Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
India

সম্পাদক সমীপেষু: বিচ্ছেদের বেদনা

লেখক সঙ্গত প্রশ্ন রেখেছেন, পঁচাত্তর বছর পরে আজ আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে? নারীদের পথচলা এখনও সুগম হয়ে ওঠেনি। ঘরে-বাইরে কোথাও তারা নিরাপদ নয়।

স্বাধীনতার আনন্দকেও ম্লান করে দিয়েছিল এই বিচ্ছেদের যন্ত্রণা।

স্বাধীনতার আনন্দকেও ম্লান করে দিয়েছিল এই বিচ্ছেদের যন্ত্রণা। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৩৩
Share: Save:

প্যাট্রিশিয়া মুখিমের প্রবন্ধ ‘আকাশ মেঘাচ্ছন্ন’ (১৪-৮)-এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। তিনি বলেছেন, নেহরু তাঁর ‘নিয়তির সঙ্গে অভিসার’ ভাষণে কোটি কোটি ভারতবাসীকে অনুপ্রাণিত করতে চেয়েছিলেন, সান্ত্বনা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা লাভের সঙ্গে দেশভাগের বেদনা ও গ্লানি দেশবাসীকে মেনে নিতে হয়েছিল। সেই হিসাবে ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তি বিপুলসংখ্যক দেশবাসীর স্বাধীনতাকে খর্ব করার ইতিহাস। লক্ষ লক্ষ মানুষকে ছেড়ে যেতে হয়েছিল বহু সুখস্মৃতির জন্মভূমি, জন্মভিটে এবং আশৈশবের চেনা পথ-প্রান্তর। নতুন পরিচয় মিলেছিল ‘উদ্বাস্তু’। স্বাধীনতার আনন্দকেও ম্লান করে দিয়েছিল এই বিচ্ছেদের যন্ত্রণা। বাংলা ও পঞ্জাবের কোটি কোটি মানুষের কাছে নিয়তির সঙ্গে অভিসারের কাহিনি ছিল করুণ, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই।

লেখক সঙ্গত প্রশ্ন রেখেছেন, পঁচাত্তর বছর পরে আজ আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে? নারীদের পথচলা এখনও সুগম হয়ে ওঠেনি। ঘরে-বাইরে কোথাও তারা নিরাপদ নয়। মণিপুরের নারী নিপীড়নের মতো ঘটনা সারা দেশে হয়ে চলেছে। কতটুকু আর খবরের শিরোনামে উঠে আসে? ভারতের মেয়েরা আজ দেশের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে উজ্জ্বল করছে, তাদের জীবনের নিরাপত্তা যে কোনও মূল্যে সুনিশ্চিত করতে হবে। তাদের জীবনের পূর্ণ নিরাপত্তা ও চলার পথ সুগম করতে পারলে দেশের উন্নয়ন দ্রুত ত্বরান্বিত হবে।

স্বাধীনতা বাস্তবায়নে প্রয়োজন অবশ্যই সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা। তেল, গ্যাস, কয়লা-সহ নানা ধরনের খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ ভারত উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু তবুও সমস্যা রয়েছে বহুবিধ। স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি আমাদের উন্নতির পথে প্রধান শত্রু। প্রান্তিক চাষি, দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। প্রতিষ্ঠা করতে হবে সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা। কেননা ভারতে এখন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা যথেষ্ট রয়ে গিয়েছে। এই সংখ্যাকে শূন্যের কোঠায় নামাতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হবে। কোনও জাতি বা দেশকে শুধু তার সীমান্ত রক্ষা করলেই চলবে না, তার শুভ বুদ্ধিকেও রক্ষা করতে হবে। জাতি তার স্বাধীনতা রক্ষা করবে আর শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা রক্ষা করবেন চিন্তার ও আত্মার স্বাধীনতা। তবেই পূর্ণতা পাবে নিয়তির সঙ্গে নিভৃত অভিসারের সেই অঙ্গীকার।

সৈকত রায়, খানাকুল, হুগলি

সহিষ্ণুতা

‘আকাশ মেঘাচ্ছন্ন’ শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। জাতপাত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সংখ্যাগুরুদের অন্যতম কর্তব্য। অথচ বিভাজনের বিষে ‘নীলকণ্ঠ’ সমাজে সহিষ্ণুতা অবশিষ্ট নেই। দেশ জুড়ে পরধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতায় ধর্মসংসদ থেকে হিন্দুত্ববাদীরা খুনের হুমকি দেন। ছদ্ম বৈচিত্র এবং ঐক্যের বাহুল্য দেখিয়ে স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন এক পরিবারের কথা তুলে ধরেন, তখন তা নিতান্তই মেকি শোনায়। প্রবন্ধকার ভারতের মেঘাচ্ছন্ন আকাশে স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর কথা এনেছেন, স্মরণ করেছেন সেই সাংবাদিকদের, যাঁরা সত্য পরিবেশনের জন্য অত্যাচারের শিকার হয়েছেন।

প্রশ্ন তুলতে হয়, এই মেঘাচ্ছন্ন ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা দেখানোর পথে কি আমরা হেঁটে চলেছি? সেই সকল মহামানবের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা দেখানোর উপায় ‘সহিষ্ণুতা’ শব্দটি। যুক্তিপূর্ণ সমালোচনাকেও শাসকের গ্রহণ করতে না পারা স্বাধীন ভারতের অন্যতম অসুখ। সমালোচনাকারীদের ‘দেশদ্রোহী’ কিংবা ‘শহুরে নকশাল’ হিসাবে দেগে দেওয়া সেই অসহিষ্ণুতাকে আরও তীব্র করে দেয়। তাই অমৃত মহোৎসবের দিনে আমাদের শপথ গ্রহণ করা উচিত যে, পরধর্মের সঙ্গে সহাবস্থানের সহিষ্ণুতাটুকু যেন প্রতি মুহূর্তে আমরা ভারতবাসী হিসাবে দেখাতে পারি।

সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

বিপ্লবী আদর্শ

স্বাধীনতা সংগ্রামীদের লড়াই ও বীর শহিদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমেই আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল। তবে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বাধীনতা চাননি। চেয়েছিলেন সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও, যেগুলো ছাড়া প্রকৃত স্বাধীনতা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কি সকল দেশবাসীর জন্য সুনিশ্চিত করা গিয়েছে? দেশের প্রত্যেকটি মানুষের উন্নয়ন সাধনই হল প্রকৃত স্বাধীনতা। দেশকে স্বাধীন করার জন্য বিপ্লবীদের মতো আত্মত্যাগ বা প্রাণ দিতে হয়নি আমাদের। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি সেই ঋণ শোধ করার একটাই উপায়— তাঁদের আদর্শে নিজেদের সঠিক ভাবে গড়ে তোলা এবং দেশের ও দশের জন্য গঠনমূলক কিছু করা। আজ স্বাধীন ভারতে যখন নেতা, আমলা ও মন্ত্রীদের দুর্নীতি দেখি, মনে হয়, এই জন্যই কি দেশ স্বাধীন করা হয়েছিল?

অভিজিৎ দত্ত, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ

ইন্দ্রালয়

বীর বিপ্লবী দীনেশচন্দ্র মজুমদারের স্মরণে ‘ব্রিটিশের জেলে পচে মরার জন্য মেনির জন্ম হয়নি’ (রবিবাসরীয়, ১৩-৮) প্রবন্ধে গৌতম ভট্টাচার্য লিখেছেন, চন্দননগরে দীনেশের আশ্রয়দাতা চিকিৎসক হীরেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কথা, যিনি বাগবাজারে তাঁর ‘ইন্দ্রালয়’ বাড়িতে দীনেশ মজুমদারকে নিয়ে আসেন। লেখকের আক্ষেপ, বহু বিপ্লবীর আশ্রয়স্থল ‘ইন্দ্রালয়’ বাড়িটি ভেঙে ফেলা হতে পারে। সমাধানের এক উপায়, যদি নতুন বাসস্থানে ‘ইন্দ্রালয়’-এর এক অংশবিশেষের পুনর্নির্মাণ করে স্মৃতি সংরক্ষণ করা যায়। এই স্মৃতি অত্যন্ত মূল্যবান।

১৯৩০ সাল। টেগার্টের সশস্ত্রবাহিনী মাখনলাল ঘোষালকে গুলি করে মেরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে। চন্দননগর উত্তপ্ত। মাখনলাল ঘোষালের মৃতদেহ নিয়ে শোকমিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন চন্দননগরের প্রগতিশীল রাজনীতির নেতৃত্ব। বোড়াইচণ্ডী শ্মশান হয়ে উঠেছে বিপ্লবতীর্থের অন্যতম পীঠস্থান। কিছু দিন পরে দীনেশচন্দ্র মজুমদার মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে পালিয়ে চন্দননগরে এসেছেন। সঙ্গে আরও কয়েক জন। হীরেন্দ্রকুমার তখন চন্দননগরে ফরাসি কাউন্সিল জেনারেলের সদস্য। তিনি বিপ্লবীকে বাগবাজারে নিজের বাড়িতেই আশ্রয় দিলেন। প্রায় তিন মাস। এর পর তাঁকে অন্য এক বাড়িতে পাঠানো হল। ফরাসি পুলিশ তক্কে তক্কে ছিল। প্রচ্ছন্ন ছিল ব্রিটিশ নির্দেশ। আশ্রয়দাতা ফরাসি উদারতার মুখোশ খুলে গেল। কমিশনার সশস্ত্র বাহিনী-সহ বাড়িটিকে ঘিরে ফেললেন। সেই দুই বিপ্লবী পুলিশ বেষ্টনী ভেঙে পালাতে থাকেন। পিছু নিলেন কমিশনার। বিপ্লবীরা তাঁকে সাবধান করেছিলেন। তিনি শোনেননি। গুলি ছুড়লেন দুই বিপ্লবী। নিহত হলেন তিনি। দুই বিপ্লবী ফের হীরেন্দ্রকুমারের বাড়িতে উঠলেন। তখন হীরেন্দ্রকুমার কলকাতায়। দীনেশচন্দ্র খবর পাঠালেন। অন্য দিকে, কাউন্সিল জেনারেলের সদস্য হিসাবে ফরাসি সরকার হীরেন্দ্রকুমারের কাছে খবর পাঠিয়েছেন, তাঁকে নিহত পুলিশ কমিশনার-কে সমাধিস্থ করার সময় থাকতে হবে। হীরেন্দ্রকুমার পরের দিন কলকাতা থেকে ফুলের মালা নিয়ে এলেন চন্দননগরে। দীনেশ তাঁকে নিজের রিভলভারটা রাখতে দিলেন। হীরেন্দ্রকুমার সেটা কোমরে ভাল করে বেঁধে বেরিয়ে গেলেন। তাঁর হাতে নিহত পুলিশ কমিশনার-এর শবাধারে দেওয়ার জন্য শ্রদ্ধার মালা। কোমরে বিপ্লবী দীনেশ মজুমদারের সেই রিভলভার, যার গুলিতে কমিশনার নিহত হয়েছেন।

অকুতোভয় বৈপ্লবিক চেতনার সঙ্গে দেশকালের রাজনৈতিক বোধের সংমিশ্রণ থাকলেই তা সম্ভব, যার অধিকারী ছিলেন হীরেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়। বিপ্লবী দীনেশচন্দ্র মজুমদারের স্মরণ সেই স্মৃতিকে উস্কে দিল।

শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি

অন্য বিষয়গুলি:

India Independence Partition Society
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy