জরুরি অবস্থার সময় ১৯৭৬-এর ৪২তম সংবিধান সংশোধন আইনের মাধ্যমে প্রস্তাবনায় ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দু’টি যোগ করা হয়। ভারতীয় প্রেক্ষাপটে ধর্মনিরপেক্ষতার কোনও আনুষ্ঠানিক ও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। পশ্চিমি দুনিয়ার মতো ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা গির্জা ও রাষ্ট্রের সংঘাতের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়নি। ‘‘একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যক্তি ও সমষ্টির ধর্মীয় অধিকার স্বীকার করে; সাংবিধানিক ভাবে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি আনুগত্য দেখায় না, এমনকি কোনও ধর্মের প্রচার ও প্রসারে আগ্রহ দেখায় না’’— ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা এ ভাবে দিয়েছেন ডি ই স্মিথ। আবার অনেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে ‘সর্বধর্মসমন্বয়’ অর্থাৎ সকল ধর্মের প্রতি সমান ব্যবহার, সমান শ্রদ্ধা প্রদর্শন বুঝিয়ে থাকেন। এই ধোঁয়াশার ফাঁক গলে সরকারি স্কুলে সরস্বতী পুজোর আয়োজন হয়, উৎসবের মোড়কে কার্নিভাল আয়োজনে অনেকেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা খুঁজে পান, যা ধর্মনিরপেক্ষতার মৌল নীতির পরিপন্থী বলে মনে করেন।
ফ্রান্সে রাফাল যুদ্ধবিমান হস্তান্তরের সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ‘শস্ত্রপূজা’ করেছেন ও বলেছেন, ‘‘এটা আমাদের বিশ্বাস। প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও এ কাজ করব।’’ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মন্তব্য করেছেন, ‘‘শস্ত্রপূজা ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ।’’
রাজনাথ সিংহ বা নির্মলা দেবী তাঁদের বিশ্বাস ব্যক্তিগত পরিসরে পালন করলে আপত্তির কিছু থাকে না। কিন্তু সংবিধানের নামে শপথ নিয়ে, মন্ত্রী-পদে আসীন হয়ে, সর্বোপরি রাষ্ট্রের খরচে ‘শস্ত্রপূজা’ পালন নিশ্চিত ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ লঙ্ঘন। দেশের ১৩০ কোটি মানুষ ‘শস্ত্রপূজা’-য় বিশ্বাস করেন— এ রকম প্রত্যয় ভাবের ঘরে চুরি।
সরিৎশেখর দাস
সুকান্ত সরণি, ব্যারাকপুর
কেমন সমীকরণ?
‘আধিপত্যবাদ’ (১৩-১০) শীর্ষক সম্পাদকীয় পড়ে, ব্যক্তিগত পুজো ও রাষ্ট্রগত পুজোর মধ্যে যে সমীকরণ তা বোধগম্য হল না। কে শিবনের চন্দ্রযানের আগের পুজো ব্যক্তিগত প্রার্থনা, আর রাফাল গ্রহণে রাজনাথ সিংহের পুজো রাষ্ট্রপ্রতিনিধির প্রার্থনা— এমন বিভাজন কী ভাবে করা যায়? ভুলে গেলে চলবে না, কে শিবন যে-সংস্থার চেয়ারম্যান সেটির সাফল্য ও ব্যর্থতার দায় ভারত সরকারেরই। তাঁর মন্দিরে পুজো দেওয়া ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, চন্দ্রযানের সাফল্য কামনায়, যা দেশের গর্ব। ঠিক যেমনটা রাফালের আগমনও দেশের প্রতিরক্ষাস্বার্থে অহঙ্কার। অতএব দু’টির মধ্যে কোনও প্রভেদ নেই। রাজনাথের সমালোচনা হলে শিবনেরও হওয়া উচিত। উল্টো দিকে, রাজনাথের মাহাত্ম্য প্রচারিত হলে শিবনেরও মাহাত্ম্যের জয়গান গাওয়া উচিত। এক যাত্রায় পৃথক ফল কাম্য নয়।
সম্পাদকীয়ের শেষ যুক্তিটিও অদ্ভুত। রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হওয়ার জন্য যদি রাজনাথের পুজো রাষ্ট্রের ধর্মকে প্রকাশ করে থাকে, তা হলে এটাও বলা যায়, কোনও নিরপেক্ষ সংবাদপত্রের কোনও এক সাংবাদিক যদি নিয়মিত যে কোনও একটি মতের পক্ষে বা বিপক্ষে লেখেন, তাঁর মতটাই ওই সংবাদসংস্থার মত বলে প্রতিফলিত হবে। তখন ওই সংবাদসংস্থা নিজেকে নিরপেক্ষ বলে দাবি করতে পারে কি? কিন্তু এমন সরলরেখা কোনও দিন টানা যায় না, যাবেও না। তাই রাষ্ট্রের এক জন মাত্র প্রতিনিধি (প্রতিরক্ষামন্ত্রী) যে আচার পালন করবেন, তা সমগ্র রাষ্ট্রের মত, এ-হেন সিদ্ধান্তে পৌঁছনো বেঠিক।
প্রণয় ঘোষ
কালনা, পূর্ব বর্ধমান
এত কমিটি
‘সরোবরে এত কমিটি কেন?...’ (১৪-১০) শীর্ষক প্রতিবেদনে কিছু অসঙ্গতি সম্পর্কে এই চিঠি। মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট ২০১৪ সালে সরোবরের দূষণমুক্ত পরিবেশ রক্ষার জন্য সাত সদস্যের একটি স্থায়ী কমিটি তৈরি করে দেন, যেটা হল প্রথম কমিটি। যার আমিও এক জন সদস্য। পরে পরিবেশ আদালত এই কমিটিকে মান্যতা দেন ও কাজ করে যেতে বলেন। হাইকোর্ট নির্দেশিত কমিটি হাইকোর্ট ছাড়া কেউ ভাঙতে পারে না। পরিবেশ আদালতও এই কমিটিকে মান্যতা দিয়েছেন। তাই সুভাষ দত্তের বক্তব্যের কোনও সত্যতা নেই। পরে, ছট পুজো ও সরোবর স্টেডিয়ামে নৈশ ফুটবল নিয়ে যে মামলা হয়, তাতে সরোবরের জীববৈচিত্র ও পরিবেশ দূষণের সঠিক অবস্থা জানার জন্য, পরিবেশ আদালত আট জনের সরকারি পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের নিয়ে একটি অস্থায়ী কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি ছ’মাসের প্রচেষ্টায় এক অতি বিশদ তথ্যপূর্ণ রিপোর্ট জমা দেয় ২০১৬ সালে। তাতে সরোবরে পরিবেশের চূড়ান্ত অবক্ষয়ের কথা বলা হয়েছে। এর ভিত্তিতেই ২০১৭ সালে পরিবেশ আদালতের নির্দেশ আসে, ছট পুজো-সহ সরোবরে ও সরোবরের চৌহদ্দিতে সব রকম পুজো ও সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধের। এই নির্দেশের পরেও কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা করেননি এবং ২০১৮ সালে ছট পুজো-সহ দুর্গা পুজো, কালী পুজো, সরস্বতী পুজো এবং নানা রকম সামাজিক অনুষ্ঠান আশেপাশের সংস্থাগুলোতে চলতে থাকে। পরিবেশ আদালতের কঠোর নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে বলে হাইকোর্ট কমিটির সদস্য সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি কন্টেম্পট মামলা করেন, যার শুনানি এখন পরিবেশ আদালতে চলছে। হাইকোর্ট নির্দেশিত মনিটরিং কমিটি ও পরিবেশ আদালত নির্দেশিত বিশেষ কমিটি (যা এখন নেই) ছাড়া অন্য কোনও নির্দেশিত কমিটি সরোবরে নেই।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ ও পরিবেশ আদালতের মান্যতা অনুযায়ী কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ সরোবরে যা কিছু উন্নতিমূলক কাজ করবেন, তা এই মনিটরিং কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে করতে হবে। আশ্চর্যের কথা যে, কেএমডিএ-র সিইও এই মনিটরিং কমিটির চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও তিনি এই কমিটিকে গুরুত্ব দিতে ইচ্ছুক নন!
মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৯৫
প্রতিবাদ
‘নীতি আয়োগের সূচকে শিক্ষাতথ্য পাঠায়নি বাংলা’ (পৃ ৫, ১-১০) শীর্ষক খবরে যে তথ্যগুলি দেওয়া হয়েছে তা সত্য নয়। আমাদের মত হল:
১. নীতি আয়োগ বা মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক (এমএইচআরডি), কারও সঙ্গেই এ ব্যাপারে আমাদের কোনও রকম যোগাযোগ হয়নি।
২. ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট পোর্টালে যখনই চাওয়া হয়েছে, আমরা নিয়মিত প্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়েছি।
৩. বরং এমএইচআরডি তাদের সম্প্রতি চালু হওয়া পারফর্মিং গ্রেডিং ইনডেক্স-এ (পিজিআই) আমাদের দেওয়া অধিকাংশ তথ্য ব্যবহার করেনি। ফলে তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের স্থান ঠিকমতো দেখানোও হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। যদিও তাদের তরফে এখনও উত্তর আসেনি।
মিত্র চট্টোপাধ্যায়
তথ্য অধিকর্তা, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
প্রতিবেদকের উত্তর: এ রাজ্যের তথ্য না পাঠানোর বিষয়টি আমাদের মস্তিষ্কপ্রসূত নয়। এই তথ্য দিল্লিতে জানিয়েছিলেন নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত। পরে বিকাশ ভবনে খোঁজ নিয়ে আমরা জানতে পারি যে তথ্য সত্যিই যায়নি।
কেমন শিরোনাম!
‘বিনায়কের সিদ্ধিলাভ’ (১৫-১০) শিরোনামটি কিছুটা বিভ্রান্তিমূলক ও চমক সৃষ্টির প্রয়াস মনে হচ্ছে। বিনায়ক তো নিজেই সিদ্ধিদাতা, তাঁর কী করে সিদ্ধিলাভ হয়? তা ছাড়া নোবেলপ্রাপকের প্রথম নামটি অভিজিৎ, মধ্যমটি বিনায়ক। প্রথমটিকে ছেড়ে মধ্যমটিকে গুরুত্ব দেওয়ার কেন ইচ্ছা হল?
গোপা বন্দ্যোপাধ্যায়
শিবপুর, হাওড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy