালিক। কত জন চাকুরিজীবীর পূর্বনির্ধারিত পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধি অথবা বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পিছিয়ে গেল হয়তো বা তাঁর চাকরি-জীবনের মেয়াদ পর্যন্তই!
এগুলোও কি ত্যাগ নয়?
জানি, এগুলো বঞ্চনা। করোনাকে সামনে রেখে সাধারণের সঙ্গে এই বঞ্চনা আগামী বছরগুলোতেও চলতে থাকবে, কিন্তু কর্মীরা মুখে রক্ত তুলে খেটে যাবেন বছরভর কেবলমাত্র তাঁদের পরিবার ও চাকরি রক্ষার দায়ে, আর মালিকেরা বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ বিতরণ করবেন নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে।
শুভজিৎ বন্দোপাধ্যায়, কলকাতা-১৪১
অনুমতি
জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াতের বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা না করার কারণে দু’মাস ধরে ঘরের বাইরে আটকে আছি। অন্তত যাঁরা নিজের বাড়ি ফিরতে চান, তাঁদের নিজেদের ব্যবস্থায় ফেরার অনুমতি হিসেবে ‘ই-পাস’ দেওয়া হোক।
আবুল হাসনাত, পূর্বপল্লি , বোলপুর
আটকে আছি
কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিক ও ছাত্রছাত্রীদের নিজ নিজ রাজ্যে ফিরিয়ে আনতে তৎপর হয়েছে রাজ্য সরকারগুলি। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনা হয়েছে কোটায় আটকে পড়া ছাত্রছাত্রীদের। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে পড়া ৩০০ ছাত্রছাত্রীকে রাজ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য কোনও হেলদোল কেন দেখা যাচ্ছে না? পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে এখানে, রমজান মাসে লকডাউনের মধ্যে খুবই অসুবিধায় পড়েছে ছাত্রছাত্রীরা। ইতিমধ্যে বিহার সরকার এক হাজার বিহারি ছাত্রছাত্রীকে স্পেশাল ট্রেনে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে সে রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কিছু করছে না কেন?
সামীম আখতার শেখ, ছাত্র, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy