E-Paper

হিংসার কারণ

রাস্তাঘাট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, পরিস্রুত পানীয় জল, বাসস্থান, বাঁধ মেরামত, বেকারত্ব নিরসন, কোনওটাই আর এগোল না। সমৃদ্ধ হলেন কিছু রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

villagers.

গ্রামবাংলার মানুষ আবার গ্রাম দখলের একটা লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে চলেছেন। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৩ ০৬:০২
Share
Save

অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ছোট্ট একটি সমাপতন’ (২৭-৬) শীর্ষক প্রবন্ধটি অত্যন্ত বাস্তবসম্মত। গ্রামবাংলার মানুষ আবার গ্রাম দখলের একটা লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে চলেছেন। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলি ময়দানে নেমে পড়েছে। গণতান্ত্রিক ভাবে তারা ভোটে জিতুক, পঞ্চায়েত গড়ুক, তা নিয়ে কারও কিছু বলার নেই। তবে ৪৫ বছর ধরে পঞ্চায়েতের সাধারণ মানুষ কী পেলেন আর কী পাননি, সেই হিসাব বড় কঠিন। শুরুতে বামেদের ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে এবং পঞ্চায়েতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে ভাল কিছু কাজকর্ম হলেও, শেষের দিকে সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি। স্বশাসনের বদলে উপরতলার নির্দেশ মেনে চলাই রীতি হয়ে দাঁড়ায়। তার পর যা হওয়ার তা-ই হল। ক্ষমতার বদল হল। নতুন শাসকরা আসার পর দেখা গেল, গ্রামসভা বন্ধ হয়ে গেল। শোনা হল না গ্রামের মানুষের কথা। তাই গ্রামবাংলা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই আবার চলে গেল।

রাস্তাঘাট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, পরিস্রুত পানীয় জল, বাসস্থান, বাঁধ মেরামত, বেকারত্ব নিরসন, কোনওটাই আর এগোল না। সমৃদ্ধ হলেন কিছু রাজনৈতিক নেতৃত্ব। ইতিপূর্বে যাঁদের প্রাসাদোপম বাড়ি, দামি গাড়ি শিরোনামে তুলে ধরেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। ক্ষমতা, আধিপত্য, বিলাসিতা কেউই হারাতে চায় না। তাই তো আগেভাগেই বোমা, গুলি, বাইক, উইকেট, খুনজখম, হুমকি, সাদা থান উপহার দিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভয়ের আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে।

তবুও ভোট হবে। গ্রামের মানুষ ভোট দেবেন। এক দল হারবে, এক দল জিতবে। গ্রাম-সরকার গড়ে উঠবে। যাঁরাই ক্ষমতায় আসুন, একটু ভাবুন গ্রামের মানুষের কথা। গ্রাম অনেক পিছিয়ে। পিছিয়ে গ্রামবাংলার মানুষের জীবনযাত্রা। এঁদের উন্নয়নের প্রয়োজনটা ভুললে চলবে না।

স্বপন আদিত্য কুমার বিশ্বাস, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

মধুভাণ্ডের খোঁজ

অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে কিছু কথা। স্বাধীনতা আন্দোলনের পর এই দেশ জাতিদাঙ্গা ব্যতীত সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ যা দেখেছে, তা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। বলিপ্রদত্ত হয়েছেন সাধারণ মানুষ, উজাড় হয়েছে বহু প্রান্তিক পরিবার, শেষ হয়ে গিয়েছে দরিদ্রের সম্বল। অন্য দিকে, ফুলেফেঁপে উঠেছে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পদ, প্রতিযোগিতার নেশায় আত্মহারা হয়ে সহ-নাগরিকদের তাঁরা লড়িয়ে দিয়েছেন একে অপরের বিরুদ্ধে। তার পর সেই রক্তেও অনুসন্ধান করেছেন নীল-সাদা-গেরুয়া-সবুজ ইত্যাদি রং।

বামপন্থী দল এই বঙ্গের ক্ষমতায় আসার পর বুঝতে পেরেছিল, এই পঞ্চায়েত স্তরেই সবচেয়ে বড় মধুভাণ্ডটির অবস্থান। তাই দলহীন পঞ্চায়েত নির্বাচনের পক্ষে একটি কথাও তারা খরচ করেনি। প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দলের প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হওয়ার সাহসটুকু দেখাতে পারেননি বেশির ভাগ গ্রামে। ধীরে ধীরে বাড়তে থেকেছে নেতাদের আগ্রাসী মনোভাব, পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে হিংসা। সেই দিন যদি ন্যূনতম সততা এবং সৎ সাহস দেখাতেন তথাকথিত বামপন্থীরা, তা হলে গ্রামীণ ক্ষমতার প্রকৃত বিকেন্দ্রীকরণ ঘটত অনেক আগেই।

যা হয়নি তা নিয়ে আজ আক্ষেপ করা সত্যিই বোকামি। তাই নির্বাচন এলেই গুলি-বারুদের সঙ্গে সঙ্গে হকি স্টিক আর উইকেট বিক্রির চাহিদা বাড়ে। সত্যিই এ এক আশ্চর্য সমাপতন বটে! কে না জানে যে, গ্রামসভা কিংবা পঞ্চায়েত সমিতি অথবা জেলা পরিষদের একটা টিকিটে জয়ী হলেই গ্রামীণ উন্নয়নে যে অর্থ বরাদ্দ হয়, তার অনেকটাই ‘কাটমানি’ আকারে নিঃশব্দে পঞ্চায়েত সদস্যের অ্যাকাউন্টে চলে আসতে পারে। তাই দলীয় টিকিট পাওয়ার ব্যাপারে এত প্রতিযোগিতা। সেখানে সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাওয়া বাতুলতা। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ গ্রামীণ রাজনীতিতে আদৌ সম্ভব নয়। শাসক দল যেমন ক্ষমতা হারাতে চায় না, তেমনই বিরোধীরাও রং বিচার না করেই সুবিধাবাদী জোট তৈরি করেন। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অতিরিক্ত লালসার শিকার হয়ে সব রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা কোমর বেঁধে নেমে পড়েন তৃণমূল স্তরে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে।

সরাসরি পঞ্চায়েত গঠন করা আজকের বহুদলীয় গণতন্ত্রের কাছে একেবারেই অসম্ভব। কারণ, প্রকৃত ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে গেলে রাজনৈতিক দলের নিজস্ব ভান্ডারটি পূর্ণ হবে না, তাই রাজনৈতিক দলগুলি তা চাইবে না। বাকি থাকে গ্রামের বৃহৎ সংখ্যক জনগণ। তাঁদের বিভিন্ন প্রলোভনে ভুলিয়ে দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর জুড়ি মেলা ভার। তাই এই রক্তক্ষয়ী পঞ্চায়েত নির্বাচন আমাদের ভবিতব্য।

রাজা বাগচী, গুপ্তিপাড়া, হুগলি

উলুখাগড়া

রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। রাস্তার দু’ধারে তাকালে চোখে পড়ে রাজনৈতিক দলের পতাকাগুলি গাছে লাগানো রয়েছে। বিভিন্ন মাপের পেরেক দিয়ে নানান রঙের দলীয় পতাকা, ফ্লেক্স, ব্যানার লাগানো হয়। বাড়ন্ত ও সতেজ গাছগুলি বাড়তে বাধা পায়, পেরেকের আঘাতে গাছে এক প্রকার তরল পদার্থ নিঃসৃত হয়, যা মানব-দেহের রক্তের সমতুল্য। যে স্থানে গাছগুলিকে পেরেক বিদ্ধ করা হয়, সেখান থেকে গাছের ক্ষয় ও পচন ধরতে শুরু করতে পারে। অতিরিক্ত আহত হলে ধীরে ধীরে গাছটি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলে।

এ ছাড়াও গাছগুলিতে নাইলন দড়ির সাহায্যে দলীয় পতাকা ও ব্যানার ঝোলাতে দেখা যায়। ‌এগুলি গাছের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর। ভোটপর্ব মিটে গেলে জলে-ঝড়ে ব্যানার ও পতাকা ছিঁড়ে গেলেও নাইলন দড়িগুলি গাছে রয়ে যায়। কিছু দিন পরে দেখা যায়, দড়িগুলি গাছের মধ্যেই ভিতরে ঢুকে গিয়েছে, এবং গাছের পরবর্তী অংশগুলি তার উপর দিয়ে বেড়ে গিয়েছে। জনপ্রতিনিধিত্বের লড়াইয়ে মানুষের মতো গাছগুলিরও জীবন আজ উলুখাগড়া হয়ে উঠেছে।

নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের বিধি জারি করা উচিত যে, কোনও গাছে নাইলনের অথবা প্লাস্টিক দড়ি দিয়ে রাজনৈতিক দলের ব্যানার, ফেস্টুন, দলীয় পতাকা টাঙানো যাবে না। রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে যে, দলীয় প্রচারে গাছেদের ক্ষতি হতে দেওয়া যাবে না।

শ্রীমন্ত পাঁজা, গঙ্গাধরপুর, হাওড়া

আবার ফ্লেক্স

দুয়ারে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে রাজনৈতিক দলগুলি জোরদার ভাবে নেমে পড়েছে প্রচারের ময়দানে। এ বারের নির্বাচনী প্রচারে ফ্লেক্স-এর আধিক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। ফ্লেক্স কেবল টাঙানো হচ্ছে তা-ই নয়, অনেক দেওয়ালে পেরেক দিয়ে ফ্লেক্সকে সেঁটে দেওয়া হচ্ছে। ফ্লেক্স পরিবেশবান্ধব সামগ্রী নয়। একে পোড়ালে ক্ষতিকর গ্যাস উৎপন্ন হয়, যার কয়েকটি ‘কার্সিনোজেনিক’, অর্থাৎ ক্যানসার সৃষ্টিকারী। দলগুলির কাছে অনুরোধ, পরিবেশের স্বার্থে যথাসম্ভব কম ফ্লেক্স ব্যবহার করুক। না হলে নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে পরিবেশে ক্ষতিকর বস্তুর বোঝাই কেবল বাড়বে।

প্রদীপ রঞ্জন রীত, আমতা, হাওড়া

লারার দেশ নয়

‘বার্বেডোজ়ে বিচ ভলিবল বিরাটদের’ (৪-৭) শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বার্বেডোজ়কে ব্রায়ান লারার দেশ বলা হয়েছে। তথ্যটি ভুল। লারার দেশ ত্রিনিদাদ, বার্বেডোজ় নয়। বার্বেডোজ় গ্যারি সোবার্স, ক্লাইড ওয়ালকট, জেসন হোল্ডার প্রমুখের দেশ।

অমিত মিত্র, কলকাতা-৮৯

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Election 2023 village

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।