স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সরকারের কাছে যা যা চাই’ (২১-৫) প্রবন্ধটি মূল্যবান। বাংলার মানুষকে অল্পেই সন্তুষ্ট থাকার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়ার যে পরামর্শ তিনি দিয়েছেন, তা উন্নত রাষ্ট্র গড়ার মুখ্য শর্ত। বাংলায় মানুষের মধ্যে বাম আমল থেকেই অল্পে সন্তুষ্ট থাকার প্রবণতার জন্ম। সেটা আর্থিক অবস্থা থেকে শুরু করে শিল্প, কৃষি, ঘরবাড়ি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, খাদ্য, রাস্তাঘাট, সবেতেই। সত্য যে, বিগত দশ বছরে এ অবস্থা থেকে কিছুটা বেরোনো গিয়েছে। তবে অধিকাংশকেই ওই মানসিকতা থেকে এখনও বার করা যায়নি। ব্যাপক শিল্পায়ন ঘটিয়ে, স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে রাজ্যবাসীর আর্থিক অবস্থা বদলানোর মধ্য দিয়ে সেটা করতে হবে। এটা একমাত্র সরকারের পক্ষেই সম্ভব। মানুষ আর্থিক ভাবে সচ্ছল হলে স্বাভাবিক নিয়মে উচ্চাকাঙ্ক্ষীও হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভাল থাকার একটা প্রবণতা তৈরি হবে, যা সরকারকেও বাধ্য করবে সব কিছু ঠিকঠাক চালাতে।
একমাত্র আধুনিক শিল্পায়ন ও উন্নত কৃষিব্যবস্থাই পারে একটা দেশের আর্থিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাতে। শিল্প ও কৃষি দুটোতেই আমরা অবিশ্বাস্য রকম পিছিয়ে। বিশেষ করে শিল্পে। সরকারের দূরদর্শিতা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে রাজ্যে শিল্পের এই দুরবস্থা। অফিস-আদালত, হাসপাতাল ও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কত জনের কর্মসংস্থান হতে পারে? কর্মহীন থাকা মানেই অভাব-অনটন, যা অল্পে সন্তুষ্ট থাকার প্রবণতা থেকে বার হতে দেয় না। তাই নবগঠিত রাজ্য সরকারের উচিত শিল্পায়নের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়া।
বিভূতিভূষণ রায়
হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
শিক্ষার দাবি
সরকার পোষিত একটি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে জানাই, স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামোগত দুর্বলতা বিষয়ে যে ক্ষেত্রগুলি উল্লেখ করেছেন, তার সঙ্গে সহমত পোষণ করি। সেই সঙ্গে কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করলাম।
এক, বিদ্যালয়গুলিতে নতুন শ্রেণিকক্ষ তৈরি, ছাত্রছাত্রীদের পোশাক, জুতো, ব্যাগ, সাইকেল, সর্বোপরি মিড-ডে মিল প্রদানের ব্যবস্থা যত উন্নত হয়েছে, সে তুলনায় পঠনপাঠনের উন্নততর ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রত্যেক শ্রেণিতে কম্পিউটার ও প্রজেক্টরের ব্যবহার-উপযোগী ‘স্মার্ট ক্লাসরুম’ গড়ে তোলা আবশ্যক। সেই সঙ্গে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ থাকা বাধ্যতামূলক।
দুই, বর্তমান সিলেবাসে প্রজেক্ট-এর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু তা মূলত নম্বর তোলাতেই সীমাবদ্ধ। এমন প্রজেক্ট চালু করতে হবে, যাতে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে। তিন, পঠনপাঠনের মাধ্যম হিসেবে ইংরেজিকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের আরও অনুমোদন দিতে হবে এবং পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করতে হবে। চার, শিক্ষকদের শূন্য পদগুলিতে দ্রুত নিয়োগ করতে হবে। বহু বিদ্যালয়ে যথেষ্ট শিক্ষক না থাকায় পঠনপাঠন অবহেলিত হচ্ছে।
মৃণাল সাহা
অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
যা চাই না
‘...যা যা চাই’-এর সঙ্গে ‘যা যা চাই না’-র তালিকাও যোগ করতে চাই। শিক্ষক-সহ সমস্ত সরকারি পদে নিয়োগে অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি, রাজপথে শিক্ষক পদপ্রার্থীদের বিক্ষোভ, মামলা-মকদ্দমার জটে শিক্ষক নিয়োগ বাধাপ্রাপ্ত হওয়া আর দেখতে চাই না। খেলা-মেলা-মোচ্ছবে সরকারি অর্থের অপচয় দেখতে চাই না। সিন্ডিকেটরাজ, তোলাবাজির দৌরাত্ম্য চাই না। উগ্র সাম্প্রদায়িক দলের অগ্রগতি প্রতিহত করার জন্য নরম সাম্প্রদায়িকতার (যেমন, রামনবমীর পরিবর্তে হনুমান জয়ন্তী পালন) পথ বেছে নেওয়া, সরকারি শূন্যপদে স্থায়ীর পরিবর্তে ঠিকাচুক্তির নিয়োগ এবং লম্বা সরকারি ছুটির তালিকা আর চাই না।
রাজশেখর দাশ
কলকাতা-১২২
কেবলই চুক্তি?
‘...যা যা চাই’, তা ভাবতে গিয়ে মনে প্রশ্ন এল, কী পেয়েছি? আশির দশকের মধ্যভাগে কলকাতায় কয়েকটি বিদেশি ব্যাঙ্কে কম্পিউটার বসানোর তীব্র বাম বিরোধিতার কথা আজকের প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানেন না। দেখেছি, স্বাধীন সত্তা হারিয়ে মানুষ কী ভাবে একটি রাজনৈতিক দলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। পঞ্চায়েতি রাজ প্রবর্তন ও ভূমি সংস্কারের ফলে গ্রামের মানুষের এগিয়ে যাওয়ার হিসেবটা আজ বড় অস্পষ্ট লাগে। দেরিতে হলেও ভুল ভাঙল বাঙালির। কিন্তু ২০১১ সালে যে সরকার এল, তার বয়সও তো দশ বছর পেরিয়েছে। সিঙ্গুরের পরে রাজ্যের উপর শিল্পমহলের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার কোনও উদ্যোগ কি দেখেছি? কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে জেলার স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে? রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি জাতীয় র্যাঙ্কিং-এ পিছিয়ে পড়ছে। রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে রাজনীতিকরণ রুখতে হবে, লেখক জানিয়েছেন। কিন্তু বাস্তব হল, স্কুল-কলেজে এখন দলীয় প্যারাটিচারদেরই প্রাধান্য। সম্প্রতি এদের কার্যকালের মেয়াদ ৬০ বছর করা হয়েছে। অথচ, পিএইচ ডি ডিগ্রিধারীরা চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন। মুখে মুখে ফিরছে নিয়োগে ঘুষ ও স্বজনপোষণের গল্প।
তাপস ঘোষ
হাওড়া
শিল্পে উৎসাহ দিন
করোনার ক্রান্তিকালে আমরা দেখেছি চিকিৎসাব্যবস্থার দৈন্যদশা। গ্ৰামের মানুষ এখনও নির্ভরশীল হাতুড়ের উপরে। আশাকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মী জনসংখ্যার অনুপাতে অপ্রতুল। কর্মসূত্রে হলদিয়ায় থেকে দেখেছি, অনেক ছোট, মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেগুলোকে নতুন করে বাঁচিয়ে তুললে কর্মসংস্থান বাড়বে। বাইরের পুঁজিপতিদের পরিবর্তে পশ্চিমবঙ্গে নতুন শিল্পোদ্যোগী তৈরি করা হোক। আমাদের জমি, শ্রমিক আছে, শিক্ষিত ও দক্ষ তরুণ-তরুণী আছেন। এ কাজে উৎসাহ পেলে তাঁরা এগিয়ে আসবেন।
গৌতম পতি
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
বর্ধমান জ্বর
শেখর ভৌমিকের ‘একের পর এক মৃত্যুর ঢেউ, তবু হুঁশ ফেরে না’ (রবিবাসরীয়, ১৬-৫) প্রসঙ্গে জানাই, ১৮২৪ সালে যশোরে ম্যালেরিয়া জ্বর শুরু হলেও ১৮৬২ সাল থেকে তা তৎকালীন বর্ধমান বিভাগের জেলাগুলোতে মহামারির আকার ধারণ করে। পরবর্তী কালে তা ‘বর্ধমান জ্বর’ নামে খ্যাত হয়। জানা যায়, এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্ধমান জেলায় শতকরা ৫ জন এবং হুগলি জেলায় শতকরা ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। কৃষ্ণকুমার মিত্র সম্পাদিত সঞ্জীবনী ১৮৯১ সালের ১ অগস্ট লিখেছিল, “বর্ধমানে যখন বড় ম্যালেরিয়া জ্বরের ধুম, তখন আমরা কলিকাতাতে বসিয়া শুনিলাম যে, বিদ্যাসাগর মহাশয় নিজ ব্যয়ে ডাক্তার ও ঔষধ লইয়া সেখানে গিয়াছেন; এবং ডাক্তার ও ঔষধ সঙ্গে হাড়ি, শুঁড়ি, জেলে, মালা, জাতিবর্ণ নির্বিশেষে সকলের দ্বারে দ্বারে ফিরিয়া চিকিৎসা করাইতেছেন। তিনি গাড়িতে বসিয়াছেন, একটি মুসলমানের বালক হয়ত তাঁহার ক্রোড়ে রহিয়াছে। এই জাতিভেদ প্রপীড়িত দেশে এমন উদার বিশ্বজনীন প্রেম আর দেখি নাই।”
জ্বরের কারণ অনুসন্ধানের জন্য সরকার ১৮৬৪ সালের জানুয়ারি মাসে এক কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের একমাত্র ভারতীয় সদস্য রাজা দিগম্বর মিত্র মন্তব্য করেন, রাস্তা, নদীবাঁধ ও রেলপথ সম্প্রসারণের কারণে জল নিকাশের স্বাভাবিক পথ বন্ধ। ফলে অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে জন্মানো মশার কামড়ে এই রোগের উৎপত্তি।
প্রসন্নকুমার কোলে
শ্রীরামপুর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy