‘গ্রামে হানা কেন, চিন্তা বনদফতরে’ (৩-১) সংবাদটি পড়ে কিছু বক্তব্য তুলে ধরছি। বন দফতরের বোঝা উচিত, বন্যরা বনে অস্বস্তিতে রয়েছে। নানা দিক থেকে এই অস্বস্তি! তাদের খাদ্যের উপর সবচেয়ে বেশি আঘাত এসেছে। বন আর মোটেও নিরাপদ নয়। আশপাশে বহু মানুষ গাঁ-গঞ্জ গড়ে তুলে সেখানকার বাস্তুতন্ত্র অন্য রকম করে ফেলেছে। লোকজন বনে জীবিকা সন্ধান অসম্ভব বাড়িয়েছে। তা ছাড়া, বাইরে থেকে বহু মানুষ গিয়ে পিকনিকের আসর বসাচ্ছেন। সঙ্গে মাইক, বক্স এমনকি ডিজে বাজানোর ধুম চলে প্রায়ই! কী করে এর অনুমতি মেলে, তা কি বন আধিকারিকরা জানেন না? বিভিন্ন টুরিজ়ম সংস্থা ভ্রমণের আকর্ষণ বাড়াতে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়, সুন্দরবনের বিভিন্ন সৌন্দর্য উপভোগ করার প্যাকেজ ঘোষণা করে। বাঘেরা কি জানত অরণ্যতন্ত্রের এমন পরিণতি হবে? তাই, তারা আশপাশের জনপদে প্রবেশ করছে। আর তা নিয়ে খবর হচ্ছে ফলাও করে। সরকার সংরক্ষিত অরণ্যে ঘুঘুর বাসা ভাঙতে পারলেই বন্য প্রাণীরা নিরাপদে তাদের নিজস্ব বাসস্থানে থাকতে পারবে। সুন্দরবনকে সুন্দর করতে হবে প্রাণীদের জন্যই।
বিবেকানন্দ চৌধুরী
মণ্ডলহাট, পূর্ব বর্ধমান
বিপন্ন বাঘ
সাম্প্রতিক কালে সুন্দরবন এবং তার আশেপাশের এলাকায় প্রায়ই লোকালয়ে বাঘের উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছে। বেশ কিছু নেপথ্য কারণ এর জন্য দায়ী। জল-জঙ্গল- জনবসতি এই নিয়েই সুন্দরবন এবং সেই জঙ্গল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বিখ্যাত। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজ়ারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)-এর বিচারে এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বিপন্ন প্রজাতিভুক্ত প্রাণী।
সুন্দরবনের মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম হল ঘন জঙ্গলে শিকার ধরা, মধু সংগ্রহ ইত্যাদি। কাজেই তাদের জঙ্গলে যেতেই হবে, যা কিনা বাঘের এলাকা। আর ডারউইনের বিবর্তনবাদ অনুযায়ী, এই পৃথিবীতে খাদ্য ও বাসস্থান সীমিত হওয়ার ফলে প্রত্যেক প্রাণীকেই অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করে বাঁচতে হবে। সেই হিসাবে বলা যায়, জনসংখ্যা যত বেড়েছে, ততই মানুষ খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য জঙ্গল কেটে ঘর বানাচ্ছে এবং জীবিকা নির্বাহ করছে। আর বন্য জীবজন্তুর এলাকা ছোট হচ্ছে। ফলে তারা খাদ্যের জন্য হানা দিচ্ছে কাছের জনবসতিতে। এ ছাড়া আমপান, ইয়াসের পরে বাঁধ ভেঙে সমুদ্রের নোনা জল সুন্দরবন এলাকার মিষ্টি জলের পুকুরে মিশে যাওয়ায়, সেই জল বন্য জীবজন্তুর খাওয়ার পক্ষে অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে তারা কাছের লোকালয়ে আসছে খাদ্য ও জলের সন্ধানে। এ ছাড়া জঙ্গল মাফিয়া, চোরাশিকারিদের উপদ্রবে জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় নেতা এবং প্রশাসনের একাংশের প্রচ্ছন্ন মদত সুস্পষ্ট।
ভারতের ফরেস্ট রাইটস অ্যাক্ট, ২০০৬ বনাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় স্থানীয়দের বসবাসের অধিকার দিয়েছে। আইনের অধিকারবলে যথেচ্ছ ভাবে জঙ্গল কাটার ফলে বনভূমি ছোট হচ্ছে এবং এর পরিণতিতে বাঘ জনবসতিতে ক্রমাগত হানা দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ফরেস্ট রাইটস অ্যাক্ট ২০০৬ ফিরিয়ে নেওয়া-সহ আরও কঠিন আইন প্রণয়ন করতে হবে, যাতে বনভূমির মোট এলাকা সুরক্ষিত থাকে, বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত না হয় এবং বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীদের অস্তিত্ব সঙ্কটে না পড়ে।
চন্দ্র মোহন নন্দী
কলকাতা-৭৮
বাঘে-মানুষে
মৈপিঠের পর কুলতলি এবং সাম্প্রতিক গোসবার লোকালয়ে বাঘের আনাগোনা দেখা গিয়েছিল। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি হয়। এখন প্রশ্ন হল, কেন বাঘের এই ঘন ঘন জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে আসা? এর কয়েকটি কারণ অনুমান করা যায়। এক, জঙ্গলে খাদ্যের অভাব হয়েছে কি না, তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে হবে। উপর্যুপরি ঝড়বৃষ্টি, বন্যার ফলে যথেষ্ট সংখ্যক হরিণ, শুয়োর, বানর, বনমুরগি ইত্যাদির মৃত্যু ঘটায় খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এও হতে পারে যে, মাটির উপরিতল যথেষ্ট কর্দমাক্ত থাকায় বাঘ দৌড়ে শিকার ধরায় ব্যর্থ হচ্ছে! দুই, যথেচ্ছ গাছ কেটে ফেলার ফলে এবং জঙ্গল সংলগ্ন অঞ্চলে জনবসতি গড়ে ওঠায় ওদের বিচরণ ক্ষেত্রের সঙ্কোচন ঘটছে। যার ফলে মানুষ আর গবাদি পশু শিকারে ওরা প্রলুব্ধ হচ্ছে। তিন, এ সময়ে প্রচুর পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে আসেন বাঘ, হরিণ দেখতে পাওয়ার লোভে। ভাগ্য ভাল হলে কেউ কেউ বাঘের দেখাও পান। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থেকে মানুষ বাঘকে দেখেন যখন, তখন বাঘও কি মানুষকে দেখে না? তার স্মৃতিতে ওই পর্যটকরা জেগে থাকে এবং পরবর্তীতে তাঁদের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। প্রয়োজনে নদী সাঁতরে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে।
সবশেষে বলি, সুন্দরবনের বাঘ নোনা অঞ্চলের বাসিন্দা হলেও ওরা তেষ্টা মেটায় মিঠে জলে। দেখা দরকার জঙ্গলের ভিতরে বৃষ্টির জলে পুষ্ট জলাশয়গুলো বন্যায় নোনা জলে ভেসে গিয়ে এখনও লবণাক্ত হয়ে আছে কি না? যদি তা হয়ে থাকে, তা হলে ধরে নিতে হবে শুধু শিকার নয়, তেষ্টা মেটাতেও ওরা মিঠে জলের খোঁজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এ ক্ষেত্রে করণীয় হল, জঙ্গলের কোলঘেঁষা অঞ্চলে জায়গায় জায়গায় মাটি খনন করে মিঠে জলাশয় তৈরি করা। যদিও আপাতত ওদের ঠেকাতে জালের ঘের আর সদা সতর্ক থাকা ছাড়া উপায় নেই।
অসিত কর্মকার
কলকাতা-৭৫
শহর বাঁচাতে
কলকাতা শহরে মাঝেমধ্যে যাওয়ার সুবাদে কিছু জিনিস চোখে পড়ে। প্রথমত, কলকাতা হাই কোর্টের নতুন ভবন থেকে যে রাস্তাটি ভিতর দিয়ে রাজভবনের দিকে গিয়েছে, সেই রাস্তার এক পাশে খোলা জায়গায় মানুষ মূত্রত্যাগ করে। এর ফলে জায়গাটি যেমন দূষিত হচ্ছে, তেমনই ওই দুর্গন্ধময় স্থান দিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এই স্থানটি থেকে কিছু দূরেই বিভিন্ন খাবারের দোকান রয়েছে এবং সেখানে মানুষের ভিড়ও হয় যথেষ্ট। এই অবস্থায় এই খোলা স্থানে এমন কাজ বন্ধ হওয়া উচিত এবং নিকটবর্তী স্থানে একটি সুলভ শৌচালয় স্থাপন করা দরকার।
দ্বিতীয়ত, শহরের বিভিন্ন স্থানে গাছের গায়ে পোস্টার-ব্যানার-ফ্লেক্স ইত্যাদি লাগানো হয়েছে পেরেক দিয়ে। এই ধরনের কাজ শুধুমাত্র অমানবিকই নয়, বেআইনিও। পিজি হাসপাতালের সংলগ্ন রাস্তায়, সেলিমপুর, দেশপ্রিয় পার্ক, পাটুলি প্রভৃতি স্থানে এই ধরনের পোস্টার-ব্যানার চোখে পড়েছে। গাছগুলিকে রক্ষা করতে এই ধরনের পোস্টার-ব্যানার খোলা হোক দ্রুত।
তৃতীয়ত, অনেক স্থানেই গাছের কাণ্ডের গোড়া সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে, অথবা মাটির অংশ খুব কম রাখা হয়েছে। যে সব পার্কে গাছ লাগানো হয়েছে, সেখানেও অযত্নের ছাপ। কলকাতাকে ‘সবুজ শহর’ বানাতে গাছেদের যত্ন ও আরও বেশি করে গাছ লাগানো প্রয়োজন। আশা করি, পরিবেশ বাঁচাতে নতুন পুর বোর্ড যথাযথ উদ্যোগ করবেন।
প্রশান্ত দাস
অনন্তপুর, হুগলি
ঝাউগাছ উধাও
সম্প্রতি দিঘা ঘুরে এলাম। আগেও বহু বার গিয়েছি। এ বার গিয়ে হতাশ হলাম। ঝাউয়ের সারি প্রায় উধাও। শত শত চোখধাঁধানো হোটেল, সরকারি ভবন, বাড়ি ইত্যাদি। এ ভাবে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে কৃত্রিম শহর তৈরির অনুমতি কে দিল? একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখেও মানুষ শিক্ষা নিচ্ছে না? সরকার নিজেই কি প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসে প্রচ্ছন্ন মদত দিচ্ছে?
রাধিকানাথ মল্লিক
কলকাতা-৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy