পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘এখন দায়িত্ব আরও বেশি’ (১৬-৫) সময়োপযোগী ও হৃদয়গ্রাহী নিবন্ধ। তিনি ভালকে ভাল, খারাপকে খারাপ বলার সাহস দেখিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আমার একটি অভিজ্ঞতা বলি। ভোটের আগে কয়েক জন বামপন্থী কর্মীকে দেওয়াল লিখতে দেখি। তাঁদের মধ্যে আমার পরিচিত এক একনিষ্ঠ তরুণ কর্মীকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘নো ভোট টু বিজেপি’ কেন লেখা হচ্ছে না? উত্তর পেলাম, “ওটা নকশালদের স্লোগান।” পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিল, “বিজেপিকে ভোট দেবে না তো কাকে ভোট দেবে?”
শুনে মনে হল, এই সব তরুণ কর্মীর স্বাধীন চিন্তাধারাটাই হয়তো লোপ পেয়েছে। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম, বামপন্থীরা (সবাই নন) যত বড় বড় কথাই বলুন না কেন, বাংলায় বিজেপিকে ঠেকাতে চান না। চটজলদি বাংলায় আবার ক্ষমতায় আসতে চান। আরও মনে হল, এই পার্টিটা জন্মলগ্ন থেকেই একটি প্রশ্নের সমাধান করতে পারল না— প্রধান শত্রু কে? বাংলার মানুষ কিন্তু এ বার সাম্প্রদায়িকতার বিষকেই মূল শত্রু নির্ধারণ করেছেন। এই নিবন্ধটি থেকে এটা প্রতীয়মান যে, সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে, সজাগ থাকতে হবে, যাতে কোনও সাম্প্রদায়িক দল বাংলার জনজীবনে বিঘ্ন ঘটাতে না পারে, বিষ ঢালতে না পারে। যার অপচেষ্টা বাংলার সর্বত্র ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি বাংলার শান্তিপ্রিয় মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলবে।
তাপস ভট্টাচার্য
ব্যান্ডেল, হুগলি
সামনের পথ
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় তাঁর নিবন্ধে মনের কথাটা তুলে ধরেছেন। তবুও বলি, শাসক শ্রেণিকে পুনরায় নির্বাচিত করে বাংলার জনগণ তাঁদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। মাঝপথে আটকে-থাকা শিল্প প্রকল্পকে সম্পূর্ণ করে বেকারত্ব মোচন, এবং আধুনিক কলকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে আর্থিক পুনর্গঠন একান্ত প্রয়োজন। এ রাজ্যের ছেলেমেয়েদের বাইরে গিয়ে চাকরি খুঁজতে হয়। বৃদ্ধ বাবা-মা সন্তানকে ভিন্দেশে বা ভিন্রাজ্যে পাঠিয়ে কি সুস্থ দিনযাপন করতে পারেন? সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির ভিতর সম্পদ বণ্টনের রাজনীতি সাময়িক ভাবে উত্তরণের পথ বাতলে দিলেও, ভবিষ্যতের দিকে তাকালে এ পথ অভিপ্রেত নয়। খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং সর্বোপরি যথাযথ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য রাজ্য সরকারকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। বহু জায়গায় পরিস্রুত পানীয় জলের অভাব আছে, বিদ্যুৎ এখনও পর্যন্ত গ্রামে অনেক মানুষের দুয়ারে গিয়ে পৌঁছয়নি? বিজয় উল্লাসে সরকার যদি এ সব দায়িত্ব পূরণে মনোযোগ না দেয়, তা হলে বাংলার জনগণ ক্ষমা করবেন না।
নারায়ণ সাহা
কলকাতা-৮৪
হাল ফেরান
‘এখন দায়িত্ব আরও বেশি’ নিবন্ধে যথার্থই বলা হয়েছে, নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করতে চেয়ে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে সিপিএম। পরের যাত্রা তো ভঙ্গ হলই না, নিজের নাকটাই কাটা গেল। তরুণ বামেরা মূলত শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির, তাঁরা কৃষক, শ্রমিক আদিবাসীদের কাছে পৌঁছতে পারেননি। ভোট করানোর মতো সংগঠন আর নেই বামেদের। ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’ নামে বাম সংগঠনটি আদতে এনজিও-র কাজ করছে, এই কাজের নিরিখে কাস্তে-হাতুড়ি চিহ্নে ভোট চাইলে কিন্তু আবার খালি হাতে ফিরতে হবে। তাই লাল ফেরাতে আগে নিজের পার্টির হাল ফেরাতে হবে বামপন্থীদের। বিজেপিকে হটিয়ে প্রধান বিরোধী দল হতে হবে, তবে না ২০২৬-এর স্বপ্ন দেখতে শুরু করবেন তাঁরা। বামেদের মতো প্রগতিশীল বিরোধীই দরকার তৃণমূল সরকারের ভুল ধরাতে, যা আখেরে পশ্চিমবঙ্গের গণতন্ত্রকেই মজবুত করবে।
উৎসব তোষ
চন্দননগর, হুগলি
সমালোচনার দাম
বামপন্থীদের গত দু’দশক সঠিক বিশ্লেষণ করেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ‘শ্যাম রাখি, না কুল রাখি’ করতে গিয়ে একদা বাঙালির মননে অধিষ্ঠিত বামপন্থার আজ ভগ্নদশা। বামপন্থীদের এখন আত্মসমালোচনা ও চুপচাপ কাজ করে যাওয়ার সময়। আমাদের দেশে রাজনীতির সবচেয়ে বড় দুর্দশার কারণ আমাদের প্রায় সব নেতা প্রকাশ্যে প্রতিপক্ষকে কঠোর সমালোচনা করতে দ্বিধা করেন না, কিন্তু ভাল কাজকে সম্মান জানাতে তাঁরা অনিচ্ছুক। বেশ কিছু ভুল হয়তো করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কিন্তু একা এক রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের সঙ্গে অবিরাম লড়াই করে নিজের দলকে জিতিয়ে নিয়ে আসা— এটা মুক্তকণ্ঠে প্রশংসার যোগ্য। কর্মসংস্থান বাড়ানো, ছোট শিল্প ও লগ্নিকারীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া, সরকারি কাজের ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ-সহ নতুন পরিকল্পনা করে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করতে হবে। প্রকৃত সমালোচনার কদর করতে হবে।
পার্থ সরকার
কলকাতা-৩৩
অরাজনৈতিক
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “ভোটের আগে দল বদল চলল।... এমনকি আমাদের জগতের লোকেরাও হুড়মুড়িয়ে নাম লেখাতে ছুটলেন (অধিকাংশের ন্যূনতম রাজনৈতিক বা ইতিহাস চেতনা না থাকা সত্ত্বেও)।” এ প্রসঙ্গে লিখতেই হয় যে, কোনও রকম রাজনৈতিক পাঠ না নিয়ে, রাজনীতি না করে সাংসদ, বিধায়ক হওয়ার ধারার প্রবক্তা তো স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই তো রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীনদের ভোটে দাঁড় করিয়ে বলেছেন, “আমিই ২৯৪টা আসনে দাঁড়িয়েছি, আপনারা আমাকেই ভোট দিন।” এরই ফলে জুন মাল্য, কাঞ্চন মল্লিক, রাজ চক্রবর্তী প্রমুখের ভোটে দাঁড়ানো এবং মমতার ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে বিধায়ক হওয়া। দেবশ্রী রায়, চিরঞ্জিত চক্রবর্তীরা বিধায়ক হিসেবে কত দিন বিধানসভার আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন, বিধায়ক হিসেবে নিজের দায়িত্ব কতটা পালন করেছেন, নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রে তাঁদের কত দিন পাওয়া গিয়েছে, তা স্থানীয় মানুষ ভাল ভাবেই জানেন।
নিবন্ধকার লিখেছেন, “ইতিহাস-ভূগোল, তত্ত্ব, হোয়াটঅ্যাবিউটারি— এ সব করতে গিয়ে বিজেপির ক্ষমতায় আসাটাকে তুলনামূলক ভাবে ভাল মনে করেছেন, এবং সেটা হয়তো বা দরকার, এ কথা বলতেও আরম্ভ করেছেন,...” এমন উদ্ভট তথ্য তিনি আমদানি করলেন কোথা থেকে? বাম নেতারা কখনও এমন কথা বলেননি, বা ওই জাতীয় নেতিবাচক চিন্তায় আক্রান্ত হননি। বরং প্রথম থেকেই তাঁরা তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে বিকল্প শক্তি হিসেবে সংযুক্ত মোর্চা গঠন করেছেন এবং সংযুক্ত মোর্চাকে জয়ী করার আবেদন রেখেছেন।
কুমার শেখর সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
গরুর মহিমা
‘মলমূত্রের মহিমা’ (১৭-৫) সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে বলি, গোমূত্র, গোবর ইত্যাদির সাহায্যে রোগ নিরাময়ের প্রবণতা দেশের অনেক অংশেই প্রকট। কিন্তু এ ব্যাপারে দায় বেশি সরকারি সংস্থা ও নেতাদের। কয়েক মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছিল ছাত্রদের মধ্যে ‘গো-বিজ্ঞান’ সম্বন্ধে আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে, যার পাঠ্যক্রমে থাকবে গোমূত্র ও গোবরের উপকারিতার বৈজ্ঞানিক তথ্য। প্রসঙ্গত মনে পড়ে সদ্য-সমাপ্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনী প্রচারের সময় স্থানীয় নেতাদের ঘোষণা করতে শোনা যেত, তাঁরা জিতবেন আর এখানে নিয়ে আসবেন ‘গুজরাত মডেল’। যদি গোময়লিপ্ত গ্রাম এর অন্তর্ভুক্ত থাকে, তবে তো বলতে হয়, রাজ্য গোমূত্রে হাবুডুবু খাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে।
সঞ্জিত ঘটক
কলকাতা-১০৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy