Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Mahatma Gandhi

সম্পাদক সমীপেষু: গান্ধীর আলো

বর্তমান শাসক দল জাতির জনকের বহুত্ববাদের পরিবর্তে ভারতে এক ধর্মের আধিপত্যের নীতিতেই বিশ্বাসী। হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মনিরপেক্ষতা এখন শাসকের দৃষ্টিতে নিজ ধর্মকে চরম অবমাননারই নামান্তর।

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৮
Share: Save:

অমিতাভ গুপ্তের ‘গড়া যখন ভাঙার নাম’ (৩০-১) প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। গান্ধীজির হিন্দ স্বরাজ গ্রন্থে (১৯০৯) তাঁর জীবনদর্শনের একটা প্রতিফলন মেলে। স্বদেশীয় প্রভাবে গুজরাতের জৈন ধর্ম, পারিবারিক বৈষ্ণব পরিবেশ, সাধু রাইচাঁদের সংস্পর্শ এবং শেষে ভগবদ্‌গীতা ছিল তাঁর জীবনে প্রভাবশালী। তাঁর ভাষ্যে কুরুক্ষেত্র আমাদেরই অন্তর, সেখানে সু ও কুপ্রবৃত্তি পাণ্ডব-কৌরবের মতো নিত্য যুযুধান। যুদ্ধে জয়ী হলে স্বরাজের আশা থাকতে পারে, কিন্তু তা শুধু পরশাসন থেকে মুক্তি নয়, আপন প্রবৃত্তির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। বিবেকের অনুশাসনে মানবকল্যাণে কর্ম করতে হবে নিরাসক্ত হয়ে। এতে জয় নেই, পরাজয়ও নেই। আছে অন্তহীন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বৃহত্তর সত্যে উত্তরণের জন্য।

গান্ধীর মৃত্যুতে ক্যাম্বেল জনসন বলেছিলেন যে, এই মৃত্যুতে আছে একটা বিজয়ের আস্বাদ। এই ছোটখাটো মানুষটির ভাবনা ও আদর্শ ঘাতকের গুলির চেয়ে শক্তিশালী। নেহরু বলেছিলেন, “আলো নিবে গেছে..., কিন্তু আমি ভুল বলছি, এ আলো সাধারণ নয়...।” গান্ধীর আলো সময়াতীত সত্যের, যা ভ্রান্তি থেকে ফিরিয়ে যথার্থ পথের দিকে নিয়ে চলে আমাদের, বলেছিলেন নেহরু।

খিলাফত আন্দোলনে মুসলমানদের এত বড় বন্ধু সম্বন্ধে ওয়াভেল মনে করেছিলেন জিন্না প্রথম চান পাকিস্তান, তার পর স্বাধীনতা। আর গান্ধী প্রথম চান স্বাধীনতা এবং তার সঙ্গে মুসলিমদের জন্য স্বনিয়ন্ত্রণ। তিনি জিন্নার সঙ্কীর্ণ সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশীল রূপ ভাল ভাবেই চিনতেন। ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’ ও তার পর বিহার, কলকাতা, দিল্লির দাঙ্গার সময় মুসলিমদের ধনপ্রাণ রক্ষার্থে জীবন দিতেও গান্ধী প্রস্তুত ছিলেন। আবার ধর্মের অজুহাতে বিভেদকামী মুসলমানের এত বড় প্রতিবাদীও কেউ ছিলেন না। সব কিছু বিরোধ এবং আপসের শেষে তিনি বলতেন— ঈশ্বরই সত্য, শেষে বলতেন— সত্যই ঈশ্বর ।

বর্তমান শাসক দল জাতির জনকের বহুত্ববাদের পরিবর্তে ভারতে এক ধর্মের আধিপত্যের নীতিতেই বিশ্বাসী। হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মনিরপেক্ষতা এখন শাসকের দৃষ্টিতে নিজ ধর্মকে চরম অবমাননারই নামান্তর। ঈশ্বরবিশ্বাসী যে মানুষটি নিজ ধর্মবিশ্বাসকে অক্ষুণ্ণ রেখেও পরধর্মীদের বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন দিলেন, সেই মহাত্মার যথার্থ স্থান বর্তমান ভারতে দূরবিন দিয়ে খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর।

সঞ্জয় রায়, হাওড়া

ধর্মের অছিলা

‘গড়া যখন ভাঙার নাম’ প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র। ভারতের ইতিহাসে ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ দিনটি স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে কি না, তার উত্তর মিলবে ভবিষ্যতে। একশো-দেড়শো বছর পরেও দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে রামমন্দির একটি দ্রষ্টব্য স্থাপত্য হিসাবে চিহ্নিত হবে। যেমন, আজও আমরা তাজমহল দেখে মুগ্ধ হই, খাজুরাহোর মন্দির-গাত্রে খোদিত নর-নারীর মিথুন-মূর্তি নিয়ে চলে আলোচনা, রাজস্থানে রুক্ষ মরুভূমির বুকে দুর্গগুলো দেখে বিস্মিত হই। রামমন্দিরও তেমনই বিবেচিত হবে একটি অত্যাশ্চর্য স্থাপত্য কীর্তি হিসাবে। কিন্তু, যে বিতর্কিত অধ্যায় লুক্কায়িত আছে ২.৭৭ একর জমির উপরে স্থাপিত মন্দিরে, যার আড়ালে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার বড়াই ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে, সে কথাও গবেষকদের রচনায় উদ্ভাসিত হবে। আর সেই আগামী দিনের বুদ্ধিমান চিন্তাবিদগণ বাধ্য হবেন ভাবতে— স্বাধীনতা ও সাম্যের বাণী উচ্চারণকারী সংবিধানকে হেলায় নস্যাৎ করে একটি প্রাচীন মসজিদকে ধ্বংস করা হয়েছে কার মস্তিষ্কপ্রসূত চরম-হিন্দুত্ববাদকে প্রতিষ্ঠা করতে? এখনও যেমন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মন অস্থির হয়, ভাবী কালেও এর অন্যথা হবে না।

১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি দিনটি তেমনই এক মারাত্মক উত্তরহীন প্রশ্নের সম্মুখীন করায় আমাদের। দোষে-গুণে মানুষ গান্ধীজি। আজীবন তিনি সময়ের সঙ্গে নিজেকে পাল্টে নিয়েছেন। জানা যায়, তাঁর ঘনিষ্ঠ শওকত ও মহম্মদ আলির সঙ্গেও তিনি এক সঙ্গে খেতে বসতেন না। তিনি অসবর্ণ এবং আন্তঃসাম্প্রদায়িক বিবাহে বিশ্বাস করতেন না। কিন্তু, ১৯৪৬ সালে নোয়াখালিতে তিনি স্পষ্ট করেন তাঁর মত যে, এই রকম বিবাহ তিনি সমর্থন করেন। তাই প্রথম জীবনের গান্ধী ও শেষ জীবনের গান্ধীর একটু আলাদা মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে, মনে করেন সুগত বসু। গান্ধী দেশভাগ রোধ করতে চেয়েছিলেন। শরৎচন্দ্র বসুর সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁর আলোচনা হয়েছিল। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে তিনি বলেছিলেন, বাঙালি হিন্দু ও বাঙালি মুসলমান যে এক, এটা স্বীকার করলে মুসলিম লীগের দ্বিজাতি তত্ত্ব বিরাট একটা ধাক্কা খাবে। তাঁর প্রচেষ্টায় ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট কলকাতায় শান্তি বিরাজিত ছিল। পরের দিন হরিজন পত্রিকায় তিনি লিখেছিলেন, পারস্পরিক ঘৃণার গরল পান করার ফলে ভ্রাতৃভাবের অমৃত এত মধুর লাগছে। ১৯৪৭ সালের ১৪-১৭ নভেম্বর প্রথম এআইসিসি অধিবেশনে দলকে সতর্ক করেছিলেন— ভারতীয় ইউনিয়নে যেন এক জন মুসলমানও মনে না করেন যে তাঁর জীবন বিপন্ন। সংখ্যার হিসাবে দিল্লিতে ১৩৭টি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অনুতপ্ত শুনিয়েছিল তাঁর কণ্ঠ, “এই সমস্ত অশুচিকরণের ঘটনা হিন্দুধর্মের কলঙ্ক।” সুভাষচন্দ্র বসু যে সমগ্র ভারতবাসীর অন্তরে ভালবাসা ও আনুগত্যের বোধ জাগিয়ে তুলেছিলেন, সেই অনুপ্রেরণায় তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানালেন, অন্তর থেকে সমস্ত সাম্প্রদায়িক তিক্ততা ধুয়ে ফেলার জন্য। তার পর এল ইতিহাসের সেই কলঙ্কিত দিন। সুগত বসু লেখেন, “সেদিন সন্ধ্যাবেলা তাঁর ওপর গুলিবর্ষণ সারা দেশকে প্রকম্পিত করেছিল আর প্রায় সর্বত্র নেমে এসেছিল গভীর শোকের ছায়া” (‘আমাদের যুগে মহাত্মা গাঁধী’, দেশ, ২-১০-২০)।

এখন নাথুরাম অনুরাগীরা তাঁর নামে মন্দির প্রতিষ্ঠাকর্মে সশ্রদ্ধ প্রণতি জ্ঞাপনের মহান কর্মযজ্ঞে উদ্যত। হিন্দুত্ববাদের ধ্বজা উড্ডীন করানোর স্বপ্নে বিভোর রামমন্দির কর্মবীররা কোটি কোটি দেশবাসীর অন্তরে স্বপ্নপুরুষ হিসাবে জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁদের মনে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই যে, একটি পাঁচশো বছরের মসজিদকে ধ্বংস করে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে, তা তর্কাতীত ভাবে মেনে নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। মহা ধুমধাম করে হিন্দু ধর্মের জয়গান গাওয়ানোর জন্য রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা যেন একটি অছিলামাত্র ছিল। মুখ্য কথা, সংখ্যাগুরুর ধর্মকে প্রাধান্য দিতে সংখ্যালঘুর ধর্মবোধে আঘাত হানা, যাতে খর্ব হয় তাঁদের অহং বোধ। হিন্দুত্ববাদ এবং হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণই প্রধান উদ্দেশ্য।

ধ্রুবজ্যোতি বাগচী, কলকাতা-১২৫

দেশের মান

ভারতের প্রকৃত উন্নয়ন ও অখণ্ডতার মূর্ত প্রতীক অযোধ্যার রামমন্দির। একই সঙ্গে আবুধাবিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সুন্দর এক মন্দির উদ্ঘাটন করলেন। তা প্রমা‌ণ করে যে, আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের সম্মান অনেক উন্নত হয়েছে। ভারতের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের ঠিকা নেওয়া বুদ্ধিজীবীদের অনুরোধ করব, তাঁরা যদি দেশের প্রকৃত উন্নয়ন চান, তবে কোটি-কোটি টাকার বাড়ি, গাড়ি ও জমানো টাকার কিছুটাও ত্যাগ করতে পারেন। তাতে দেশে যথেষ্ট হাসপাতাল আর স্কুল তৈরি হত। কমপক্ষে দেশের উন্নয়নের টাকা চুরি করাটাও বন্ধ করতে পারতেন। রামমন্দির নিয়ে মেকি কান্না ছেড়ে প্রকৃত উন্নয়ন নিয়ে ভাবা উচিত।

প্রভু রাজ, অযোধ্যা পাহাড়, পুরুলিয়া

খুলুক পার্ক

শকুন্তলা পার্ক-এর জলাধারের কাজ চলার জন্য এক বছরের অধিক সময় শিশুদের খেলার পার্কটি বন্ধ রয়েছে। এলাকার শিশুদের খেলার জন্য এটি খুবই দরকার।

অরুণাভ বাগ, কলকাতা-৬১

অন্য বিষয়গুলি:

Father Of Nation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy